সাথের ছবিটি দেখলে বুঝতে পারবেন যে আইসোলেশন বা ঘরবন্ধী অবস্থায় দুস্থ মানুষের কি অবস্থা। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় কানাডাতে কারোর না খেয়ে মরার অবস্থা এখনো নেই এবং সেই অবস্থা হতে অনেক দেরি। তাই এই মহুর্তে আমি এদেশের কোনো মানুষের অভাবে না খেয়ে মরার বা চিকিৎসা না পেয়ে মরার চিন্তা একদম করি না, করি আমাদের দেশের রেখে আসা গরিব লোকজনের জন্য। আমার গত ১২/১৩ বছর ধরে কানাডার একেবারে দুস্থ লোকজনের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যে এখানে সরকারের এই ধরণের মানুষকে সাহায্যের জন্য অনেক ব্যবস্থা আছে।
দুঃখজনক হলেও উন্নয়ণ যতই হোক, বাংলাদেশের অবস্থা এখনো সেই পর্যায় করতে পারেনি যে এই ধরণের বিপদে গরিব মানুষের জন্য যথাপোযক্ত ব্যবস্থা করবে, তাই এই বিপদে অসংখ মানুষ অনেক অনেক কষ্ট পেয়ে মরতে পারে। আমার দেশে থাকা অবস্থায় আমার এক বোনের অপারেশনে এবং সাম্প্রতিক আমার এক ভগ্নিপতির গাড়ি একসিডেন্ট এবং তৎপর হার্ট এটাকে অকালে ৯ বছরের ছেলে রেখে মৃত্যু, এগুলির মাধ্যমে খুব ভালো করে দেখেছি যে সাধারণ মানুষ বিপদে পড়লে কি অবস্থা হয়।
এই ঘর বন্ধি অবস্থায় বাংলাদেশের অনেকের খুব একটা অসুবিধা না হলেও, ব্যাপক সংখক লোক অলরেডি করুন অবস্থায় পৌঁছেছে। খুব বেশি দূরে যাওয়া লাগবে না, আপনি আপনার আত্মীয়স্বজন বা পরিচিতজনদের খোঁজ নিলেই দেখতে পারবেন। আপনাদের কথা জানি না, তবে আমার আত্মীয়ের বা পরিচিত জনের মধ্যেও সীমিত আয়ে গরিবানা হালে চলার মতো লোক আছে। কানাডাতে আমার নিজের পরিবার বা নিজের জীবনের চিন্তার সাথে সাথে আমার দেশের লোকজনের জন্যেও চিন্তা হয়। আমি তাদের জীবনে আহামরি কিছু করতে পারবো না, কারণ আমাদের সবারই এখানে হিসাবের জীবন, তাই দেশে কারো জন্য কিছু করতে হলে আমরা হয়তো অতিরিক্ত কামাইও করতে পারবো না, আবার সে রকম জমানো অর্থ সবার নাও থাকতে পারে। তবে আমরা অবশ্যই আমাদের লাইফস্টাইলটা একটু পরিবর্তন করে কিছুটা করতে পারি।
শুধু মাত্র একটি কফি বা একটি সিগারেট খাওয়া কমাতে পারলে সেই টাকা দিয়ে দেশে একজন মানুষের দুই কেজি চালের ব্যবস্থা করতে পারি। আমি জানি আমাদের অনেকে অলরেডি এগুলি করছেন, তারপরও বলছি কারণ এই সময়টা আমাদের এই জিনিষগুলি বেশি করে মনে করতে হবে। আপনারা সবাই জানেন পৃথিবীতে কানাডা শান্তি বা শান্তি রক্ষার ব্যাপারে যথেষ্ট অবদান রাখে, আমরাতো সেই দেশেরই বাসিন্দা।
কোনো ধরনের সাহায্যই ছোট না। আমি নিজেও ছোট খাটো কিছু করার থেকে বেশি সামর্থ রাখি না, তারপরেও যতটুকু পারছি করছি। গত পড়শু আমার নিজের এক আত্মীয়ের সাথে কথা হলো। তার কাছে এখনো পর্যন্ত কোনো সাহায্য এসে পৌঁছেনি, অথচ তাদের অবস্থা খারাপ।
আপনাদের অনেকে অলরেডি কিছু কিছু করছেন। সবাই তাদের এই কর্মকান্ড সোশ্যাল মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার করেন না, আর সেটির দরকারও নেই। আমি তাদেরকে বলছি, যারা এখনো শুধু কথা বলে যাচ্ছেন, কিন্তু এখনো কিছু করেননি। কমিয়ে ফেলুন আপনার প্রতিদিনের একটি কফি বা সিগারেটের পরিমাণ এবং সেটি পাঠিয়ে দিন দেশের দুস্থ মানুষের জন্য। মাত্র একটি কফির টাকা হলে একটি পরিবার ২ কেজি চাল কিনতে পারবে। অনেক বড়ো কিছু করতে না পারলেও, অন্ততো একটি দুস্থ পরিবারের এক বেলার খাবার জুটবে। সেই সমুদ্র তীরে ছোট্ট বালিকার একটি ষ্টারফিশ বাঁচানোর গল্পের মতো।
সামনে রমজান মাস আসছে। আমাদের মুসলমান ভাইবোনেরা তাদের জাকাতের বা ফিতরার টাকা ওই সমস্ত দুস্থ মানুষদের জন্য দিতে পারেন।
জানিনা, হয়তো এখানে এমন কেউ থাকতে পারেন যার $২ করাও হিসাবের ব্যাপার, তারা অন্তত ওই মানুষগুলির জন্য দোয়া করতে পারেন।
আমি জানিনা কালকে আমি এই পৃথিবীতে থাকবো কি না, যদি চলে যাই এবং সঙ্গে কিছু নিয়ে যাই তাহলে সেটি হবে আপনাদের আন্তরিকতা, ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং অন্যের জন্য কোনো কাজে আপনাদের সহযোগিতা !!
আর বাংলাদেশে অবস্থানরত আমার পরিচিত, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয়স্বজন আমাকে যদি বিন্দুমাত্র স্নেহ করে থাকেন তাহলে প্লিজ এই বিপদে সামর্থ অনুযায়ী আপনার পাশের লোকের সাহায্যে এগিয়ে আসুন।
আর হা, আমার এই লেখায় কোনো কমেন্ট বা লাইক দেওয়ার আগে ছোট একটি কৌটায় ওই সমস্ত দুস্থ মানুষের জন্য একটি ডলার রেখে তারপর কমেন্ট করুন বা লাইক দিন।
সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবার মঙ্গোল করুন।
মুকুল
বিঃ দ্রঃ সাথের ছবিটি মামুন ভাইয়ের পোস্ট থেকে নেওয়া।