ফারজানা নাজ শম্পা, হ্যালিফ্যাক্স।

কানাডা মানবতার বাণী নিয়ে করোনা ভাইরাসের ক্রান্তিকালে রচিত হয়েছে এক অনন্য কাব্য সৃষ্টি ‘আবারো দেখা হবে ঠিক যেভাবে দেখা হতো/আবারো কথা হবে ফেলে আসা দিনের মতো/ দেখা হবে জাগরণে, দেখা হবে স্লোগানে/ আবারো দেখা হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে/ দেখা হবে আন্দোলনে, দেখা হবে সংগ্রামে/ দেখা হবে প্রেরণার চিরচেনা সমভূমে/ দেখা হোক বারবার, থাকি যেন মিলেমিশে/ দেখা হবে দেশের প্রেমে, দেশকে ভালোবেসে।’ আশাজাগানিয়া এই চয়নগুলো কবি ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অপূর্ব শর্মার ‘দেখা হবে মিলন মোহনায়’ কবিতার অংশবিশেষ। দীর্ঘ চৌষট্টি লাইনের এই কবিতাটি করোনাকালে মানুষের মনে সাহস যোগাচ্ছে। ইতোমধ্যে কবিতাটিকে এই সময়ের অন্যতম সেরা কবিতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সাহিত্য সমালোচকরা। একুশের গানের রচয়িতা, প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী, কবি নৃপেন্দ্র লাল দাশ এবং শামীম আজাদও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন অপূর্ব শর্মার কবিতার। নির্মানশৈলী ও উপস্থাপনে বৈচিত্রের কারনে বিশ্বব্যাপি কাব্যপ্রেমি বাঙালিদের মধ্যে আলোচিত হচ্ছে তাঁর এই কবিতাটি। মরণঘাতী করোনা ভাইরাসে সমগ্র বিশ্ব আজ প্রায় স্তব্ধ। ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে জীবন রক্ষার যুদ্ধে হিমশিম খাচ্ছে মানবজাতি। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে মানবতার সঠিক পথ নির্দেশনার জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে জরুরী তা হলো মানুষের মনে আশা ও সাহসের সুন্দর সমন্বয় স্থাপন। অবরুদ্ধ এই বৈরী সময়ে সামাজিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়া বিপর্যস্ত মানবজাতির দুর্দশাময় প্রেক্ষাপটে সমকালীন বাংলা সাহিত্যে কবিতায় সই কাজটিই সম্পাদন করেছেন বাংলাদশের প্রখ্যাত সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, কবি অপূর্ব শর্মা। তিনি শব্দশৈলীতে নির্মান করেছেন অনবদ্য এক জীবনমুখী সৃষ্টি। ‘দেখা হবে মিলন মোহনায়’ শীর্ষক কবিতার মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন মানবতার আশা জাগানিয়া অবিস্মরণীয় আহ্বান। এই কবিতাকে অমর একুশের গানের রচয়িতা প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গফ্ফার চৌধুরী ইংরেজ কবি লিলিবেথের আলোড়ন সৃষ্টিকারী জাগরণের’ উই উইল মিট এগেন’ এর সাথে তুলনা করেছেন।

