সাকিলা এম পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছে  পরীক্ষার রেজাল্ট পেয়ে রহমান, রেবেকা পুরো পরিবার খুশি।  আজিজ আনন্দে পুলকিত হয়ে ওদের জন্য চাইনিজ খাবার অর্ডার দিয়ে বলে সাকিলা তুমি সত্যি ভালো ছাত্রী।  তোমাকে আমি কি দিয়ে খুশি করবো বুঝতে পারছি না সাকিলা বলে ভাইয়া তোমরা খুশি হয়েছো,ওটাই আমার প্রাপ্য।  

আবিদ সাকিলার রেজাল্টে খুশি হয়ে ওর জন্য অনেক ধরণের গিফট নিয়ে এসে দেখা করে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেছে   । সীমা,মাসুদ ডাক্তার আজমল এসে ওকে অভিনন্দন জানিয়েছে ।  

সপ্তাহিক ছুটিতে  মজিদ রেনু এসে বলে সাকিলা তুমি কি করবে ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত  নেবে

একদিন সাকিলা তার বন্ধুরা একত্রিত হয়েউনিভার্সিটির চত্বরে বসে গল্পে মেতে উঠেছে সবাই  চা, সিঙ্গারা এনে গল্পের আসর জমিয়েছে সাকিলা বলে আমরা মনে করেছিলাম আরিফ প্রথম শ্রেণী পাবে, কিন্তু না পাওয়াতে আমি সব চেয়ে বেশি অনুভব করি  সে অনার্সে প্রথম শ্রেণী পেয়েছে  এবং ফাইনালে সেকেন্ড ক্লাস থার্ড হয়েছ।  তবে চেষ্টা করলে কোনো উনিভার্সিটিতে ঢুকতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস  করি ।  আরিফ বলে আমি চেষ্টা করেছি, না পেলে কি করতে পারি   সাকিলা ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট গিফট দিয়ে বলে এটা তোমার খুশিতে আমার নিকট থেকে দিলাম  আরিফ বলে সাকিলা তোর অনুভূতির জন্য ধন্যবাদ।  কিছু সময় বসে  গল্প করে  সাকিলা বলে  আমি সকালে বাসা থেকে বের হয়েছি, দেরি হলে আম্মু এবং আব্বু  চিন্তা করবে।  ইতি সুলতানা  সাকিলার চোখের দিকে তাকিয়ে  বলে  চল আমরা তোকে  একটু এগিয়ে দিয়ে আসব।  সাকিলা বলে তোরা কোথায়  যাবি  ?

ইতি বলে আমরা নিউ মার্কেট গেট পয্যন্ত  তোকে এগিয়ে দেব   ওরা একটা রিক্সা নিয়ে গাদা গাদি করে উঠে নিউ মার্কেট দক্ষিন গেটে নেমে সাকিলা বলে তোদের সঙ্গে একটু কথা আছে, চল এখানে দাঁড়িয়ে একটু প্রয়োজনীয় কথা বলি।       

সুলতানা বলে আবিদের সঙ্গে তোর  ঝামেলা কি কেটে গেছে?

সাকিলা বলে, আবিদ আমার পরীক্ষার রেজাল্ট  শুনে অনেক ধরণের  গিফট  নিয়ে এসে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেছে   তাছাড়া মাসুদ আংকেল, আন্টি যারা বিয়ের ঘটকালি করেন সবাই এসে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন । কাজেই থেকে বের হয়ে আসা কঠিন দেখছি মূলত: সবাই চায় আমি যেন রাজি হয়ে ওকে বিয়ে করে নেই। তা ছাড়া আম্মুর শরীর ভালো না এবং আম্মু আমার একটা কিছু দেখতে চায়।  

সুলতানা বলে তুই আরিফকে  বিয়ে করতে চাইলে আমরা প্রস্তাব দিতে পারি এবং সে ও রাজি হবে    

আবিদের  পড়াশুনা  কি?

পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনে  এম  করেছে   ওর বাবা একজন স্কুল টিচার ছিলেন, গত দুই বৎসর হয় মারা গিয়েছেন। মা প্রাথমিক স্কুল টিচার ছিলেন, বর্তমানে অবসর ওর ছোট  ভাই গত বৎসর অর্থনীতিতে এম   করেছে , বর্তমানে ঢাকা একটা প্রাইভেট কলেজ  টিচার ছোট খাটো পরিবার এবং ঝামেলা মুক্ত। 

সুলতানা বলেআবিদ তোকে পছন্দ করে, এটা মূলত একটা প্লাস পয়েন্ট। ওর সঙ্গে তোর  ভালো মিল হবে আমরা কিছুই খারাপ দেখছি না।  তুই দেখ চিন্তা করে।  

আরিফ গ্রামে মানুষ হয়েছ। ওরা দুই ভাই, দুই বোন, ওর সংসারের অবস্থা যতটা জেনেছি ভালো না ।  তার বাবা গ্রামে কৃষি কাজ করে, সে সংসারে বড়ো ছেলে।  ওকে বিয়ে করলে তোকে ওদের জন্য কিছুটা  স্যাক্রিফাইস করতে হবে এবং সব সময় অভাবের মধ্যে থাকবি।  নিজের শখ স্বাদ বলতে কিছুই থাকবে না। আমাদের কাছে মনে হয় তোর ভাই লোকজন আরিফকে পছন্দ করবে না ।  যদিও ওর রেজাল্ট ভাল, হয়তো উনিভার্সিটির  লেকচারার হিসেবে জব পাবে। তথাপি দাঁড়াতে অনেক বৎসর সময় লাগবে । 

তোর কথা মতো, আবিদের সংসার ঝামেলা মুক্ত  এবং তুই নিজেই সব কিছু দিয়ীত্ব নিয়ে কাজ করতে পারবি, তা ছাড়া  সে তোকে অনেক দিন থেকে চিনে ।  যেহেতু আবিদ ভালো চাকরি করে, ওর ছোট ভাই ভালো চাকুরী করবে এবং সুন্দর ভবিষ্যত     দেখ তুই চিন্তা করে এবং আমাদেরকে বলিস তোর সিদ্ধান্ত।   

ঠিক আছে আমি চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেবো।  ওদেরকে রেখে সাকিলা একটা  রিক্সা নিয়ে বাসায় পৌঁছতে একটু দেরি হয়েছে । আজিজ বলে তোর জন্য আমরা অনেক সময় চিন্তা করছি তুই স্কুল থেকে কোথায় গিয়েছিলি?

ভাইয়া আমি একটু ইউনিভার্সিটি পাড়ায় গিয়েছিলাম এবং আমার বন্ধুদের সঙ্গে একটু কথা বলতে গিয়ে দেরি হল।  ঠিক আছে হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে খেতে যা আমরা তোর জন্য অপেক্ষা করছি। সরি, ভাইয়া আমার জন্য তোদের খেতে দেরি হল।  হাসু টেবিলে খাওয়া দিয়ে রেবেকাকে বলে দাদি খেতে যান।  রেবেকা রহমান সাহেব টেবিলে গিয়ে বসে খেয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে টেলিভশন দেখতে বসেছে ।  

সাকিলা খাওয়া শেষ করে সবার সঙ্গে বসে টেলিভশন দেখে নিজের রুমে গিয়ে চিন্তা করে কি ভাবে বিয়ের ব্যাপারে এগোনো যায়।   কাল আবিদকে টেলিফোন করে পরিষ্কার করে নিজের প্ল্যান প্রোগ্রাম সম্পর্কে কথা বলব। অনেক দিন থেকে আমার মতামত জানতে চেয়েছে , আমি কিছুই বলি নি।  এবার পরিষ্কার করে কথা বলে হয় এগিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো,নতুবা না করে দেব।   

একটু পরে চিন্তা করে বলে না, আমি কিছু না বলে বরং রেনুকে সব কিছু বলে দেব।  বাসার সবাই দিয়ীত্ব নিয়ে কাজ করুক । আমি কেন অযথা দায়িত্ব নেবো?

আমি যদি আবিদকে কিছু বলি সে হয়তো মনে করবে আমি ওর সঙ্গে হটকারিতা করতেছি।  সীমা আন্টি এবং মাসুদ আংকেল আমাকে অনেক ভালো জানে। ওরা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করুক।  

পর দিন স্কুল থেকে বাসায় এসে রেনুকে টেলিফোন করে বলে তুমি কেমন আছো?

আমি ভালো।  মায়ের  শরীর কেমন?

ভাল কিছু দেখছি না ।  রেনু বলে,  আজিজকে বলেছি চিটাগাং এসে দুই/তিন দিন থেকে যেতে। ভাইয়া অল্প কয়েক দিনের ছুটি নিয়ে এসেছে , চিটাগাং যাবে কিনা বলতে পারি না।   

তুমি কিছু বলবে কি?

হ্যাঁ, আমি অনেক ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমরা যা বলবে আমি শুনব।  আজিজ  ভাইয়া আমেরিকা যাওয়ার পূর্বে  তোমরা  আমাদের মিলিয়ে দাও।  

সাকিলা অনেক  খুশির খবর, তুমি শেষ পয্যন্ত  রাজি হয়েছ !  শুনো, আম্মুর শরীর ভালো না, বেশি ঝামেলা না করে ছোট খাটো করে কয়েক দিনের মধ্যে শেষ করে দিও।  ঠিক আছে, আমি তোমার ভাইয়াকে বলবো এবং রাতে আলাপ করব।  

মজিদ শুনেছ ?

এত উত্তেজিত হয়ে  কি বলতেছো?

তোমাকে কি ভাবে বলবো, আমি  তো খুশিতে আত্মহারা ?

 আরে কি হয়েছে আগে তো বলবে?

সাকিলা নিজের থেকে রাজি হয়েছে । সে বলেছে , বিয়েতে অমত করবে না এবং আজিজ থাকতে থাকতে শেষ করে দিতে ।   

সত্যি বলছো

আরে হ্যাঁ । এই মাত্র আমাকে বলেছে তোমাকে বলতে । তাহলে আব্বুকে আম্মুকে আগে বলে দেখি । ওরা বাসায় আলাপ করুক এবং আব্বু আম্মু সীমা আন্টি মাসুদ আংকেলের সঙ্গে আলাপ করে কি ভাবে কি করবে সিদ্ধান্ত নিয়ে বললে বাকি সব করা যাবে ।  

দিনা বলে আম্মু, ফুফুর  কি আবিদ আঙ্কলের সঙ্গে বিয়ে হবে?

হ্যাঁ, ভারী মজা , আমি নুতন ড্রেস পাবো , ফুফু সুন্দর করে সাজবে, আমরা আনন্দ করবো ।   কবে হবে , আম্মু?

এখনও কিছু ঠিক হয় নি ।  

মজিদ বলে তুমি টেলিফোন করে  আম্মুর সঙ্গে কথা বলো ।   

রেনু  টেলিফোন করেছে, হাসু টেলিফোন উঠিয়ে বলে আন্টি আসসালামু আলাইকুম । শো, মাকে একটু টেলিফোন দে , আচ্ছা আপনি ধরে রাখেন ।   

রেবেকা টেলিফোন উঠিয়ে বলে রেনু কি বলবে

মা, সাকিলা রাজি আছে এবং বলেছে আজিজ থাকতে থাকতে সব কিছু করে দিতে। আজিজ  কয়েক দিন আছে ,এর মধ্যে কি ভাবে কি করা যাবে ।   তাছাড়া আবিদকে অনেক দিন ব্যাপারে কিছু বলি নি। সে কি চিন্তা করে বসে আছে তাতো জানিনা। আমরা আলাপ করে তোমাদের জানাবো ।  

আজিজ  শুনে বলে কি নিয়ে কথা বলছো, আম্মু?

