রবিন শর্মা। সমসাময়িক আত্মউন্নয়ন বিষয়ক জনপ্রিয় লেখক, বক্তাদের মধ্যে অন্যতম। ২০০৮ সালে এক ভারতীয় সহকর্মীর সুবাদে তার লেখার সাথে পরিচয়। সেই থেকে রবিন শর্মার অনেক বই পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার। তার বইয়ের নামকরণ, বিষয়বস্তু এবং লেখার আঙ্গিক বিচিত্র ও ব্যতিক্রমধর্মী। যেমন জাদরেল ও খ্যাতিমান এক আইনজীবীর মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ও উপলব্ধির মহাজাগতিক ভ্রমণ নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘The Monk Who Sold His Ferrari’। আবার আমাদের দৈনন্দিন যাপিত জীবনের টুকরো টুকরো বিষয় নিয়ে তার বই ‘Who Will Cry When You Die’। মানবজনমের সীমাবদ্ধতা নিয়ে এই বইয়ের এক জায়গায় রবিন শর্মা লিখেছেন, “In the greater scheme of things our life is mere blip in the canvas of eternity” । তার অনেক লেখার মধ্যে এই একটি বাক্য কেন জানি না মনের মধ্যে ঘুরপাক খায় । “বৃহত্তর পরিসরে চিন্তা করলে আমাদের জীবন পার্থিব ক্যানভ্যাসে তুলির এক সামান্য আচড় মাত্র”। যথার্থই সত্য অনুধাবন। মহাবিশ্বের বিশাল সৃষ্টির মধ্যে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের অস্তিত্ব নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর। আমরা আসলে কেউ না, কিছুই না। আমাদের অবস্থান মহাসাগরের জলরাশিতে সৃষ্ট বুদবুদের মতোই। দেখার আগেই ফেনা মিশে যায় মহাসমুদ্রে। সীমিত সময়ের জন্য হলেও দৌড়ের জীবন আমাদের। এতো ত্রস্ত ব্যস্ত যে জীবন, সেই জীবনের মেয়াদ ফুরিয়ে আসে সহসাই। সব ছেড়ে ছুড়ে মানুষ পাড়ি দেয় অনন্তলোকে।
পবিত্র কোরআনে ‘দুনিয়া’ ও ‘আখিরা’ (আখেরাত) দুটি শব্দই ১১৫ বার করে উচ্চারিত হলেও পার্থিব জীবনকে ‘স্বল্পস্থায়ী উপভোগের স্থান’ (সূরা আর রাদ: আয়াত ২৬) বলে অভিহিত করা হয়েছে। আমার আব্বা বলতেন, “চর্মচক্ষুতে দৃশ্যমান জগতের বাইরেও আরো একটি জগৎ রয়েছে। সেই জগতের হাল হকিকত একমাত্র আল্লাহপাকই জানেন, মানুষকে সেই গায়েব জানার ক্ষমতা দেয়া হয়নি। বুযুর্গানে দ্বীন যারা, তারা এই পার্থিব জীবনকে ব্যয় করেন সেই অদেখা ভুবনের পাথেয় সংগ্রহের কাজে। দুনিয়ার জীবন শেষ হয়ে গেলে মানুষের সামনে উন্মোচিত হয় আরেক জগতের দিগন্ত। মানুষ তখন দেখতে পায় অপার্থিব, ঐশী এক রূপ”।
কে জানে, “আঁখি মুঞ্জিয়া” বাউল সাধক হাসন রাজা হয়তো সেই অচেনা জগতের ‘রূপ’কেই দেখতে চেয়েছিলেন।
সৈয়দ মসিউল হাসান
টরন্টো থেকে