কবি অপূর্ব শর্মার কবিতায় বর্তমানের অবরুদ্ধ অনিশ্চিত এই জনজীবনে পাঠক মাত্রেই খুঁজে পাবেন নির্মল প্রত্যাশাময় একটি শান্তির আশ্রয়। তিনি সকলের প্রাণে প্রেরণা ও সাহস সঞ্চার করে পুনর্মিলনের কথা বলেছেন। যেখানে রয়েছে সামগ্রিক একাত্মতার ইঙ্গিত। একইভাবে বিবৃত হয়েছে মানবতার আশাজাগানিয়া এক সংযোগ সেতু। পুরো কবিতায় কবি বার বার আশা সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সুর জাগিয়েছেন। কবিতাটির সামগ্রিক চিত্রকল্পে অপূর্ব শর্মা সার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন বাংলার ও সমগ্র মানবতার এক ইতিবাচক স্বরূপকে। কবিতাটিতে বাংলাদেশি ও বাঙালির এমন এক মিলন মেলার চিত্রকল্প প্রতিভাত হয়েছে যাকে এক কথায় বলা যায় অসাধারণ। জাতির জনক, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ, সোয়ারওয়ার্দী উদ্যান, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সম্প্রীতি ও দেশপ্রেমের আদর্শকে কবিতায় এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন অপূর্ব, সেটি যেনও তাঁরই নামের সমার্থক। কবিতায় নৌকা বাইচ, মিছিল, বর্ষবরণ, নবান্ন উৎসব, শান্তিনিকেতন, রবীন্দ্র-নজরুল প্রসঙ্গ, ধর্মীয় সামাজিক উৎসবসহ কৃষ্টি ও সাহিত্যের সবগুলো স্তম্ভকে ঠিক এমনভাবে তিনি একীভূত করেছেন যা সমকালীন কাব্যসাহিত্যে বিরল। সম্প্রতি তাঁর এই কবিতাটি নুতন এক ইতিহাস তৈরি করেছে। কবি অপূর্ব শর্মার এই কবিতাটিকে মূল উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে একটি সম্মিলিত আবৃত্তি প্রয়াস। এর আগে বাংলাদেশে কবিতা নির্মানের এমন যুগান্তকারী উদ্যোগ চোখে পড়েনি। আবৃত্তির ভিডিওটি চ্যানেল আইসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও অনলাইনে প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। কবিতার এই কোলাজ নির্মানে অপূর্ব শর্মার সাথে ছিলেন লন্ডনের প্রখ্যাত বাচিক শিল্পী মুনিরা পারভীন। দেশ বরেণ্য বাচিকশিল্পীরা সময়োপযোগী আশাজাগানিয়া এই কবিতাটি উপস্থাপন করেছেন অসাধারণ আবহে। সম্মিলিত এই আবৃত্তির সূচনা করেছেন একুশের গানের রচয়িতা প্রখ্যাত সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, আবৃত্তি প্রয়াসের সমাপ্তি টেনেছেন বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। বরেণ্য লেখক অভিনেতা ও বাচিক শিল্পীদের সম্মিলিত উচ্চারণে কবিতাটি মানবতার প্রশ্নে নিঃসন্দেহে একটি সার্বজনীন মাত্রা পেয়েছে। সম্মিলিত এই উদ্যোগে অংশ নিয়েছেন যে সকল বরেণ্য বাচিকশিল্পী তারা হলেন, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডালিয়া আহমেদ, শিমুল মুস্তাফা, মো. আহকাম উল্লাহ্, মাহিদুল ইসলাম, মুনিরা পারভীন, রবিশঙ্কর মৈত্রী, বেলায়েত হোসেন, এ কে এম শামসুদ্দোহা, কেয়া রোজারিও, শারমিন লাকী, মেরী রাশেদীন, নাজমুল আহসান, রূপশ্রী চক্রবর্তী এবং গোপন সাহা। প্রত্যেকের প্রাণের আবেগ আর উচ্ছ্বাসে কবিতাটি হয়ে উঠেছে অতুলনীয়।

বিশ্ব কৃষ্টি ও সাহিত্য অঙ্গনে সামান্য চোখ বুলালেই একটি দিক সহজেই অনুমেয় যে সমাজ সংস্কারকদের মতো কবি সাহিত্যিকগণ তাঁদের অনন্য রচনা, কবিতা ও গানের মাধ্যমে বিভিন্ন মহামারী সংকট ও আন্দোলনে ভেঙে পড়া মানবতাকে উজ্জীবিত করতে আশার বাণী শুনিয়েছেন। প্রাণঘাতী করোনা মহামারীর এই অবরুদ্ধ সময়ে সমগ্র মানবতাকে উজ্জীবিত করে আশা ও সাহস সঞ্চারের নিমিত্তে এগিয়ে এসেছেন অপূর্ব শর্মা। গীতিকাব্যে তিনি আশা ও সাহস জাগাচ্ছেন মানুষের মনে। এই সৃজনকর্ম সম্পর্কে মূল্যায়ণ করতে গিয়ে আবদুল গাফফার চৌধুরী অপূর্ব শর্মাকে ‘বাংলাদেশে করোনা যুগের সাহিত্যের অগ্রনায়ক’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, চল্লিশের দশকের সুকান্তর ‘ঘুম নেই’ কবিতা যেমন ত্রিশের কবিদের আত্মকেন্দ্রিকতা ও ব্যক্তি সর্বস্বতা ভাঙার কাজে লেগেছিল, বর্তমান দশকে তেমনি করোনা নিয়ে অপূর্ব শর্মার কবিতা ও গান এ যুগের তরুণ কবিদের আত্মমোহ ও আত্মকেন্দ্রিকতা ভাঙাতে পারলে খুশি হবো।’ আমরাও সেই আশাবাদ ব্যক্ত করবো। অপূর্ব শর্মার কবিতা যেমন ভূমিকা রাখছে করোনাকাল জয়ে, তেমনই তাঁর সৃজনকর্ম কাজে লাগবে মানবতার কল্যানে, তাতেই স্বার্থক হবে তাঁর প্রচেষ্টা।

