ইগলিন্টন রোডের উপর গোল্ডেনমাইল এমপ্লয়মেন্ট এন্ড সোশ্যাল সার্ভিস সেন্টারের ঢোকার মুখে তমাল তার এক দেশী বড় ভাইকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো। তমাল প্রায় ভিতরে ঢুকেই যাবে অমনি পাশের নোফ্রিলস গ্রোসারি ষ্টোর থেকে বাজার করে এক দেশি বড় ভাই চেচিয়ে বললেন, ‘কি রে তমাল তুই এখানে ?’

-তমাল আমতা আমতা করে বললো, ‘না আসলে আমার রিজুমি টা একটু আপডেট করাতে এসেছিলাম, একটি ভালো চাকরির খোঁজ পেয়েছি, কালকেই এপ্লাই করার লাস্ট ডেট।’ কথা বলেই তমাল দুম করে অফিসের ভিতরে ঢুকে গেল।

মিথ্যা কথা গুছিয়ে বলতে তমাল একেবারে অভ্যাস্ত না, তাও হুট্ করে কিভাবে যে মুখের উপর বলে ফেললো তা দেখে তমাল নিজেই অভিভূত হয়ে গেল। তমাল আসলে সোশ্যাল এসিস্ট্যান্স এ এপলাই এর ব্যাপারে কিছু ডকুমেন্ট হাতে হাতে জমা দিতে এসেছিলো। এখানে ঢুকতে তমালের কেমন যেন একটু সংকোচ লাগছিলো, কাজ না করে সরকারি বেনিফিট নিতে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছিলো, তাই অপরাধীর মতো করে মাথা নিচু করে ঢুকতেই এভাবে হাতেনাতে যে বাদশা ভাইয়ের সাথে দেখা হবে কল্পনাও করতে পারেনি।

তমালের এই বাদশা ভাইকে নিয়ে আঁতকে উঠার আরেকটি কারণ হচ্ছে বাদশাহ ভাইয়ের স্বভাব তিল কে তাল বানিয়ে লোকালয়ে বলে বেড়ানো। তমালের বিশ্বাসঃ বাদশাহ ভাই নির্ঘাত পরিচিত বাংলাদেশী কমিউনিটিতে, এমনকি বাংলাদেশে দ্রুত জানিয়ে দিবে, ‘তমাল টা কেন যে বিদেশে আসলো, ওকে দেখলাম কাচুমাচু করে সরকারি অফিসে দান দক্ষিণার টাকা পয়সা নেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।’

বাদশা ভাইয়ের বাড়ি বগুড়াতে তমালদের একই পাড়ায়। বাদশাহ ভাই তমালের চেয়ে বছর পাঁচেক বড়। গত মাসে এখানে বগুড়া সমিতির পিকনিকে তমালের সাথে বাদশা ভাইয়ের দেখা হয়েছিল। তমাল কানাডায় আসার আগে বাদশা ভাইয়ের সাথে অনেক যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু বাদশা ভাই একবারও ফোন ধরেননি। পরে ভাগ্য ভালো, বাল্যবন্ধু পরাগ পরে অনেক হেল্প করেছিল।

