কভিড-১৯ এর প্রকোপ অনেকটা কমেছে। মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করছেন। কতোজনের কতো কি হারিয়ে গেছে! কতো স্মৃতি! কতো হাসি-আনন্দ, স্বপ্ন-সাধ! কেউ কেউ নিদারুণ কষ্ট সইতে না পেরে আত্নহত্যা করে নিজের জীবনের আলো নিভিয়ে দিয়েছেন। অশেষের হারিয়েছে সব, সবকিছু। যেন হারানোর বাণ এসেছিল অশেষের জীবনকে তছনছ করে দিতে।কয়েকজন মানবিক মানুষ ব্যাতীত আর কোন কিছুই অশেষের মনে পড়েনা। যে ক’জন মানুষ অশেষের দুঃখের দিনের সহযাত্রী হয়েছিল, তাঁদের কাছে অনন্তকালের জন্য অশেষ ঋণী থাকবেন। বিশেষ করে বাড়ির মালিকের ছোট মেয়েটি এবং যাকে অশেষ মা বলে জানতেন। দু’টি মানুষের মায়াবী মুখ অশেষকে কোনভাবেই ভালো থাকতে দিচ্ছেনা। মায়ার বাঁধন বড়ো-ই যন্ত্রণা দায়ক! কোনভাবেই ভালো থাকতে দেয়না।
স্মৃতিগুলো অশেষকে অবিরত তোলপার করে বুকের ভেতরে রক্ত ঝরায়। মানুষ মানবতার মুখোশের আড়ালে চিরকালই হিংস্র দানব-ই রয়ে যাবে! কিন্তু কেন? সৃষ্টিকর্তার দরবারে সবাইকেই একদিন জবাবদিহী করতে হবে। বিচারের মুখোমুখী হতে হবে। তারপরও মানুষ কেন দানবীয় বলয়ে আটকে আছেন? কেন?
অশেষ নতুন জব নিয়ে দূরে চলে এসেছে। অসুস্থ মায়ের করুণ আর্তি আর একটি নিস্পাপ শিশুর মায়াবী চাহনী অশেষকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে ছাই করে দিচ্ছে। তারপরও তাঁদের দেখার মতো যোগ্যতা অশেষ চিরদিনের জন্য হাড়িয়ে ফেলেছেন। চোখের নোনা পানি বুক ভিজিয়ে দিলেও লোভী এবং নিষ্ঠুর মানুষগুলোর পাষাণ হৃদয় কখনও ভেজাতে পারেনা।
নারানী সেদিন বরের সঙ্গে বিদায়ের সময় বলেছিল,
-আমকে চিঠি লিখো অশেষ দা। বড়ো বড়ো চিঠি।
অশেষ কাগজ আর কলম নিয়ে বসেছে নারানীকে চিঠি লিখতে।
তাং ২৩.০৯.২০২১
নারানী,
কতোদিন তোর সঙ্গে দেখা নেই। ভালো আছিস নিশ্চয়র? তোর বর কেমন আছেন? মানুষটাকে আমার বেশ ভালো লেগেছে। তুই সবসময় তাঁর দিকে খেয়াল রাখবি কেমন! তুই ভালো থাকতে বলেছিলি এবং মায়ের দেখাশোনা করতে বলেছিলি। আমার কপালে তা-আর সইলোনা। এতো অনাচার সয়েছি যা তোকে বাকী জীবনভর লেখলেও ফুরোবে না। মহান আল্লাহর কাছে প্রতিদিন একটি আশ্রয় প্রার্থনা করেছি। তিনি আমার প্রার্থনা কবুল করেছেন। একটি জব পেয়েছি। জয়দেবপুরে। খুব সাদা-মাঠা জব হলেও নতুন অফিসের মানুষগুলো বেশ ভালোরে! তবুও মায়ের মুখটি আর দেখা হবেনা। সে পথ একজন লোভী মিথ্যাবাদী, অকৃতজ্ঞ বিশ্বাসঘাতক নিষ্ঠুর নারী বন্ধ করে দিয়েছেন চিরদিনের জন্য। আজকে আর লেখবোনারে! ব্যথায় বুকটা চিনচিন করছে। সময় হলে তুইও লিখিস কেমন! ভালো থাকবি সবসময়।
তোর অশেষ দা।
চান্দনা, জয়দেবপুর।
(চলবে)