কোপেনহেগেনের “গুলিস্থান” খ্যাত জায়গা “হন্টন সড়ক” (Walking street) দিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে হাঁটছিলাম।একজন শ্বেতাঙ্গ ভদ্রলোক নিজে থেকে এসে সম্ভাষণ জানিয়ে আমার দেশের নাম জিজ্ঞাসা করলো।বুক টা ফুলিয়ে বললাম “People’s Republic of Bangladesh” ( দেশের নাম বলার সময় আমি একটু বেশি ভাব নেই ) !উনি বললেন আচ্ছা,’ড্যেকা’।বললাম “না ইটস কলড….ঢাকা”। কিছুটা সময় ওনাকে ঢাকার সঠিক উচ্চারণ শিখাতে ব্যয় করার পর উনি বললেন “বন্ধু,তোমার কি সাইন্টোলজি সম্বন্ধে ধারণা রয়েছে”? “না তেমন নয় তবে সাইন্টোলজি টম ক্রুজের ধর্ম হিসেবেই জানি”।
শুরু হল আলাপন!বিভিন্ন প্রশ্ন করাতে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে সাইন্টোলজির নানা বিষয় নিয়ে আমার সাথে উনি কথা বললেন।ভদ্রলোক পেশায় একজন ডাক্তার।অবসর সময়ে সাইন্টোলজি সম্পর্কে মানুষ কে অবহিত করেন।একটু কৌতুহল বোধ করলাম।আমি মালমো তে থাকি জেনে বললেন মালমোতে অবস্থিত সাইন্টোলজি চার্চের কথা এবং আমন্ত্রন জানালেন সেখানে যেয়ে দেখার জন্য।সময় বের করে চলে গেলাম সাইন্টোলজি চার্চে।যেয়ে দেখি ও বাবা এলাহী কারবার।এটাকে চার্চ না বলে কোনো বড় কোম্পানীর সদর দফতর বললে ভুল হবে না।অভ্যর্থনা তে আমার আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে বললাম,”আমার সাইন্টোলজি নিয়ে কৌতুহল,আমি জানতে চাই তোমাদের সম্পর্কে”।একজন অতীব সুদর্শন ভদ্রলোক এসে আমাকে সর্বমোট ৩ ঘন্টা ধরে পুরো চার্চ টা ঘুরে দেখালেন এবং তাদের কার্যপদ্ধতি বর্ণনা করলেন।৮ টি ছোট ছোট সিনেমা হল (উল্টাপাল্টা ভাববেন না শুধু মাত্র সাইন্টোলজি সংশ্লিষ্ট চলচিত্র দেখানো হয়) সহ ৭২হাজার স্কয়ার ফিটের এই ৫ তলা ভবনে যে কি নেই তা বলা মুশকিল।যাই হোক,সাইন্টোলজি ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে যা জানলাম তাই নিচে সহজ ভাষায় তুলে ধরছি।
* সাইন্টোলজির প্রবর্তক এল রন হাবার্ড (১৯১১ – ১৯৮৬) ১৯৫২ সালে এই ধর্ম টি প্রতিষ্ঠা করেন।
* এই মুহূর্তে ১০ লাখ মানুষ এই ধর্মের অনুসারি।
* সাইন্টোলজি কে আপনার একমাত্র ধমর্ হিসেবে নিতে হবে সেরকম কোন বাধ্যতা নেই।এটাকে আপনি আপনার প্রধান ধর্মের পাশাপাশি ২য় ধর্ম হিসেবে পালন করতে পারেন।
* সাইন্টোলজি ৮ টি গতিবিদ্যার উপর নির্ভরশীল।যেগুলো হল-
১.নিজস্বতা ( Self )
2. পরিবার (Family)
৩. শ্রেণী বদ্ধতা ( Group )
৪. মানবজাতি ( Mankind )
৫. সকল জীবন গঠন ( All life form )
৬.বাস্তব বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ( Physical universe)
৭.আত্মিকতা ( Spiritual )
৮.অন্তহীনতা ( Infinity )
সাইন্টোলজির বক্তব্য হল,১ নম্বর থেকে এই গতিবিদ্যাগুলো তে সম্পূর্ণ ভাবে পরিতৃপ্ত হয়ে ক্রমান্বয়ে ৮ নম্বর এ যেতে হবে এবং পরিতৃপ্ত হতে সাহায্য করবে সাইন্টোলজির নিজস্ব কিছু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি যেমন অডিটিং (একটি কার্যপদ্ধতি যা আপনাকে আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া বাজে স্মৃতি অথবা অভিজ্ঞতা ভুলিয়ে দিতে সাহায্য করবে ) ।
* বিভিন্ন কার্যধারা (Course) সম্পন্ন করলেই আপনি একজন সাইন্টোলজিস্ট বলে গণ্য হবেন।
* মূলত আমেরিকা ও ইউরোপ কেন্দ্রিক ধর্ম হলেও আফ্রিকা,অস্ট্রেলিয়ায় এবং এশিয়ার কিছু দেশে তাদের চার্চ ( থাইল্যান্ড,জাপান,শ্রীলংকা,চায়না ও ফিলিপিনস) ও সাইন্টোলজি মিশন ( ভারত,নেপাল ও পাকিস্তান ) রয়েছে। (তাদের কাছ থেকে শুনলাম করাচী তে নাকি সাইন্টোলজি মিশন রয়েছে,আমি তো পুরাই তব্দা খাইছি! )
মুগ্ধ নয়নে সব দেখা শেষ হলে ভদ্রলোক আমার কাছে অনুরোধ করেন একটা ছোট্ট ‘Personality Test’ দিতে।২০০ টা প্রশ্নের উত্তর বলে দেবে আমার মানসিক অবস্থা।দিলাম পরীক্ষা এবং তাতে ফলাফল আসলো আমি নাকি বিষাদগ্রস্থ মানুষ (১০০% খাঁটি মিথ্যা কথা,আমি জন্ম থেকেই “মাস্ত মাওলা” টাইপের মানুষ)।ভদ্রলোক আমাকে ছবি তুলে দিলেন এবং চা বিস্কুট খাইয়ে বিদায় দিলেন।
দর্শন শেষে বাসে আসার সময় মনে পরলো সাইন্টোলজি চার্চের ভেতর কোথাও কোন ডোনেশন বক্স দেখিনি!
পুরঁজনের এই ক্রীড়ায় আনকা ক্রীড়ক ভেদ করলে তো প্রত্ন ক্রীড়ক দের অপসৌকর্য।
ধন্যবাদ সকলকে। সকলের মঙ্গল হোক।
——- প্রত্যয় চৌধুরী
সাইন্টোলজি দেখছি বেশ লিবারেল, মানে সে সেকেন্ড আরেকটা বিশ্বাসে আপত্তি রাখেনা, মজার ইনফো। করাচীতে এদের মিশন আছে পড়ে আমিও তাব্দা খেলাম রে ভাই! ২০০ প্রশ্নের উত্তর দেবার ধৈর্য্য কিন্তু অনেক!
এমন আরো লিখুন 😀
ধন্যবাদ ভাই আমার!দোয়া করবেন যাতে নতুন বিষয় নিয়ে লিখতে পারি। 🙂 🙂
খুব ভালো লাগল। সাইন্টোলজি দর্শন সম্পর্কে কিভাবে বিস্তারিত জানতে পারি, সম্ভব হলে suggest করবেন। ধন্যবাদ।