সাকিলার বিয়ে নিয়ে, ওর  এতদিন পর সুমতি হয়েছে  রহমান বলে দেরি করে হলে তার নিজের থেকে যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে  ওটা ভালো। সবাই ড্রয়িং রুমে বসেছে এবং রেবেকা বলে সাকিলা তুই কি ভালো ভাবে চিন্তা করে বলছিস?

হ্যাঁ, আম্মু  তোমরা যা বলবে আমি তাই শুনবো । রেবেকা বলে ঠিক আছে আমি  তোর সীমা আন্টিকে এখনই বুঝিয়ে বলবো। রেবেকা সরাসরি টেলিফোন করেছে,  সীমা টেলিফোন উঠিয়ে সালাম দিয়ে বলে তোমার কথা চিন্তা করছিলাম, শরীর কেমন?

আমি কিমো নিচ্ছি, শরীর অনেক দুর্বলকিছুই বলতে পারছি না । সীমা,  তোমাকে  একটা কথা বলবো যদি কিছু মনে না করো কি এমন কথা আছে,আর কি কথা মনে করবো?

সাকিলার বিয়ের ব্যাপারে আমরা সাকিলার মতামত নিয়েছি, সে রাজি হয়েছে ।   

বাব্বাহ ! সাকিলার এত দিন লাগলো এই সিদ্ধান্ত নিতে ।  আমি আবিদকে এর মধ্যে কিছু বলি নি । আবিদ কি সাকিলার মতামত জেনেছে?

সীমা, তাতো  আমি বলতে পারি না ।   

এটাতো ভালো কথা, আমি কাল এসে সাকিলাকে জিজ্ঞেস করবো। হ্যাঁ, সীমা আমি চাই আজিজ আমেরিকা চলে যাওয়ার পূর্বেই একটা কিছু ছোট খাটো করে শেষ করে দিতে। আমি কাল বিকেলে এসে সাকিলাকে জিজ্ঞেস করে আবিদকে ডেকে এনে সামনা  সামনি কথা বলবো  

ঠিক আছে ।  

রেবেকা টেলিফোন রেখে দিয়ে বলে সীমা কাল বিকেলে আসবে । 

 সাকিলা তুই কাল সরাসরি  লাঞ্চে বাসায় আসবি ।  

আচ্ছা আম্মু ।  

সীমা টেলিফোন রেখে দিয়ে আবিদকে টেলিফোন করে । আবিদ টেলিফোন উঠিয়ে বলে আসসালামু আলাইকুম আন্টি । তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো সে জন্য টেলিফোন করলাম । বলেন আন্টি । তুমি সাকিলাদের বাসায় কি গিয়েছিলে

হ্যাঁআমি দিন আগে গিয়েছিলাম আন্টিকে দেখতে।  সাকিলার সঙ্গে তোমার কোনো কথা হয়েছে কি?

না তো আন্টি, কেন ?

ওরা হ্যাঁ বলেছে । তোমাকে যদি ডাকি, কাল   বিকেলে যেতে পারবে কি?

হ্যাঁ, পারবো ।   

তাহলে কাল বিকেলে কোনো প্রোগ্রাম করবে না এবং আমার টেলিফোনের জন্য অপেক্ষা করবে ।    

আচ্ছা আন্টি ।   

পরদিন সকালে আবিদ টেলিফোন করেছে সাকিলাদের বাসায় । হাসু টেলিফোন উঠিয়ে সালাম দিয়ে বলে আমি দাদুকে টেলিফোন দেব?

হ্যাঁ, দাও। রেবেকাকে সালাম দিয়ে বলে আমি আবিদ বলছি । সীমা আন্টি আমাকে বলছে বিকেলে উনি আপনাদের বাসায়  যাবেন । আপনারা কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন

রেবেকা বলে তোমার আম্মু কি ঢাকা আছেন

জ্বী , আম্মু ঢাকা আছে ।   

দেখি আমি সীমার সঙ্গে কথা বলে  জানাবো ।

 আচ্ছা ।   

কিছুক্ষন পর রেবেকা সীমাকে কল দিয়ে বলে তুমি আবিদকে বোলো  ওর আম্মু এবং ছোট ভাইকে যেন নিয়ে আসে ।   

ঠিক আছে আমি বলে দেব ।  

সকালে ঘুম থেকে উঠে সাকিলা স্কুলে যাবে,আজিজ বলে তোমার কি আজ স্কুলে না গেলে হয় না । সাকিলা বলে ভাইয়া আমি লাঞ্চে ছুটি নিয়ে চলে আসবো । আম্মু আমার কি বাসায় থাকার কোনো দরকার আছে?

রেবেকা বলে যেহেতু তুমি লাঞ্চে চলে আসবে, দরকার নেই  ।  আজিজ, হাসু তোমার আব্বু ঘরের কিছু দরকার হলে সেরে নেবে, তাছাড়া বাহির থেকে খাওয়া অর্ডার দেবে  । তবে তুমি দেরি করবে না । না আম্মু আমি লাঞ্চে চলে আসবো । একটু পরে সীমা  টেলিফোন করে জানিয়েছে , সীমা আর মাসুদ  সাহেব আসতে আবিদ তার আম্মু এবং ছোট ভাইকে নিয়ে আসবে ।  

রহমান সাহেব বলে যেহেতু মাসুদ সাহেব আসবেন  , এখানে কথা ফাইনাল হবে ।

লাঞ্চ ব্র্যাকে সাকিলা স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে চলে এসে খেয়ে দেয়ে তার নিজের ঘর গুছিয়ে বলে আম্মু আমি পাশের বাসার রিতাকে নিয়ে একটু পার্লার থেকে ঘুরে আসি ।   

রেবেকা বলে  তুমি দেরি করো না ।

আম্মু আমি যাবো আর আসবো বেশি দেরি হবে না । রিতাকে সে আগে থেকেই বলে রেখেছে রিতা  ১ টার মধ্যে ওদের বাসায় চলে এসেছে ।  

ওরা দুই জনে সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে গিয়ে সেজে গুজে  ৩টার ভিতর বাসায় ফিরে এসেছে । রিতা ইডেন গার্লস কলেজের ছাত্রী, সে সাকিলাকে খুব পছন্দ করে । আজ বিকেলে রিতা বাসায় না গিয়ে এখানেই সাকিলাকে  ঘর গুছানো থেকে নানান কাজে সাহায্য করেছে ।  

৬টা বাজে মাসুদ সাহেব সবাইকে নিয়ে বাসায় ঢুকেই বলে রহমান সাহেব আমি আজ অনেক খুশি যে একটা ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে আপনাদের  বাসায় আসতে পারলাম । পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আবিদ, ওর মা এবং ছোট  ভাই  খুরশিদ এক সঙ্গে এসেছে  ।  আবিদের মা  রেবেকার শরীরের খোঁজ খবর নিয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসেছে ।  

সাকিলা কিছুক্ষনের মধ্যে রুমে ঢুকলে আবিদের মা এসে ওকে জড়িয়ে ধরে আদর করে পার্শে বসিয়ে নেয় ।  সীমা উঠে এসে ওকে আদর করে বলে সাকিলা তুমি আমার কাছে পুতুল খেলার সেই ছোট্ট মেয়েই থাকবে।  আমি তোমাকে কলা বাগানের সেই ছোট্ট বাসাতে আমার ছেলে মেয়েদের সঙ্গে  পুতুল নিয়ে খেলা করতে  দেখেছি ।   সাকিলা লজ্জা জড়িত মুখে  মিচকি মিচকি হেঁসে তাকিয়ে আছে ।   

মাসুদ সাহেব  বলে আজিজ তুমি কবে আমেরিকা যাবে?

আজিজ বলে আংকেল আমার আরও ৮ দিন সময় আছ।  মজিদ ও রেনুকে বাদ দিয়ে কোনো কথা বলতে পারবো?

রহমান সাহেব বলে ওরা আমাদেরকে কথা চালিয়ে যেতে বলেছে।  

ডাক্তার আজমল এসে গেট নাড়া দিতেই হাসু গিয়ে গেট খুলে  দিলে বাসায় ঢুকে বলে আমার একটু দেরি হলো।  রহমান সাহেব বলেন তোমার জন্য সবাই বসে আছে ।  মাসুদ সাহেব বলেন বসুন দেরি হয় নি।  

মাসুদ সাহেব বলে আগামী শনিবারে  আমার অফিসের কমিউনিটি হলে বিকেল ৬টার দিকে অনুষ্ঠান করিয়ে দিতে চাই।  দুই পক্ষ থেকে ২৫ জন লোকের ব্যবস্থা করা যাবে। আপনাদের আপত্তি না থাকলে  ছোট খাটো ডিনারের ব্যবস্থা আমি করিয়ে দেব।  দুই পক্ষের যা যা গিফট  দিতে চায় দেবে।  

আমি প্রস্তাব দিলাম , বাকিটা আপনাদের ইচ্ছ।  

রহমান সাহেব বলে আপনার প্রস্তাব অনেক সুন্দর   তারিখ ঠিক আছে ,তবে খাওয়া দাওয়া এবং স্থান নিয়ে আবিদ এবং আমার ছেলে মেয়েদের সঙ্গে একটু আলাপ করার সুযোগ দিন।  

আবিদ ওর মা  সাকিলার দিকে তাকিয়ে আছে । সাকিলা মিসকি মিচকি হাঁসে ,আবিদের মা বলে আপনারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা তাতেই রাজি। ডাক্তার আজমল বলে আমার মনে হয় এটা ভালো সিদ্ধান্ত ,মজিদ ছুটি না পেলেও অসুবিধা হবে না, সপ্তাহিক ছুটিতে  আসতে পারবে।  রেবেকা রহমান সাহেব বলেন আপনারা সবাই রাজি হয়েছেন , আমরা কি আর না বলতে পারি  ?

ডাক্তার আজমল হেঁসে বলে  এটা মেজরিটি ভোটে পাশ হয়েছে , কাজেই না বললেও কাজ হবে না।  সবাই হেঁসে পেলে এবং সীমা বলে ভাই আপনি ঠিক বলেছেন।  

ওরা রাতের খাওয়া শেষে চলে যাবার পর আজিজ বলে আব্বু   আঙ্কল কেন খাওয়া খরচ দেবে

রহমান সাহেব বলে এটা ঠিক নয়, আমরাই খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করবো তবে মাত্র ২৫ জন লোক, মাসুদ সাহেবের  কমিউনিটি সেন্টারে , আমাদের বাসা বা নিকটতম কোথায় করা যায় কিনা মজিদের সঙ্গে আলাপ করে ঠিক করবো ।  

পর দিন  রেবেকা বলে সীমা শুনো, ভাই এত সব করতেছে আমরা খুশি, তবে খাওয়া দাওয়ার আনুষ্ঠানিকতা মজিদ করতে চায়   স্থান কোথায় হবে ওটা নিয়ে একটু চিন্তা করতে দাও। সীমা বলে আমি মাসুদের সঙ্গে আলাপ করে তোমাকে জানাব।  

মাসুদ সাহেব লাঞ্চ ব্র্যাকের সময় আবিদকে  ওর  রেস্ট রুমে ডেকে বলে তুমি আমার সঙ্গে লাঞ্চ করবে এবং আমি শনিবারের অনুষ্ঠান সম্পর্কে তোমার সঙ্গে বিশেষ আলোচনা করব।  দুই জনে লাঞ্চ খেতে খেতে মাসুদ সাহেব বলে  শুনো, এর মধ্যে মজিদ প্রস্তাব করেছে, ওদের একমাত্র বোন সাকিলা, তার খাওয়া দাওয়ার খরচ ওরা করবে   আমি দুই পক্ষকে মিলিয়ে দেব।  স্যার , আমার মনে হয় এটা ভালো প্রস্তাব, আপনি গত এক বৎসর থেকে আমাদের মিলিয়ে দেয়ার জন্য অনেক কিছু   করেছেন।  

