রেবেকা বলে পীর সাহেবের দেয়া এই তাবিজ সাকিলা গলায় ঝুলিয়ে স্কুল ও তার বন্ধুদের কাছে যাবে, তুমি কোন দুনিয়াতে বাস করো?
রহমান বলে পীর সাহেবকে অনুরোধ করাতে এই তাবিজ লিখে দিয়েছেন,আল্লাহর কালাম নিয়ে খেলা করা যায় না । সাকিলা গলায় না দিলে এই তাবিজ দিয়ে কি করবে ?
পানি পড়া বাসার চারিদিকে চিটাইতে বলছে তা করতে পারো, তবে এই তাবিজ তুমি নিজের গলায় দিয়ে রাখো ।
রহমান হেঁসে বলে আমাকে পীর সাহেব একটা বড় মোরগ সম্পূর্ণ সাদা রং দেখে নিয়ে যেতে বলেছেন এবং মোরগের মাথা দিয়ে একটা তাবিজ তৈরী করে দেবেন যা সাকিলার সঙ্গে রাখতে হবে । রেবেকা বলে মোরগের মাথা দিয়ে তাবিজ তৈরী করবে, সে গলায় দিয়ে ঘুরবে?
হ্যাঁ, তাইতো হুজুর বলেছেন । আমি বাজারে গিয়ে দেখবো সম্পূর্ণ সাদা রঙের মোরগ পাওয়া যায় কি না । ঠিক আছে ,তোমার যা ভালো লাগে তাই করো । কিন্তু দেখো এ সব করতে গিয়ে সাকিলাকে যেন ঘর ছাড়া করতে হয় না । তুমি জানো ও অত্যন্ত মেজাজি । ও একবার বেঁকে বসলে বা ঘর ছাড়া হলে,ঘরে ফিরিয়ে আনতে মুশকিল হবে ।সে আমি ভালো ভাবে জানি বলে তোমার সঙ্গে প্রথমে আলাপ করেছি । রহমান ফির সাহেবের দেয়া পানি পড়া নিয়ে বাসার চারিদিকে ছিটিয়ে দিয়ে তাবিজ যত্ন করে নিজের ঘরে রেখেছে ।
বিকেলে রহমত এই তাবিজ নিয়ে পুনরায় পীর খানকায় গিয়ে উপস্থিত এবং বলে ,হুজুর এই তাবিজ তো ওর গলে দেয়া যাইতেছে না । পীর সাহেব বলেন ওর সঙ্গে দুইটা জীন সব সময় থাকে, এই তাবিজের দ্বারা ওই জীন কাছে ঘনাতে পারবে না । পীর সাহেব বলেন আমি হুজরাতে বসে মোরাকাবা করে দেখেছি ওর সঙ্গে দুইটা খারাপ জীন আছে । এই জীন দুইটাকে কুহকাফ থেকে এনে ওর উপর আচর করানো হয়েছে । রহমান বলে কে করতে পারে তা কি দেখেছেন ?
ওটা বের করতে তুলরাশির লোক লাগবে যার মাধ্যমে পরীক্ষা করে কে সেই লোক বের করা যাবে । কেউ তাকে ভালোবাসে এবং আপনার মেয়ে তাকে পছন্দ করে না যে জন্য তাবিজ করেছে । রহমত ভাবে হয়তো রাফাত অথবা আবিদ হতে পারে । কিন্তু আবিদ এই কাজ করার মতো না । কিন্তু ফির সাহেবকে এই সব কথা বলা যাবে না । ফির সাহেব পুনরায় বলেন, একটা সাদা মোরগ নিয়ে আসবেন আমি আর একটা তদবির ও করবো এতে সারা জীবনেও জীন আপনার মেয়ের ধারে কাছে ও আসবে না বা আসার সাহস ও পাবে না । রহমান বলেন হুজুর এই তাবিজ কতদিন ওর গলায় রাখতে হবে ?
অন্ততঃ এক বৎসর যে পয্যন্ত জীন মন থেকে ওর প্রতি ভালোবাসা ভুলে যায় । গোছল করার সময় ও কি সঙ্গে রাখতে হবে?
হ্যাঁ,তবে কোনো কিছু দিয়ে মুড়িয়ে নিতে হবে যাতে পানি না লাগে । রহমান বলে হুজুর ওর জন্য একটু দোআ করবেন , আমি অনেক দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি । ফির সাহেব হেঁসে বলেন আমি সেই ভেবেই আপনাকে তদবির দিলাম ।
রহমান বাসায় এসে বলে রেবেকা তুমি শুনছো?
আমি কি শুনবো ?
ফির সাহেব বলেন একটা সাদা মোরগ নিয়ে গেলে উনি তদবির করে দেবেন এবং জীন বা ভুত ওর ধারে কাছে ও আসবে না ।
আমি জানিনা বা কিছুই বুঝি না । তুমি সাকিলার কাছে এ সব বললে সে ঘর থেকে চলে যাবে । দেখো চিন্তা করে তুমি ওকে এ সব বুঝাতে পারবে কি না?
কিন্তু তাকে তো সুস্থ করে তুলতে হবে, যে-ই করে হোক ওকে তদবির তো নিতে হবে । বুঝিয়ে দেখো সে মানবে কি না ।
বিকেলে স্কুল সেরে সাকিলা ঘরে ফিরেছে,রহমান হাঁসতে হাঁসতে বলে কেমন আছো মা । ভালো আছি আব্বু । কাজের মেয়ে বিকেলে চা ও ঝাল মুড়ি এনে দিয়েছে । বাগানের এক পার্শে টেবিল চেয়ার লাগানো আছে । ওখানে বসে চা ও ঝাল মুড়ি খাইতে খাইতে সাকিলা বলে আম্মু তোমার শরীর কেমন? রেবেকা বলে ঔষুধ নিচ্ছি তবে ব্যাথা কমছে না । সাকিলা বলে তোমাকে কি আর একবার ডাক্তারের নিকট নিয়ে যাবো?
না, দরকার নেই, ঔষুধ শেষ হয় নি । আম্মু ডাক্তার মনোয়ারা বলেছেন খারাপ দেখলে যে কোনো সময় নিয়ে আসবে এবং আমি ঔষুধ পাল্টিয়ে দেব । ৫-৭ দিন পর এভাবে-ই যাবো, এখন দরকার নেই । সবাই চা খেয়ে বাগানে বসে আছে । রহমান বলে সাকিলা তোমার সঙ্গে আমার একটু কথা আছে ।
কি কথা আব্বু ?
আমি তোমার ব্যাপার নিয়ে স্থানীয় একজন ফির সাহেবের সঙ্গে আলাপ করে একটা তাবিজ এনেছি । ফির সাহেব বলেছেন তাবিজটি তোমার গলায় দেয়ার জন্য । আব্বু আমার কিছুই হয় নি এবং তুমি কি চাও আমি ফিরের দেয়া তাবিজ গলায় দিয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াই, তাইতো?
ওটা কে দেখবে,গলায় থাকলেও কাপড়ের নিচে থাকবে । কিছু দিন দিয়ে দেখো রাতের দুঃস্বপ্ন দেখা বন্ধ হয় কি না?
আব্বু আমি কোনো পীর বা ফকিরের তদবির মানি না , ওটা মানুষের দুঃশ্চিন্তা থেকে হয়, ওটা যে কোনো মানুষের হতে পারে । তুমি দেখো আম্মুকে নিয়ে আমরা কতখানি দুঃশ্চিন্তায় আছি ।সে ঠিকই বলছো । তোমার আম্মুর জন্য সবাই চিন্তা করে । আজিজ প্রতি সপ্তাহে দুই তিন বার টেলিফোন করে এবং ওর পড়াশুনার ব্যাঘাত হচ্ছে । আমি তাবিজ এনেছি তুমি একটু দিয়ে দেখো রাতের দুঃস্বপ্ন বন্ধ হয় কিনা ?
না, আব্বু আমি তোমাকে একবার বলছি ও সব তাবিজ গলায় দেব না । রেবেকা রহমান ও সাকিলার কথা শুনে যাচ্ছে এবং কিছুই বলছে না ।
এক পর্যায়ে রেবেকা বলে ঠিক আছে না দিতে চাইলে জোর করা হবে না । কিন্তু, তোর রাতের চিৎকার যেন আর না শুনি । আম্মু ওটা কি আমি নিজে ইচ্ছা করে করি?
তুই ইচ্ছা করে করিসনা বলেই আমরা উদ্বিগ্ন এবং তোর আব্বু তাবিজ এনেছে ।সাকিলা বলে তোমাদের সামনেই বসা উচিৎ না এই বলে ঘরে চলে যায় ।
রেবেকা বলে তুমি ওকে জানো , ওকে তুমি এ সব দিতে পারবে না । পীর সাহেবকে বলবে অন্য ভাবে যদি জীন ভুত তাড়াতে পারে । পরদিন বিকেলে রহমান ফিরের খানকায়ে গিয়ে বসে নামাজ পড়ে এক পর্যায়ে বলে, হুজুর আমি আমার মেয়েকে কিছুতেই তাবিজ গলায় দিতে রাজি করাতে পারছি না ।
পীর সাহেব বলেন ওর সঙ্গে সব সময় জীন থাকে, ও নিজে কিছু বলে না, জীন বলে । আপনি খেয়াল করে দেখবেন ওর গলার আওয়াজ দুই রকম হয় ।
ওর ট্রিটমেন্ট করতে হলে ওর কথা না শুনে করতে হবে । আমার কাছে আরো শক্ত ধরণের চিকিৎসা আছে যা করলে জীন ভুত এই শহর থেকে পালাবে । রহমান বলে হুজুর একটু ভেবে চিনতে দেখি এবং আপনাকে বলবো এই বলে বাসায় চলে আসে ।
রহমানকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ দেখে রেবেকা বলে আবার কি খবর নিয়ে আসলে?
পীর সাহেব বলেছেন সাকিলার সঙ্গে সর্বদা দুইটি জীন থাকে এবং ওরাই তাবিজ নিতে নিষেধ করতেছে ।
আমি তো ঐরকম কিছু মনে করি না । চুপ করো, ওকে যদি ঐরকম অস্বাভাবিক কিছু দেখি তা হলে দেখা যাবে । সন্ধ্যায় টেবিলে রাতের খাওয়া দেয়া হয়েছে ,সাকিলা বলে আমি আজ খাবো না ।
রহমান বলে কেন খাবে না ?
আব্বু আমার ক্ষিদে নেই ।
দুপুরে তুমি কি খেয়েছো ?
দুপুরে তোমাদের সঙ্গে খেয়েছি, এখন ক্ষিদে লাগে না । তুমি না খেলে, আমরা ও আজ না খেয়ে অনশন করবো তোমার সঙ্গে । আব্বু তোমরা খেয়ে নাও,আমার ক্ষিদে লাগে না । রহমান ওর ঘরে গিয়ে বলে এস সবাই বসে আছে তোমার জন্য, অল্প করে খেয়ো । সাকিলা চোখ লাল করে চিৎকার দিয়ে বলে তোমরা আমাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না?
কি এমন করলাম যা তোমার শান্তি ভঙ্গ হলো?
সবই করতেছো আমার বিরুদ্ধে,আবার বলো কিছুই করো না । আমাকে জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছো । আমি রাজি না হওয়াতে মানসিক ভাৱে অত্যাচার করতেছো , এখন পীর ধরেছো আমাকে জিনে ধরছে বলে তাবিজ গলায় ঝুলিয়ে লোকজনকে দেখাবে আমি পাগল হয়ে গেছি । তার পরে আরো কত কি শাস্তি বাকি রয়েছে?
যে পয্যন্ত আমি পাগল হয়ে ঘর থেকে না বের হৈ,তোমরা আমার পিছু ছাড়বে না ।
রেবেকা বলে রহমান তুমি ওর সঙ্গে আর কিছু বলবে না । ও যখন ভালো লাগবে এসে খাবে । তুমি খাইতে আসো । রহমান ডাইনিং টেবেলে এসে রেবেকার সঙ্গে খাইতে বসেছে এবং বার বার সাকিলার দিকে চেয়ে দেখে ও আসবে কিনা ।
সাকিলা বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ওদের সঙ্গে এসে খেতে বসেছে ।
রেবেকা বা রহমান ওর সঙ্গে কিছুই বলছে না ।
তিন জনই নীরবে খাওয়া শেষ করে ডাইনিং টেবেল ছেড়ে বের হয়ে বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে বাসার সামনে একটু হাঁটা হাঁটি করছে । রেবেকা বলে সাকিলা আমি তোমার সঙ্গে ঘুমাইবো ।
কেন আম্মু?
