চতুর্থ পর্ব-
রেইকি। ভাইটাল লাইফ ফোর্স এনার্জি। রেইকি গ্রান্ড মাষ্টার পারুল দত্তের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখাটি লিখেছেন দীপান্বিতা নায়ার। নব্বই-এর দশকের সানন্দা থেকে সংগৃহীত।
রেইকি করার আগে কোনো প্রস্তুতির দরকার আছে?
না। স্নান করা বা খালি পেটে, ভরা পেটে করতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। যেকোনো সময়ে রেইকি করা যেতে পারে। তবে শারীরিক না হলেও মানসিক প্রস্তুতি দরকার, কারণ কনসেন্ট্রেশন প্রয়োজন।
প্রথম রেইকি নেওয়ার অনুভূতি কেমন?
রেইকি শুধু শরীর নয়, মনের উপরও কাজ করে। তাই রেইকি নেয়ার সময়ে প্রথমেই আপনার ইমোশনাল লেভেলে ব্যালেন্স আসবে। হঠাৎ মনে হবে আপনি দুশ্চিন্তাশূন্য এবং যদি আপনার ভেতরে কোনো বেদনা থাকে সেখানে সঙ্গে সঙ্গে রেইকি পৌঁছে যাবে। পার্টিকুলার কোনও জায়গায় গরম লাগবে। এমনও হয়েছে, এতো গরম লাগছে যে কেউ কেউ সহ্যই করতে পারছেন না ৷ আবার অনেকেই বুঝতেই পারছেন না। রেইকির অনুভূতি নির্ভর করে ব্যক্তি বিশেষের উপরে। তবে একবার রেইকি নেয়ার পরে বার বার রেইকি নিতে ইচ্ছা করবে। আসলে এই রকম পাওয়ারফুল লাভিং টাচ-এর স্বাদ কে না চায়। কার না ভালো লাগে।
রেইকি কি মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের অবনতি রুখতে পারে?
আগেই বলা হয়েছ রেইকি নামক এই শক্তি শরীরের উপর যেমন কাজ করে, তেমনই মনের উপর কাজ করে। ভারসাম্য আনে ইমোশনাল লেভেলে। যখনই কোনো সমস্যা হয় তার একটা কারণ লুকিয়ে থাকে মনের মধ্যে। রোগের ক্ষেত্রে রেইকি মূল সোর্স অফ ট্রাবল যেমন সারিয়ে তোলে তেমনই মানসিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে রেইকি সমস্যার বীজ যা মূলত তৈরী হয় নেগেটিভ অ্যাটিটিউড থেকে তা নির্মূল করে। কারণ আগেই বলা হয়েছে রেইকি পজেটিভ এনার্জি। মনের উপর এই পজেটিভ এনার্জির প্রভাব অপরিসীম। তাই রেইকির মতো ইনটেলিজেন্ট এনার্জি পৌঁছে যায় সমস্যার রুটে। আসলে বেশির ভাগ বিবাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় সমস্যার সমাধান চোখে পড়ে না, কারণ আমাদের অন্তরের নেতিবাচকতা আমাদের ইগো পথ আটকায় সমাধানে পৌঁছতে। যেহেতু রেইকি টোটালি পজেটিভ এনার্জি সেহেতু রেইকি করলে একজন মানুষের পুরো দৃষ্টিভঙ্গিটাই পাল্টে যায়। ফলে সে সবকিছু তখন পজেটিভ দিক থেকে দেখতে আরম্ভ করে। এছাড়াও রেইকি ইমোশনাল স্তরেও ভারসাম্য আনে। তখন নিরপেক্ষভাবে একে অন্যকে বোঝার চেষ্টা থাকে। ফলে সমস্যার সমাধান খোঁজার মতো ধৈর্য আসে। ইদানীংকালে স্বামী-স্ত্রীর সমস্যার সমাধানের জন্য রেইকির ব্যবহার স্বীকৃত। শুধু স্বামী-স্ত্রী কেনো নিকট সম্পর্কের মধ্যে বিবাদ হলেও সে ক্ষত্রে রেইকির সাহায্য নেয়া যেতে পারে। কারণ এইসব বিবাদের ক্ষেত্রে কেউ আমরা নিজেদের ত্রুটির দায়িত্ব নিই না। একে অন্যকে দোষারোপ করি। ফলে সমস্যা বাড়ে বৈ কমে না। ভাইটাল লাইফ ফোর্স এনার্জি রেইকি যেহেতু আমাদের মনে সমতা আনে।, আমরা যুক্তিসম্মত হয়ে যাই। আর তখনই অন্যের সাথে নিজের ভুলটা নজরে পড়ে। তখন আমরা সমাধান খোঁজার চেষ্টা করি।এইভাবে রেইকি মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে পারে। সেকেন্ড ডিগ্রি রেইকিতে কাউকে না জানিয়ে স্পর্শ না করে রেইকি করা যেতে পারে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে সেকেন্ড ডিগ্রি রেইকি প্রয়োগ করা হয়।
বাচ্চাদের পড়াশুনার ক্ষেত্রে রেইকি কি কাজ করতে পারে?
অবশ্যই শিশুদের কম্পিউটারের শেখানোর মতো রেইকি শেখানো উচিত শিশু বয়স থেকেই। কারণ এতে বাচ্চাদের শরীর যেমন ভালো থাকে, তেমনি তারা পজেটিভ থিংকিং নিয়ে বড় হয়। বাচ্চাদের ডানপিটেমি কমে, তারা শান্ত হয়। তাদের কনসেনট্রেশান ক্ষমতা বাড়ে, এরফলে তারা পড়াশোনায় ভালো হয়। শিশুদের রেইকি শেখানো উচিত সার্বিক উন্নতির জন্য।
যে কোনো রকম আসক্তি বা অ্যাডিকশন ছাড়াতে কি রেইকির ভূমিকা আছে?
রেইকি করতে আসার আগে বা রেইকি নেয়া সময় অ্যালকোহল, সিগারেট, পানমশলা বা আর যে কোনো রকমের অ্যাডিকটিভ জিনিস নিতে বারণ করা হয়। জিনিসগুলো সব সময়ই টক্সিন তৈরী করে শরীরে এবং সে-ই টক্সিনগুলো টোটালি নেগেটিভ এনার্জি। অন্যদিকে রেইকি সম্পূর্ণ পজেটিভ এনার্জি। রেইকি কিভাবে অ্যালোহল বা সিগারেট অথবা ঐ ধরণের কোনো আসক্তি থেকে আপনাকে মুক্ত করবে তা জানতে হলে জানা দরকার আসক্তির নেপথ্যে কি কারণ আছে। কেনো আমরা আসক্ত হই? আমরা নেশাগ্রস্ত হই সাময়িকভাবে আমাদের নেগেটি ফিলিংস-এর কারণে। নেশার প্রভাব কখনো উদ্দীপনা জোগায়, আবার।কখনো অবসাদ অবদমিত রাখে। রেইকি ক্রমাগত পজেটিভ লাইফ ফোর্স এনার্জি জোগানোর ফলে যেসব নেগেটিভ ফিলিংস সাপ্রেস রাখার জন্য আমরা নেশা করি, সেই সব নেগেটিভ ফিলিংস চলে যায় আমাদের মন থেকে। ফলে আর নেশা করার প্রয়োজন হয় না। কারণ রেইকি পজেটিভ ফোর্স পুরোপরি স্যাটিসফ্যাশন আনে। বাইরে থেকে আত্মতৃপ্তির জন্য কোনো ষ্টিমিউল্যান্ট লাগে না। রেইকি করলে রেইকিতে অ্যাডিকশন হয় আর অন্য সব অ্যাডিকশন চলে যায়। তখন আর ইচ্ছেই করবে না নেশা করতে। রেইকি আপনাকে সাহায্য করবে। কিন্তু নিয়মিত রেইকি করতে হবে।
রেইকি করলে বন্ধু বাড়ে কথাটি কি সত্যি?
রেইকি আমাদের ইথারিক বডিতে প্রভাব ফেলে। রেইকি করলে ইথারিক বডিতে কম্পন মাত্রা বাড়ায়। ফলে নেগেটিভ ভাইব্রেশন আসতে পারে না। আমরা যেমন ভাবি তেমন মনোভাবের মানুষরাই আমাদের ঘিরে থাকেন। যত বেশি আমরা রেইকি শিখি ততই আমাদের ভিতরের নেগেটিভ ভাইব্রেশন চলে যায়। আর সেই সাথে আমাদের চারপাশের যে সব মানুষ নেগেটিভ রিজনে বাস করতেন তারা দূরে সরে যায়।আর এই লাইফ ফোর্স যত বেশি আমাদের মধ্যে পজিটিভ ভাইব্রেশন আনে ততই বেশি পজিটিভ ভাইব্রেশনের মানুষ যারা ‘গুড সোল’ তারা কাছাকাছি আসতে থাকেন। বন্ধুত্বের মুখোশ পরা মানুষেরা সরে যেতে থাকেন। বাড়তে পারে প্রকৃত বন্ধুর সংখ্যা।
রেইকি কি কেরিয়ার বিল্ডিং-এ সাহায্য করতে পারে?
আগেই বলা হয়েছে রেইকি পজিটিভ থিংকারদের একত্রে আনে। যার ফলে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য তারা একে অন্যকে সাহায্য করে বুদ্ধির বিনিময়ে। ফলে ফিউচার ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানিং ঠিকমত হয়। কেউ যদি রেইকি শিখে নিয়মিত ফুল বডি রেইকি করেন তা’হলে ৭২ মিনিট ধরে রেইকি করতে হবে। অতএব অতটা সময় ধরে নিয়মিত মন এক বিন্দুতে স্থির রাখতে হবে। এর ফলে মন শান্ত হবে, কনসেন্ট্রেশন পাওয়ার বাড়বে। বুদ্ধি ও ক্ল্যারিটি বা মানসিক স্বচ্ছতা বাড়বে। মন একমুখী হবে।
তার ফলে ইনটেলিজেন্ট পাওয়ার বাড়বে। আর এনার্জি লেবেল বেড়ে যাবে। যার ফলে আপনার কর্মক্ষমতা বেড়ে যাবে। রেইকি টোটাল লাইফকে পজিটিভ করে দেয়। তাই আমরা যখন problem দেখতে পাই তখন তার সমাধানও পেয়ে যাই। রেইকি আমাদের clarity দেয়, তখন আমরা নিজেরা নিজদের সমস্যার সমাধান খুঁজে পাই।
(চলবে)