মাহমুদা নাসরিন , RCIC / ক্যানবাংলা ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস, টরেন্টো, কানাডা

দেশ ছেড়েছি অনেক বছর আগে  প্রথম দেশ ছেড়েছিলাম ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসাবে  তারপর চাকরিসূত্রে এবং সব শেষে অভিবাসী হয়েছি কানাডায়তাও  অনেক বছর হয়ে গেলো  তবু  পোঁড়া মন দেশকে ভুলে থাকতে পারে না এক মুহূর্তের জন্যেও   দেশের সব কিছু নিয়ে কেন এতো মাথাব্যাথা? কি দরকার আমার ওসব ভাবার?  ” আমার মন কেমন করে, কে জানে   কাহার তরে , আমার মন কেমন করেআমার খুব প্রিয় গান রবি ঠাকুরের লেখা

সাম্প্রতিক বাংলাদেশের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন খুব বেশি নাড়া দিয়েছে দেশে বিদেশে সকলকেই  ছাত্র এবং অভিভাবক ব্যাকুল ভাবে যখন আন্দোলন করছে নিরাপদ সড়ক এবং নিরাপদ মানুষের খোঁজে তখন পড়াশুনার ছুঁতোয়  দেশ ছাড়ার অভিপ্রায়ও দেখছি অনেক ছাত্র এবং অভিবাবকদের মাঝে বেড়ে গেছে অনেক বেশি গুণ  শিক্ষার্থীরা  উঠে পড়ে লেগেছে  পালিয়ে বাঁচার জন্য আর অভিবাবকরা সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একটি নিরাপদ দেশ খুঁজছেন  

অজানা অচেনা একটি দেশে পড়তে যাওয়া নিঃস্বন্দেহে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা  এভাবে চলে যাওয়া যায়  নিজস্ব গন্ডি পেরিয়ে অনেক দূরে, নতুন দেশে  নতুন ভাষা, সংস্কৃতি আর নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়  জীবনের এক নতুন দিগন্ত  নতুন পরিবেশে পড়াশুনার সাথে সাথে একজন শিক্ষার্থী নিজেকে  একটি নতুন দেশে মানিয়ে নিতে শেখে, খাপ খাওয়াতে শেখে  আর তাই আজকের এই বিশ্বায়নের যুগে বিভিন্ন দেশে ছাত্ররা পড়তে যাচ্ছে আগের তুলনায় অনেক বেশি পড়তে আসার সময় অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবেকি পড়তে যাচ্ছি  , কোথায় পড়তে যাচ্ছি, পড়ার যোগ্যতা আছে কিনা ,  কেন পড়তে যাচ্ছি এবং সর্বোপরি খরচ কত এবং তা কোথা  থেকে আসবে আমেরিকা এবং কানাডা এই দুটি দেশ যেমন পাশাপাশি তেমন এদুটি দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থার মাঝেও আছে অনেক সাদৃশ্য আমেরিকা এবং কানাডা অনেকেরই পড়তে আসার জন্য পছন্দের দুটি দেশ বিশ্বের বহু নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়  আছে এই দুটি দেশেই কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসাবে আসার সুযোগ সুবিধা কিন্তু দুটি দেশে একরকম নয়  বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর আমেরিকার পরিবর্তিত ইমিগ্রেশন নীতিমালায়, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টরাও বিশেষ তোপের মুখে পড়েছে    অগাস্ট ০৯/২০১৮ থেকে আমেরিকাতেও ইন্টারন্যাশনাল ষ্ট্যুডেন্টদের  উপর  নতুন অভিবাসন নীতিমালা ভীষণ কড়াকড়িভাবে আরোপ করা হচ্ছে   এখন থেকে যেকোনো ইন্টারন্যাশনাল   ষ্ট্যুডেন্ট একদিন ওভারস্টে করলেই দশ বছরের ইমিগ্রেশন ব্যানএর আওতায় পড়ে  যাচ্ছে গ্রাডুয়েশনের ঠিক পর দিনই এখন আমেরিকা ছাড়তে হবে  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বদলালে, ২০ ঘন্টার বেশি কাজ করলে ভিসা বাতিল হয়ে যাবে  গ্রাজুয়েশনের পর আমেরিকাতে ইমিগ্রেশন পাওয়া এখন থেকে অনেক বেশি কঠিন করা হয়েছে  আর খুব সহজে বা অদূর ভবিষ্যতে আর এই নিয়ম বদলানোর কোনোই সম্ভাবনা নেই  

আর এসব কারণেই ইদানিং কানাডাতে   ইন্টারন্যাশনাল   ষ্ট্যুডেন্টদের  সংখ্যা বেড়ে গেছে অনেক বেশি এইসংখ্যা বাড়ার পিছনে আরো কিছু কারণ আছে  বিশ্বের শীর্ষ ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কানাডাতে আছে তিনটিইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো, ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিএছাড়াও কানাডার সব শহরগুলোতেই আছে নাম করা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকানাডার  কুইবেক, এডমন্টন,রেজাইনা , ক্যালগেরি  হ্যালিফ্যাক্স, উইনিপেগ, ফ্রেডারিকটন , ইয়েলো  নাইফ সহ কানাডার ছোটোবড়ো সব শহরগুলোতে আছে ভালো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান   ইন্টারন্যাশনাল   ষ্ট্যুডেন্টদের কালচারাল এসিমিলেশনএর জন্য কাজ করছে    ইন্টারন্যাশনাল   ষ্ট্যুডেন্টদেরকে মূল ধারার কালচার এবং জব মার্কেটের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য  সরকার  ভলান্টিয়ারিং, কো  –অপ, ইন্টার্নশীপ,   এবং পেইড ইন্টার্নশীপ এর সংখ্যা অনেক গুন্ বাড়িয়ে দিয়েছে  কেননা অভিবাসী হিসাবে কানাডা সরকারের প্রথম পছন্দ    ইন্টারন্যাশনাল   ষ্ট্যুডেন্টদের  আমেরিকা, ইংল্যান্ড,  এবং অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় এখনো পর্যন্ত কানাডাতে   ইন্টারন্যাশনাল   ষ্ট্যুডেন্টদের টিউশন ফী এবং লিভিং কস্ট  অনেক কম  এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের স্কলারশিপ বা বার্সারিও কানাডায় অনেক বেশি আরো একটি তথ্য  যা অনেকেরই জানা নেইকানাডায় কিন্তু শুধুমাত্র পোস্টসেকেন্ডারি লেভেলেই যে শুধু পড়তে আসা যায় তা নয় , এলিমেন্টারি, মিডল এবং হাইস্কুলেও কিন্তু বাচ্চারা পড়তে আসতে পারে সামর্থ থাকলে বাচ্চাদের মা কাস্টোডিয়ান হিসাবে এদেশে বাচ্চার সঙ্গে থাকতে পারেন

 

                                                             ক্যাম্পাস লাইফ এট দি  ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো (ছবি এন্ড্রু টলসন )

কানাডায় পড়তে আসার আর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে   ইন্টারন্যাশনাল   ষ্ট্যুডেন্টদের জন্য খুব সহজ ইমিগ্রেশনের  সুবিধা আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রাম, কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স ক্লাস , ফেডারেল স্কিলড অথবা ফেডারেল স্কীলড ট্রেড, এবং সরাসরি বিসনেস উদ্যোক্তা হিসাবে   ইন্টারন্যাশনাল   ষ্ট্যুডেন্টরা খুব সহজেই  কানাডিয়ান পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি  পেতে পারে  আর তাই দেরি না করে    ইন্টারন্যাশনাল   ষ্ট্যুডেন্ট হিসাবে যেকোনো লেভেলে পড়তে চলে আসুন কানাডা যা ভবিষ্যতে খুলে দেবে আপনার বা আপনার সন্তানের সামনে এক নতুন দেশ, এক নতুন স্বপ্ন এবং এক নতুন সম্ভাবনা এপ্রসঙ্গে যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ইমেইল করুন

[email protected]

 

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন