আধুনিক যুগে ফসল উৎপাদনে গুণগত মানসম্পন্ন বীজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু গুণগত মানসম্পন্ন বীজই কেবল শতকরা 20-25 ভাগ উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি সবজিসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। ফসলের ফলন ও উৎপাদনের সাথে গুণগত মানসম্পন্ন বীজ নিবিড়ভাবে জড়িত !
বীজের অঙ্কুরোদগম বা গজানো পরীক্ষা: শাক সবজির বীজ বপনের পূর্বে গজানো পরীক্ষা করে নেয়া প্রয়োজন। এজন্য ছোট থালা বা বাটি নিয়ে তার ওপর বালি পানি দিয়ে ভিজিয়ে ৫০-১০০টি বীজ কয়েক দিন রেখে অঙ্কুরোদগমের শতকরা হার বের করে নিতে হবে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, মুলা, মিষ্টিকুমড়া ইত্যাদির ক্ষেত্রে কমপক্ষে শতকরা ৭৫ ভাগ এবং গাজর, পালংশাক, ঢেঁড়স ইত্যাদির ক্ষেত্রে কমপক্ষে শতকরা ৫৫-৬০ ভাগ বীজ গজানোর ক্ষমতা থাকতে হবে। অঙ্কুরোদগম হার বের করার মাধ্যমে মূল্যবান বীজের সঠিক পরিমাণ, চারার সংখ্যা ইত্যাদি নির্ধারণ করা সহজ হয়।
আসুন এবার বীজ থেকে চারা করার জন্য বাগানী ভাইদের মনে যে সকল প্রশ্নের অবতারণা হয় তার একটা প্রশ্ন ও উত্তর বিষয়ক আলোচনা করে আমাদের সবজি বিষয়ক জ্ঞান কে আরো একটু শানিত করে নেয় !
প্রশ্ন ১. অঙ্কুরোদগম বা Germination কি ?
উত্তর: অঙ্কুরোদগম বা Germination হলো বীজ থেকে নতুন উদ্ভিদ উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া। সহজ ভাষায় অঙ্কুরোদগম হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে উদ্ভিদ বীজ থেকে বৃদ্ধি পায়। যথাযথভাবে অঙ্কুরোদগম হওয়ার জন্য কিছু শর্ত মানা প্রয়োজন যেমন পানি, তাপমাত্রা, পর্যাপ্ত আলো ও অক্সিজেন। সবগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলে বীজের কোট বা আবরণ খোলা হয় এবং বীজ থেকে একটি মূল উত্থিত হয়, যা একটি গাছের অঙ্কুর দ্বারা অনুসরণ করা হয়। উদ্ভিদের বিকাশের এই প্রাথমিক পর্যায়কে অঙ্কুরোদগম বলা হয়।
প্রশ্ন ২. পটে কিভাবে মাটি রেডি করতে হবে যা বীজ থেকে চারা উৎপাদন সহায়ক।
উত্তর: পটের মাটি যতটুকু সম্ভব মিহি ও ঝুরঝুরে করে নিতে হবে ! মাটিতে পাথর ও পূর্বেকার আবর্জনা বা শিকড় থাকলে তা সরিয়ে ফেলুন ! পটে বীজ থেকে চারা করার জন্য মাটিতে খুব উচ্চ মাত্রার নিউট্রিয়েন্ট দরকার নাই ! পটে মাটির রস, তাপমাত্রা ও বীজের গভীরতা বীজ থেকে চারা গজানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ !
বীজ থেকে চারা করা জন্য পটের মাটির কয়েকটি ফর্মুলা নিচে দেয়া হলো !
ক. পটিং মিক্স দুই ভাগ, দুই ভাগ Coir বা নারিকেলের মিহি গুঁড়া ছোবড়া ও একভাগ পারলাইট বা পরিষ্কার বালি ভালো করে মিশিয়ে পটের মাটি করা যেতে পারে ! নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়া মাটির গঠনে ও মাটিকে বাতাস চলাচলের উপযোগী করে সেইসাথে কিছু জৈব পদার্থ যোগ করবে ! পারলাইট মাটিতে অক্সিজেন এর পরিমান বাড়িয়ে গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে !
খ. কম মাটি যুক্ত সীড স্টার্টিং মিক্স এর জন্য এই ফরমুলাটি ব্যবহার করা যেতে পারে ! এই মিক্সের গঠন বুনিয়াদ (texture) খুবই মিহি ও চারার বৃদ্ধির জন্য সহায়ক ! এর জন্য মাইল্ড পিট moss, perlite, coconut coir fiber ও vermiculite এর প্রয়োজন হবে ! তবে এক্সট্রাক্টেড পিট মস এর কারনে ecosystem ও climate change হয় বলে অনেকে এটা ব্যবহার থেকে বিরত থাকে !
অনেকে চারা তৈরির জন্য শুধু পটিং মিক্স ব্যবহার করে থাকে ! অনেক পটিং মিক্স/মাটিতে কিছু পরিমান রাসায়নিক নিউট্রিয়েন্ট উপাদান যোগ করা থাকে যাতে চারা সবল ও সতেজ দেখায় ! পটিং মিক্স/মাটির গঠন বুনিয়াদ মোটা বা course হয়ে থাকে !
গ. অনেকে নিচের ফর্মুলা অনুসারে seed starting mix তৈরী করে থাকেন ! যেমনঃ একভাগ পিট মস বা coconut coir fiber, এক ভাগ মিহি কম্পোস্ট গুঁড়া ও একভাগ vermiculite ! এর সাথে 1-2 কাপ ওয়ার্ম কম্পোস্ট প্রতি 20 লিটার মিক্সে যোগ করলে খুব ভালো মানের seed starting mix তৈরী হয়ে যাবে !
ঘ. নিচে আরো একটা ফর্মুলা দেখুন: চার ভাগ কম্পোস্ট, একভাগ পারলাইট, একভাগ vermiculite ও দুইভাগ পিট মস ভালো করে মিশিয়ে তৈরী করুন !
ঙ. যারা পিট মস ছাড়া mix তৈরী করতে চান তাদের জন্য এই ফর্মুলা ! দুই ভাগ কম্পোস্ট, দুই ভাগ coconut coir ফাইবার ও একভাগ পারলাইট মিশিয়ে এই মিক্স তৈরি করুন ! এই মিক্স পরিবেশ বান্ধব ও অনেকদিন ব্যবহার করা যায় !
এখানে উল্ল্যেখ যে বীজের নিজস্ব অন্তরীন খাদ্যের উপর নতুন গজানো চারা এক বা দুই সপ্তাহ নির্ভর করে ! এর পর শিকড় মাটিতে লেগে গেলে ধীরে ধীরে মাটি থেকে খাদ্য উপাদান ও রস নিতে শুরু করে !
প্রশ্ন ৩. লাস্ট ফ্রস্ট এর আনুমানিক কতদিন আগে থেকে ঘরে চারা উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।
উত্তর: ধরুন আপনার এলাকার last frost মে মাসের 15-20 তারিখের মধ্যে ! এখন কোন বীজ থেকে চারা গজাতে যদি 5 -10 দিনাগে ও চারার বয়স 4 -5 সপ্তাহ হলে মূল জমিতে বা টবে লাগানোর উপযুক্ত হয় তাহলে সব মিলিয়ে আপনাকে লাস্ট ফ্রস্ট এর 5 -7 সপ্তাহ আগে চারা দেয়ার কাজ শুরু করতে হবে ! তবে লাস্ট ফ্রস্ট এর পর জমি চাষ ও অন্যান্য কাজের জন্য আরও কয়েকদিন সময় যোগ করতে হবে ! মোটের উপর একমাস বা তার কিছুদিন আগে থেকে বীজ থেকে চারা তৈরির প্রস্তুতি নিবেন ! তবে এই হিসাব সবজির প্রকার ভেদে কমবেশি হতে পারে ! যেমন কোনো সবজির বীজ 3-4 দিনে গজাবে আবার কোনো সবজির বীজ 7-10 দিনে গজাবে ! আবার কোন বীজ গজাতে 15-20 দিনও লেগে যেতে পারে !
আদর্শ তাপ মাত্রায় মুলার বীজ 3-5 দিনেই গজাবে আবার লাউ, কুমড়া ও মরিচের বীজ গজাতে 7-10 দিন লেগে যায় ! বেগুনের চারা 30-35 দিন বা 5-6 টি পাতা হলে লাগানোর উপযুক্ত হবে !
প্রশ্ন ৪. কোন চারা আনুমানিক কতদিন লাগে হতে?
উত্তর: সাধারণ ভাবে এটা বলা মুশকিল ! কোনো বীজ 3-4 দিনে গজাবে আবার কোনো বীজ গজাতে গজাতে 5-10 দিন বা তারও বেশি লে যেতে পারে ! এটা নির্ভর করবে বীজের আবরণ বা স্কিন শক্ত না নরম এবং মাটির তাপমাত্রা, রস ও আলোর পরিমানের উপর ! মোটামুটি 5-6 সপ্তাহ লেগে যেতে পারে ! নিচে কিছু সবজির চারা কতদিনে রোপনের উপযুক্ত হবে তা দেয়া হলো !