 

পূর্ববর্তী নিবন্ধ“তুমি নেই”
পরবর্তী নিবন্ধসিরাজ চাচার অনুপ্রেরণা
ফারজানা নাজ শম্পা
কানাডার হালিফ্যাক্সে স্বপরিবারে বসবাসরত ফারজানা নাজ শম্পা একজন লেখক , সংবাদ প্রতিনিধি ও অনুবাদক l নব্বই এর দশক হতে লেখালিখির সাথে সম্পৃক্ত ফারজানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক প্রশাসন বিষয়ে মাস্টার্স ও নরওয়ের বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয় নোরাড ফেলোশীপ নিয়ে 'জেন্ডার উন্নয়ন ‘বিষয়ে এম ফিল সমাপ্ত করেন ।কর্মসূত্রে তিনি বাংলাদেশের 'দি ডেইলি ইনডিপেন্ডেন্ট ' এ সাংবাদিক ও ফিচার লেখক হিসেবে ও পরবর্তী তে নেদারল্যান্ডসের একটি গবেষনা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা পুস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের " উইমেন ও জেন্ডার স্টাডিজ" বিভাগের একটি প্রজেক্ট অফিসিয়ালের দায়িত্বে কিছুদিন কর্মরত ছিলেন l যুগান্তর , কানাডার জনপ্রিয় পরবাসী ব্লগ , ঢাকা প্রকাশ , ভারতের র কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় নিয়মিত ভাবে তার লেখা প্রকাশিত হচ্ছে । ফারজানা টরেন্টোর কানাডিয়ান বাংলাদেশি নিউজ সি বি এন ২৪ এর সাথে একজন উপদেষ্টা সংবাদ প্রতিনিধি ও নিয়মিত লেখক হিসেবে সংযুক্ত আছেন । ফারজানা বর্তমানে উত্তর আমেরিকা প্রথম আলোর কানাডার আটলান্টিক সংবাদ প্রতিনিধি হিসেবে সম্পৃক্ত আছেন l তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি কানাডার সাহিত্যের সাথে বাংলা সাহিত্য ও সংষ্কৃতির মেলবন্ধন স্থাপন করে দুটি দেশের লেখক ও পাঠক সমাজে ভাষাগত পরিচয় ও সাংষ্কৃতিক ভাব বিনিময়ের সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপনের প্রত্যয় নিয়ে তিনি বর্তমানে কানাডার মূল ধারার কয়েকজন লেখকদের বিশেষ সম্মতিক্রমে তাঁদের সাহিত্য কর্ম অনুবাদের প্রয়াস নিয়েছেন l সম্প্রতি কানাডার জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক ব্রুস মাযারের নির্বাচিত কবিতার সমন্বয়ে বাংলা দেশের আরো প্রকাশনী হতে তার প্রথম ভাবানুবাদ গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে ,যা ২০২২ সালের অমর একুশের বই মেলায় যথেষ্ট পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে l কানাডার সাহিত্য ইতিহাসের পাশাপাশি তিনি বাংলাদশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ,যুদ্ধশিশু ও মহিয়সী বীরাঙ্গনা নারীর জীবন, আত্মত্যাগ ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর লেখা ও গবেষণার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করেছেন l তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছয়টি , একটি বই এর নুতন সংস্করণ জার্মানির একটি প্রকাশনা হতে প্রাকাশিত হয়েছে l

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন