প্রিয় পাঠক, ভালো আছেন আশা রাখি।
বেশ অনেকদিন হলো কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন পলিসি নিয়ে কিছু লেখা হয়ে উঠছিলো না। তবে মার্চ ২০১৮ এর শেষ সপ্তাহে কুইবেকে ঘটে যাওয়া দুটি বিশেষ ঘটনায় কলম না তুলে আর পারলাম না।
২৭শে মার্চ, ২০১৮ কুইবেকের প্রভিন্সিয়াল গভর্নমেন্ট কানাডার ফেডারেল গভর্ণমেন্টকে ১৪৬ মিলিয়ন ডলারের একটি বিল পাঠিয়েছে। এই বিল আমেরিকান বর্ডার দিয়ে ঢুকে পড়া হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসী প্রার্থীদের থাকা খাওয়া বাবদ ধার্য করা হয়েছে। ২০১৬ সালে মোট ৩,৫০০ জন আমেরিকান বর্ডার দিয়ে কানাডা ঢুকে পড়েছিল | ২০১৭ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ ৫ ৫৬৩ তে এবং এদের মধ্যে আবার ১৮,০৩৬ জন ঢুকে পড়ে শুধুমাত্র কুইবেকেই। মূলত ডোনাল্ড ট্রাম্প হাইতির অভিবাসী প্রার্থীদের টেম্পোরারি প্রোটেক্টেড স্টেটাস বাতিল করার আগেভাগেই এতো লোক কুইবেকে ঢুকে পড়ে। নিকারাগুয়া, এলসলভাদর এবং হন্ডুরাসের অবৈধ ৩,৫০,০০০ অভিবাসী প্রত্যাশীদের খুব শিগগিরই আমেরিকা ত্যাগ করতে হবে– এবং এরা সবাই কানাডা ঢুকে পড়ার চেষ্টা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য কানাডার ফেডারেল এবং প্রভিন্সিয়াল সরকার যৌথ ভাবে টাস্ক ফোর্স এর মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। ইমিগ্রেশন মিনিস্টার আহমেদ হুসেন , মিনিস্টার অফ পাবলিক সেফটি এন্ড ইমার্জেন্সি প্রিপায়ার্ডনেস রাল্ফ গুডেল এবং কুইবেকের ইমিগ্রেশন মিনিস্টার ক্যাথলিন উইলে একযোগে এই সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
অভিবাসীদের দেশ কানাডা– আগেও ছিল, এখনো আছে: আর এজন্যই এতলোক এদেশে ধর্ম, বর্ণ,লিঙ্গ, রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে দলে দলে অভিবাসন প্রার্থী হচ্ছে আর এমুহূর্তে আমাদের সরকারের উপর চাপ যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। এই চাপ সামলাতে ব্যাকলগও বেড়ে যাবে। তার মানে এই নয় যে কানাডা শরণার্থীদের আর জায়গা দেবে না।
মার্চের ২৮ তারিখে কুইবেক ইমিগ্রেশন অথরিটি কানাডার একমাত্র এবং জনপ্রিয় প্যাসিভ ইনভেস্টমেন্ট ক্যাটেগরিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে আবেদনকারীদের বৈধ এবং আইনগত ভাবে অর্জিত নেট সম্পদের পরিমান ১.৬ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ২ মিলিয়ন করা হয়েছে। এছাড়াও পাঁচ বছরে ন্যূনতম ইনভেস্টমেন্টের পরিমান ৮ লক্ষ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১.২ মিলিয়ন করা হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল, ব্যাকলগ কমানোর জন্য এবং চাইনিজ আধিপত্য কমানোর জন্য হয়তো এবার ফ্রেঞ্চ বা ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ রেকোইরেমেন্ট যোগ হবে। কিন্তু তা হয়নি। এবছরেরই আগস্টের ১৫ তারিখ নাগাদ গত বছরের মতো ১৯০০ আবেদন কারীর কোটা এবং সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই ১৯০০ জনের মধ্যে মাত্র ৫৭০ জনকে সমগ্র বিশ্ব থেকে ওপেন কম্পিটিশনের মাধ্যমে মনোনীত করা হয়। বাকি ১৩৩০ টি কোটাই সংরক্ষিত থাকে চীন, হংকং এবং ম্যাকাও এর ধনকুবের দের জন্য। এতে অত্যন্ত প্রতিযোগিতা মূলক পদ্ধতিতে কুইবেক সিলেকশন সার্টিফিকেট পেতে সময় লাগে কমপক্ষে এক বছর আর, ফেডারেল ইমিগ্রেশন হতে সময় লাগে আরো কমপক্ষে ৪২ মাস। তাই যাঁরা এই ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে চান, এবং যাঁরা ধৈর্য্য ধরতে পারবেন, একটুও কালক্ষেপন না করে কাগজপত্র তৈরী করে রেডি থাকুন, ১.২ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার দিতে পারলে পাঁচ বছর পর কোনো ইন্টারেস্ট ছাড়াই পুরো টাকা ফেরত পাবেন আর ফিনান্সিয়াল ইন্টারমিডিয়ারি ফ্যাসিলিটেটর নিলে কোনো টাকা ফেরৎ পাবেন না।
আমার প্রিয় পাঠকরা বোধ হয় খুব হতাশ হয়ে গেলেন না? না না, হতাশ হবেন না– রাতের পরেই তো দিন আসে, শীতের পরে গ্রীস্ম । প্রভিন্সিয়াল বিসনেস উদ্যোক্তা ক্যাটেগরিতে ওন্টারিওতে এই বছরের ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখে ১৩ জন এবং মার্চের ১৫ তারিখে ১০ জন আবেদন করার নোমিনেশন পেয়েছেন। অন্টারিও ছাড়াও ব্রিটিশ কলম্বিয়া, সাস্কাচুয়ান, নোভা স্কোশিয়া, এবং সর্ব শেষ মানিটোবা এই ২ ষ্টেপের বিসনেস এন্ট্রেপ্রেনিউর ক্যাটাগরিতে যোগ দিয়েছে। কুইবেকেও এই প্রকল্প চালু আছে। এছাড়াও কয়েকটি প্রভিন্স ফার্মিং এর জন্য বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় ২০১৮ সালে ২১শে মার্চ ব্রিটিশ কলম্বিয়া ১১ জনকে এবং নোভাস্কোশিয়া জানুয়ারির ১৭ তারিখে ২৭ জনকে নোমিনেশন দিয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রভিন্সগুলোতে শিল্পউদ্দোক্তাদের এক থেকে ২ বছর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। এই সময়ে আবেদনকারীর মিনিমাম নেট অ্যাসেট থাকলে এবং কমপক্ষে দেড় লক্ষ ডলার থেকে ১ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হয় (যেটি প্রভিন্স টু প্রভিন্স ভেরি করে ) ।
প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড , ইউকন , নিউব্রান্সউইক , নর্থওয়েস্ট টেরিটরি তে এখনো ওয়ান স্টেপ বিসনেস এন্ট্রেপ্রেনিউর প্রোগ্রাম চালু আছে- যেখানে একটি বড় অংকের ডিপোজিট দিতে হয়। প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডের
১০০ % বিসনেস ওনারশিপ প্রোগ্রামটি ফেডারেল গভর্নমেন্টের বিশেষ নজরদারিতে পড়ে গেছে। নিউফাউন্ডল্যান্ড এন্ড ল্যাব্রাডোর এ কোনো বিসনেস ইমিগ্রেশন প্রোগ্রাম নেই। আলবারটা তে ফার্মারদের জন্য সেলফ এমপ্লয়েড ফার্মার ক্যাটাগরি চালু আছে।
পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে যেখানে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, এবং ইউরোপ ইমিগ্রেশন বলতে গেলে একরকম বন্ধই করে দিয়েছে- সেখানে একমাত্র কানাডাই ইমিগ্রেশনের পথ এখনো খোলা রেখেছে। এই নতুন পরিস্থিতিতে আমি সবসময়ই বলি কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন একটি প্রসেস- যার জন্য, যোগ্যতা, সময় এবং ধৈর্য্য সবই দরকার। শুধু টাকা দিলেই বা শুধু যোগ্যতা বা শুধু ধৈর্য থাকলেই হয় না, । এটি এখন একটি সমন্বিত দক্ষ প্রচেষ্টার মাধ্যমে ধৈর্য সহকারে সম্পন্ন করার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন পলিসিতে পরিবর্তন হচ্ছে প্রতি নিয়ত। কাজেই নিজেই সম্পূর্ণ জেনে বুঝে আবেদন করুন অথবা যোগ্য এবং সম্পূর্ণ আপডেটেড তথ্য সম্মৃদ্ধ কানাডিয়ান লাইসেন্স প্রাপ্ত কারো সাহায্য নিন যিনি আপনাকে আপনার কাঙ্খিত কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন বৈধ ভাবেই আন্ তে সাহায্য করতে পারবেন।
এসব ব্যাপারে আরো বেশি জানতে চাইলে আমাকে ইমেইল করুন। যাঁরা টরেন্ট বা কানাডাতে থাকেন তাঁরা আসছে ২৮শে এপ্রিল, শনিবার , দুপুর দুইটায় বর্তমান কানাডিয়ান ভিসা ও ইমিগ্রেশন পলিসি সংক্রান্ত একটি ইনফরমেশন সেশনে চলে আসুন । ক্যানবাংলা ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস এর উদ্যোগে এই সেশন Access Alliance Multicultrual Health and Community Services, 3079 Danforth Avenue তে অনুষ্ঠিত হবে। Shoshana Green Barrister & Solicitor , a partner at Green and Spiegel LLP in Toronto উক্ত অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। ক্যানবাংলা ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস এর প্রোপ্রাইটর অধ্যাপিকা মাহমুদা নাসরিন সহ কমিউনিটির সম্মানিত ব্যাক্তিবর্গ উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। আপনাদের সকলের সবান্ধব উপস্থিতি আশা করছি। আগ্রহী সকলকে নীচের ঠিকানায় নাম রেজিস্ট্রি করার অনুরোধ রাখছি। ধন্যবাদ সকলকে।
মাহমুদা নাসরিন ক্যানবাংলা ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস, ৩০৯৮ ডানফোর্থ এভিনিউ, স্যুট ২০৫। ইমেইল :-[email protected], ফোন– +১৬৪৭৯৪৫৭৬১০, ফ্যাক্স– +১৬৪৭৯৪৫৭৬১১.