এই দিবস সমন্ধে কিছু বলার আগে বরাবরের মতো এবারও আমি দিবসটির বেপারে একটি মিসকন্সেপশন আলোচনা করে নেই। মা দিবস মানে যে শুধু এই দিবসটিতেই মাকে স্মরণ করতে হবে বা মাকে ভালোবাসতে হবে তা নয়। দিবসটি মায়েদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে পালিত হয়। মায়ের প্রতি ভালোবাসা বা তাকে স্মরণ করা বা তার প্রতি দায়িত্ব সারা জীবনের এবং প্রতিটি দিনের, ও প্রতিটি মুহূর্তের, অন্তত যতটুকু পর্যন্ত পারা যায়। আর আমার ছোট বোনের কোথায় বলতে গেলে এই ডিজিটাল যুগে কিছু কিছু ছেলেমেয়েদের জন্য এই দিবসটি না থাকলে তো মাকে স্বরণ করা একেবারে ভুলেই যেত। যাহোক আমি আমার মূল বক্তব্যে আসি।

এখানে সবার মতো আমিও কাজ, পরিবার এবং আনুষাঙ্গিক অনেক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ছোট বেলা মা বাবা বা দাদার কাছ থেকে অন্যের জন্য কিছু করার কথা শিখেছি। তাদের কথা ছিল, নিজের এবং নিজের স্বজনদের প্রতি দায়-দায়িত্ব করার পরে, পারলে অন্যের জন্য কিছু করবা। ঈদের জাকাত, কোচিত-কারণ দুই একবার স্বল্প মাত্রার কিছু ডোনেশন দেওয়া ছাড়া এখানে ফিনান্সিয়াললি তেমন হেল্প করার সামর্থ থাকে না, তাই মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলে কয়েক ঘণ্টার জন্য ভলান্টারী করি, কারণ আমার বাবা-মা বেঁচে থাকলে ফিনান্সিয়াললি কারো জন্য কিছু করতে না পারলেও এটি যে করছি সেটা জেনে তারা খুশি হতেন, কারণ তাদের চাওয়া পাওয়া আমাদের কাছে মানুষের মতো মানুষ হওয়া ছাড়া তেমন বেশি কিছু ছিল না। তারা গত হলেও আমি মনে করি তাদের আত্মা আমাদের আসে পাশে আছে এবং তারা আমাদের কর্মকান্ড দেখতে পাস্ছেন।

আজ ছুটির দিন হলেও যখন একটি সিনিয়রদের হোমে ভলেন্টারিংয়ের সুযোগ পেলাম তখন আর না করলাম না, কারণ ওখানে অনেক মা থাকবেন। আমার নিজের মা না থাকলেও উনাদের কাছে দিনের কিছুটা সময় কাটাতে পারলে আমার অনেক ভালো লাগবে এবং আমি মনে করি আমার পরলোকগত মাও অনেক খুশি হবেন। আমার দৃঘদিন আগে গত হয়ে যাওয়া মায়ের জন্য মা দিবসের গিফট এর থেকে বড়ো আর কিছু আমার কাছে ছিল না, তাই সকালে মায়ের জন্য কিছু দোআ খায়ের করে বেরিয়ে পড়লাম সেই সিনিয়ার্স হোমে। সময়টি সত্যিই খুব ভালো কাটছে এই সমস্ত দুস্থ মায়েদের সাথে থেকে, তাদের সাথে কথা বলে। অনেক ইন্টারেস্টিং গল্প বলছেন উনাদের জীবনে এই দিনটিকে নিয়ে। ভাবলাম ব্রেক টাইমটা ব্যয় করে কিছু লিখি মায়ের স্মরণে।

মা না থাকার ব্যথা, যার মা নেই তার আর বুঝতে দেরি হয় না। মা বেঁচে থাকতে তার মায়া মমতায় অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্মৃতির কথা তেমন মনে পড়ে না, তার অবর্তমানে সেই সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্মৃতিগুলি মনের ক্যানভাসে একটার পর একটা ভেসে উঠে একটি আনলিমিটেড সিরিয়াল চলচিত্রের মতো। কেউ যদি লেখক, কবি, সাহিত্যিক না হন, বা লেখার অভ্যাস না থাকে তাহলে তাকে কিছু একটা লেখার কথা বললে হয়তো বিব্রত বোধ করবেন বা অপারগতা স্বীকার করে ক্ষমা চাইবেন, কিন্তু আমি নিশ্চিত যে কাউকে যদি বলা হয় তার মার্ সমন্ধে কিছু বলতে তাহলে সে একটি বই রচনা করতে যত কথা লাগে তার থেকেও বেশি কথা বলতে পারবেন। মা কথাটি একটি মাত্র অক্ষরের হলেও মায়েরা যুগে যুগে তাদের নিঃস্বার্থ সেবার মাধ্যমে আমাদেরকে দিয়ে যান হাজারো অক্ষরের মালা।

মায়ের সাথে কাটানো অসংখ্য স্মৃতির মধ্যে কিছু কিছু স্মৃতি থাকে সব সময় টার্ন অন, যেটাকে টার্ন করতে হয় না। আমি মনে করি সবারই সেই ধরণের স্মৃতি আছে। আমি আমার সেই ধরণের একটি স্মৃতির কথা বলে শেষ করি। বড়ো হওয়ার পরে যখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ি এবং ছাত্রাবাসে থাকি তখন অন্যান্যের মতো আমিও ছুটিতে বাড়িতে যেতাম। যখন বাড়িতে গিয়ে অনেক সকালে ঘুমিয়ে থাকতাম তখন হটাৎ কপালে একটি কোমল হাতের মসৃণ স্পর্শ অনুভব করতাম, এবং সঙ্গে সঙ্গে একটি কাপড়ের গন্ধ অনুভব। হাতটি ছিল আমার মায়ের, আর কাপড়টি ছিল তার শাড়ির আঁচলের। সে সকালে নামাজ পড়ে এসে তার সন্তানের কল্যাণের জন্য দোআ পড়ে মাথায় হাত বুলাতে আসতেন। সত্যি বলতে কি মাঝে মাঝে রাগ হতাম, তবে তার অবর্তমানে আবার ওই স্পর্শ বা শাড়ির আঁচলের গন্ধের আকাঙ্খায় থাকতাম এবং সে জন্যই বার বার ফিরে যেতাম তার আঁচলের নিচে, কিন্তু হায় এখন তো আর চাইলে পাওয়া যায় না !
তবে জীবনের অনেক সময় কাটলো, পৃথিবীর অনেক দেশে গেলাম, অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হলো, কিন্তু সেই কোমল হাতের স্পর্শের অনুভব আর কোথাও পেলাম না, আর এখনো ভুলতে পারি নি। জীবনে অনেক পরিক্ষার অনেক প্রশ্ন অনেকের কাছে কমন নাও পড়তে পারে তবে, আমি এই যে অনুভবের কথা বললাম এই কথার সাথে আপনাদের অনেকের কমন পড়ে যাবে।

আমার লেখাটি বিন্দুমাত্র যদি আপনার মনকে নাড়া দিয়ে থাকে তাহলে আমাকে কমেন্ট অথবা লাইক দেওয়ার আগে প্লিজ আপনার মা বেঁচে থাকলে তাকে আমার হয়ে একটি অতিরিক্ত হাগ করুন , দূরে থাকলে তাকে একটি কল করুন আর যদি তিনি বেঁচে না থাকেন তাহলে তার জন্য দোআ করুন। আর লেখার শিরোনামে যেটা বলেছি, যাদের মা নেই, তাদের নিজের মা না থাকলেও পৃথিবীতে এখনো অনেক মা বেঁচে আছেন এবং থাকবেন, প্লিজ তাদেরকে যথাযোগ্য সম্মান দিন তাহলে আপনার পরলোকগত মাও খুশি হবেন। মনে রাখতে হবে আপনার বৌ, বোন, ভাগ্নি, খালা, ফুফি অর্থ্যাৎ সকল মহিলারাই কারো না কারো মা অথবা মা হবেন।

পৃথিবীর সকল মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেষ করছি।

বিঃ মুকুল
টরন্টো

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন