— দ্বিতীয় পর্ব
ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম দিকে যশোর থেকে ঢাকা পৌঁছে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়লাম। সম্ভবত আবহাওয়া পরিবর্তন,পানি ও খাদ্যের পরিবর্তন ও সেইসাথে যাতায়াতের ক্লান্তি এ অসুস্থতার জন্য দায়ী মনে হয়েছে। শ্যালিকার বাসায় একদিন রেস্ট নিয়ে ওপর শ্যালক /শালিকাদের বাসায় দাওয়াত রক্ষা করতে গেলাম। ডায়াবেটিস এর জন্য আমার খাদ্য অভ্যাস অনেক পরিবর্তন ও সংক্ষিপ্ত করেছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা !! ছোট সম্বন্ধীর সুরশিকা স্ত্রী তার সাদ্ধমত রান্না করেছিল। এবং তার সন্তুষ্টির জন্য সব কিছু আমাকে খেতেও হয়েছে।
পরদিন ৬ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় অনেক ব্যাস্ত ও স্মরণীয় দিন কাটালাম। প্রথমে বেলা দশটার দিকে চাকুরী জীবনের ব্যাচমেট বন্ধু লিয়াকতের পরামর্শ মত সার্কিট হাউস রোডে নবনির্মিত তথ্য ভবনে গেলাম। এ ভবনে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর ,গণযোগাযোগ অধিদফতর ও চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের অফিস স্থাপন করা হয়েছে। বিশাল এ ভবনের প্রথম আট তালা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর,পরবর্তী চার তালা গণযোগাযোগ অধিদফতর ও সর্ব উপরের কয়েকতলায় চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের অফিস স্থাপন করা হয়েছে। ভবনটি দেখে ও ভবনের অফিস গুলির অবস্থা দেখে গর্বে আমার বুকটা ভোরে গেল। আমি চাকুরী ছেড়ে চলে গেছি পনেরো বছরের অধিক। এতদিন পরে তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের একটি বড় চাহিদা সরকার পূরণ করেছে এবং সহকর্মীরা শান্তিতে অফিস করতে পারছে দেখে আমার অনেক ভালো লেগেছে। একই ভবনে আমার অনেক সহকর্মীর দেখা পেয়ে খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম ।
প্রথমে আমি গেলাম চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরে ( ডি এফ পি ) মহাপরিচালক ব্যাচমেট বন্ধু ইসতিয়াক হোসেনের অফিসে। তার অফিসটি মন্ত্রণালয়ের সচিবের অফিসের মতোই বিশাল ও সাজানো গোছানো। ইসতিয়াককে অনেক দিন পর দেখলাম। সে আমাকে সাদরে আমন্ত্রণ জানালো তার অফিসে। তার অফিসে আজ আমাদের ব্যাচমেট ও সহকর্মী বন্ধুদের একসাথে লাঞ্চ করার কথা আছে। একে একে আমার ব্যাচমেট ও বন্ধুগণ আসতে লাগল তার অফিসে। একপর্যায়ে লিয়াকত আসলে তার উদ্যোগে ডি এফ পির নবনির্মিত ভবন ও উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন দিক ঘুরে দেখতে নিয়ে গেলো। উল্লেখ্য ,লিয়াকত ডি এফ পি র মহাপরিচালক থাকা কালীন এ তথ্য ভবন প্রকল্প পাশ হয় ও কাজ শুরু হয়। ডি এফ পি র বিভিন্ন বিভাগ ,একটি সুন্দর পুকর ও মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে এ প্রকল্পের আওতায়। এক পর্যায়ে ব্যাচমেট বন্ধু শচীন ও আজিজের সাথে নবম তলায় গণযোগাযোগ অধিদফতরে গেলাম। এ অধিদফতরে মহাপরিচালক আমাদের পরের ব্যাচের কর্মকর্তা। এরপর আমরা চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের অফিসে গেলাম। সব অফিসেই সাদরে আপ্যায়ণ করেছে কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ। খুবই সুন্দর পরিবেশ লক্ষ্য করলাম সবত্র।
দুপুরে লাঞ্চের আগে ডি এফ পি র মহাপরিচালক এর অফিস এসে দেখলাম ব্যাচমেট ও বন্ধু হেলাল,সুরথ ,হোসনেআরা,বেলাল ,জহির,সাত্তার ,হালিম , ফজলে রাব্বী , মোস্তফা ও সারওয়ার এসেছে আমার সাথে দেখা করতে । আমার ব্যাচমেট বন্ধুদের অনেকেই ইতোমধ্যে পি এল আর ‘এ চলে গেছেন। উপস্থিতদের মধ্যে ইসতিয়াক ,সারওয়ার ,জহির সুরথ এখনও চাকুরীতে আছে। বন্ধুবান্ধবদের দেখা পেয়ে আমি আনন্দে উদ্বেলিত হলাম। সব কিছু ভুলে আবার যেন চাকুরী জীবনের সেই প্রথম দিকের সময়ে ফিরে গেলাম আমরা। ইসতিয়াক বন্ধুদের সৌজন্যে লাঞ্চের জন্য ব্যাপক আয়োজন করেছে। ডি এফ পি মহাপরিচালকের বিশাল কনফারেন্স রুমে বসে আমরা লাঞ্চ করলাম। আমার আগমন উপলক্ষ্যে ব্যাচমেট বন্ধুদের এ আয়োজনে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হল। বিভিন্ন ধরণের গল্প ,কৌতুক,স্মৃতিচারণ ও লাঞ্চের পর কিভাবে যে ৪/৫ ঘন্টা সময় কেটে গেল সেটা বুঝতেই পারলাম না। এক পর্যায়ে লিয়াকত তার একটি এপয়েন্টমেন্ট রক্ষা করতে চলে যেতে চাইল। অন্যানোরাও যার যার কাজের জন্য আর বেশি সময় দিতে পারল না। আমারও বিকালে দেখা করার কথা আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠী বন্ধুদের সাথে। ইচ্ছা থাকলেও আর বেশি সময় আমরা একসাথে থাকতে পারলাম না। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চললাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে।
ডি এফ পি র মহাপরিচালকের দফতরে লাঞ্চের পরে ব্যাচমেট বন্ধুদের সাথে তোলা একটি ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌছালাম বিকাল সাড়ে চারটায়। হাতে কিছুটা সময় থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করলাম। অতঃপর সহপাঠী বন্ধু মুক্তোর সাথে কথা বললাম। সে বললো মধুর ক্যান্টিনে যেতে। সেখানে চা পান শেষে আমরা যাবো সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন আমাদের সহপাঠী রাশেদা ইরশাদ নাসিরের অফিসে। নামাজ পড়ে কিছুক্ষন টি এস সি চত্বরে একা একা ঘোরাফেরা করলাম। সেইসাথে বর্তমান প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের চাল চলন লক্ষ্য করলাম। ছাত্রছাত্রীদের একত্রে বসে আড্ডা দেয়া,ঘোরাফেরা ও খাওয়াদাওয়া সব কিছু যেন আগের মতোই আছে। শুধু বেড়েছে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ও সেই সাথে আনুষঙ্গিক সব কিছু। হাঁটতে হাঁটতে রোকেয়া হলের সামনে দিয়ে ভাষা ইনস্টিটিউটের পাশ দিয়ে মধুর ক্যান্টিনে পৌছালাম। মধুর ক্যান্টিনের সেই প্রাথমিক অবস্থা ধরে রাখতে খুব একটা সংস্কার করা হয়নি । আমার ছাত্রজীবনের সেই ৩৬/৩৭ বছর আগের পরিবেশ এখনও বিদ্যমান। সহপাঠী বন্ধু মুক্তো ,মোক্তার হাবিব সেখানে অপেক্ষা করছিল। ঐতিহাসিক মধুর ক্যান্টিনে চা সিঙ্গারা খেলাম বন্ধুদের সাথে। সেসাথে কিছুক্ষন চললো ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর ক্যান্টিনের সামনে ক্লাসমেট বন্ধুদের সাথে।
অতঃপর গেলাম সমাজবিজ্ঞান বিভাগের নবনির্মিত ভবনে। বিভাগের বর্তমান চেয়ারপারসন রাশেদা আমাদের ক্লাসমেট। তার অফিসে অনেকক্ষন চললো আমাদের আড্ডা ও চা পান ।দীর্ঘ সময় পরে সহপাঠী বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়াতে ভালো লাগলো। এ সময়ের মধ্যে প্রত্যেকের সংসার হয়েছে,পরিবর্তন হয়েছে অবস্থান বা জীবনযাত্রার স্টাইল। রাশেদা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের উন্নয়নে কি কি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সেটা আমাদের ব্রিফ করলো। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ ছাড়াও আমাদের সমাজবিজ্ঞান /৮৩ ব্যাচের বন্ধুরা এ বিভাগের কিছু কিছু উন্নয়ন কর্মসূচিতে নিজেদের উদ্যোগে কন্ট্রিবিউশন করছে। রাশেদার এ উদ্যোগকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছে। দীর্ঘক্ষণ রাশের্দ অফিসে সময় কাটানোর পর বাসায় ফেরার তাড়া অনুভব করলাম। আবার দেখা হবে এই প্রত্যাশা নিয়ে আমরা বিদায় পর্ব শেষ করলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্দালয় থেকে শ্যালিকার নিকেতনের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। সারা রাস্তা জুড়ে প্রচন্ড যানজট অতিক্রম করে রাত ১০ টার দিকে বাসায় পৌছালাম।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন রাশেদা ইরশাদ নাসিরের অফিসে সহপাঠী বন্ধুদের সাথে।
শারীরিক অসুস্থতা ও দাওয়াত রক্ষার জন্য আরো একদিন ঢাকায় অবস্থান করলাম। এছাড়া ঐদিন স্ত্রী ও ছেলের জন্য কিছু কেনাকাটা করলাম নিউমার্কেট ও নীলক্ষেত এলাকা থেকে। আমার দুই শ্যালিকা তাদের বোনের চাহিদা মতে এসব কেনা কাটায় আমাকে সাহায্য করেছিল। তার পরের দিন আমি বর্তমান সফরের দ্বিতীয় ও শেষবারের মত গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ যাত্রা করলাম।এবার গ্রিনলাইন পরিবহনের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাসে ঢাকা থেকে সকাল দশটায় রওয়ানা করে বিকাল পৌনে তিনটায় বাড়ি পৌছালাম। মাওয়া হয়ে লঞ্চ পারাপারের এ বাসের জার্নি আমি রীতিমতো উপভোগ করেছি। গ্রীনলাইনের এ বাস ঢাকা থেকে খুলনা যাতায়াত করে মাওয়া হয়ে। তাদের সার্ভিস অনেক উন্নতি লাভ করেছে বলে আমার মনে হল। আসার পথে আবার নির্মাণাধীন পদ্মা ব্রিজের নিচে দিয়ে আসলাম। পদ্মা ব্রিজ চালু হলে এ সব বাসে ঢাকা থেকে আমাদের বাড়ি আসতে তিন ঘন্টার অধিক লাগবে না। মনে মনে আবার পদ্মা ব্রিজের কাজ সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন হোক এই কামনা করছি।
