সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাশরুম একটি অতি জনপ্রিয় খাদ্য ! এই মাশরুম উৎপাদন কে কেন্দ্র করে অসংখ Mushroom Nursery গড়ে উঠেছে দেশে দেশে ! আবার উৎপাদিত মাশরুম প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন দেশ রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে !
মাশরুমের আবাদ করার জন্য বিশেষ এক ধরণের substrate (মিডিয়া ) ব্যবহার করা হয় ! মাশরুমের এই গ্রোথ মিডিয়ার জন্য বিশেষায়িত রেসিপি ব্যবহার করা হয় যা উচ্চ তাপমাত্রায় জীবাণুমুক্ত করে নেয়া হয় (pasteurized) ! একবার মাশরুমের কোন ব্যাচ উৎপাদিত হলে ঐ substrate (মিডিয়া ) আর দ্বিতীয় বার ব্যবহার করা হয় না ! তাই মাশরুম উৎপাদনে ব্যবহৃত ঐ গ্রোথ মিডিয়া বাইপ্রোডাক্ট হিসাবে বাজারে মাশরুম কম্পোস্ট নামে বিক্রি হয় ও কৃষি জমিতে উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয় ! জেনে রাখা ভালো যে মাশরুম কম্পোস্টে কোনো মাশরুম নাই !
বছর দুয়েক আগে 2018 সালে কোন এক মাশরুম উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিতে কনসালটেন্সি করার সুবাদে মাশরুম বিষয়ে আমার বেশ কিছু তথ্য জানার সুযোগ হয়েছিল !
মাশরুম কম্পোস্ট এর উপাদান সমূহ:
ঘোড়ার ঘরে ব্যবহৃত খড় (straw from horse stables), হে (hay), পোল্ট্রি লিটার (poultry litter) ভুট্টার গুঁড়া (ground corn cobs), saw dust, তুলার বীজ গুঁড়া (cottonseed hulls), কোকোয়া (cocoa shells), পিট মস (peat moss) এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক জৈব পদার্থ ! এইগুলো দিয়ে তৈরী মিডিয়া খুবই পুষ্টি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী !
মাশরুম growth media/substrate এর রেসিপি কোম্পানি থেকে কোম্পানি ভিন্ন হয়ে থাকে ! কোনো কোনো নার্সারি গম বা রাই এর পঁচা খড়, পিট মস, ঘোড়ার ঘরের ব্যবহৃত খড়, মুরগির বিষ্টা, তুলার বীজ, ক্যানোলা খৈল, আঙ্গুর এর বর্জ্য, সয়াবিন খৈল, পটাশ, Gypsum, Urea, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এবং lime (CaCO3 বা MgCO3) !
মাশরুম হারভেস্ট করার পর এই মিশ্র জৈব পদার্থ নার্সারী হাউস থেকে সরিয়ে নিয়ে অন্যত্র প্রক্রিয়াজাতের (processed & cured) মাধ্যমে হোমোজেনাস বাইপ্রোডাক্ট তৈরি হয় যা মাশরুম কম্পোস্ট হিসাবে পরিচিত !
ভালো ও উন্নত মানের মাশরুম কম্পোস্ট দেখতে অনেকটা dark top soil এর মতো ! মাশরুম কম্পোস্ট খুবই ঢিলাঢালা ও ঝুরঝুরে হয়ে থাকে, আর মাটির মতো গন্ধ আছে (loose crumbly structure, and has an “earthy” aroma).
আসুন এবার মাশরুম কম্পোস্টের পুষ্টি উপাদান কি কি তা নিচের বর্ণনা থেকে দেখে না যাক (source: Pennsylvania State University)
জৈব পদার্থ – 25%
জলীয় পদার্থ – 58%
নাইট্রোজেন – 1.12% mostly organic form slowly release to soil
ফসফরাস – 0.67%
পটাসিয়াম – 1.24%
ক্যালসিয়াম – 2.29% (rich in Ca)
ম্যাগনেশিয়াম – 0.35%
আইরন/লোহা – 1.07%
pH – 6.6% (6-7 is an ideal pH for most plants Carbon Nitrogen ratio – 13:1 (আদৰ্শ কম্পোস্টের C/N হওয়া উচিত 30:1 বা তার কম ! সেই দিক দিয়ে মাশরুম কম্পোস্ট একটি আদর্শ কম্পোস্ট যা খুবই স্ট্যাবল ও নাইট্রোজেন সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান মাটিতে রিলিজ করে থাকে) !