আমার ভালো লাগে তোমার কাছে ঘুমাইতে । ঠিক আছে আম্মু ।
রাত ৯টার দিকে ডাক্তার আজমল গেটে নক করে, রহমান গিয়ে গেট খুলে। ডাক্তার আজমল বলে রেবেকার শরীর কেমন একটু দেখে যাই?
তুমি ভিতরে এসে আলাপ করো।
ও ভিতরে এসে রেবেকাকে বলে ভাবি তুমি কেমন আছো?
ভাই আমি কিছু বুঝি না। আমি ডাক্তার মনোয়ারাকে জিজ্ঞেস করেছি এবং সে বলেছে যে কাল তোমার দেখা করার কথা আছে।ঔষুধ যদি কোনো কাজ না করে, সে তোমাকে অন্যত্র রেফার করবে বলে জানিয়েছে। রেবেকা বলে আমি গত এক মাস ওর ট্রাইটমেন্টে আছি এবং ভালো মন্দ কিছুই বুঝতেছি না। সে আমাকে দুই সপ্তাহের ঔষুধ দিয়েছিলো এবং আমি গিয়ে পুনরায় দেখিয়েছি এবং ঔষুধ এনেছি। আমার ঔষুধ শেষ হয়ে গেছে। কাজেই কাল যাওয়ার কথা রয়েছে। ডাক্তার আজমল বলে তুমি কাল বিকেলে গিয়ে দেখা করো এবং আমি ওর সঙ্গে আলাপ করবো। সাকিলা বলে আঙ্কেল আপনি ভাত ও চা খেয়ে যান।
না, আমি বাসায় যাচ্ছি এবং গিয়ে ডিনার করবো এই বলে ডাক্তার আজমল বের হলে রহমান পিছু পিছু গিয়ে বিদায় দিয়ে গেটে বন্ধ করে ঘরে চলে আসে ।
কাজের মেয়ে ওদের মশারি খাটিয়ে দিয়ে ডাইনিং টেবিল গুছিয়ে নিজে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে । রেবেকা রাতে সাকিলার বেডে ঘুমিয়ে পড়েছে । রহমান নামাজ পড়ে খানিক টেলিভশন দেখে ড্রয়িং রুমের লাইট অফ করে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে । রহমানের আজকাল রাতে ঘুম হয় না । রাতে বেশ কয়েক বার ঘুম ভেঙে গেলে উঠে বাথ রুম ও সাকিলা এবং রেবেকাকে দেখে আসে ।
মজিদ ও রেনু কাল এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে বাসায় আসার কথা । নাতনী দীনাকে দেখার জন্য সবাই উৎসুক হয়ে আছে । মজিদ চিটাগাং সরকারি চাকুরী করে এবং রেনু একটা প্রাইভেট কলেজে কাজ করে । রেবেকার শরীর খারাপ দেখে মজিদ ঢাকা ট্রান্সফার হয়ে আসার জন্য দরখাস্ত দিয়েছে । যদি ট্রান্সফার হয়, সে বাসায় আসলে সবার জন্য ভালো হবে ।
ভোরে ঘুম থেকে উঠে সাকিলা ব্রেকফাস্ট সেরে রেবেকাকে বলে, আম্মু আমি বাসায় এসে তোমাকে ডাক্তার মনোয়ারার চেম্বারে নিয়ে যাবো । তুমি তৈরী থেকো । রেবেকা বলে এতে আবার তৈরী হওয়ার কি আছে ?
তুই আসলে আমি তোর সঙ্গে যাবো অথবা তোর আব্বু ও নিয়ে যেতে পারে ।
না, আমি যেহেতু সব সময় যাই , সে জন্য বলছি , আমি-ই যাবো । আব্বু বাসায় থাকুক ,তাছাড়া ভাইয়া ও রেনু আসার কথা আছে ।
সাকিলা স্কুলে যাওয়ার পর রহমান বলে বাসার চারিদিকে পীর সাহেবের পানি পড়া দেয়াতে কিছুটা কাজ হয়েছে, আজ কয়েকদিন সাকিলা ভালো ঘুমায় । পীর সাহেব বলেছেন একবার এসে বাড়ির চারিদিকে তাবিজ দিয়ে বন্ধ করবেন । পীর সাহেবের কাশ্ফ পরিষ্কার, মোরাকাবা করে জানতে পেরেছেন যে এখানে বাড়ি উঠানোর আগে বড় বড় গাছ ছিল যেখানে জীন আসা যাওয়া করতো তা বাধা দেয়াতে উপদ্রব বেড়েছে । তুমি বললে আমি একদিন পীর সাহেবকে এনে বাড়িটা বন্ধক করাবো । রেবেকা বলে পীর সাহেব কি ভাবে জেনেছেন?
উনি বুজর্গ মানুষ, কাশ্ফ খোলা, মোরাকাবায় গেলে সবই দেখেন ও বুঝেন । এই যে দেখো তুমি এ বাড়িতে আসার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছো, ঠিক বলছি না?
রেবেকা বলে এইতো তুমি পীর সাহেবের কাছে গিয়ে এ সব ঝামেলা নিয়ে এসেছো, তোমার ওখানে যাওয়া উচিৎ না, এতে তোমার ঈমান হালকা হয়ে গেছে ।তুমি কাজ করতে, সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিস যাওয়া,বিকেলে বাজার করে ঘরে আসা একটা রুটিন ছিল । এখন কাজ নাই, তুমি এ সব গায়েবি জিনিস খুঁজে বেড়াচ্ছো, এই করে ঘরে অশান্তি বাড়াচ্ছো । আমি তো দেখছি তুমি নিজেই অসুস্থ ,তুমি যদি মেয়েকে অসুস্থ বলো, তাকে কিভাবে বিয়ে দেবে?
রহমান বলে এই কথাটা আমি সব সময় চিন্তা করি । চুপ করো , তোমার এ সব শুনতে ইচ্ছা করে না, তুমি পুরা ঘর অসুস্থ করে ফেলেছো । ঠিক আছে আমি এ সব নিয়ে ফির সাহেবের সঙ্গে আর আলাপ করবো না । তুমি এখন বললে করবে না, আবার গিয়ে আলাপ করে কি সব আজগুবি খবর নিয়ে আসবে?
তুমি একটা কিছু নিয়ে ব্যাস্ত থাকো ।
কি করবো তুমি বলো?
তুমি আগে ভালো লিখতে, আবার শুরু করো, নিজেকে ব্যাস্ত রাখো এবং এ সব পীর ফকিরের কাছ থেকে দূরে থাকো । এরা ধান্দাবাজ, রোজগারের জন্য এ সব কথা বার্তা বলে । তুমি বুঝলে না একবার বলে কোহকাফ থেকে জীন এনেছে আবার বলে এখানে জঙ্গল ছিল, আমরা বাড়ি করাতে জিনের অসুবিধা হয়েছে । হ্যাঁ, হতেও তো পারে ।
রহমান কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলে অনেক দিন লেখালেখি বন্ধ করে দিয়েছি । এখন আর সে ধরণের মনের অবস্থা ও নেই ।
দুপুরে সাকিলা খেতে এসে বলে আমি বলে এসেছি লাঞ্চের পর ক্লাসে যাবো না ।
হেডমিস্ট্রেস আপাকে বলেছি বিকেলে তোমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো । আপা তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছেন । আমি বলেছি আম্মু ট্ৰিটমেন্টে আছেন । সে স্কুল লাইব্রেরি থেকে রাবেয়া খাতুনের লেখা “মধুমিতা ও স্মৃতিকথা ” দুইটা বই এনে ড্রয়িং রুমে টেবিলের উপর রেখে দিয়েছে । রহমান বই দুইটি নিয়ে নাড়াচাড়া করে বলে তোমার আম্মু আমাকে বলেছে লেখা লেখি শুরু করতে । সাকিলা বলে তুমি তো আগে ও লিখতে । হ্যাঁ, লিখতাম তবে অনেক দিন গ্যাপ হওয়াতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি । চেষ্টা করে দেখতে পারো, সময় কাটানোর জন্য একটা কিছু করা দরকার ।
বিকেলে সাকিলা তার আম্মুকে নিয়ে ডাক্তার মনোয়ারার চেম্বারে গিয়ে উপস্থিত । পেছনে আর এক রিক্সা নিয়ে রহমান গিয়েছে প্রয়োজনে আলাপ করতে পারবে । কিছুক্ষন পর ডাক্তার রেবেকাকে ডেকে ভিতরে নেয় এবং সাকিলা বলে আমি কি আম্মুর সঙ্গে থাকতে পারি?
ডাক্তার বলেন আমি তোমাকে ও তোমার আব্বুকে পরে ডাকবো । ভালো ভাবে দেখে মনোয়ারা বলে আপনি কেমন ফীল করেন ?
আপা আমি তেমন ইমপ্রুভমেন্ট দেখছি না । আমি ও তাই ,অনেক আলোচনার পর ডাক্তার বলে আমি আপনাকে ভালো ভাবে চেকয়াপ করানোর জন্য ক্যান্সার হসপিটালে পাঠাচ্ছি । রেবেকা বলে আমার মেয়ে এবং ওর আব্বু এখানে আছে , ওদের সঙ্গে কথা বলেন । ওদের ডাকার পর মনোয়ারা বলে আমি এক মাস দেখলাম এবং ক্যান্সার হসপিটালে চেকআপ করানোর জন্য পাঠাচ্ছি । আপনারা দেরি না করে কাল সকালে নিয়ে যান, আমি লিখে দিচ্ছি ।
মনোয়ারা বলে বেশি দেরি করবেন না । রোগীর হয়তো chemo লাগতে পারে, সে জন্য দেরি করা ঠিক হবে না । সাকিলা চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আম্মুকে কেয়ার নেয়ার জন্য । মনোয়ারা বলে এটা আমার কর্তব্য, ফী দিতে চাইলে বলে আজ আমি ফী নেবো না ।
সাকিলা তার আম্মুকে নিয়ে সরাসরি বাসায় চলে আসে এবং রহমান ডাক্তার আজমলের চেম্বারে গিয়ে দেখা করে । আজমল বলে ডাক্তার মনোয়ারা আমাকে টেলিফোন করেছে । তোমাদের ভেঙে পড়লে চলবে না, ধৈর্য ধরে ট্রিটমেন্ট চালিয়ে যাও । রেবেকা chemo নিতে হতে পারে । ওখানে অনেক ভালো ভালো ডাক্তার আছে ,ভালো ভাবে দেখবে । তুমি বাসার মুরুব্বি ,তোমাকে বিপদে ধর্য্য ধরতে হবে ।
রহমান নরম মনের মানুষ , আজমলের সঙ্গে সে কথা বলতে গিয়ে ধর্য্য হারিয়ে ফেলে । আজমল বলে আমি বাসায় যাওয়ার পথে একবার রেবেকাকে দেখে যাবো । আজমল বলে তোমাকে ড্রাইভার দিয়ে পাঠিয়ে দেব, তুমি বস । রহমান বলে আমি রিক্সা নিয়ে চলে যাবো । ড্রাইভারকে বলে তুমি রহমানকে বাসায় পৌঁছে দাও ।
রাত ৮টার দিকে মজিদ,রেনু ও ওদের ছোট্ট মেয়ে দীনা চিটাগাং থেকে বাসায় এসেছে । দীনা অনেক দিন পর সাকিলাকে দেখে দৌড়ে জড়িয়ে ধরে বলে ফুফু তুমি ভালো আছো?
হ্যাঁ, ভালো আছি । মজিদ ও রেনু বলে আম্মু তোমার শরীরের কি অবস্থা?
রেবেকা বলে একই অবস্থা । মজিদ বলে রোগ দিয়েছেন আল্লাহ, ভালোও করবেন আল্লাহ । রেবেকা বলে ওটাই একমাত্র ভরসা ।
রাতে ডাক্তার আজমল গেটে এসে গাড়ি রাখতেই মজিদ গিয়ে সালাম দিয়ে বলে আঙ্কল আপনি কেমন আছেন?
আমি ভালো,তুমি কখন এসেছো?
কিছুক্ষন হয় এসেছি , রেনু ও দীনাকে নিয়ে এসেছো?
হ্যাঁ, বেশ ভালো হলো, সবার সঙ্গে দেখা হবে ।
রুমে ঢুকেই আজমল বলে ভাবি তুমি দুশ্চিন্তা করবে না, কাল সকালে হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার দেখাও । রেবেকা চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকে । মজিদ বলে আমি সকাল বেলা আম্মুকে নিয়ে যাবো এবং আপনাকে জানাবো । আজমল বলে তোমরা রেস্ট নাও ,আমি যাই । পিছনে পিছনে সাকিলা,রেনু ও মজিদ গেট পয্যন্ত গিয়ে বিদায় দিয়ে গেট বন্ধ করে ঘরে আসে ।
ক্রমশ :