ফুল কপি ২৫-৩০ দিন
টমেটো ৩০-৩৫ দিন
বাধা কপি ২৫-৩০ দিন
বেগুন ৪০-৫০ দিন
ওল কপি ২৫-৩০ দিন
মরিচ ৪০-৫০ দিন
শালগম ২৫-৩০ দিন
পেঁয়াজ ৪৫-৫০ দিন
লেটুস ২৫-৩০ দিন
পুঁইশাক ২৫-৩০ দিন
বিট ২৫-৩০ দিন
চায়নাকপি ২৫-৩০ দিন
প্রশ্ন ৫. চারা করার জন্য আনুমানিক কতটুকু আলো বা সূর্যের আলো প্রয়োজন বা চারার যায়গাটা কেমন হওয়া উচিত ।
উত্তর: বীজ থেকে চারা গজাবার জন্য কমপক্ষে 6-8 ঘন্টার আলো প্রয়োজন হবে তবে অনেকেই মনে করেন 12-16 ঘন্টা আলো হলে ভালো ! ঘরের ভিতর চারা তৈরি করলে grow light ব্যবহার করতে পারেন ! চারা তৈরির জায়গাটা খোলামেলা ও মুক্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকলে ভালো ! এর জন্য ঘরের জানালা কিছুটা খোলা রাখতে পারলে ভালো ! আলোর অভাবে চারা লিকলিকে দুর্বল বা leggy হয়ে যেতে পারে !
প্রশ্ন ৬. বীজ মাটিতে দেবার আগে ভিজিয়ে নেবার দরকার আছে কি ?
উত্তর: কোন কোন সবজির বীজ কিছু সময় ভিজিয়ে রাখার পর বপন করা হয়। এতে বীজে অংকুরোদগম ভাল হয়। তবে কপি জাতীয় সবজি ও টমেটোর বীজ বপনের পূর্বে ভিজানোর বিশেষ প্রয়োজন পড়ে না।
শুকনো বীজে পানির পরিমান বা রস থাকে 6-15%. বীজের অঙ্কুরোদগমের জন্য বীজে যে enzyme বা অনুঘটক আছে তা এক্টিভেট বা কার্যক্ষম হতে বীজে পানির পরিমান হতে হবে কমপক্ষে 75-95% ! এছাড়াও বীজের শক্ত আবরণ ভেদ করে চারা বের হবার জন্য আবরণকে নরম করার জন্যও পর্যাপ্ত পানি বা রসের দরকার ! সেই জন্য বীজ মাটিতে দেবার আগে কিছু সময়ের জন্য ভিজিয়ে রাখলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় ! তবে ভিজিয়ে রাখার সময় বীজ ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে ! নিচে কিছু উদাহরণ দেয়া হলো !
বেগুন ২৪ -48 ঘন্টা
লাউ 12 ঘন্টা
মরিচ 48 ঘন্টা
কুমড়া 6-10 ্টা
পুই শাক ২৪ ঘন্টা
করলা 6-10 ঘন্ট
গীমাকলমী ২৪ ঘন্টা
গাজর 24 ঘন্টা
পেঁয়াজ 24ন্টা
পালং শাক 6-10 ঘন্টা
প্রশ্ন ৭. বীজের অঙ্কুরোদগমের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা কত ?
উত্তর: 20-30 deg C তাপমাত্রায় বীজের অঙ্কুরোদগম ভালো হয়ে থাকে ! তবে কিছু কিছু সবজির বীজ এর চেয়ে কম তাপমাত্রায় বের হয়ে থাকে যেমন মূলা ও kale ! তবে তাপমাত্রা 45 deg C এর কাছাকাছি হলে অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায় !
প্রশ্ন ৮. বিভিন্ন সবজী যেমন মরিচ, বেগুন, টমেটো, লাউ, করলা, শিম, আলু, গাজর, ওলকপি, ফুলকপি, শশা ইত্যাদির ক্ষেত্রে – কোনটির চারা অঙ্কুরোদ্গমের জন্য স্বাভাবিক এর চেয়ে একটু বেশী তাপমাত্রা প্রয়োজন হয় এবং কোনটি ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় অঙ্কুরোদগম হতে পারে?