তমাল যখন ক্লাস টেনে পড়ে, বাদশাহ ভাই তখন দেশ ছাড়লেন। বাদশা ভাই আদম ব্যাপারী ধরে সিঙ্গাপুরে শ্রমিক হিসাবে গিয়েছিলেন। তারপরে প্রায় এগারো বছর পর বগুড়াতে হটাৎ বাদশা ভাইয়ের আবির্ভাব। তমাল ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেছিলো। কানাডায় আসার ব্যাপারে একটু একটু করে কাগজ গোছাচ্ছে। বাদশাহ ভাইয়ের কথা শুনতেই ছুঁটে গিয়েছিলো উনার সাথে দেখে করে কানাডা সম্পর্কে অনেককিছু শুনবে, জানবে। বাদশা ভাইকে ঘিরে পাড়ায় সোহেলের চায়ের দোকানে তুমুল আড্ডা চলছে। বাদশা ভাই একেকটি কথা বলছে আর সবাই মন্ত্রের মতো শুনছে। ‘বুঝলি, দেশ থেকে সাহস করে, একবার খালি বের হওয়া, দেখবি কপাল খুলে গেছে। আমিতো, দেশ থেকে বের হয়ে প্রথমে গেলাম সিঙ্গাপুর, সে এক আজব দেশরে বাবা, রাস্তায় থুতু ফেললে মনে কর দশ ডলার ফাইন, আর রাস্তায় মুখ থেকে চুইংগাম ফেললে পুলিশ ধরে নিয়ে তিন দিনের ডিটেনশন। এতো নিয়মের মধ্যে থাকা যায় তোরাই বল, তার পর চলে গেলাম সৌদি আরবে। প্রায় বছর সাতেক থাকলাম। ওখানে আরো থাকতে পারতাম, কিন্তু ওখানে আবার শালারা সিটিজেনশিপ দেয় না, কি আর করা বৌ বাচ্চা নিয়ে একবারে এখানে চলে এলাম কানাডার উইনিপেগ শহরে। উইনিপেগ হচ্ছে ম্যানিটোবা প্রভিন্সের রাজধানী। এখানে আবার ঠান্ডা টা বেশ বেশি। ছিলাম সৌদি আরবে ওভেনের ভিতর, এবার একেবারে মনে কর কানাডার ডিপফ্রিজে ঢুকে পড়লাম।’

বাদশা ভাইকে এই ঠান্ডা নিয়ে তমাল আরেকটু ডিটেইলস জানার জন প্রশ্ন করবে কিন্তু তমাল সে সুযোগ পেলো না । এসার নামাজ শেষ করে দুই একজন মুসুল্লি জটলা দেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাদশা ভাইয়ের গল্প শুনছিলেন। তাঁদেরই একজন মুসুল্লি কৌতূহলবশত প্রশ্ন করলেন,’ভাইজান, ওখানে কোরবানি দেয়ার কি ব্যাবস্থা ?’ বাদশাহ ভাই আয়েস করে চেয়ে চুমুক দিয়ে বললেন,’আরে ভাই, এটাতো আর বাংলাদেশ না, রাস্তার পাশে যেখানে সেখানে গরু ছাগল জবাই করবেন, ওদেশে গরু ছাগল দূরের কথা শহরের মধ্যে একটা হাঁস /মুরগি, কবুতর পর্যন্ত জবাই করতে পারবেন না, পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাবে। জবাই করা হয় শহর থেকে দূরে গ্রামের ফার্মে। আমরা কোরবানি করতে চাইলে ওখানে ফার্মে আগে থেকে যোগাযোগ করি অথবা স্থানীয় গোস্তের দোকানে কোরবানির টাকা দিয়ে রাখি।’ বাদশা ভাই ঢক ঢক করে পানি খেয়ে একটু দম নিয়ে সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে আবার শুরু করলেন:

কানাডা হচ্ছে বিশাল বড় দেশ, সাতষট্টি টা বাংলাদেশ একসাথে করলে কানাডার সমান হবে। আর জনসখ্যার কথা শুনলে তোরাতো আকাশ থেকে পড়বি। যেখানে বাংলাদেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১২৬৫ জন লোকজন বাস করে সেখানে কানাডায় বাস করে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাত্র প্রায় চার জন, এটি অবশ্য ২০১৮ সালের হিসাব।’ চারিদিকে পিন পতন নিস্তব্দতায় মানুষজন গোগ্রাসে বাদশা ভাইয়ের কথা মন্ত্রের মতো শুনছে। তমাল অনেক্ষন আকুপাকু করছিলো কানাডার ঠান্ডার কথা আরেকটু শুনবে। বাদশা ভাই চায়ের কাপে চুমুক দেয়ার ফাঁকেই তমাল সাহস করে বলে ফেললো, ‘ বাদশা ভাই ওখানকার ঠান্ডার কথা একটু বলেন।’

এবার বাদশা ভাই পরম উৎসাহে আবার শুরু করলেন, ‘ ঠান্ডার কথা কি আর শুনবি, মনেকর, ঘুম থেকে উঠে দেখবি বাড়ির সামনে কোমর পর্যন্ত চালের আটার মতো মসৃন বরফ দিয়ে সব ঢেকে আছে। টেম্পেরেচার মনেকর মাইনাস ত্রিশ চল্লিশ ডিগ্রি। মাটিতে থুতু ফেললে মাটিতে পড়ার আগেই জমে আইস হয়ে টুপ্ করে পড়ে যাবে। অবশ্য সরকার থেকে বাসা বাড়ি, অফিস আদালত দোকানপাট সবখানে হিটিং সিস্টেম থাকে, তাই তেমন সমস্যা হয় না। ‘

