আমরা অনেকেরই কানাডাতে এসেছি রঙিন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে। যে স্বপ্নকে ঘিরে আছে নিশ্চিন্ত, শান্তিময় এক সুন্দর জীবন। সন্দেহ নেই জীবন এখানে আসলেই শান্তিপূর্ণ। কিন্তু যখনি ইপ্সিত, পেশাগত কর্ম সংস্থানের প্রশ্ন আসে, তখনি নিরাশা আর অসন্তুষের স্রোত প্রবল বেগে বইতে শুরু করে। জীবনের বাকি সব ইতিবাচক দিক তখন গৌণ হয়ে পড়ে। Land of Opportunity রুপ নেয় Land without Opportunity তে । কানাডায় আসার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকথা নিয়ে নতুন ভাবনা জন্ম নেয়। অবিশ্বাস্য মনে হলেও অভিবাসনের এই রোলার কোস্টার রাইডএ আমরা কম বেশি সবাই চড়েছি। অনেক চরাই উৎরাই পেরিয়ে আমরা অনেকেই এখন স্থিতিশীল, আবার অনেকেই একই পথে এখনো হাটছি অবিরাম. ফলে অভিবাসনের বিতর্কে পেশাগত কর্মসংস্থানের বিষয়টি সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে যায়।
আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক চাহিদা, সমস্যা এবং প্রেক্ষাপট ভিন্ন, সেই হিসেবে আমাদের প্রত্যাশাও ভিন্ন। নিজেদের প্রস্তুতির উপর নির্ভর করে আমরা কে কতটা সার্থক ভাবে এই চেলেঞ্জকে মোকাবেলা করতে পারছি। আমরা অনেককে দেখি এদেশে আসার কিছুদিনের মধ্যেই নিজের কাঙ্খিত কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন, আবার অনেককেই দেখি দিনের পর দিন সংগ্রাম করেন নিজের পেশায় সাধারণ একটি কর্মসংস্থানের আশায়। এটা কি নিরন্তর চেষ্টা, পরিশ্রমের ফসল নাকি নিছক ভাগ্য ? এর সঠিক উত্তর আসলে আমরা কেওই জানি না। কিন্তু আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে একটি বিষয় খুব ভালো ভাবেই উপলব্দি করি আর তা হলো পেশাগত কর্মসংস্থানের জন্য সঠিক কৌশল নির্ধারণ এবং তার যথাযথ প্রয়োগ।
মনে রাখা দরকার যে এখানকার চাকুরীর একটি বড় অংশ (অনেকে বলে থাকেন 70-80%) বিজ্ঞাপনেই আসে না। সুতরাং শুধুমাত্র resume/cover letter পরিবর্তন, পরিবর্ধনের প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন। আমার নিজের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করা, বিভিন্ন ধরণের পেশাগত সমিতি, এসোসিয়েশন এবং অনুষ্টানে অংশ নিয়ে নেটওয়ার্কিং এর সুযুগ বাড়ানো, স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদি কোর্সের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতার একাডেমিক ভিতকে মজবুত করা এবং কাঙ্খিত পেশায় অভিজ্ঞ কাউকে Mentor হিসেবে নিয়ে তার পরামর্শ এবং নিৰ্দেশনামতো কাজ করা। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সব রখমের প্রতিবন্দকতা সত্ত্বেও হাল ছেড়ে না দিয়ে, মনোবল অটুট রেখে লক্ষ্যে স্থির থাকা। অনেকে আছেন যারা শুরুতে যথেষ্ট আগ্রহ নিয়ে নিজের পছন্দের কাজ খুঁজে শুরু করেন। কিছুদিন চেষ্টা করে বিফল হলে এমন একটি কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন যে কাজে হয়তো কোনো কালেই তার আগ্রহ ছিল না। আমি মনে করি নিজের অপছন্দের কাজ করে জীবনের ভার বয়ে বেড়ানোর চাইতে কিছুটা কষ্ট করে হলেও কাংখিত কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের চেষ্টা করার মতো স্বস্তিকর আর কিছুই হতে পারে না। এই পরিভ্রমণের পথ খুব মসৃন নাও হতে পারে, নেতিবাচক পরিবেশ, পরিস্তিতি এই যাত্রায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে, দমিয়ে দিতে পারে মনোবল. কিন্তু দৃঢ়তা, নিষ্টা, একাগ্রতা নিয়ে লেগে থাকলে লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব কিছু নয়। স্রষ্টার অপার করুনায় তখন শান্তি এবং স্বস্তির বৃষ্টি ঝরতে পারে আমাদের উপর, হতাশার কালো মেঘ সরে গিয়ে উন্মোচিত হতে পারে নতুন দিগন্ত। প্রবাসে রঙিন ভবিষ্যতের স্বপ্নও তখন রূপ নিতে পারে পরিপূর্ণ বাস্তবে. সেই দিন আসলেই বেশি দূরে নয়।
