ঘটনার সূত্রপাত বেগুনভাজি থেকে। সমাপ্তি ডিম ভুনায়। ঘটনার সাথে কিছু ভনিতাও আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে আবহাওয়াও বদলায়। আর হঠাৎ রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশ বদলে হয় বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব । আর বৃষ্টিযুক্ত আবহাওয়া আবহমান কাল থেকেই বাঙালী মনে প্রথমেই যা ভেসে আসে তা হল “খিচুরী”। কালের বিবর্তনে ফেসবুক এসেছে কিন্তু বাঙালী মনমানসিকতা আর মননে একটুও পরিবর্তন হয়নি, এখন মেঘলা আকাশ মানেই ফেসবুক খিচুরীর ছবিতে সয়লাব। খিচুরী আমার প্রিয় একটি খাবার তাই বৃষ্টি না হলেও আমার খেতে মন চায়।
আমার উনি খুব একটা খিচুরী পছন্দ করেন না, তাই খিচুরী রান্না করা তার কাছে একটা যন্ত্রণা। ব্যপারটা আমার জানা ছিল তাই ফেসবুকে বন্ধুদের খিচুরীর ছবির পোস্ট দেখে নিজের বুকে সাহস নিয়ে ফেসবুকে একটা পোস্ট দিলাম “খিচুরী খেতে মনে চায়” । আজকাল ফেসবুক পোস্ট থেকে অনেকেই অনেক উপকার পান। আমার পোস্টও ব্যারিষ্টার সুমনের পোস্টের মত কাজ দিল। উনি আমার পোস্টে কোনই রিয়েক্ট দিলেন না, তবে পোস্ট দেওয়ার দুই দিন পর নিরবে খিচুরী রান্না করলেন। সাথে পোস্টের মেন্যু মতো বেগুনভাজি আর ডিম ভুনা। বলা বাহুল্য পোস্ট যেদিন দিয়েছিলাম সেদিন ছিল মেঘলা আকাশ আর গুরি গুরি বৃষ্টি। খিচুরী যেদিন রান্না হল সেদিন ঠাডা রোদ।
বেগুনভাজি দিয়ে খিচুরী খাওয়া শুরু করলাম। তিনি খিচুরী পছন্দ করেন না তাই ভাত খেতে বসলেন। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কেমন হয়েছে? আমি বললাম “ বেগুন ভাজাটা আরেকটু ভাজা ভাজা হলে ভাল হত”। উনার পরের উত্তর সোজা সাপ্টা “ এর পর থেকে বেগুন ভাজি নিজেরটা নিজে করে খাবা “ । তারপর উনি বললেন, “ বেগুনভাজা খেতে হবে না, ডিম ভুনা খাও”। অগত্যা ডিম ভুনা নিতে হল, ডিম ভুনা উনার ভাল রান্না গুলোর একটা। ডিম ভুনার পিয়াজ আর লাল লাল ঝোল দেখে অনুমানেই বুঝলাম রান্না ভাল হয়েছে। তাই বেশি করে ঝোল নিয়ে পুরোটা খিচুরী মাখিয়ে এক লোকমা মুখে দিয়েই বুঝলাম শাস্তি সরুপ এই তরকরিতে মরিচের গুরা বেশি দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় লোকমা পেটে যেতেই পেট গুরগুরানী শুরু, কিন্তু মুখে আনন্দের ভাব নিয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে খাওয়া শেষ করেই বাথরুমে গিয়ে শান্তি পেতে হয়েছিল । তবে ডিম ভুনা নিয়ে আর কোন মন্তব্য করার সাহস পাই নাই পাছে ডিম ভুনাও পরের বার থেকে নিজেকেই করে নেওয়ার অধ্যাদেশ জারী হয়।
সে বেলায় তিনি ডিম ভুনা নিজে খান নাই আর আমিও সাহস করে ডিম ভুনা রান্নার উপকরণ নিয়ে কিছু বলি নাই। তবে পরের বেলায় উনি খেতে বসে ডিম ভুনা নিলেন আর আমাকেও নিতে বললেন। আমি উনার ডিম ভুনা নেওয়া দেখে মনে মনে হাসলাম, তবে সে হাসি মন থেকে কখন যে বাইরে মুখে চলে এসেছিল তা আমার খেয়াল ছিল না, তবে তিনি ঠিকই খেয়াল করেছিলেন। আমার মতোই এক লোকমা দিয়ে তিনি বুঝলেন এটা আমাশয় ঘটাতে পারে। এবার আমাকে জেরা করে বললেন “এত যে ঝাল হয়েছে আমাকে বল নাই কেন? “ আমি যতই বুঝাই ডিম ভুনাও বেগুনভাজার মতো নিজেকে করে খেতে হবে সেই আশঙ্কা থেকে কিছু বলি নাই, কিন্তু তিনি তা মানবেন না। উনার সোজা সাপ্টা কথা, “তোমার হাসি হাসি মুখই বলে দেয় কেন তুমি আমাকে বল নাই যে ডিম ভুনা এত ঝাল হয়েছে”। আরো এক লোকমা মুখে দিয়েই তিনি ছুটে গেলেন ফ্রিজের দিকে, তারপর ফান্টা বের করে এক চুমুকে অনেকটা খেয়ে বলল্লেন “অনেক ঝাল হয়েছে” । আমার হাসি হাসি মুখটা তখনো অমলিন ছিল আর তাতেই তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে বলল্লেন “ আমার কষ্ট দেখলে খুউউউব ভাল লাগে, তাই না”
আমি যতই বলি “ স্যোয়ার আপন গড তোমার কষ্ট না ডিম ভুনা যে ঝাল হয়েছে তা যে তুমি নিজেই বুঝতে পেরেছ সেজন্য আনন্দ লাগছে” , তিনি আমার কথা কিছুতেই বিশ্বাস করলেন না। আমার আন্তরিক হাসি হাসি মুখের ভাবটাই অবশ্য উনার এই দৃঢ় সন্দেহের জন্য দায়ী। 🤪😝😂🤣