১৯৭১, রাওয়ালপিন্ডি , চাকলালা এয়ারপোর্ট থেকে প্লেন ভর্তি করে ঢাকা, পূর্ব পাকিস্তানে আর্মি নেয়া হচ্ছে । জেনারেল ইয়াহিয়া খান একদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করে আশার বাণী শুনাচ্ছেন , ওপর দিকে গোপনে গোপনে সেনা মোতায়েন করে আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন । বঙ্গবন্ধু জেনারেল ইয়াহিয়া খানের এই প্রতারণা বুঝতে পেরেছেন । মিটিংয়ের পর পর জেনারেল ইয়াহিয়া খান সরাসরি ঢাকা থেকে লারকানা, পশ্চিম পাকিস্তান (ভুট্টোর বাড়ি) গিয়ে আলাপ করে পূর্বের সিদ্ধান্ত পাল্টিয়ে নিতেন। তাছাড়া যেভাবে পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য সমাবেশ করা হচ্ছে , তা থেকে পরিস্কার-ই বুঝা যেতো, ক্ষমতা হস্তান্তর কি অদৌ হবে?
১৯৪৭ সনে পাকিস্তান হওয়ার পর থেকে দেশে কোনও সংবিধান (কনস্টিটিউশন) ছিলো না ।এই প্রথমবার জনগণ প্রত্যক্ষ ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছে ।জেনারেল ইয়াহিয়া খান একদিকে বঙ্গবন্ধুকে আশার আলো দেখিয়ে সংবিধান (কনস্টিটিউশন) তৈরির কাজে ব্যস্ত রেখেছেন, অপর দিকে আক্রমণের নীল নকশা এঁকে চলেছেন ।
ইসলামাবাদ থেকে আমাদের কিছু কিছু লোক দেশে যাওয়ার জন্য প্লেনের টিকেট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফেরত এসে বলতো, সাধারণ লোকদের না নিয়ে শুধু সৈন্য নিয়ে যাচ্ছে । অনেকে আবার এও বলতে শুনেছি, ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে জোর পূর্বক সিভিলিয়ান প্যাসেঞ্জারদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কেউ বলতে পারছে না । সে জন্য অনেকে প্লেনে আর্মির সঙ্গে ঢাকা যেতে নিরাপদ মনে করতো না ।
২৫ সে মার্চ ১৯৭১, কালো রাত্রি, রাজারবাগ পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , বিভিন্ন ছাত্র/ছাত্রী নিবাস ও তৎসংলগ্ন এলাকা কামান ও গোলাবারুদ নিয়ে আর্মি আক্রমণ করেছে । রাতের অন্ধকারে হল থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ ও পায় নি । নীলক্ষেতে হলের নিকটবর্তী বস্তিতে থাকা পুরুষ,মহিলা, ছেলে মেয়েরা এলো-পাথারি কামানের গোলাগুলিতে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে । ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলাকা ও রাস্তা- ঘাটে লাশ , সারা দেশে ভয়-ভীতি আর ত্রাসের রাজত্ব, লোকজন জীবন রক্ষার জন্য যে যেখানে পারছে পালিয়ে যাচ্ছে আর ঐদিকে পশ্চিম পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টো শুকরিয়া আদায় করে বলেছেন , “দেশ বেঁচে গেছে “। ভুট্টো করাচী , মুলতান ও বিভিন্ন স্থানে সভা সমিতি করে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের পূর্ব পাকিস্তানের গণ হত্যাকে সমর্থন দিয়ে জনগণকে ধোঁকা দিয়েছে ।
জেনারেল টিক্কা খান বলেছেন ,” পূর্ব পাকিস্তানে আমাদের মানুষ দরকার নেই, শুধু মাটির দরকার ” । এই নীতি নিয়ে ওরা স্বাধীনতার নয় মাস পূর্ব পাকিস্তানে ধ্বংস যগ্ম চালিয়েছে । জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রধান মন্ত্রী হতে চেয়েছেন – দেশ বাঁচাতে চান নি ।
ধর্ষণ একটা খারাপ শব্দ । এই ধর্ষণ নীতি অবলম্বন করেছিল জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও তাঁর পূর্ব পাকিস্তানে জেনারেল নিয়াজি । জেনারেল নিয়াজী স্বয়ং নিজে মেয়েদের পাশবিক অত্যাচার করতেন এবং সৈন্যদের উৎসাহিত করেছেন । মার্চ-ডিসেম্বর এই নয় মাস সময় তারা দুই লাখের ও অধিক মা-বোনকে জোর পূর্বক উনিভাসরসিটি হল, বাসা বাড়ি ও রাস্তাঘাট থেকে উঠিয়ে নিয়ে মাসের পর মাস ধর্ষণ করেছিল। ইসলামাবাদ বসে আমরা লোক মুখে এই জাতীয় বহু করুন কাহিনী শুনতে পেতাম। জেনারেল ইয়াহিয়া খান এবং তার সহ- কর্মীরা এ সময় রাওয়ালপিন্ডিতে মদ ও অপকর্মে মাতাল থাকতেন । কথায় বলে,” wine, women and war together destroy a country” ।” ওপর দিকে জুলফিকার আলী ভুট্টো উদাত্ত ভাষায় বলেছেন ,” আল্লাহ দেশকে বাঁচিয়েছে। “
পশ্চিম পাকিস্তানের পত্র- পত্রিকা খুললে মনে হতো পূর্ব পাকিস্তানে স্বাভাবিক অবস্থা । পত্র -পত্রিকা বা রেডিও, টেলিভিশনে সঠিক তথ্য গোপন করে সরকারের সুবিধা মতো খবর ছাপা হতো । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৫ সে মার্চ ১৯৭১ কালো রাত্রে, সে খবর আমরা অনেক পরে জেনেছি। পূর্ব পাকিস্তান থেকে নিরূপায় হয়ে, পায়ে হেটে এক কোটির মতো লোক প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিয়েছে, অথচ ভুট্টো ফলাও করে বলে বেড়াচ্ছে “দেশ বেঁচে গেছে “এটা অত্যন্ত দুঃখ জনক ।পূর্ব পাকিস্তানে,মুক্তিবাহিনীর প্যারালাল রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস এবং শান্তিবাহিনী তৈরী করে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও তাঁর সামরিক জান্তা মনে করেছে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনবে । আমাদের সাহসী ও বলিষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা এবং জনগণের ত্যাগের বিনিময়ে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি ।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান , ইসলামাবাদ থেকে কেউ ধরতে পেরেছে কিনা শুনি নি । আমরা দৈনিক ঘন্টার পর ঘন্টা রেডিও নিয়ে ব্যর্থ চেষ্টা করেছি । শুধু VOA(Voice of America) এবং ব্রিটিশ বাংলা খবর শুনে অনেক সময় আমরা পরস্পর বিরোধী খবর পাইতাম এবং তা থেকে বিভ্রান্ত হতাম ।
দেশের দুই অংশের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে । আমরা সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানে আটকা পড়ে গিয়েছি । পূর্ব পাকিস্তানে কোনো চিঠি পাঠানো যেতো না । আমার এক পরিচিত বন্ধু জার্মানি থাকতো যার মাধ্যমে আমি চিঠি পাঠাতাম। সে জার্মান থেকে পুনরায় ঢাকা চিঠি পাঠাতো । সে চিঠির জবাব জার্মানি হয়ে আসতো । একটা চিঠির জবাব পেতে ২-৩ মাস সময় লেগে যেতো ।
আমাদের এক বাঙালি সিভিল সার্ভিস অফিসার বিদেশ থেকে ট্রেনিং শেষ করে ইসলামাবাদে সদ্য কাজে যোগ দিয়েছেন । অফিসে কি সমস্যা হয়েছে, ফাইল থেকে কাগজ-পত্র হারানো গিয়েছে । অফিস তাঁকে সন্দহ করেছে যে সে স্বয়ং কাগজ সরিয়েছে । হয়তঃ তাকে ফাঁসানোর জন্য ওটা অফিসের কারসাজি ছিল । দেশে তার স্ত্রী ও মা-বাবা কোথায় আছে কিছুই জানেন না । বাসায় সে একা থাকতো এবং এ অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যতা হারিয়ে ফেলে । বাসায় টেবিলে একটা দুঃখ ভরা নোট রেখে আত্মহত্যা করে । ওর মৃত্যুতে ইসলামাবাদের সমস্ত বাঙালি মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে।
পাকিস্তান- ইন্ডিয়া যুদ্ধ শুরু হয়েছে । ইসলামাবাদে রাতে কারফিউ এবং (ব্ল্যাক আউট) , সারা শহর অন্ধকার । এক রাত্রের ঘটনা: বাসায় আমরা হারিকেন জ্বালিয়ে বসে আছি । রাত্র আনুমানিক ১০টা বা তারও কিছু বেশি, দরোজায় নক করা হচ্ছে. আমরা ভীত, ভিতর থেকে বলি কে! কে! একেতো সারা শহর অন্ধকার, তা আবার জোরে জোরে নক করা হচ্ছে ,জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালে বুঝা যাচ্ছে আকাশে ইন্ডিয়া -পাকিস্তানের আক্রমণ -পাল্টা আক্রমণ হচ্ছে । ঘরের দরজা খুলতে সাহস হচ্ছে না , জানালা দিয়ে দেখি কয়েকজন দাঁড়িয়ে জোরে জোরে কি বলছে ? আমাদের দেখে বলে, আমরা তোমাদের প্রতিবেশী ,please open the door. আমরা ভয়ে ভয়ে বলি কি জন্য ? ওরা বলে ,” তোমরা আকাশে টর্চ মেরেছো । আমরা বললাম ,আমরা কেন টর্চ মারবো? হ্যাঁ ! তোমরা টর্চ মেরে ইন্ডিয়াকে বম্বিং করার জন্য সাহায্য করেছো । আমরা দরজা খুলিনা দেখে ধমকা- ধমকি করে আমাদের সাবধান করে চলে যায় । এই ভয়াবহ পরিস্তিতে আমরা আকাশে টর্চ মারবো ? এটা তো কোনো পাগলও করবে না । কিন্তু এদের সঙ্গে তর্ক করা আর বিপদ ডেকে আনা- চুপ করে থাকলাম ।
আর এক দিনের ঘটনা, আমি এক বাসা থেকে মেসে আসছি । মাঠে কিছু ছেলে -পেলে খেলা-ধুলা করছে ।আমি ভয়ে ভয়ে দ্রুত পা বাড়াচ্ছি । কিছু ছেলে পিছন থেকে ছুটে আসছে । আমি ভয়ে চিৎকার করছি । কিছু বয়স্কো লোক খেলা দেখতেছিলো, সে দিন ওরা আমাকে ছেলেদের আক্রমন থেকে বাঁচিয়েছে । আমি তার পর আর একা একা কোথায় ও যেতাম না । দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দুঃখ ও আনন্দ থেকে আমরা ছিলাম বঞ্চিত । কি হবে আমাদের অবস্থা ,আমরা কি স্বাধীন দেশের মাটিতে যেতে পারবো? সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার মধ্যে আমাদের সে-ই অসহায় দিনগুলি কেটেছিল।
১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ।কয়েক মাস বসে থাকলাম ,রেডক্রসের মাধ্যমে কবে আমাদের দেশের মাটিতে পাঠাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই । শুনেছি ,অনেকেই পেশাওয়ার গিয়ে এজেন্টের মাধ্যমে বর্ডার পার হয়ে আফগানিস্তানে যাচ্ছে । আফগানিস্তান সরকার বাংলাদেশীদের ভারতে নিরাপদে পাঠিয়ে দিচ্ছে । আবার কেউ কেউ ধরা পড়ে দু-চার দিন জেল খেটে ফেরত ও আসতেছে । শেষে আমরা চারজন মিলে ঝুঁকি নিয়ে গোপনে এক দালালের সঙ্গে আলাপ করে অগ্রিম টাকা ও সামান্য কিছু কাপড় -চোপড় একটা ব্যাগে করে পাঠিয়ে দিলাম । পরে এক নিদৃষ্ট তারিখে রাতের অন্ধকারে আমরা চার জন পাকিস্তানী ড্রেস ,সেলওয়ার কামিজ পড়ে রাওয়ালপিন্ডি গিয়ে বাসে আলাদা আলাদা ভাবে সিট নিয়ে বসি । রাওয়ালপিন্ডি থেকে পেশাওয়ার ১১৪ মাইল, পেশাওয়ার গিয়ে এক নিদৃষ্ট হোটেলে রাত অবস্থান করি । পরদিন দালাল এক গাড়ি নিয়ে আমাদের বোরকা পরিয়ে বাসে বসিয়ে দেয় । গাড়িতে দুইজন পাঠান বয়ষ্কা মহিলা ও ছিল, যারা বিভিন্ন চেক পোস্টে পুলিশ গার্ডের সঙ্গে কথা আদান প্রদান করছে । আমাদেরকে পাখতুনিস্তান উপজাতীয় এলাকা (ট্রাইবাল এরিয়াতে) নামিয়ে দিয়ে বলে,” তোমরা এখন সেফ আছো”, এই এলাকাতে পাকিস্তান সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই । আমাদের চার জনের জন্য ওরা দুই জন গার্ড ও একটি গাধা মালামাল বহনে সাহায্য করে ।
দিনের ১২টা বাজে উপজাতীয় এলাকা (ট্রাইবাল এরিয়া) থেকে আমরা হাটা শুরু করি , পরদিন সকাল ৮টা বাজে পায়ে হেটে দুর্গম পাহাড়ি পথ পার হয়ে আফগানিস্তান বর্ডারে পৌঁছি । ওরা বর্ডারে নিয়ে বলে ” তোমরা ওপারে গিয়ে নিজেরা ব্যবস্থা করে কাবুল চলে যাও । “ ওই জায়গার নাম ছিল জালালাবাদ (কাবুল থেকে ৭৫ মাইল)যেখান থেকে আমরা এক ট্রাক নিয়ে কাবুল ইন্ডিয়ান হাই কমিশন গিয়ে রিপোর্ট করি। রিপোর্ট করার পর, হাই কমিশন এক হোটেলে পাঠিয়ে দেয়। এই হোটেল ছিল সম্পূর্ণ বুকড,সবাই বাংলাদেশে আসার যাত্রী। আমাদের চার জনেই অসুস্থ অবস্থায় রয়েছি । এত-ই উচা নিচা পাহাড়ি পথ, পানির ঝর্ণা, একবার নিচে নামা,একবার উপরে ওঠা , এই করে আমরা দুর্বল হয়ে পড়েছি। আমার শরীরে জ্বর এসে গিয়েছে। সারা রাত বেডে এ পাশ ও পাশ করে পরদিন হাসপাতালে গিয়ে ঔষধ নিয়ে আসি।
সে সময় মহম্মদ জাহির শাহ আফগানিস্তানের বাদশাহ ছিলেন । দেশ ছিল শান্তিপূর্ণ ।ধর্ম ভিত্তিক বা রাজনৈতিক সমস্যা ছিল না । পরদিন আমরা হাসপাতালে ডাক্তারকে দেখিয়ে ঔষুধ নিয়েছি । আজকাল আফগানিস্তানে মহিলাদের স্বাধীনতা আছে কিনা জানি না । সে যুগে মেয়েদের জন্য আলাদা স্কুল এবং কলেজ ছিল। বিকেলের দিকে আমরা বাদশাহ মহম্মদ জাহির শাহের প্যালেসের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখতাম । শান্তিপূর্ণ দেশ, সবাই যার যেই পেশায় কাজ করতো।
রেডক্রসের মাধ্যমে আমাদের যাওয়ার টার্ন আসতে দুই সপ্তাহ লেগে গেলো। আফগান এয়ারলাইন্স এ আমাদের দিল্লী পাঠিয়ে দিলো। ওখানে আমাদের এক লঙ্গরখানায় ৪-৫ দিন রেখে কাগজ পত্র প্রসেস করিয়ে ইন্ডিয়ান রেলওয়ের মাধ্যমে দিল্লী থেকে কলিকাতা এবং যশোহর (বেনাপোল) চেক পোস্ট হয়ে খুলনা চলে এসে লঞ্চ যোগে ঢাকা চলে আসলাম । যশোহর বেনাপলো বর্ডার পার হওয়ার পর মনে হলো আমি এখন বাংলাদেশে । কি যে শান্তি তা বুঝানো যাবে না । নিজের অজান্তে চোখে আপনা আপনি জল এসে গেছে । খুলনা থেকে লঞ্চে ঢাকা চলে এলাম।
“সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যোস্তেও তুমি, ও আমার বাংলাদেশ প্রিয়ো জন্মভূমি…। “
সমাপ্ত