সৈয়দ মসিউল হাসান
টরন্টো থেকে
সুন্দর একটা লেখার জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ হাসান ভাই বেস্ততার মধ্যে সময় বের করে লেখার জন্য যেটা আমরা সব সময় পারি না। আপনি যে কথাগুলি বলেছেন তা সত্যি কিন্তু সবার পক্ষে নতুন করে কিছু করা এবং হাল ধরে বসে থাকা সম্ভব না তাই অনেকদিন আগে একটি লেখায় আমি লিখেছিলাম আসার আগে নিজের নতুন করে কিছু করা এবং লেগে থাকার ধৈর্য এখনো আছে কি না সেটা জেনে আসার তা না হলে আজীবন পস্তাতে হবে। অবস্থা অনেক পাল্টেছে কিন্তু এখনো অনেক পেশাদার ইম্মিগ্রান্টরা আছেন যারা সাম্প্রতিক এসেছেন তারা পছন্দের পেশায় চাকরি পেতে হিমশিম খাসছেন যদিও অনেকে একথা বিশ্বাস করতে চান না। আমি বলতে গেলে প্রায়ই এমন লোকের দেখা পাই।
যাহোক আপনার লেখার সব চেয়ে ২টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই , সেটা হলো “নেটওয়ার্কিং” “কাঙ্খিত পেশায় অভিজ্ঞ কাউকে Mentor হিসেবে নিয়ে তার পরামর্শ এবং নিৰ্দেশনামতো কাজ করা” . এই দুটি জিনিস না থাকলে আমি আপনি কেউই পেশাগত চাকরি পেতাম না।
আর আমি সমস্ত পেশাগত চাকরিজীবীদের বলবো , তাদের অর্গানাইজেশনে নিজের অবস্থান দৃঢ় করে অন্তত একটা বাংলাদেশী ভাই অথবা বোনকে ঢোকানোর চেষ্টা করুন। এভাবে সব পেশাজীবীরা যদি চেষ্টা করে তাহলে জ্যামিতিক হরে আমাদের দেশের পেশাগত লোকজন বেড়ে যাবে। ধন্যবাদ আবারো আপনার মাঝে মধ্যে ইন্টারেস্টিং লেখার জন্য। ইদানিং লামিয়ার কোনো লেখা দেখি না , হয়তো বেসতো।
মুকুল ভাই, আপনার অনুপ্রেরণমূলক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ. আপনার সাথে একমত, বাংলাদেশী ভাই বোনদের পেশাগত কাজে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের ভূমিকা আরো বাড়ানো উচিত. আমার নিজের প্রতিষ্টানে একটি রিলিফ পজিশনে বাংলাদেশী এক ছোট ভাইকে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে আমার সামান্য কিছু ভূমিকা ছিল, সে নিজের কর্ম দক্ষতায় আজ ফুলটাইম পজিশনে কাজ করছে. একই ভূমিকা আপনিও পালন করে যাচ্ছেন সবসময়ই. আমাদের সবার মধ্যে এই উপলব্দি থাকলে বাংলাদেশিদের পেশাগত কর্মসংস্থানের প্রচেষ্টা অনেক এগিয়ে যাবে. কিন্তু আর একটি বিষয়ও খেয়াল রাখা দরকার, যারা পেশাগত কর্মসংস্থান খুঁজছেন, তাদেরকেও আরো proactively এগিয়ে আসতে হবে. উধাহরণস্বরূপ তারা পরবাসিব্লগ.কমএ এই বিষয়ে প্রশ্ন/ মতামত রাখতে পারেন. নিজ নিজ পেশায় যারা মুটামুটি অভিজ্ঞ, তারাএইসব প্রশ্ন বা মতামতের উত্তর দিতে পারেন. এমনকি ভবিষ্যতে, পরবাসীব্লগের সদস্য যারা বিভিন্ন পেশায় কাজ খুঁজছেন, পরবাসীব্লগ.কমের উদ্যোগে আমরা তাদের জন্য Mentorship এর আয়োজন করা যায় কিনা সেটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করতে পারি. এই পরবাসিব্লগ.কমকে কেন্দ্র করে এই বিষয়ে অনেক কিছুই সীমিত আকারে হলেও করা সম্ভব. কিন্তু তার জন্য দরকার সবার অংশগ্রহণ এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা. তা না হলে এই বিষয়টি “Occassional Glamarous Discussion” হিসেবেই থেকে যাবে.
মশিউল হাসান ভাই, নতুন অভিবাসী হিসেবে আপনার লেখা পড়ে অনুপ্রাণিত হলাম।আশা করি এ রকম আরো লেখা প্রকাশ করে আমার মতো নতুন অভিবাসীদের তথ্য প্রদান করবেন ও অনুপ্রাণিত করবেন।ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকা আসলেও অনেক কঠিন কাজ এবং মানসিক শক্তির প্রয়োজন। তাই মানসিক শক্তি যোগাতে আপনার এই লেখার মতো এ ধরনের লেখা পরবাসী ব্লগে আরো বেশি প্রকাশিত হবে এই প্রত্যাশা করি।
ধন্যবাদ জাকির ভাই, আপনার লেখার অপেক্ষায় আছি.