সপ্তাহান্তের পারিবারিক বিনোদনের অংশ হিসেবে ছেলেমেয়েদের নিয়ে পরিচ্ছন্ন, পরিবারকেন্দ্রিক ছায়াছবি দেখার সুযোগ তৈরী হয় মাঝে মাঝে। মূলত ইংরেজি ছবিই দেখা হয় । এর মধ্যে ‘Zootopia’ বা ‘Open Season’ এর মতো ব্যতিক্রমধর্মী এনিম্যাটেড ছবিও অন্তর্ভুক্ত থাকে। সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় বিষয়বস্তু, দৃশ্য ও সংলাপ এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখে পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার মতো ইংরেজি ছবি বাছাই করা। এটি সময়সাপেক্ষ কাজ। এই বাছাই সঠিক না হলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। যাহোক এই সপ্তাহে ভেবে চিনতে নির্ধারণ করলাম “The Pursuit of Happyness”। অস্কার বিতর্কিত উইল স্মিথ এবং তার ছেলে জেডেন স্মিথ অভিনীত, সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ২০০৬ সালের ছবি। ছবির বিষয়বস্তু আবর্তিত হয়েছে এক কপর্দকশূন্য বাবা এবং তার পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে, একমাত্র অদম্য মনোবল ছাড়া যার আর কিছুই নেই। পদে পদে বাধা বিড়ম্ভনা সত্ত্বেও ক্রিস গার্ডনার (উইল স্মিথ) সচ্ছল হওয়ার স্বপ্ন থেকে কখনো বিচ্যুত হয়নি। অনেক চরাই উৎরাই পেরিয়ে একপর্যায়ে ক্রিস একটি বিখ্যাত ব্রোকারেজ ফার্মের অবৈতনিক ইন্টার্ন হিসেবে যোগ দেয়। একসময়ের নিঃস্ব, দরিদ্র একজন মানুষ নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায় ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় মাল্টি মিলিয়ন ডলারের নিজস্ব ব্রোকারেজ ফার্ম। এই ছবিটি আসলে বৈরী পরিবেশে ঠিকে থাকা, দৃঢ় মনোবল নিয়ে পাহাড়সম বাধা মোকাবেলা করে উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর বাস্তব গল্প। আমরা অনেকেই প্রতিবন্ধকতা আসলেই থমকে যাই, নিরাশ হয়ে ভাবি আমাকে দিয়ে আর কিছু হবে না। সামান্য বাধা বিপত্তিতেই যারা হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেন, তাদের জন্য এই ছবি একটি অপরিহার্য টনিক। সমস্ত প্রতিকূলতা ঠেলে সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় একজন মানুষ যে কি অসাধ্য সাধন করতে পারে, এই ছবি না দেখলে তা অনুমান করা কঠিন। বলাবাহুল্য আর দশটা ইংরেজি ছবির মতো এটি কোনো ফ্যান্টাসি সৃষ্ট নয়, ছবির মূল চরিত্র ক্রিস গার্ডনারের বাস্তব জীবনে অর্জিত অসাধারণ সাফল্যের উপর ভিত্তি করেই এই ছবিটি নির্মিত। এই ছবিটি ছেলেমেয়েদের নিয়েই দেখা উচিত। আমাদের অধিকাংশ মানুষেরই সন্তানেরা জানে না যে কতটা পথ পাড়ি দিয়ে, কতটা ঘাম ঝরিয়ে তাদের বাবামারা আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছেন। বাবামারাও, যে কারণেই হোক, তাদের সন্তানদেরকে জগতের কঠিন বাস্তবতা বা নিজেদের জীবন সংগ্রাম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতে চান না। ফলে জীবনের রূঢ় বাস্তবতা তাদের কাছে অজ্ঞাতই থেকে যায়, বাড়তে থাকে সাধ ও সাধ্যের ব্যবধান।
আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জীবনের একটা বড় অংশ অতিবাহিত হয় এই Pursuit of Happiness এর পেছনে। বিত্ত বৈভব ও সমৃদ্ধি অর্জনের এই দীর্ঘযাত্রার সফলতা নির্ভর করে অনেক বিষয়ের উপর। এই ছবির একটি দৃশ্যে বাবাকে বলা পুত্রের এক কৌতুকে এই বিষয়টি কিছুটা উঠে এসেছে প্রতীকী অর্থে। কৌতুকটি এরকম, “নদীতে ডুবন্ত একজন মানুষকে উদ্ধার করতে একটি নৌকা আসলে ডুবন্ত লোকটি বলে উঠলো ‘ I donot need your help, God will save me’। দ্বিতীয়বার আরেকটি নৌকা আসলে, ডুবন্ত লোকটি একই কথা বলে সাহায্য নিতে অস্বীকার করলো। শেষ পর্যন্ত লোকটি ডুবেই মারা যায়। মৃত্যুর পর স্রষ্টার সামনে হাজির হয়ে সে আক্ষেপ নিয়ে বললো যে এতো ডাকার পরেও স্রষ্টা কেন তাকে উদ্ধার করেননি। স্রষ্টার উত্তর ছিল, ‘I sent two boats to rescue you, you rejected both’। সময় ও সুযোগের সদ্ব্যবহার ছাড়া সুখের অন্নেষণ ফলপ্রসূ হয়না। জীবনভর সবাই আমরা `Happiness` এর পিছনেই দৌড়াই, খুঁজে বেড়াই সুখ- যদিও কেউই জানিনা আসলে এর অবস্থান কোথায়। স্রষ্টার অপার অনুগ্রহ এবং নিজের অদম্য চেষ্টা, এই দুই মৌলিক ভিত্তির উপরই হয়তো দাঁড়িয়ে আছে ‘Pursuit of Happiness’ এর সফলতা।
সৈয়দ মসিউল হাসান
টরন্টো থেকে