আগাছার ঝুঁকি:
উন্নত ও আধুনিক নার্সারি গুলোতে কম্পোস্ট বাহিরে নেবার আগে পুরা নার্সরী হাউস steam-treated (pasteurized) করে নেয়া হয় যাতে রোগ জীবাণু, আগাছার বীজ ও পোকামাকড়ের ডিম ধ্বংস হয়ে যায় ! কিন্তু মাশরুম মাটি (mushroom soil) নামে যা বিক্রি হয় তা মুলত নার্সারি হাউসের বাহিরে অনেক দিন (1-2 বছর) স্তুপ বা pile করে রাখা থাকে ! ফলে এই সব মাশরুম soil এ বাতাস বাহিত আগাছার বীজ (যেমন lambsquaters and velvetleaf) বিদ্যমান থাকে ! তাই এই কম্পোস্ট যখন ফসলের জমিতে দেয়া হয় তখন ওই সব আগাছার বীজ থেকে অনেক আগাছা গজিয়ে উঠতে দেখা যায় !
ফ্রেশ মাশরুস কম্পোস্টে দ্রবীভূত লবন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান অনেক বেশি পরিমনে থাকে বিধায় সদ্য গজানো চারা, young plants ও লবন অসহিষ্ণু গাছের ক্ষতি সাধন করে যেমন rhododendrons, blueberries and azaleas. সে জন্য অনেকেই মাশরুম কম্পোস্ট জমিতে প্রয়োগ করার আগে garden soil এর সাথে ভালোভাবে মিশিয় সদ্য গজানো চারা বা young plant এ প্রয়োগ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ! অথবা শীতের আগে মাশরুম কম্পোস্ট কিনে বাহিরে রেখে cured করে নিবেন পরবর্তী মৌসুমে জমিতে প্রয়োগ করার জন্য !
মাশরুম কম্পোস্ট mulch হিসাবেও বহুবর্ষজীবী ফসল এবং ফলের গাছের গোড়ায় দেয়া যেতে পারে !
ফুলের বেড ও সবজি বাগানের জন্য মাশরুম কম্পোস্ট 3 ইঞ্চি পরিমান top soil এর 6 ইঞ্চি পরিমানের সাথে মিশিয়ে নিতে হবে ! টব বাকন্টেইনার গাছের জন্য ৪ ভাগের একভাগ মাশরুম কম্পোস্ট ও বাকি তিন ভাগ মাটি দিয়ে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে !
সাধারণ ভাবে এক কিউবিক ইয়াড মাশরুম কম্পোস্ট 100 বর্গ ফুট বাগানের মাটিতে দুই ইঞ্চি পরিমান নিচে কভার করবে (upto two inch depth will cover) !
উপকারিতা:
১.মাটিতে দীর্ঘদিন পানি বা রস ধরে রাখে !
২.মাটিতে Ca যোগ করে যা হেলথি টমেটো গাছের জন্য খুবই দরকারি !
৩.মাশরুম কম্পোস্টের lime (CaCO3 বা MgCO3) জমিতে NPK এর গ্রহণ যোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়)
৪.Mulch হিসাবে ব্যবহার করা যায় !
৫.কম্পোস্ট tea তৈরী করে এন্টিব্যাকটেরিয়াল স্প্রে হিসেবে ব্যবহার করা যায় !
উপসংহার:
আমরা উপরের আলোচনা থেকে মাশরুম কম্পোস্ট কিভাবে তৈরী হয় এর উপাদান কি কি তা জানতে পারি ! জমিতে মাশরুম কম্পোস্ট গাছের জন্য কি কি পুষ্টি উপাদান জোগান দেয় তা জানলাম ! আমরা মাশরুম কম্পোস্টের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্বন্ধেও কিছু কিছু তথ্য পেয়েছি ! তাই জমিতে আমরা কোন জৈব সার ব্যবহার করবো গরুর জৈব সার, মুরগির বিষ্টার জৈব সার নাকি মাশরুম কম্পোস্ট ! জমিতে জৈব পদার্থের যোগান, NPK সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের উৎসহ হিসাবে এই তিন ধরণের জৈব সারই ভালো তবে আপনি কোনটা ব্যবহার করবেন তা নির্ভর করবে এর সহজ লভ্যতা, মূল্য ও কোন ফসলে প্রয়োগ করবেন তার উপর ! তদুপরি প্রত্যেক চাষি ভাই বা বাগানীদের নিজের কিছু পছন্দ বা অপছন্দের বিষয় আছে ! তবে যেটাই ব্যবহার করুন না কেন তা জমিতে প্রয়োগের পর খুব উত্তম রূপে মাটিতে মিশিয়ে নিতে হবে ভালো ফলাফল পাবার জন্য !
সকল বাগানীদের সফল সবজি উৎপাদন ও সবুজ বিপ্লব সফল হউক ! সকলের বাকিয়ার্ড সবজি ভিলেজে পরিণত হউক !