যাইহোক, বাড়িতে এসে জমিজমা ও বাড়ির আরো কিছু কাজ নিয়ে চাচারা ও ভাইবোনদের সাথে আলাপ আলোচনা করলাম।ইতোমধ্যে আমার ছোট ভাই কানাডা থেকে বাড়ি এসে পৌঁছেছে। বাড়িতে এখন আমরা দুই ভাই ও চার বোনের সবাই উপস্থিত। জানিনা আল্লাহ আমাকে আবার এ সুযোগ আবার দেবেন কিনা ! বাড়িতে এবার ৩/৪ দিন থেকে ভাইবোন সবাইকে নিয়ে বরিশাল চললাম আমাদের বড় বোনের বাসায়। বরিশাল থেকে লঞ্চযোগে ছোট ভাই ভাগিনা-ভাগ্নি ও ছোটবোন কে নিয়ে ঢাকা যাবে। সেখান থেকে কক্সবাজর হয়ে টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিন যাবে সবাইকে নিয়ে। এ প্ল্যান সে অনেক আগে থেকেই করেছিল ভাগিনা ভাগ্নিদের সাথে। আমাকে তাদের সাথে বরিশাল হয়ে ঢাকা যাবার অনুরোধ করেছিল। সেমতে বরিশাল থেকে তাদের সাথে লঞ্চে ঢাকায় এসে পৌছালাম তেরোই ফেব্রুয়ারী ভোর রাতে। তাদের কে ঢাকা সদর ঘাট থেকে বিদায় জানিয়ে আমি আমার শ্যালিকার বাসায় এসে পৌছালাম।
শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো না থাকায় ঐ দিন রেস্ট নিলাম। বিকালে বন্ধু বাবুল এলো স্বপরিবারে। দীর্ঘদিন পর তার স্ত্রীকে দেখলাম। আমার শ্যালিকা আজ রাতে ডিনারের ব্যাপক আয়োজন করেছে আমার আগমন উপলক্ষ্যে। অনেকক্ষন একত্রে কাটিয়েদিনার শেষে বাবুল চলে গেলে আমার ব্যাগ ও লাগেজ গোছাতে শুরু করলাম। আমার শালিকা ইতোমধ্যে অনেকটা গোছগাছ করে রেখেছে বলে কাজটা সহজ হয়েছিল ।
১৪ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশে আবার আমার শেষ দিন। ঐ দিন অন্য কোন কর্মসূচি ছিল না। তবে চাকুরীর ব্যাচমেট বন্ধু লিয়াকত শুরু থেকে বলে আসছিল সে আমার শ্যালিকার বাসা থেকে মাত্র আধঘন্টার দূরত্বে (গুলশান-২) থাকে এবং কমপক্ষে দু’ঘন্টা যেন তার সাথে কাটিয়ে যাই। উল্লেখ্য, লিয়াকত গত বছর জুলাই মাসে কানাডায় কয়েক সপ্তাহের জন্য বেড়াতে গেছিল। আমি ও আমার ছোট ভাই সাদ্ধমত তাকে সঙ্গ দিয়েছি। সে কারণেই বোধহয় লিয়াকতের এ আবদার যে তাকে যেন কিছুটা সময় দেই । যাইহোক, লিয়াকতের সাথে কিছু সময় কাটানোর জন্য গুলশান -২ গেলাম। সেখানে থেকে লিয়াকত আমাকে ঢাকার এ অভিজাত এলাকার জীবন যাত্রার কিছু কিছু জায়গা দেখতে নিয়ে গেল। সে বললো , ঢাকায়ও অনেকে পাশ্চাত্যের স্টাইলে জীবন যাপন করে। আজ তার কিছুটা ধারণা সে আমাকে দিতে চায়। প্রথমে আমাকে নিয়ে সে গেল একটা মার্কেট প্লেসে। সেটা আমাদের টরোন্টোর প্রায় সমকক্ষ বলা যায়। মার্কেটে একটি সুপারস্টোর দেখে আমি হতবাক !এটির নাম “UNIMART” মার্কেটের মধ্যে দোকানপাট ,গ্রোসারি স্টোর ও সব কিছু সাজানো গোছানো। সেলস পারসন, তাদের পোশাক বা ইউনিফর্ম ও সবকিছুই আধুনিক। এ মার্কেটে দাম একটু বেশি হলেও সবই পাওয়া যাচ্ছে।
গুলশান-২ এলাকায় ‘UNIMART’ মার্কেটের ফুড কোর্টের কাছে বন্ধু লিয়াকতের সাথে ।
এরপর সে আমাকে আরো একটি মার্কেটে নিয়ে গেল। এটি সম্ভবত গুলশান এভেন্যু বা কামাল আতাতুর্ক এভেন্যুতে। সেখানেও সব কিছু পশ্চিমাদেশের স্টাইল সাজানো গোছানো। সেখানকার ফুডকোর্টে একটি স্যান্ডউইচের দাম দেখলাম সাত শত টাকা ! ছেলেমেয়েরা সেখানে বসে চা-কফি পান করছে। লক্ষ্য করলাম তারা ইংরেজিতে কথা বলছে। লিয়াকত জানাল এটা এখানকার স্টাইল। তারা এদেশে বাসা করলেও চাল চলন সব পশ্চাত্যের অনুকরণে করে থাকে। এ সব বিষয় আমার জানা ছিল না বলে আমি উত্তরোত্তর হতবাক হচ্ছি ! লিয়াকতের সাথে দেখা করতে না এলে এসব আমার দেখা হত না।
গুলশান-বনানী এলাকায় পায়ে হেঁটে আরো কয়েকটি জায়গা দেখলাম। একপর্যায়ে লিয়াকতের এপার্টমেন্ট থেকে গুলশান লেকের পাড় দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে অনেক বিখ্যাত/কুখ্যাত রাজনৈতিক নেতা/আমলার বাড়ি দেখতে পেলাম। আমি আগে জানতাম না যে এতদাঞ্চলে দেশের অনেক সকল নেতা/আমলাদের বাড়ি রয়েছে। পরে জুম্মার নামাজ পড়ার জন্য একটি বিশেষ মসজিদে গেলাম। এটার নাম গুলশান সোসাইটি জামে মসজিদ। বিশেষ মসজিদ এ জন্য বললাম যে এটার নির্মাণ শৈলী ও অবস্থান দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।পাঁচতলা বিশিষ্ট এ মসজিদের কোন গম্বুজ বা মিনার নাই । মসজিদের ফ্লোরে মাঝদিয়ে কোন পিলার নাই এবং চারিদিকে পুরু কাঁচের দেয়াল। জানতে পারলাম সালমান এফ রহমান গ্রূপের অর্থায়নে এটা নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের ইমাম সাহেবের জ্ঞানগর্ভ খুৎবা/ভাষণ থেকেও আমি মদিনা শহরের গুরুত্ত সম্পর্কে অনেক নুতন তথ্য পেলাম। তিনি প্রত্যেকটা বিষয় সুস্পষ্ট হাদিসের সূত্র ধরে ব্যাখ্যা করলেন। সত্যিকার অর্থে আমি অনেকদিন এতো ভালো খুৎবা শুনি নাই। নামাজ শেষে অত্যান্ত ফুরফুরে আমেজ নিয়ে বাহিরে আসলাম। আবারো মনে হল লিয়াকতের সাথে আজ না এলে আমার ঢাকা শহরের এসব বিষয় দেখা বা জানা হত না।
মসজিদ থেকে দুইবন্ধু বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে কথা বলতে বলতে আমরা হেঁটে চললাম । দুপুরের লাঞ্চ করার জন্য আবারো এলাম UNIMART মার্কেটের উপর তলায়। এখানে সেলফ সার্ভিস বুফে ও আরো বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। আমরা একটি সেলফ সার্ভিস বুফে থেকে নিজেদের পছন্দমত খাবার নিয়ে অপেক্ষাকৃত একটি ফাঁকা জায়গায় যেয়ে বসলাম। লাঞ্চ শেষ করে লিয়াকতকে এ সুন্দর ,স্বল্পস্থায়ী এবং আমার জন্য একটি জ্ঞানগর্ভ ও নুতন অভিজ্ঞতাপূর্ণ বেড়ানোর কর্মসূচির আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানালাম । লাঞ্চের পর আবার কিছুক্ষন একত্রে হেঁটে একসময় বাস স্টপে এসে পৌছালাম। অতঃপর বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শ্যালিকার বাসার উদ্দেশে রওয়ানা দিলাম। বাসায় পৌঁছে পুনরায় ব্যাগ/লাগেজ ও টিকেট পাসপোর্ট চেক করে তৈরী হলাম। রাত সাড়ে দশটায় ঢাকা এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওয়ানা দিলাম। ঢাকা থেকে জেদ্দা হয়ে টরোন্টোর বিমান ছাড়ল রাত দুইটার সময়। পরদিন সন্ধ্যায় টরোন্টো পৌঁছে আমার এবারের বাংলাদেশ সফরের সমাপ্তি টানলাম।
পরিশেষে আবার জানাচ্ছি , বাংলাদেশে এবার আমার সফরের ধারাবাহিক যে বর্ণনা ও মতামত দিয়েছি সেটা সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব। আমি নিজে যা দেখছি বা যা উপলদ্ধি করেছি সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এ ক্ষুদ্র পরিসরে আমার এ প্রয়াশ পাঠকের মনে কিঞ্চিৎ খোরাক জোগালেই নিজেকে সফল মনে করবো।