তমাল সোশ্যাল সার্ভিস অফিস থেকে বের হতেই দেখে বাদশা ভাই তখনও দাঁড়িয়ে আছে। কি রে, আমার চোখে ফাঁকি দিবি? আমি হচ্ছি সাত ঘাট মারার মানুষ, এই অফিসের নারী নক্ষত্র আমি সব জানি, এখানে এমপ্লয়মেন্ট সাইড হচ্ছে বাম দিকে, তুই ঢুকলি ডান দিকে, ওখানে সোশ্যাল অয়েল ফেয়ারের জন্য মানুষ যায়, সত্যি করে বলতো তুই কি সোশ্যাল অয়েল ফেয়ারে এপ্লাই করলি? আমাকে ভয় পাওয়ার কি আছে ? আমি কি বাগ-ভাল্লুক, আমার কাছে লুকাস না, তুই কি ভেবেছিস তোর সোশ্যাল অয়েল ফেয়ারের কথা আমি জনে জনে বলে বেড়াবো, এমনতো হতে পারে আমি তোর কোনো উপকারে এলাম একটা কথা মনে রাখবি, এই বিদেশ বিভুঁয়ে সবাইকে বিশ্বাস করবি না ভালো কথা কিন্তু কখনো অবহেলা করবি না, বলা যায় না কাকে কখন কাজে লেগে যায়। এই যেমন ধর, তুই আমার কাছে লুকাচ্ছিস যে তুই সোশ্যাল অয়েল ফেয়ারে এপ্লাই করলি, অথচ দেখ, আমি তোকে এই লাইনে অনেক তথ্য দিতে পারি যা তোদের এতো কাজে লাগবে তুই ভাবতেও পারবি না। চল পার্কিং লটে চল বিড়ি খেতে খেতে দুটা গল্প করি। সাথে বিড়ি আছেতো নাকি আবার বৌ এর পাল্লায় পরে বিড়ি সিগারেট ছেড়ে সাধু দরবেশ হয়েছিস ?

কিছুটা হালকা বাতাস ছেড়েছে । নভেম্বর মাস। হয়তো কয়েকদিনের মধ্যেই শীত নেমে যাবে। তমাল পকেট থেকে সিগারেট বের করে বাদশাহ ভাইকে দিতেই বাদশা ভাই কচ্ছপের মতো খপ করে করে সিগারেট টি ছোঁ মেরে নিয়ে বাতাসের বিপরীতে কায়দা করে সিগারেট ধরালেন। বাদশা ভাই একটু চাপ দিতেই তমাল বাদশা ভাইকে হর হর করে সত্যি কথা সব বলে দিল। বাদশা ভাই সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বাতাসে কুন্ডলি পেকে ধুম ছাড়িয়ে দার্শনিকের মতো বললেন, ‘ যা বলি মন দিয়ে শোন, একটা কথা মনে রাখবি, কানাডা হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম একটি দেশ যারা শুধু তোর আমার মতো ইমিগ্রান্টদের নিয়েই শুধু ভাবে না এঁরা প্রতিটি নাগরিকের রাইট নিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে এখানে অনেক অনেক আইন তৈরী করে রেখেছে, সবার জন্য অনেক অনেক বেনিফিট এর ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। আমাদের নিতে অসুবিধা কোথায়? এখানে আমাদের দেশি কমিউনিটির একটি বাজে দিক হচ্ছে, না জেনে না শুনে উল্টা পাল্টা কথা বলে নিউ ইমিগ্রান্টদের ভড়কে দেয়। এই যেমন ধর এই সোশ্যাল অয়েল ফেয়ার নিয়ে এখানে বাংলাদেশী লোকেরা মনে করে সোশ্যাল অয়েল ফেয়ার যাওয়া মানে মান ইজ্জতের ব্যাপার। এখানে অনেক ভদ্র ঘরের লোকজন, ছেলে/মেয়েরা সোশ্যাল অয়েল ফেয়ারে থেকে, সরকারি বাসায় থেকে ভালো করে ক্যারিয়ার গুছিয়ে আবার বের হয়ে আসে। সবাই যে বের হতে পারে তা না, অনেকে আবার সোশ্যাল এ থাকার মধু পেয়ে যায়, একেবারে ফি সাবিলিল্লাহ বছরের পর বছর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত থেকে যায়। তোদের কথা আলাদা, তোরা হচ্ছিস দুইজনেই ভার্সিটি থেকে লেখাপড়া করা মানুষ, এখানে থেকে ক্যারিয়ার ঠিক ঠাক কর তারপর মনেকর চাকরি/বাকরি নিয়ে এখন থেকে বীরের মতো বুকে ফুলে বেরিয়ে গেলি, নিজেরা বাসা টাসা কিনে ফেললি, তোদের পায় কে?’

তমালের নিজের কাছে খুব খারাপ লাগলো, খামাখা বাদশা ভাইকে উল্টা পাল্টা ভেবেছিল। এই মুহূর্তে কেন জানি বাদ্শাভাইকে তমালের খুব কাছের মানুষ বলে মনে হতে থেকে। তমাল বাদশা ভাইকে বললো, ‘বাদশা ভাই, আমরা আসলে দুজনেই osap নিয়ে ফুল টাইম লেখা পড়ে চলে যাবো, এই উইন্টার সেমিস্টারে ট্রাই করেছিলাম, লম্বা লাইন, সম্ভবত এবার আর হবে না, নেক্সট fall season থেকে শুরু করবো। তাই, স্বল্প সময়ের জন্য সোশ্যাল অয়েল ফেয়ারের জন্য এপ্লায় করলাম। ওরাতো গড় গড় করে অনেক কথাই ইংরেজিতে বললো, কিছু বুঝেছি, কিছু বুঝিনি। বাংলাদেশী কোনো সোশ্যাল ওয়ার্কের এর সাথে আলাপ করবো ভেবেছি তবে মনে খটকা লাগছে একান ওকান হয়ে জানাজানি হয়ে গেলে ক্যালেংকাৰী হয়ে যাবে। আপনে যদি একটু খুলে বলতেন।

বাদশা ভাই, সিগারেটে শেষ সুখটানটি দিয়ে পায়ের সাথে মোতাটি মাড়িয়ে বললেন,’বাঙালীদের নিয়ে খারাপ ধারণা ঠিক না, অন্তত চাকরির খাতিরে উনারা অবশ্যই কনফিডেন্সিয়ালিটি মেইনটেইন করবেন। তোকে একদিন বাংলাদেশী সেটেলমেন্ট ওয়ার্কারের সাথে দেখা করতে নিয়ে যাবো। আমি যতদূর জানি, একজন মানুষের থাকা খাওয়ার জন্য মাসে সাতশো তেত্রিশ ডলার দেয়, তোদের ক্ষেত্রে যেহেতু তোর সাথে তোর বৌ, তোর একজন ছেলে থাকে, সব মিলে মাসে হয়তো প্রায় বারো তেরোশো ডলার পাবি, তারপরেও তুই ক্যাসেও মনেকর কিছু কাজ /টাজ করলি, তবে খবরদার, একাউন্টে সে টাকা রাখবি না। এছাড়াও, যদি কোথাও ভলেন্টিয়ার করিস, বাড়তি টাকা পাবি, ডাক্তার যদি স্পেশাল খাবারের নোট দেয়, আরো কিছুটা বাড়তি টাকা পাবি। তোদের সবার জন্য ঔষুধ পত্রেরও সুবিধা পাবি। তোর ছেলে যদি সাঁতার টাতার শিখতে সিটির সুইমিং পুলে যায় সেটা ফ্রি
এরকম আরো কিছু সুবিধা আছে, তবে সবচেয়ে যেটা বড়, সেটা হচ্ছে তোকে তোর বায়োডাটা দেখে তুই যদি চাস তোকে ফ্রি ট্রেনিং এর ব্যাবস্থা করে দিবে, কপাল ভালো থাকলে ভালো চাকরি পেয়েও যেতে পারিস, সেক্ষেত্রে আর osap নিয়ে দেনা বাড়াতে হলো না।

গোল্ডেনমাইল এমপ্লয়মেন্ট এন্ড সোশ্যাল সার্ভিস সেন্টার থেকে বাসে করে বাড়ি আসার পথে তমাল উথাল পাতাল অনেক কথা ভাবতে থাকলো। ছেলে বেলায় ছাত্র হিসাবে তেমন খারাপ ছিল না। মেট্রিক, ইন্টারমিডিয়েটে ডাবল ফাস্ট ডিভিশন ছিল, হয়তো ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ারে চান্সপায়নি তবুওতো ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়ে মাস্টার্স কমপ্লিট করে চাকরি করেছে। স্ত্রী তিথি ইউনিভার্সিটির শিক্ষকতার চাকরি করতো। অথচ, স্বপ্নের ইমিগ্রেশন নিয়ে এদেশে এসে আজ বেকার ভাতা নিয়ে চলতে হচ্ছে।

তমাল বাড়িতে আসতেই তিথি দরজা খুলে বললো, ‘তোমার সাথে নাকি বাদশা ভাইয়ের দেখা হয়েছিল?’ তমাল যেন আকাশ থেকে পড়লো, ‘তোমাকে এ খবর কে দিলো?’ তিথি মুখ টিপে হেসে বললো, ‘তোমার বন্ধু পরাগের কাছে বাদশা ভাই ফোন করেছিল, তোমার সাথে নাকি কোথায় দেখা হয়েছিল, ভুলে তোমার ফোন নাম্বার নেয়নি, পরাগের কাছে ফোন করে বলেছে তোমাকে বলতে এই শনিবারে রাতে উনার বাসায় পরাগ ভাইদেরসহ উনার বাসায় আমাদের দাওয়াত।’

তমাল ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলো, এই বুঝি বাদশা ভাই হাঁটে হাড়ি ভেঙেছে, সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের কথা হয়তো সবাইকে বলে দিয়েছে। এবার দাওয়াতের কথা শুনে কিছুটা আশস্থ হলেও তমাল ভিতরে ভিতরে কিছুটা চিন্তিত হয়ে উঠে। এদেশে দাওয়াত নিয়ে তমালের অভিজ্ঞতা বিশেষ সুবিধার না। দাওয়াত খেতে এসে নানান জনের নানান কথা হয়। একবারতো এক ভাবি এক দাওয়াতে তাদের অটিস্টিক ছেলে তিতাসকে মুখের উপর পাগল বলায় তিথি অনেক রাত অবধি কেঁদেছিল।

প্রবাসে এই কয়দিনে তমাল/তিথিদের অনেক অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখানে নানান মতের, নানান বর্ণের মানুষ বসবাস করে। বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে এই বৈচিত্রতা যেন আরো বেশি। যারা অনেকদিন ধরে এখানে বসবাস করে আসছেন অনেকেই কোনো না কোনো ভাবে এখানে সেটেল্ড হয়েছেন। বিভিন্ন সোশ্যাল গ্যাদারিং এ এই সেটেল্ড হওয়া মানুষগুলো নিউ ইমিগ্রান্টদের নানানভাবে সাহায্যের হাত যেমন বাড়িয়ে দেন, আবার অনেকেই এই নিউ ইমিগ্রান্টদের অসহায়ত্ব নিয়ে তাচ্ছিল্ল করেন, উপহাস করেন, বিকৃত রুচির এই মানুষেরা নিউ ইমিগ্রান্ট দেখলে এমন ভাব করেন যেন উনারা যুগ যুগ ধরে এদেশে আছেন। অথচ, তাঁদের একটু সহানুভূতি, সঠিক পরামর্শ অথবা একটুখানি গাইড পেলেই হয়তো প্রবাসে অনেক নিউকামারদের জীবন বদলে যেতে পারে।
–(চলবে)

জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন, রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার, টরেন্টো, ২০২১


পূর্ববর্তী নিবন্ধকানাডার হালিফ্যাক্সে বাংলাদেশি হিন্দু ধর্মালম্বীদের বিশেষ প্রতিবাদ সমাবেশ ও আমাদের সম্প্রদায়িক চেতনা ।
পরবর্তী নিবন্ধডানাকাটা পরী-পর্ব ১
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন