—প্রথম পর্ব
আমরা যারা প্রবাসী তারা সবাই সময় সুযোগ পেলে বা জরুরি প্রয়োজনে বাংলাদেশে যাই। দেশে আমাদের শেকড়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয় বিবিধ প্রয়োজনে। আত্মীয়–বন্ধুবান্ধব,সামাজিক কর্মকান্ড ,সহায়সম্পত্তি ইত্যাদি বহুবিধ কাজের জন্য দেশে যেতে হয় প্রবাসীদের। তবে দেশে গেলে এসব কাজকর্মের সাথে দেশে চলমান বিভিন্ন কর্মকান্ডও দেখা বা উপভোগ করার সুযোগ হয়।
আমার পৈতৃক ভিটা বা বাবার বসতবাড়ি গোপালগঞ্জের সদর উপজিলায়। আমাদের বাড়ি থেকে মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি মাত্র ৮কিলোমিটার। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর থেকে আমাদের এলাকায় অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ড শুরু হয়েছে। সরকার গোপালগঞ্জ–টুঙ্গিপাড়া সড়কের দু‘পাশ দিয়ে নির্মাণ করছে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প। ফলে এতদাঞ্চলের সড়ক সংলগ্ন অনেক চাষি জমি সরকার একোয়ার করেছে এ সব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য। আর এ সব জমিজমার মূল্য সরকার উচ্চহারে পরিশোধ করছেন। এ কারণে আমার প্রায় প্রতি বছরই বাংলাদেশে যেতে হচ্ছে। তবে এসব গতানুগতিক বিষয় ছাড়াও দেশে অবস্থানকালে অন্য যেসব বিষয় আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সেটা সকলের সাথে শেয়ার করতে চাই।
আমার ব্যাক্তিগত অভিমত ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরতে চেষ্টা করবো। বাংলাদেশে যাবার প্ল্যান করেছি ৪/৫ মাস পূর্বে। আমার ছোট ভাই দেশে যাবে আমার কিছুদিন পরে। দু’ভাই একসাথে থাকলে জমিজমার কাজ অনেকটা সহজ হবে মনে করেই দেশে যাবার প্ল্যান করি। সেমতে এ বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে দেশে যাই এবং ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি আবার কানাডা ফিরে আসি।
যাতায়াতের ব্যায় কমানোর জন্য এবার একটু ভিন্ন ভাবে টিকেট নিয়েছিলাম। যাবার সময় টরন্টো থেকে এয়ার কানাডায় লন্ডন ও পরে লন্ডন থেকে বাংলাদেশ বিমানে সিলেট হয়ে ঢাকা। লন্ডনে পাঁচ ঘন্টা যাত্রাবিরতির পর বিমানের প্রায় নুতন বোয়িং ৭৮৭–৯ এ আরোহন করে মনে হল যে বাংলাদেশ বিমানের সেবার মান এখন অন্যানো এয়ার লাইনের থেকে কোন অংশে খারাপ নয়।
বিমানের মধ্যে যাত্রীদের জন্য সার্বিক সার্ভিস যেমন সিটিং আর্রেঞ্জমেন্ট , পরিষ্কার টয়লেট ,খাবার মান ও বিমানের কর্মচারীদের ব্যবহার যথেষ্ট পরিমানে উন্নতি হয়েছে। আমার মত অনেকেই বাংলাদেশে যেতে বিমান কে বাদ দিয়ে মিডল ইস্ট বা অন্য কোন এয়ার লাইনের টিকেট নিয়ে দেশে যাতায়াত করে থাকেন। এবার আমি আমার ট্রাভেল এজেন্টের প্ররোচনায় বিমানে যেতে সম্মত হই। আমি এখন আমার বন্ধুদের বিমানে ভ্রমণের জন্য ইতোমধ্যে অনুরোধ করতে শুরু করেছি। প্রবাসী হলেও দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব বা কর্তব্য বোধ প্রায় সবার মধ্যে এখনো বিরাজমান। দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান ভালো করলে সেটা প্রচার বা তার সেবা গ্রহণ করা সঠিক বলে আমি মনে করি।
ঢাকা এয়ারপোর্টে দুপুর বারোটার দিকে অবতরণের পর ইমিগ্রেশন শেষ করে লাগেজ আমার সময় লেগেছে মাত্র আধঘন্টা। দালাল বা টাউট শ্রেণীর লোক খুব একটা চোখে পরে নাই। ঢাকা এয়ারপোর্টের এই অভূতপূর্ব পরিবেশ ও সার্ভিস দেখে আনন্দিত হলাম। এয়ারপোর্ট বিল্ডিঙের বাহিরে আমার বিশ্ববিদ্যালয় সহপাঠী বন্ধু মোতাহার বাবুল ও আমার ছোট ভাইরা মহিউদ্দিন খোকনকে অপেক্ষা রত দেখলাম। এবার একটু ব্যাতিক্রম করে ভাইরার বাসায় সরাসরি না যেয়ে আগে বাবুলের বাসায় যেতে মনস্থ করলাম। তার বাসা উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর। এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার। বাবুলের বাসায় তার স্ত্রী আপাতত নাই। তিনি তার কর্মস্থল রংপুর থাকেন এবং প্রতি উইকেন্ডে ঢাকা আসেন। চাকুরী জীবনের প্রথম দিকে খুলনায় আমি ও বাবুল একসাথে অনেক সময় কাটিয়েছি। সেসময়ের অনেক স্মৃতি বাবুলকে দেখে মনে পড়ে গেল। তবে সেসব বিষয়ে লিখতে গেলে একটি পূর্ণাঙ্গ বই লেখা যায়। সেই পরিমান ধৈর্য্য আমার নাই। যাইহোক, বাবুলের মন রক্ষা করে দুপুরে তার সাথে লাঞ্চ করে নিকেতনে আমার শ্যালিকার বাসায় রওয়ানা দিলাম।
বাবুল নিজে তার গাড়ি ড্রাইভ করে। সে আমার শ্যালিকার বাসায় রওয়ানা দিল প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে। রাস্তায় যানজট অত্যাধিক। উত্তরা ৪ সেক্টর থেকে গুলশানের নিকেতন হাউসিং এলাকায় পৌঁছাতে সময় লাগল দেড় ঘন্টা। এটা নাকি অপেক্ষাকৃত কম সময় লেগেছে। পথে আসতে দেখতে পেলাম বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার। সাথে আছে সংযোগ সড়ক। কিন্তু যানজট তো কমছে না ! আরো দেখলাম নির্মাণাধীন মেট্রো রেল যেটা উত্তরা বা টঙ্গী থেকে মতিঝিল যাবে। জানিনা তাতেও যানজট কম হবে কিনা !! রাস্তার শুধু হরেক রকম গাড়ি আর গাড়ি , আর সেই সাথে বিচিত্র ধরণের হর্নের আওয়াজ। মনে হল এ যেন এক বিরামহীন প্রতিযোগিতা যার শেষ কোথায় তা অজানা। যাইহোক , এক ধরণের ঘোরের মধ্যে দিয়ে পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে শ্যালিকার বাসায় এসে স্বস্তির নিঃশাস নিতে পারলাম।
পরদিন ঢাকায় রেস্ট নিলাম। এবং তার পরদিন গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের গোবরা ইউনিয়নের চরবয়রা গ্রামে যাবার প্রস্তুতি নিলাম। চাচাতো ভাইদের মাধ্যমে একটি ভাল পরিবহন বাসের টিকেট বুক করেছি। তবে রাতে বাবুল জানালো সে তার অফিসের কাজে গাড়ি নিয়ে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা ও মাদারীপুর যাবে। একসাথে দুই বন্ধু স্মৃতি চারণ করতে করতে যাবো এবং পরে সে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবে একফাকে। অগত্যা কি করা ! বাসের টিকেট বুকিং ক্যানসেল করে বাবুলের সাথে পরদিন সকালে তার অফিসের টয়োটা ল্যান্ড কুরুজার গাড়িতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।
সকাল বেলা রাস্তায় যানজট কিছুটা কম। আমরা মাওয়া ফেরি পার হয়ে ফরিদপুরের নগরকান্দা আগে যাবো বলে বাবুল জানালো। ঢাকার বুড়িগঙ্গা ব্রিজ পার হয়ে রাস্তার উন্নয়ন কাজ দেখতে দেখতে চলেছি। ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত বিশাল রাস্তা। আমি রাস্তার কাজ দেখছি আমার মনে মনে ভাবছি যে এতো ব্যাপক আয়োজনের এই কর্মকান্ড সরকার প্রায় শেষ করে এনেছে। এতো অনিয়ম বা অনিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। আমি অনেকটা মুগ্ধ নয়নে সব কিছু দেখছি।
মাওয়া ফেরি ঘটে আমি,মোতাহার বাবুল ( মাঝে ) ও তার এক সহকর্মী কর্মকর্তা
ফেরিঘাটে এসে বাবুল রাস্তার পাশের হোটেলে সকালের নাস্তার অর্ডার দিল। প্রায় দুঘন্টা অপেক্ষা করে ফেরিতে উঠলাম। ফেরির চার তলায় উঠে পদ্মা ব্রিজের অবকাঠামো দেখলাম। বিশাল এ ব্রিজ নির্মাণের প্রায় ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে সরকার দাবি করেছে। আমি দেখলাম ব্রিজের ৩/৪ তা স্প্যান ব্যাতিত সব গুলি স্প্যান বসানো শেষ। দুই স্তর বিশিষ্ট এ ব্রিজের উপর দিয়ে সড়ক যোগাযোগ ও নিচের স্তর দিয়ে রেল রাস্তা। দু’পাশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ আগেই শেষ হয়েছে। সম্পর্ণ দেশীয় অর্থায়নে এতো বড় একটি প্রকল্পের কাজ শেষ করতে যে সাহস বা প্ল্যানিং প্রয়োজন সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমাদের দেশের সীমিত সম্পদ ও যথাযথ প্রযুক্তির অভাব ,সেইসাথে দুর্নীতি ও চোরের উপদ্রব ইত্যাদি সব কিছু উপেক্ষা করে পদ্মা ব্রিজ নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ব্রিজ নির্মাণের এই বিশাল কর্মকান্ডের আমি সাফল্য করি আন্তরিকভাবে।
ফেরি থেকে তোলা নির্মাণাধীন পদ্মা ব্রিজের ছবি
পদ্মা ব্রিজ নির্মাণের ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলির জনগণের আর্থ – সামাজিক জীবনযাত্রার উন্নয়ন হবে সেটা অবধারিত। ইতোমধ্যেই সেটার কিছু কিছু নমুনা লক্ষ্য করেছি। রাস্তার দু’পাশে গড়ে উঠছে নুতন নুতন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ,মিল কারখানা ও অন্যানো স্থাপনা। ফেরি থেকে নেমে সংযোগ সড়ক দিয়ে যেতে যেতে এসবের কিছু কিছু দেখতে পেলাম। আর এপারের রাস্তাও পাশ্চাত্যের যে কোন রাস্তার মতোই বিশাল ও সুবিস্তীর্ণ। ফরিদপুরের ভাঙা মোড় যেন কানাডার কোন হাইওয়ের মতোই বিশাল ব্যাস্ত একটি জংশন। এখন থেকেই ফরিদপুর বরিশাল গোপালগঞ্জ খুলনা মংলা যশোর যাবার রাস্তাগুলি চারিদিকে চলে গেছে। ফেরিঘাট থেকে আমাদের প্রথম গন্তব্য ফরিদপুরের নগরকান্দার দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার। আমরা মাত্র চল্লিশ মিনিটের ড্রাইভে নগরকান্দা পৌছালাম।
নগরকান্দায় বাবুলের দফতরের স্থানীয় কর্মকর্তারা আমাদের অভ্যার্থনা জানালো এবং দুপুরের লাঞ্চ করতে একটি হোটেলে নিয়ে গেল। উপজিলা শহরের বাজারের মধ্যে ঐ হোটেল আমরা দুপুরের লাঞ্চ সেরে দেখি সময় বিকাল চারটা বাজে। বাবুল তার দফতরের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। কিছুক্ষন পর সে আমাকে তার গাড়ি ছেড়ে দিল আমার বাড়ি যাবার জন্য। বিকাল পাঁচটার দিকে আমি দু’বছর পর আমার গ্রামের বাড়ি পৌছালাম। অসুস্থ ছোট চাচা’কে দেখে এসে আজকের মত দিনের কাজ শেষ করলাম। বিমান ভ্রমণের জেটল্যাগ এখনো কাটে নাই। তাই বোনদের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে রেস্ট নিতে বিছানায় গেলাম।
দুবছরেরেও বেশি সময় পরে বাড়িতে এসেছি এবার। অনেক পরিবর্তন চোখে পড়ছে। আমার এলাকাবাসীর জীবনযাত্রা,চালচলন,রাস্তাঘাট ব্যাবসা বাণিজ্য সব ক্ষেত্রে আধুনিকতা বা উন্ননয়নের ছোঁয়া লেগেছে। গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেটে যেতে যেতে আমি দেখলাম রাস্তা সম্পূর্ণ পিচ ঢালাই করা। গ্রামের প্রায় সব ঘরবাড়ি পাকা বা সেমী পাকা বিল্ডিং হয়েছে। প্রত্যেকের বাড়িতে আছে ইলেকট্রিসিটি,আছে স্যাটেলাইট বা ডিশ টিভির সংযোগ। প্রায় সকলের বাড়ির হাঁস -মুরগির ঘরও পাকা।গ্রামের ছেলেদের অনেকের আছে মোটরসাইকেল। বহুদিন পরে গ্রামে এসেছি বলে অনেকেই কুশল জিজ্ঞাসা করেছে। আমিও তাদের সাথে সৌজন্য বিনিময় করেছি। গ্রামের কেউ অভাবগ্রস্ত বলে আমার মনে হল না। গ্রামের এহেন অবস্থা দেখে আনন্দে আমার বুক ভোরে গেছে।
আমাদের গ্রামের মধ্যে দিয়েই গোপালগঞ্জ -টুঙ্গিপাড়া সড়ক চলে গেছে। আমার বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে একদিকে ঘোনাপাড়া জংশন বা বাজার এবং ওপর দিকে নীলফা বাজার। তবে ঘোনাপাড়া বাজারের গুরুত্ব অনেক বেশি এবং উন্ননয়ন হয়েছে অনেক। এখানে নির্মিত হয়েছে একটি বিশাল চক্ষু হাসপাতাল ,সরকারি ঔষধ প্রস্তুতকারী এসেন্সিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি,ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল ,টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ,কয়েকটি ব্যাঙ্ক ,একটু দূরেই বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও আরো অনেক গুলি প্রতিষ্ঠান। আমার বাড়ির দুশো গজের মধ্যে নির্মিতব্য ধান গবেষণা ও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিটের সাইনবোর্ড দেখতে পেলাম। এজন্য ইতোমধ্যে জমিও একোয়ার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঘোনাপাড়া মোড়ের একপাশে গড়ে উঠেছে পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি মার্কেট ভবন। এ মার্কেটে সব ধরণের দোকানপাঠ ও ব্যাবসা প্রতিষ্টান গড়ে উঠেছে। এমনকি সেখানে একটি চাইনিজ হোটেলের সাইনবোর্ডও দেখতে পেলাম। ঘোনাপাড়া বাজার মোড়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরণের দোকানপাট। মোটকথা ,এটা একটা নুতন শহরের গোড়াপত্তন বলা যেতে পারে। এতদাঞ্চলের মানুষের আর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গোপালগঞ্জ শহরেও যাবার প্রয়োজন হয় না। আমার বাড়ির কাছেই নির্মিত হয়েছে গোবরা রেল স্টেশন। সকাল বিকাল এখন থেকে ট্রেন যাচ্ছে গোবরা টু রাজশাহী। অচিরেই ট্রেনের সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে বলে জানতে পারলাম।
তবে রাস্তায় অসংখ্য যানবাহন এবং তার ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত নিয়ে আমি ছিলাম রীতিমত শংকিত ! সব ধরণের গাড়ি যেন আগে যাবার প্রতিযোগিতায় নেমেছে !! রাস্তার ব্যাটারিচালিত ইজি বাইক ,মাহেন্দ্র ,ভ্যান, বাস ,মিনিবাস , দূরপাল্লার পরিবহন বাসের প্রতিনিয়ত হর্নের অত্যাচার রীতিমত পীড়াদায়ক। বিশেষ করে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য আজকাল ইজি বাইক ব্যবহার করে সবাই। সারা দেশেই এ বাইকের ব্যবহার বেড়েছে অস্বাভাবিক হরে। এটাকে আমার কাছে খুব একটা নিরাপদ যানবাহন মনে হয়নি । তবে মানুষের সেসব নিয়ে মাথা ব্যাথা আছে বলে মনে হল না । যাতায়াতের জন্য এগুলিতে আরোহন করা ছাড়া উপায় কি ?
এলাকায় নুতন বিশ্ববিদ্যালয় নির্মানের কারণে ছাত্রছাত্রীদের পদচারণা বেড়েছে অনেক। আমাদের গ্রামে ও আশেপাশের গ্রামে ছাত্রছাত্রীরা বাসা ভাড়া করে বাস করছে এবং লেখাপড়া করছে। তাদের চালচলনে লক্ষ্য করেছি আধুনিকতার ছোঁয়া। ছাত্রছাত্রীদের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে নগরে উঠেছে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান। নিজ গ্রাম ও আশেপাশের এলাকার এ উন্নয়ন দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। অবসর জীবন কাটানোর জন্য এখন গ্রামের বাড়ি আর কষ্টকর বা একাকী মনে হবে না। বিষয়টি এখন আমি সক্রিয়ভাবে চিন্তা করা শুরু করেছি।
ঘোনাপাড়া মোড়ের বর্তমান সময়ের একটি ছবি
গ্রামের বাড়িতে কয়েকদিন থেকে জমিজমা ও অন্যানো কাজ কিছুটা সম্পন্ন করে যশোরের শার্শায় আমার শশুরবাড়ি গেলাম দুদিনের জন্য। আমার গ্রামের বাড়ি থেকে প্রাইভেট কারে যেতে সময় লাগল মাত্র দু’ঘন্টা। ইতোপূর্বে চার ঘন্টার আগে কখনও যেয়ে পারতাম না। রাস্তাঘাটের উন্নয়নের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। আমার শাশুড়ি আম্মা ইন্তেকাল করেছেন প্রায় দেড় বছর। শাশুড়ির ইন্তেকালের পর আমার এই প্রথম শশুরবাড়ি গমন। সেখানে আমার সেজো সম্মন্ধি ও বাল্যবন্ধু আজিজুল হক পল্টু সাহেবের নুতন বাড়িতে এবার প্রথম উঠলাম। তবে সব কিছু যেন কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগল। শাশুড়ির কবর জিয়ারত করে তার বাড়িতে এসে মোটেই ভালো লাগছিল না। আমার মনোভাব বুঝে সে আমাকে তার সাথে বেনাপোলে তার অফিসে নিয়ে গেল। সেখানে কিছু পুরানো বন্ধু ও সহপাঠীর দেখা পেলাম। পুরানো বন্ধুদের সাথে কথা বলে ও তাদের বর্তমান অবস্থা জানতে পারলাম। অনেকের ছেলেমেয়ের বিয়েশাদী হয়েছে ও কর্মজীবনে ঢুকে পড়েছে। কয়েকজন ইতোমধ্যে দাদা-নানা হয়েছে। বেনাপোলে ও শার্শায় দুদিন বন্ধুদের সান্নিধ্যে সময়টা মোটামুটি ভালই কাটল।
শার্শা থেকে বেনাপোলে যেতে রাস্তাঘাট ও বাংলাদেশ-ভারত বর্ডারের উন্নতি লক্ষ্য করলাম। এ অঞ্চলেও সর্বত্র উন্নয়ন কর্মকান্ড চোখে পড়ল। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি বাস ও ট্রেন ভারতের কলকাতা যায় নিয়মিত। এ ছাড়া রাস্তা ঘাটের উন্নয়নের কারণে ব্যাবসা বাণিজ্যের জন্য অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে,আমার বাড়ি থেকে খুলনা ও যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত রাস্তার পাশ দিয়ে যে সব উন্নয়ন কর্মকান্ড দেখেছি তাতে মনে হয়েছে যে দেশের সব এলাকায় পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। আমি মনোযোগ সহকারে এসব দেখছি আর প্রস্তুতি নিচ্ছি দেশে এসে বসবাস করার জন্য। জানিনা সেটা কতটা সফল হবে !
শার্শা-বেনাপোলে বেড়ানো শেষে আবার ঢাকা রওয়ানা দিলাম। যশোর থেকে ইউ এস বাংলা এয়ার লাইনের একটি ডোমেস্টিক ফ্লাইটে ঢাকা পৌছালাম ৩৫ মিনিটে। যশোর বিমান বন্দরে বাংলাদেশ বিমান ছাড়াও ইউ এস বাংলা,নোভা এয়ার ও আরো কয়েকটি বেসরকারি এয়ার লাইনের বিমানযাত্রী পরিবহন করে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম এ সব বিমানের প্রতিদিন রয়েছে একাধিক ফ্লাইট। সকল ফ্লাইট প্রায় সব সময় যাত্রী পূর্ণ থাকে। মানুষের হাতে এখন টাকা পয়সা আছে। তাই সড়ক পথে যানজট থেকে রক্ষা ও সময় বাঁচানোর জন্য খুলনা যশোর ও ভারত গামী যাত্রীরা এখন আকাশ পথেই যাতায়াত করেন। যাত্রী বেশি ধরার জন্য সেবার মান ভালো রাখতে এয়ার লাইন গুলিও প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। এটা অবশ্য যাত্রীসাধারণের জন্য একটি ভাল বিষয়। এয়ার পোর্ট থেকেই উবারের ট্যাক্সি নিয়ে ভাইরার সাথে তার বাসায় আসতে প্রায় দেড় ঘন্টা লেগে গেল। শরীর কিছুটা অসুস্থ ও ক্লান্ত থাকায় সেদিনের মত ঘুমাতে গেলাম একটু আগেভাগে।
———
দ্বিতীয় পর্ব দেখুন …..