CP 24- টরোন্টোর জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল গুলোর একটি। আবহাওয়া, বিশেষ করে বাইরের তাপমাত্রার নাটকীয় উঠানামা, ট্রাফিক এবং ব্রেকিং নিউজ এর জন্য আমার মতো অনেকেরই দিনের সূচনা হয় এই চ্যানেল দিয়ে। ধূমায়িত কফি সামনে নিয়ে বসে আছি কানাডার ‘কফি জায়ান্ট’- টিম হর্টনে, এক ক্লায়েন্টের সাথে সাক্ষাতের অপেক্ষায়। দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে ওয়াল মাউন্টেড টিভির পর্দায়। CP 24 এর ট্রাফিক স্পেশালিস্ট বলে যাচ্ছেন, “volume delay expected in east bound 401 due to a fatal collision, emergency services enroute——” । কানাডায় আসার আগে পর্যন্ত ভলিউম ডিলে শব্দটির সাথে খুব একটা পরিচিত ছিলাম না। পড়াশুনা এবং চাকুরীর সুবাদে ঢাকায় কেটেছে বিশ বছর- যেখানে যানবাহনে চলাচল থেকে শুরু করে কোনো একটি দাপ্তরিক কাজ সময়মতো শেষ করা সহ সব কিছতেই বিলম্ব ছিল নিত্য দিনের সঙ্গী। ফলে এখানেও এই বিলম্ব শব্দটি শুনলে বেখাপ্পাই লাগে, যদিও তেমন কোনো ট্রাফিক জ্যাম কখনোই চোঁখে পড়ে না। রাস্তায় ট্রাফিকের কারণে যাতায়াতের সময়ের অপচয় বুঝাতে “ভলিউম ডিলে” শব্দটি এখানে ব্যবহৃত হয়।
মনে মনে যখন ঢাকার রাস্তার সাথে এখানকার রাস্তায় “দুর্লভ বিলম্বের” তুলনা করছি, ঠিক সেই সময়ে প্রায় পনেরো মিনিটের বিলম্বে আমার ক্লায়েন্টের আগমন, অনেকটা হন্তদন্ত হয়েই। চেহারা দেখেই বুঝতে পারছি উক্তেজিত হয়ে আছে। বর্তমান পেশাগত কারণে উক্তেজনাকর পরিস্তিতি নিরুপন এবং ‘diffuse’ করার বিষয়টি যথাযথ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হয়। সেজন্য বিলম্বের কারণ জিজ্ঞেস না করে বরং জানতে চাইলাম তার কুশল। আমার সাথে সাক্ষাৎ শেষে ফার্মেসী থেকে ঔষধ নিয়ে যাবে, বাসায় ড্রাগ বেনিফিট কার্ড খুঁজতে যেয়েই এই দেরি। তাকে জানালাম যে এ নিয়ে উদ্ভিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সেপ্টেম্বর, ২০১৬ থেকে ODSP (Ontario Disability Support Program) ড্রাগ বেনিফিট কার্ড পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে, পরিবর্তে এখন থেকে ODSP প্রাপ্ত ব্যক্তিরা ফার্মাসিতে হেলথ কার্ড দেখিয়ে ঔষধ নিতে পারবে, ড্রাগ কার্ডের দরকার হবে না। কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে হয়ে বসার পর তার জন্য আর এক কাপ কফি নিয়ে এসে পরিবেশ হালকা করার চেষ্টায় টিভির সংবাদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললাম যে পরবর্তী মিটিঙে যেতে হয়তো একটু বেশি সময় লাগবে। কোনো কথা না বলে চুপ চাপ সে কিছুক্ষন টিভির পর্দায় তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলে উঠলো “Do you think delay occurs only in traffic ? Is there only one road in life where you drive your car ? When your problem piles up one after another and the challenges of life remain unaddressed, only then you can realize the volume delay in the highway of your life and livelihood. You can’t sense it unless you face it.” বুঝতে পারছিলাম যে এক নিঃশ্বাসে বলা এই বাক্যগুলোর মধ্যে মিশে আছে কোনো অজানা আবেগ, নিহিত আছে এমন এক জীবনবোধ যা বুঝার ক্ষমতা হয়তো আমার নেই। নিতান্তই Road transportation এর সাথে সম্পর্কিত ‘volume delay’ এর এই ব্যতিক্রমধর্মী, দার্শনিক ব্যাখ্যা আমি এর আগে কখনো শুনিনি। কখনো ভেবে দেখিনি জীবনের মহাসড়কে আমরা কে কোথায় কোন অবস্থায় আটকে আছি। যান্ত্রিক এই জীবনে নিজেকে ছাড়া অন্যকে নিয়ে ভাবার সময় এবং ইচ্ছা কোনোটাই আমাদের থাকে না।
টিম হর্টন থেকে বেরিয়ে কিছুটা আনমনা হয়েই পার্ক করা গাড়ির দিকে পা বাড়াই। পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে যখন মূল রাস্তায় এসে পড়ি, গাড়ির স্পিকারে তখন বাজছে সামিনা চৌধুরীর গান,
” আমি জায়গা কিনবো কিনবো করে
পেয়ে গেলাম জায়গা শুদ্দ বাড়ি —-“।
গাড়ির গতি বাড়াতে বাড়াতে আমি ভাবি, এই গানেও কি জীবনের কোথাও কোনো এক ‘ভলিউম ডিলের’ই সুর ভেসে আসে ?
সৈয়দ মসিউল হাসান
টরন্টো থেকে
বরাবরের মতোই খুব ভালো লাগল হাসান ভাই। বিষাদের সুরটাও চেনা চেনা। ভালো থাকবেন।
Thanks Hasan bhai.
I am sure you are familiar with Paulo Freire’s developmental model, that followed by many countries NGOs.
He was pioneering figure of adult education. pedagogy of the oppressed is one of his legendary book. He is the who focused on two education system or dialogical education. When we grow up and started to learn we thought our teachers, doctors, social workers and so on were the one know better than us and to some extent they know all but PF changed that though and way of teaching. According to him, of course our teachers know better than us, but at the same time we know something what they don’t know, so teaching should be a learning process between the two parties. That’s what I observed in studies in Europe and here as well.
At work, that’s what anti oppressive practice, that’s what egalitarian relationship with the client. You know it all, but the reason I mentioned it is that your client’s philosophical explanation is that kind of teaching which make them parallel to us, we are no better than them, it’s just the circumstance that put them in a service recipient’s’ situation.
I am glad that you did not miss the point and brought that to us. Please let him know that I myself had never thought that way although I read a lot and have degree and work experience as well. In that case he is my teacher too.
As usual, quality write up!!!!!
Thanks Mukul bhai, felt humbled and honoured.