বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট সালাম শরীফ গতকাল ১৭ এপ্রিল, টরন্টো সময় রাত ৭:৫০টায় টরন্টোর ইষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন । (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। জানতে পেরেছি, তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গত কয়েকদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বা ৬৮ ( আমি নিশ্চিত নই ) বছর। আজ বিকাল তিনটায় তার জানাজা ও তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র, এক কন্যা সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সালাম শরীফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের গ্রাজুয়েট। আইনের উপর পড়াশোনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে।সালাম শরীফ ছিলেন কানাডার বাঙালি কমিউনিটির পরিচিত মুখ। তিনি বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। গ্রেটার ফরিদপুর এসোসিয়েশনের অব কানাডার সভাপতি এবং অন্টারিও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া টরন্টোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফোরামসহ বেশ কিছু সামাজিক সংগঠনের সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন। একসময়ে তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
তাঁর জন্ম স্থান গোপালগঞ্জ জেলার সদর থানার শুকতাইল গ্রামে। আমার বাড়ী থেকে তার বাড়ির দূরত্ব ছিল কমবেশি ১০/১২ কিলোমিটার। আমি কানাডায় আসার পর ৭/৮ বছরই থেকেছি লেকশোর -বাথার্স্ট এলাকায় ভাড়া করা এপার্টমেন্টে। পরে ডানফোর্থ এলাকায় বাড়ি কিনে চলে আসি ২০১১ সালে। প্রথম দিকে ডানফোর্থ বাংলা টাউন এলাকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও মাঝে মাঝে বৈকালিক ভ্রমণের সময় বেড়াতে যেতাম। পরে অবশ্য প্রয়োজন না হলে খুব একটা যেতাম না। তখন থেকেই আমার সাথে সালাম ভাইয়ের পরিচয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফোরামের মিটিং এবং কয়েকটি সামাজিক অনুষ্ঠানে তার সাথে আমার দেখা হয়েছে বেশ কয়েকবার।সেসময় তাকে আমার একজন সজ্জন মানুষ মনে হয়েছিল। এছাড়া আমি অনেকের কাছে সালাম ভাইয়ের সম্পর্কে শুনেছি। তিনি ছিলেন নির্লোভ ও সদালাপী।
তিনি ডানফোর্থ এলাকায় একজন ভালো আইনজীবী ছিলেন। আমার মনে আছে, তার কাছে আমি একবার গেলাম আমার শ্যালিকার ভিজিট ভিসায় কানাডায় আসার জন্য প্রস্তুতকৃত কাগজপত্র সত্যায়ন করতে। তিনি সব কাগজপত্র দেখে বলেছিলেন আপনার নিজের তরফ থেকেও একটা প্রত্যায়ন পত্র দিলে তার ভিসা পাওয়া সহজ হবে। কিভাবে সেটা লিখতে হবে সেটাও বলে দিলেন। তাঁর পরামর্শ মত সেই পত্র সহ আমার সকল কাগজ পত্র তিনি নাম মাত্র ফি নিয়ে নোটারী করে দিয়েছিলেন। এ দিন একপর্যায়ে আমার বাড়ী গোপালগঞ্জে জেনে তিনি আমাকে মৃদু ভৎসনা করেছিলেন। রসিকতা করে সেসময় তাকে বলেছিলাম টরোন্টোতে এতো স্বনামধন্য বা নামি দামী ব্যাক্তিবর্গের মাঝে আমি অতি নগন্য। তাই আমি একটু “লো প্রোফাইলে ” থাকতে চাই। সে জন্য কোথাও ফলাও করে গোপালগঞ্জে বাড়ীর কথা বলতে চাই না। তিনি আমার কথায় তখন বেশ হেসেছিলেন।
পরের বার তার কাছে গিয়ে ছিলাম আমার গাড়ির ট্রাফিক টিকেটের মীমাংসার জন্য। ভিক্টোরিয়া পার্ক সাবওয়ে স্টেশনে আমার স্ত্রীকে নামিয়ে দিয়ে আসার সময় পার্কিং লট থেকে লেফট টার্ন নেয়ায় কারণে আমাকে টিকেট দেয়া হয়েছিল। পুলিশ আমাকে দুইটা টিকেট কেন দিলেন সেটা বুঝতে পারছিলাম না। তিনি বললেন ,একটা টিকেট ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন ও ওপরটা স্পীড লিমিট ব্রেকের জন্য। তিনি বললেন ,এটা মীমাংসা করে দেবেন এবং আমার লাইসেন্সের পয়েন্ট কাটা যাবে না। কয়েকমাস পরে আমি চিঠি পেয়েছিলাম আমার টিকেটের টাকা মওকুফের বিষয়ে। সালাম ভাই কে ফোন করলে জানতে পারলাম তিনি তখন বাংলদেশে। তিনি দেশে থাকলেও আমার কাজটি যাতে বিঘ্ন না হয় সেটা ঠিকই লক্ষ্য রেখেছিলেন। বিষয়টি তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল।
প্রত্যেকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। সৃষ্টিকর্তা যার যত দিন আয়ু রেখেছেন তিনি সেটা পূর্ণ হাওয়া মাত্র দুনিয়া থেকে বিদায় নেবেন। দুনিয়াতে রয়ে যাবে তাঁর পরিবার পরিজন ও তাঁর কৃতকর্মের স্বাক্ষর। মহান আল্লাহের কাছে সালাম ভাইয়ের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। সেই সাথে তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি জানাচ্ছি সমবেদনা। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জান্নাতবাসী করুন।