উত্তর: ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বলতে আমরা 20-22 deg C বুঝে থাকি ! যা গরম কালে বিদ্যমান থাকে কিন্তু শীত কালে ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা অনেক কমে যায় ! তাই কেউ যদি ফেব্রুয়ারী মার্চ মাসে ঘরের ভিতর চারা তৈরী করতে চাই তবে তাঁকে বীজ অঙ্কুরোদগমের জন্য চাহিদা মোতাবেক তাপমাত্রার ব্যবস্থা করতে হবে ! তবে সাধারণ ভাবে মনে রাখতে হবে যে, পরিমিত তাপমাত্রার চেয়ে কিছু কম তাপমাত্রায় হয়তো চারা গজাবে কিন্তু তার শতকরা হার অনেক কমে যাবে বা সন্তোষজনক হবে না ! তাই আসুন এবার দেখে নেয় এখানে উল্লিখিত বীজগুলোর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কত হলে বীজের অঙ্কুরোদগম হবে !
ফুলকপি ও ওলকপি – 10 to 30 deg C
মরিচ, শসা ও বেগুন – 16 to 30 deg C
জুকিনি – 16 to 35 deg C
পালং শাক – 5 to 20 deg C
টমেটো ও গাজর – 10 to 35 deg C
করলা এবং লাউ- 20 to 30 deg C
শিম- 16 to 20 deg C
ব্রড বিন, বীট, লেটুস, সুইস সার্ড, পার্সলে, মুলা – 6 to 29 deg C.
তবে মনে রাখতে হবে যে অধিকাংশ বীজের অধিক হারে ও সন্তোষজনক অঙ্কুরোদগম 20-30 deg C তাপমাত্রার মধ্যে হয়ে থাকে !
প্রশ্ন ৯. মাটির কত গভীরে বীজ রাখতে হবে ?
উত্তর: খুবই ভালো একটা প্রশ্ন ! সাধারণ ভাবে বীজের যা thickness বা পুরুত্ব তার তিন গুন মাটির গভীরে বীজ পুঁতে দিতে হবে ভালো অঙ্কুরোদগমের জন্য ! মুলা ও লালশাক এর বীজ খুবই অগভীর ভাবে ঢেকে দিতে হয় যা 2-3 মিলিমিটার এর বেশি নয়! আপনি যদি বীজ খুব গভীরে (মাটিতে) রোপন করেন তাহলে বীজ পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাবে না ! সুতরাং বীজকে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে রোপন করতে হবে যেন পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়।
প্রশ্ন ১০. মান সম্পন্ন বীজের কোয়ালিটি বলতে কি বুঝাই?
উত্তর: মান সম্পন্ন বীজের বৈশিষ্ট্য সমূহ নিম্নরূপ
* বিশুদ্ধ বীজ (কম পক্ষে ৯৪%বিশুদ্ধতা)।
* উজ্বল, সুন্দর, সতেজ, স্বাভাবিক রঙ এর বীজ।
* পুষ্ট, বড় দানা সম্পন্ন বীজ।
* পোকা ও রোগ মুক্ত বীজ।
* বীজের আর্দ্রতা সর্বোচ্চ ১২%
* গজানোর ক্ষমতা ৭০-৮৫% এর উপর
* বীজে কোন নিষ্ক্রিয় পদাৰ্থ (Inert Material) বালি, পাথর, ছোট মাটি, ভাঙ্গা বীজ, বীজের খোস ইত্যাদি থাকবে না।
* বীজে হতে হবে বিশুদ্ধ (Pure Seed)।
* বীজের ক্ষতিকর আগাছার বীজ (Obnoxious weed seed) থাকবে না।
* বীজ ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের আক্রমণ মুক্ত ও নীরোগ হতে হবে।
* প্রয়োজনে বীজের সুপ্তাবস্থা (Seed Dormancy) কাটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রশ্ন ১১. ব্যাকইয়ার্ড এর মাটি কিভাবে উর্বর করা যায়?
উত্তর: জমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য নিচের ব্যবস্থা গুলো নেয়া যেতে পারে !
* পর্যাপ্ত পরিমান জৈব পদার্থ ব্যবহার
* সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা
* ডালজাতীয় ফসলের চাষ – গাছের শিকড়ে থাকা rhizobium ব্যাকটেরিয়া বায়ূ থেকে N নাইট্রোজেন
মাটিতে ফিক্স করে জমিকে আরো উর্বর করে
* মাটির অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ এর মাধ্যমে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করা যায়
* জমিতে মৃত্তিকা জীবাণু সংরক্ষণ করেও উর্বরতা বাড়ানো যেতে পারে
* চাষাবাদ পদ্ধতির উন্নয়ন
* শস্য পর্যায় ও শস্য ক্রম অনুসরণ করা (crop rotation and cropping pattern)
* সুষ্ঠু পানি সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা
* ক্ষতিকারক রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন (Integrated Pest Management)
এ ছাড়াও জমিতে পাথর বা গাছের শিকড় থাকলে তা বেছে সরিয়ে ফেলতে হবে, জমিতে বহুবর্ষজীবী আগাছার উপদ্রব থাকলে তা দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে ! সবজির চারা বা বীজ লাগানোর পূর্বে মাটি চাষ করে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে ও কয়েকবার মাটি ওলট পালট করে নিতে হবে ! মাটিতে অক্সিজেন চলাচল করে এমন ভাবে প্রস্তুত করতে হবে ! জমিতে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো থাকতে হবে !
আসুন এবার বীজ ও ফসল নিয়ে খনার বচনে কি আছে দেখে নেয় !
১. খনা ডেকে বলে শুন, শরৎের শেষে মুলা বুন।
অর্থ: মুলা চাষের উপর্যুক্ত সময় হল শরৎ কালের শেষের দিকে। তাহলে মুলার ফলন ভাল হবেই।
২. পটল বুনিস ফাল্গুনে, ফলন পাবি দ্বিগুনে।
অর্থ: পটলের ফলন ভাল পেতে হলে পটল ফাল্গুনে রোপন করতে হবে। তাতে পটলের ফলন ভাল হবে।
৩. খনা বলে নদীর ধারে পুতিস কচু,
তাতে কচু হবে তিনহাত নিচু।
অর্থ: নদীর ধারে কচু পুতলে কচুর উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। কচু পুষ্ট হয় ।
৪. ফাল্গুনে না রুলে ওল, শেষে হয় গন্ডগোল।
অর্থ: ওল ফাল্গুনে রোপন করলে ভাল ফলন দেবে।
৫. উঠান ভরা লাউ শসা, খনা কহে লক্ষীর দশা।
অর্থ: উঠোন এর জমিতে উদ্যান ফসল হিসেবে লাউ, শসার চাষ করা যায়। এতে অতিরিক্ত অর্থ সংস্থানও হবে।
৬. সময়ে না দেয় চাষ, তার দুঃখ ১২ মাস।
অর্থ: যে ফসলের যে সময়, তা সেই সময়েই চাষ করতে হয়। নচেৎ ফলন হয় না ভাল।
৭. ষোল চাষে মুলা, তার অর্ধেকে তুলা,
তার অর্ধেকে ধান, বিনা চাষে পান।
অর্থ: মুলা চাষের জন্য ১৬ টি চাষ দরকার।
তুলা চাষের জন্য দরকার ৮টি চাষ ,ধানের
জন্য ৪ টি চাষ আর পানের জন্য চাষের দরকার নেই।
৮. মাটি শুকালে দিও জল, সকল মাসেই পাবে ফল।
উপসংহার: খুবই আনন্দের বিষয় যে যারা প্রবাসী বিশেষ করে কানাডা বা আমেরিকাতে বসবাস করছেন তারা নিজে বসত বাড়ির আঙিনায় সবজির বাগান করছেন ও বন্ধুদের উৎসাহিত করছেন ! আমি বলবো বাংলাদেশীদের প্রবাসী জীবনে শত ব্যস্ততার মাঝেও সবজি চাষের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে ও দিন দিন বাড়ছে ! ছোট শিশুরাও বাবা মায়ের সাথে সবজি বাগানে আনন্দে সময় কাটাচ্ছে ও শিখছে ! সেই সাথে পরিবারে পুষ্টির চাহিদাও মিটছে !
পরিশেষে বলবো সবজির বীজ নিজের বাগান বা পরিচিত কারো বাগান থেকে সংগ্রহ করুন তাতে আপনার বীজ সম্পর্কে কনফিডেন্স থাকবে ! অনেকে ebay, amazon বা অন্য কোনো উৎস থেকে বীজ কিনে আশানরুপ ফল পান নাই এমন অভিজ্ঞতা আছে ! সবজির আবাদ করুন সেই সাথে আপনার প্রিয় সবজি সম্পর্কে আরো পড়াশুনা করে আপনার সবজি জ্ঞান কে আরো অনেক উচ্চতায় নিয়ে যান ! সবাই ভালো ও সুস্থ থাকুন !
মনে রাখবেন “সুবীজে সুফসল”
সবচেয়ে মহান পেশা হলো খাদ্য উৎপাদন !