বর্তমানে কানাডাতে বসবাসের আকাশচুম্বী খরচের খবর কি জানেন ?
Is our govt’s policy reckless!!!!!!!
সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে কানাডার আকাশচুম্বী বাসা ভাড়া, খাওয়ার খরচ, যাতায়াতের খরচ ইত্যাদি সমন্ধে অনেক অনেক তথ্য আপনাদের জানা থাকার কথা। তবে আপনি কোনো কারণে অসুস্থ হলে আপনার পকেট কতখানি ফুটা করবে সেটা নিয়ে আমি খুব একটা বেশি আলোচনা দেখি না। হয়তোবা সবাই ধরেই নেন, এখানে এসে তাদের কোনো ধরণের শাররীক সমস্যা হবে না, যদিও সেটি একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউই জানেন না। আমি সেই বিষয়ে এখানে কিছু কথা বলবো তাহলে আপনারা বুঝতে পারবেন এখানকার Medical Costও আকাশচুম্বী।
যাহোক, সে বিষয়ে কথা বলার আগে আমি বলে নেই আমি কাদেরকে ট্যুরিস্ট/ষ্টুডেন্ট বা তথাকথিত ট্যুরিস্ট/ষ্টুডেন্ট বলছি।
ট্যুরিস্ট হচ্ছে যারা সত্যি সত্যিই এখানে ঘুরতে আসেন এবং ঘোরাফেরা শেষে যে যার দেশে চলে যান। তথাকথিত ট্যুরিস্ট হচ্ছে যারা নাম মাত্র ট্যুরিস্ট কিন্তু মূল উদ্দেশ্য এখানে এসে থেকে যাওয়ার ধান্দা। এদের কেউ কেউ হয়ত আগে কখনো বাংলাদেশ, ভারত বা পাকিস্তানে নিজের বাড়ি থেকে অন্য কোথাও যান নাই। বাংলাদেশ, ভারত বা পাকিস্তান শুধু নয় আরও অনেক দেশের থেকেই এমন ট্যুরিস্ট আসেন। তথাকথিত স্টুডেন্ট হচ্ছে যারা ওই তথাকথিত টুরিস্টদের মত নাম মাত্র স্টুডেন্ট হিসাবে এসে পড়াশুনা বাদ দিয়ে এখানে থেকে যাওয়ার ধান্দা। কিছু কিছু এমন স্টুডেন্টদের কথা জানি যারা যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে এসেছেন সেখানে এক দিনের জন্যও যান নাই। এভাবে অনেক আগে আমি যখন এসেছি তখনও অনেকে এসেছেন এবং পরবর্তীতে রিফুজি ক্লেম করে থেকে গেছেন, এবং তখন কানাডিয়ান আর্থসামাজিক অবস্থা এখনকার থেকে ভালো ছিল, সেই জন্যে কানাডা তাদেরকে accommodate করতে পেরেছিলো, কিন্তু বলতে গেলে এখন কানাডার মজা-ভাঙা অবস্থা। এই অবস্থার উদাহরণ অনেক আছে, যেমন কালকে আমাদের টরোন্টোর মেয়র এবং তার কাউন্সিলরদের আগামী বাজেটে ১০% এর বেশি প্রপার্টি ট্যাক্স বাড়ানোর ঘোষণা এবং যদি ফেডারেল সরকার তাদের আমন্ত্রনের রিফুজিদের জন্য এক্সট্রা ফান্ডিং না দেয় তাহলে তারা এই ট্যাক্স ১৬% এর মতো বাড়াবেন, যেটা আমাদেরকে বহন করতে হবে। বুঝতে পারছেন কি অবস্থা !!!!
বর্তমান সরকার আসলে নিজের ঘরের জায়গা এবং খাবার-দাবারের কথা হিসাব না করে অতিরিক্ত মানুষকে বাসায় দাওয়াত খেতে ডাকছেন। আর এই দাওয়াত খাওয়ানোর জন্য এখন তারা সাধারণ জনগনের পকেটে হাত দিচ্ছেন। মানুষকে দাওয়াত দেওয়া ভালো জিনিস, কিন্তু ভাই, তার আগে সামর্থটা অর্জন করুন। মানুষের ইনকাম বাড়ার কোনো খবর নাই, উনাদের দাওয়াত দেওয়া মানুষ খাওয়াতে টাকা দিন !!
যারা সত্যি সত্যিই নিজ দেশে বিপদে পড়ে জীবনের হুমকির কারণে এখানে আশ্রয় চাচ্ছেন তাদের কথা আলাদা, সে ক্ষেত্রে আমরা একবেলা না খেয়েও সাহায্য করতে পারি, এবং এই জাতীয় রিফুজিদের সাধ্যমতো সাহায্য করছি, করে যাচ্ছি এবং করবো, যতটুকু পারি; কিন্তু সরকারের reckless কর্মকান্ডে নিজের ১২টা কে বাজাতে চায় বলুন।
আমি healthcare প্রফেশনে কাজ করি সে জন্য এই সেক্টরে গত ১৫/২০ বছরের এর তুলনায় অবনতির অবস্থা প্রতিদিন দেখতে পাই। তাছাড়া আমাদের ক্লায়েন্টদের মধ্যে অনেকেই আবার থাকেন যারা এখানকার ওই জাতীয় সেবা গুলি পাওয়ার যোগ্য না যদি না তাদের প্রাইভেট কোনো ইন্স্যুরেন্স না থাকে, তারপরেও ইদানিং প্রায়ই এই জাতীয় মানুষদের সেবা দিতে হয় এবং তারা এখানকার ট্যাক্স পেয়ারও না, একান্ত মানবিক কারণে এখনকার প্রতিষ্ঠানগুলি সেটি করে গেছে কিন্তু এখন দেওয়ালে পিঠ থেকে গেছে। জাস্ট সপ্তাহ ২ আগে হাসপাতালে একজন ভারতীয় তথাকথিত স্টুডেন্ট সুইসাইডাল বলে আসে, কিন্তু তার কোনো টাকা পয়সা নেই, কোনো ইন্সুরেন্স নেই, থাকার জায়গা নেই এবং পড়ালেখাও বাদ। তার ধান্দা ছিল যদি ধুনফুন বুঝিয়ে কয়দিন হাসপাতালে ফিরি ফিরি থাকা-খাওয়া যায়। যাহোক ওই হাসপাতালের সোশ্যাল ওয়ার্কার আমার প্রাক্তন mentee . ডাক্তার তাকে কেসটি দিলে সে assessment করে দেখে সবই ভুয়া। তারপর সে একজন ভারতীয় নার্সকে ডেকে এনে তাকে বুঝিয়ে বলে যে সে যদি এডমিট হয় তাহলে তাকে বেশ বড়ো অংকের বিল পে করতে হবে। নার্স তার দেশে বাবা-মার সাথে কথা বলতে চায় কিন্তু সে রাজি হয়নি। যাহোক, তাকে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য কিছু সময় দেয় তারপর সে হটাৎ করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
এখন সে যে এতক্ষন স্টাফদের সময় নষ্ট করলো তার জন্য কিন্তু আপনার এবং আমার ট্যাক্সের টাকাই খরচ হলো। এটা দিয়ে হয়তো কোনো সত্যি অসুস্থ মানুষের উপকার হতো। ঘটনাটি আরও বড়ো কিন্তু বিস্তারিত লিখছি না। এরকম এখন অনেক হচ্ছে। ওহ, আর একটা কথা বলে রাখি, ধরুন আপনি চিকিৎসা নিলেন এবং একসময় আপনি রিফুজি ক্লেম করে থাকার অনুমতি পেলেন, OHIP পেলেন কিন্তু তাতে আপনার ক্ষমা নেই। OHIP কার্ড আপনাকে আপনার রিফুজি ক্লেম approve হওয়ার আগের কোনো খরচের টাকা দিবে না। সে খরচ আপনাকেই পে করতে হবে, না হলে সামনের প্রতিটা কাজে ঝামেলা হবে যদি কিনা আজীবন সামাজিক সাহায্যে থেকে দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে চান।
এখন আপনি যদি ট্যুরিস্ট/ষ্টুডেন্ট বা তথাকথিত ট্যুরিস্ট/ষ্টুডেন্ট হয়ে থাকেন এবং আপনার যদি কোনো হেলথ ইন্সিরেন্স না থাকে তাহলে কি পরিমান টাকা আপনাকে গুনতে হবে তার একটি সংক্ষিপ্ত হিসাব দিচ্ছি। এই হিসাবটি জাস্ট রিসেন্ট। সাথের চার্টে আপনি Non-Residenceদের জন্য ধার্য করা ফি হিসাব করবেন। যেমন ধরুন, যে কোনো কারণে আপনি হাসপাতালে গেলেন, চেক করলেন কিন্তু আপনার কিছু হয়নি বলে ছেড়ে দিলো কিন্তু আপনাকে $৭২০ অর্থ্যাৎ বাংলা টাকায় বর্তমান রেটে ৬৮,৪০০ টাকা গুনবেন। আর যদি আল্লা না করুক একরাত হাসপাতালে থাকতে হয় তাহলে আপনাকে গুনতে হবে $২১১২ অর্থ্যাৎ বাংলা টাকায় ২ লক্ষ ৬৪০ টাকা। এর কোনো মাফ নেই। কারো যদি এর মাফের পথ জানা থাকে আমাকে জানাবেন। ছবির চার্টে শুধু অল্প কিছু নমুনা, এছাড়া বিভিন্ন টেস্টেরও খরচ অনেক।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে জানি, এমনকি একজন ইমিগ্রান্ট তার দাঁতের সমস্যার জন্য ৪/৫ হাজার ডলার খরচ করেছেন এবং এখানে আসার ৫/৬ বছর ধরে সেই টাকা শোধ দিয়েছেন কারণ উনার ইন্সুরেন্স ছিল না এবং আগে প্রথম ৩ মাস আপনাকে প্রাইভেট ইন্সুরেন্স কিনতে হতো। আরো একজন তার শশুরকে ট্যুরিস্ট ভিসায় বিনা ইন্সুরেন্সে এনে তার হার্টের সমস্যার কারণে হাসপাতালে যেতে হয়। উনি বেঁচে গেলেও উনার জামাইয়ের পড়াশুনা বেঁচে যায়নি। এটি অবশ্য আমাদের প্রতিবেশী একটি দেশের ছাত্র। যেহেতু আমার healthcare সিস্টেমে access আছে তাই এই জাতীয় ঘটনা প্রায়ই দেখতে পাই, যেটি আগে এতো ছিল না। মানুষের এই সব করুন অবস্থা দেখে খারাপ লাগে এবং করার কিছুও থাকে না তবে এই বিপদগুলি কিন্তু এরা বলতে গেলে ইচ্ছা করে ডেকে এনেছে। অসুখ তাদের ইচ্ছায় হয়নি, কিন্তু আসার আগে বা আসার সাথে সাথে ইন্সুরেন্স তারা ইচ্ছা করেই করেনি। বিদেশের মাটিতে আপনি কখনই এই রকম চান্স নিতে পারেন না।
এই সমস্ত মানুষ যখন এই জাতীয় বিপদ নিজের থেকে ডেকে আনে তখন তার নিজের পরিবারসহ এখানে যদি কোনো আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধব থাকে তাদেরকেও বিপদে ফেলে। আমারতো ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রাই আমাদের দেশের মানুষের সাহায্যের আবেদন দেখি এবং খোঁজ নিয়ে দেখা যায় তাদের কথিত বিপদ কিন্তু তাদের কারণেই অর্থ্যাৎ তাদের “ওই কোনোভাবে হয়ে যাবে” এই জাতীয় মনমানসিকতার কারণে। আরে ভাই/বোন, এখানে যারা আছেন তারা কাজ করে খেটে খেটে ইনকাম করেন, বাসাবাড়ি, খাওয়া-দাওয়া, ছেলেমেয়ে,. দেশের দায়িত্ব ইত্যাদি পালন করে তাদের কত জনের কাছে আপনার এর রকম নিজে ইচ্ছায় বাঁধানো বিপদে সাহায্য করার সামর্থ থাকে। এখন আবার শুরু হয়েছে সরকারের অতিরঞ্জিত চাঁদা। এখানকার যে সমস্ত safety-security আমরা গ্রহণ করি সে জন্যে তো চাঁদা দিতে সমস্যা নেই, কিন্তু অতিমাত্রায় হলে সেটি কার সহ্য হয়, আবার যদি দেখেন আপনার কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে তারা recklessভাবে খরচ করছে।
যাহোক, আপনি ট্যুরিস্ট, তথাকথিত ট্যুরিস্ট, ষ্টুডেন্ট বা তথাকথিত ষ্টুডেন্ট যে ভাবেই আসেন না কেন আপনি দুধের বচ্চা না তাই আপনি আসবেন, না কি আসবেন না, বা কিভাবে আসবেন সেটি আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত কিন্তু জেনেশুনে তারপর ঝাঁপ দিবেন। যারা মনে করছেন আমি মানুষকে নিরুৎসাহিত করার জন্য এগুলি বলছি, বা ঠিক কথা বলছি না তারা তাদের কন্টাক্ট ইনফরমেশন আমাকে দয়া করে দিবেন, আমি প্রায়ই এই জাতীয় মানুষদের সাহায্যের আবেদন যখন শুনি তখন তাদেরকে আপনাদর কাছে রেফার করবো, পারলে আপনারা তাদেরকে সাহায্য করবেন। আর কারো যদি মনে হয়, চাকরির এখানে ছড়াছড়ি তারাও আমাকে তাদের কন্টাক্ট ইনফরমেশন দিবেন, কারণ আমার কাছে অতন্ত ১৫/২০টি রেজুমি সবসময় থাকে, এবং এরা সবাই এখানকার নাগরিক এবং স্থায়ী বাসিন্দা। তাদের odd job বা প্রফেশনাল সব ধরনের চাকরির দরকার।
By, the, way. আপনি যেভাবেই আসুন না কেন, যদি মনে করেন আপনি আপনার এখানে অবস্থানকালীন সময়ের জন্য মেডিক্যাল ইন্সুরেন্স কিনতে চান তাহলে আপনি দেশে থেকেও কিনে আসতে পারেন, আবার এখানে এসেও ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কিনতে পারেন। আপনি কতদিন থাকবেন তার উপর নির্ভর করে আপনার খরচ হবে। তবে আমি আপনাকে বলবো আপনি এটি করবেন, মাত্র ২/৪/৫০০ ডলারের জন্য হাজার হাজার ডলারের ঝুঁকি নেওয়ার কোনো দরকার নেই। আমাদের ভাইকে সওগত আলী সাগর ভাইকে ধন্যবাদ আমাকে “এখানে এসেও ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কিনতে পারেন” তথ্যটি প্রদানের জন্য এবং মাঝে মধ্যে বন্ধুবান্ধবকে উনার সেবা দেওয়ার জন্য।
সবাই ভালো থাকেন। আশা করি আল্লাহ আমাদের পৃথিবীতে চলমান সমস্যাগুলি দ্রুত সমাধান করবেন।
পৃথিবীর খুব একটা ভালো সময় যাচ্ছে না, এবং এগুলির অধিকাংশই Man-made তাই আমাদের নিজেদের অনেক দায়িত্ব আছে।
ধন্যবাদ।
মুকুল।
বিঃ দ্রঃ Healthcare এর অবনতি বলতে Quality নিয়ে আমি তেমন ভাবি না, কিন্ত স্টাফ স্বল্পতা, ওয়েটিং টাইম, অনেক এলাকার জরুরি সেবা বন্ধ ঘোষণা, ফ্যামিলি ডাক্তারের অভাব ইত্যাদি বিষয়ের অবনতির কথা বুঝিয়েছি। এগুলির অবস্থা আমি যখন আসি তখন এতো বাজে ছিল না।