উত্তর আমেরিকায় জীবন, যাপনের প্রথম বছর হঠাৎ সেপ্টেম্বরের দিকে দোকানগুলো অতিপ্রাকৃতিক ভয় ধরানো আকৃতি প্রকৃতির নানান সরঞ্জাম, কঙ্কাল,কাটা হাত পা, ঠিকরে বেড়িয়ে আসা চোখ, রক্তমাখা মুখসহ আরও নানারকম ভৌতিক সরঞ্জামে ভরে উঠতে দেখি। সাথে অনেক বড় বড় মিষ্টি কুমড়ো, দোকানের বাইরে সাজানো। এছাড়া প্রতিটি দোকান, ব্যাঙ্ক, অফিস বাড়িতে অদ্ভুত সাজের ছড়াছড়ি দেখে ভীষণ অবাক হয়ে যাই।
দোকানে সাজিয়ে রাখা ভৌতিক বস্তু গুলো হঠাৎ হঠাৎ কথা বলে উঠে, ভয়ঙ্কর শব্দে পিলে কাঁপিয়ে দেয়। অথবা চোখ ঘুরিয়ে তাকায়,লাফিয়ে উঠে বা হিঁ হিঁ হিঁ হেসে উঠে। যদিও জানি সবই তৈরী সরঞ্জাম তবু গা শিরশির করে ওঠে ভয়ে। দোকান না মনে হয় যেন হন্টেট হাউসে ঢুকে পরেছি। বিচিত্র সব পোষাক শিশু থেকে বড়রা বেশ আনন্দের সাথে কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরছে। দোকানে চকলেটের আমদানীও মনে হয় অনেক বেশী । জেনে যাই এসব হ্যালুয়িনের আয়োজন।
একত্রিশে অক্টোবর হ্যালুয়িন। ঐদিন ট্রিক অর ট্রিট হবে। তেমন কিছুই বুঝতে পারি না অপেক্ষায় থাকি কি হয় দেখার। অক্টোবরের একত্রিশ প্রতিবছর পালিত হয় হ্যালুয়িন উৎসব।
অশুভ আত্মা যাতে ক্ষতি করতে না পারে মানুষের। এজন্য শীত শুরুর ঠিক আগে প্রেতদের ভোজ, পূজা দেয়া হয়। হ্যালুয়িনের কয়েকদিন আগে থেকে বাড়ি গুলো সাজানো হয় প্রেতপুরীর মতন। এক একটা বাড়ি যেন এক একটা প্রেতপুরি। ভুত,প্রেত, রক্ত, পুরানো মাকড়শার জাল, মাকড়শা, কঙ্কাল, চামচিকা, জ্যাকলন্ঠন, পামকিন, ভৌতিক শব্দ ইত্যাদি দিয়ে সাধ্যমতন যথা সম্ভব ভীতিকর করে সবাই বাড়িগুলো সাজায় নিজস্ব সামর্থের মধ্যে। হ্যালুয়িনের রঙ কমলা ও কালো। ট্রিক ওর ট্রিট হ্যালুয়িনের প্রচলিত শব্দ। এদিন সন্ধ্যায় বাচ্চারা নানারকম ভুত প্রেত সেজে বাড়ি বাড়ি যায়। হাঁক দেয় ট্রিট অর ট্রিক। দরজা খোলাই থাকে বাড়িগুলোর, নানা রকম চকোলেট দিয়ে ভরে দেয়া হয় বাচ্চাদের হাতের ব্যাগ। বাড়ি বাড়ি ঘুরে বোঝাই চকোলেট ব্যাগ বয়ে খুশি মনে বাচ্চারা বাড়ি ফেরে।
প্রথম যারা জাহাজে ভাসতে ভাসতে এসে কানাডায় জীবনযাত্রা শুরু করে, ইংল্যান্ড থেকে বিতারিত পাইরেটস শ্রেণীর লোকরাই তার মধ্যে বেশী। সে সময় প্রচণ্ড শীতে প্রচুর মানুষ মারা যেত। এত বেশী মৃত্যুকে প্রচীনকালের মানুষরা অশুভ ভৌতিক কারণ হিসাবে ভাবত আর ভুত-পিশাচদের তুষ্ট করার জন্য, রোমান সেল্টিক কাল্চারের অনুসরণে আত্মার শান্তিদানের প্রার্থণা শুরু হয় এই দিনে।
বাড়ির বাইরে খাবার দিয়ে রাখা হতো অশুভ আত্মাদের খুশি করতে । শীতকালে শীতের প্রকোপ থেকে যেন বাঁচে, সুস্থ সবল থাকে। পিশাচরা টেনে না নেয় মৃত্যুর কোলে তার জন্য শীতের আগে শুরু হয় প্রার্থণা। আগুনের প্রতীক হিসাবে পামকিন ( মিষ্টি কুমড়া) আর ভয় অশুভ, অন্ধকারের প্রতীক ধারণ করে কালো রঙ। পামকিনে ভৌতিক মুখ কেটে তার ভিতর আলো রেখে দেয়া হয়। ভুত প্রেত যেন বাইরিতে ঢুকতে না পারে ক্ষতি না করতে পারে। খাবার পেয়ে আর আলো দেখে দূর থেকেই চলে যায়।
পৌরাণিক সেই ধারার প্রচলন আজ চকোলেটের ট্রিটে এসে ঠেকেছে।
নানা রকম মানুষের বাস এখন কানাডায়। জীবন যাপন তাই সব সময় নিরাপদ নয়। শিশুরা যেন নিরাপদ থাকে হ্যালুয়িনের সন্ধ্যায় তার জন্য সতর্ক ব্যবস্থা নেয়, শহরের পুলিশ বিভাগ আর নিরাপদ ভাবে চলার র্নিদেশনা দিতে থাকে রেডিও টেলিভিশন আগের দিন থেকে। বাচ্চাদের সাথে অভিভাবকও হাঁটে বাড়ি বাড়ি। ভুত প্রেত না সেজে অনেকে এখন সেলিব্রেটি, নাম করা অনেক মানুষের চেহারা বা মুভি ক্যারেক্টার সাজে। নানা রকম সাজে সজ্জিত হয়ে সারাদিনই সবাই অন্য রকম জীবন যাপন করে এদিন। বাড়িঘর সাজানো হয় অনেকদিন আগে থেকে। আজকাল বাড়ি ডেকরেসনের কম্পিটিশন হয়ে হয়ে যাচ্ছে নিরবে। কে কত ভৌতিক করে তুলতে পারে সে চেষ্টা চলে। অনেকে পার্টির আয়োজন করে বন্ধুরা মিলে। এছাড়া ওয়ান্ডারল্যাণ্ড, নায়াগ্রা ফলসসহ, বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, স্ট্রিটে ভরপুর থাকে, হ্যালুয়িনের উৎসবের অনেক রকম আয়োজনে।
দেশে যেমন পুজায় অংশ নেয়ার জন্য ব্যস্ত থাকতাম এখানে তেমনি জীবনের সংস্কৃতিতে সংযোজিত হয়েছে অবাক হয়ে দেখা হ্যালুয়িন দিবস।