তবে আমি তোমাকে দুইটা টিকেট দেব তোমরা সিঙ্গাপুর এবং ব্যাংকক হয়ে দুই সপ্তাহ থেকে ঘুরে আসবে।   সাকিলাকে ছোট কাল থেকে আমি আমার মেয়ের মতো দেখে এসেছি আমি দোআ করি তোমরা সুখী হও। আবিদ বলে ঠিক  আছে স্যার।  তোমরা রবিবারের ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর  যাবে।  সিঙ্গাপুর দিন এবং ব্যাংকক দিন থাকবে ।  আমি তোমাদের টিকেট হোটেল বুকিং দিয়েছি এবং হাত খরচের জন্য কিছু ডলার  দেব।   আমার লোক আছে কাল তুমি সাকিলার পার্টিকুলারস দেবে আমি পাসপোর্ট ভিসা করিয়ে দেব।    

এই ফাইলে একটা চিঠি আছে আমি সাইন করেছি।  তোমার পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে  আমার অফিসের প্রধান নির্বাহী হিসাবে তোমাকে প্রমোশন দিয়েছি।  তুমি ঘুরে এসে যোগদান করবে।  খাওয়া দাওয়ার পর মাসুদ সাহেব চিঠিটা ওর হাতে তুলে দিয়ে বলে আমি তোমার কাজে সন্তুষ্ট।  আবিদ বলে ধন্যবাদ স্যার।  তবে স্যার সিঙ্গাপুর এবং ব্যাংকক যাওয়ার ব্যাপারে আমি সাকিলার সঙ্গে আলাপ করে জানাবো, কারণ ওর মতামত দরকার আছে।

ঠিক আছে বৎস।   

আবিদ তার অফিসে গিয়ে এক কাপ কফি  নিয়ে বসে কিছু একটা চিন্তা করছে, সাকিলার সঙ্গে ব্যাপারে কথা বলা দরকার।  হয়তো এখনো স্কুলে আছে, বিকেলে একবার গিয়ে দেখা করব।  বিদেশে যাওয়া এটা ভালো প্রস্তাব তবে সাকিলা রাজি হবে কিনা জানতে হবে।  তাছাড়া ওর পাসপোর্টের পার্টিকুলারস দরকার।  আমার পাসপোর্ট আছে , নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।  সময় অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার রফিক সাহেব এসে সালাম দিয়ে বলে স্যার ভিতরে আসতে পারি

হ্যাঁ, আসেন।  

স্যার , আমাকে বড়ো সাহেব কমিউনিটি হল সাজানোর দিয়ীত্ব দিয়েছেন।  আপনি আমার সঙ্গে আসলে আলাপ করতে পারি কি ভাবে হলের ডেকোরেশন সিটিং  ব্যবস্থা  করা যায়। রফিক সাহেব আমি একটু ব্যাস্ত ,কাল আপনার সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করবো।  আচ্ছ।   

শনিবারে অতি সংক্ষেপে মাসুদ সাহেবের কমিউনিটি হলে সাকিলা আবিদের বিয়ে পর্ব শেষ হয়ে যায় এবং আজিজের আমেরিকা চলে যাওয়ার দুই দিন পর  মাসুদ সাহেব ওদের  হানিমুনে পাঠায়  

 ক্রমশ :

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্যাকইয়ার্ড সবজি চাষের জন্য কিছু পরামর্শ!
পরবর্তী নিবন্ধঅভিমানী
নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম - জন্ম:- ১৯৪৮ সাল । এনায়েতপুর, কচুয়া, চাঁদপুর, বাংলাদেশ। শিক্ষা:- এম, কম ( ব্যাবস্থাপনা ), ঢাকা ইউনিভার্সিটি। এম, এ (অর্থনীতি ) জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি। চাকুরী জীবন:-ইসলামাবাদ, পাকিস্তান,বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া,আমেরিকা ও কানাডা। বর্তমানে :- অবসর জীবন- কানাডাতে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত বই:-আমার সংগ্রামী জীবন,সাদা ঘোড়া,জীবন চক্র,শুচিতা ও জীবনের মুখোমুখি।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন