প্রীতম ও আভা লম্বা জার্নি করে অটোয়া এয়ারপোর্ট এসে ইমিগ্রেশন শেষ করে কাস্টম ক্লিয়ার করতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখে আভার সব লাগেজ এসেছে , কিন্তু ওর নিজের লাগেজ আসে নি। সে অনেক সময় নিয়ে প্রতিটি লাগেজে চেক করে শেষ পৰ্যন্ত লাগেজ মিসিং রিপোর্ট করে। কাস্টম জানায় যে ওর লাগেজ হয়তো লন্ডন হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে ভুলবশত পাঠায় নি। পরবর্তী প্লেনে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বাহিরে এসে শুচিতা, দ্রুব ও প্রদীপকে পেয়ে ওরা লাগেজের কথা ভুলে যায়। দ্রুব ওদের জড়িয়ে ধরে বলে আমি তোমাদের অনেক মিস করেছি। ওরা বলে আমরাও তোমাকে প্রতিদিন মিস করেছি।ওরা লম্বা জার্নির পর ক্লান্ত অবস্থায় বাসায় গিয়ে বলে তোমরা কেমন আছো বা ছিলে?
প্রদীপ বলে ভালো, দেশে আমার মা বাবা এবং আত্মীয়স্বজন কেমন দেখলে ?
প্রীতম বলে সবাই ভালো আছে এবং তোমার কথা সবাই জিজ্ঞেস করেছে। আমরা বলেছি, তুমি পড়াশুনা করে কাজে যোগদান করেছো। তোমার মাবাবা শুনে খুশি হয়েছেন । তোমাকে কিছু মিষ্টি এবং গিফট পাঠিয়েছে, মিষ্টি আমরা হাতে করে এনেছি এবং বাকি কাপড় ও এটাসেটা লাগেজ আসলে পাবে। রাতে এয়ারপোর্ট কাস্টম থেকে কল দিয়ে বলে তোমার লাগেজ এসেছে , আমরা পাঠিয়ে দেব। পরদিন কাস্টম লোক বাসায় এসে লাগেজ বুঝিয়ে দিয়ে যায়। প্রদীপ এসে তার মাবাবা দেয়া শার্ট ও অন্যান্য জিনিস নিয়ে যায়।
দ্রুবকে আজ আর ডে কেয়ার এ পাঠাতে হয় নি। সে গত দুই মাস ডে কেয়ার এ অনেক বন্ধু বানিয়েছে। এখন বাসায় থাকতে ভালো লাগে না; বলে আমি ডে কেয়ার এ যাবো। শুচিতা বলে ঠিক আছে তোমাকে ডে কেয়ার এ দিলে অন্যদের সঙ্গে কিছু শিখতে পারবে , তাই সকালে প্রীতম এবং আভা নিয়ে দিয়ে কিছু সময় দেখে বাসায় ফিরে এসেছে। ওদের জার্নি অসুস্থতা এখনো ও কাটেনি, শুচিতা অফিস থেকে গিয়ে দ্রুবকে নিয়ে বাসায় এসে বলে মা তোমরা কি সুমিতকে দেখতে যাবে?
আভা বলে আমরা দেশ থেকে সুমিত ও ওর মাবাবা, ভাইবোনদের জন্য কিছু জিনিসপত্র এনেছি; এখনো লাগেজ খোলা হয় নি। আজ না গিয়ে কাল সবাই মিলে গিয়ে দেখে টুকিটাকি জিনিসগুলি দিয়ে আসবো।
শুচিতা হাসপাতালে সুমিতকে টেলিফোন করে বলে তুমি কেমন আছো?
সুমিত বলে আগের মতো-ই , আমি আজ আসবো না। মাবাবা দেশ থেকে ঘুরে এসেছে এবং ওরা জার্নি সিক, আজ রেস্টে আছে এবং কাল সবাই মিলে তোমাকে দেখতে আসবো। সুমিত কিছু না বলে টেলিফোন রেখে দিয়ে তার মা আরতিকে বলে শুচিতা আজ আসবে না, কাল তার মাবাবাকে নিয়ে আসবে বলে জানিয়েছে। আরতি রেগে গিয়ে বলে ওরা আসলে বা না আসলে কি ?
কমল বলে ওদের সঙ্গে আমাদের কি সম্পর্ক আছে ?
আরতি বলে, শুচিতা ৫-১০ মিনিটের জন্য এসে উপস্থিতি দিয়ে যায় যাতে বলতে পারে যে সে প্রতি দিন আসে। আমাদের এ ধরণের উপস্থিতি দেয়ার দরকার নেই। সে আসলেই কি তোমার রোগ ভালো হয়ে যাবে ?
সুমিত কিছু না বলে চুপটি মেরে থাকে।
কিছুক্ষনের মধ্যে সুনীল ও অধরা রেস্টুরেন্ট থেকে কাজ শেষ করে কিছু খাওয়া নিয়ে হাসপাতালে আসে এবং দেখে কমল ও আরতি কি নিয়ে জোরে জোরে কথা কাটাকাটি করতেছে। ওদের দেখে সবাই চুপটি মেরে যায় এবং বলে তোমরা কেমন আছো?
অধরা বলে আমরা ভালো,সুমিতের অবস্থার কি কিছু পরিবর্তন হয়েছে ?
আরতি বলে না, কোনো পরিবর্তন দেখছি না।
সুনীল কমলকে বলে দাদা আমি বলতে ভুলে যাই , তোমাদের ইমিগ্রেশন কেস কি মীমাংসা হয়েছে ?
না।
কোথায় ?
মীমাংসতো হয় নি বরং জটিলতা দেখা দিয়েছে।
কমল বলে আমাদের ইমিগ্রেশন কেস এই পর্যন্ত দুবার প্রত্যাখ্যান হয়েছে। আমাদের বলেছে এ দেশ ছেড়ে নিজের দেশে চলে যেতে । আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি , কিন্তু টিকে নি। ইমিগ্রেশন বলেছে যদি ইচ্ছা করি, আপীল করে দেখতে পারি। তাই করেছি , কিন্তু তাও টিকে নি। এখন আর আমাদের সামনে কোনো পথ নেই ; একমাত্র মানবতার খাতিরে দরখাস্ত করে দেখতে পারি।
সুনীল বলে কাকে উকিল ধরেছো ? হয়তো উকিল পরিবর্তন করতে হবে। কমল বলে আমাদের দেশীয় এক উকিল নিয়েছি। লোকজন বলেছিলো কোনো অসুবিধা হবে না, ওর অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং ভরসা দিয়েছিল। কিন্তু এখন দেখি সবই গুড়ে বালি। সুনীল বলে আমার জনমত ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত কোনো ভালো উকিল নেই; তবে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারি যদি কোনো খবর পাই জানাবো। কিছু সময় সুমিতকে দেখে বলে ঠিক আছে তোমরা থাকো, আবার আসবো।
হাসপাতাল থেকে বের হতেই গেটে সুনীলের পূর্ব পরিচিত অনিতার সঙ্গে দেখা। অনিতা কিছুদিন তার সঙ্গে এক কোম্পানিতে কাজ করতো। সুনীল বলে অনিতা তুমি হাসপাতালে!
অনিতা বলে তার স্বামী শর্মাকে নিয়ে এসেছে। শর্মা রোড এক্সিডেন্ট করেছে। সুনীল জানতে চায় ওর অবস্থা কি ?
অনিতা বলে গাড়ি ভেঙে গেছে, ইমার্জেন্সিতে ওর ইনজুরি ডাক্তার চেক করছে । দুর্ঘটনায় কার ত্রুটি ছিল?
অনিতা বলে এক মহিলা গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পেছন থেকে আমাদের গাড়িতে ধাক্কা দিয়েছে। গাড়িতে আর কে ছিল ?
আমি এবং আমার ছোট্ট ছেলে ছিল; তবে শর্মা ব্যতীত আমাদের বেশি ক্ষতি হয় নি। চলো দেখে আসি । সে বলে শর্মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং মাথায় আঘাত নিয়ে চটপট করছে ।
সুনীল ও অধরা অনিতার শর্মাকে ইমার্জেন্সিতে দেখতে পায় নি। ওকে এক্সরে করানোর জন্য নিয়ে গিয়েছে। অনিতা বলে ওকে ক্স-রে করিয়ে ফিরিয়ে আনতে অনেক সময় লাগতে পারে। তোমরা অপেক্ষা না করে চলে যাও। ঠিক আছে আমরা পরে খবর নেবো এবং তোমাদের জন্য আশীর্বাদ করি। সুনীল ও অধরা সারাদিনের কাজের পর বাসায় এসে পরে রাতে কল দিয়ে জানে যে শর্মাকে হাসপাতালে পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে; ডাক্তার দুই দিন পর রিপোর্ট দেবে। অধরা বলে তোমার স্বামী দ্রুত ভালো হয়ে উঠুক এই আশা করি;আমরা পরে এসে দেখা করবো। পরদিন সুনীল ও অধরা কাজ থেকে ফেরার পথে পুনরায় হাসপাতালে গিয়ে শর্মাকে দেখে। শর্মার মাথা ও চেহেরা ফুলে গেছে এবং শরীরে ব্যাথার জন্য নড়াচড়া করতে পারে না। ডাক্তার বলে ঠিক হতে সময় লাগবে। অনিতা বলে দাদা আমি পরে তোমার সাহায্য দরকার পড়লে স্বরণ করবো। অধরা ও সুনীল বলে তোমার যে কোনো দরকার হলে আমাদের ডাকবে এবং আমরা চেষ্টা করবো।
শুচিতা পরদিন তার বাবা প্রীতম ও আভাকে নিয়ে হাসপাতালে এসে সুমিতকে না পেয়ে ডিপার্টমেন্টে খোঁজ নিয়ে জানে যে ওকে আজ সকালে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিয়েছে। শুচিতা হাসপাতাল থেকে সুমিতের সেল নম্বরে কল দিয়ে বলে আমি মাবাবাকে নিয়ে হাসপাতালে তোমাকে দেখতে এসে শুনি তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে।
সুমিত বলে হ্যাঁ।
শুচিতা বলে মাবাবা হাসপাতালে এসেছিলো তোমাকে দেখার জন্য। সুমিত বলে আমি চাইনা তোমার মাবাবাকে নিয়ে এখানে আমার মাবাবার সঙ্গে কোনো বাদানুবাদ হোক। তুমি বরং বাসায় চলে যাও । শুচিতা বলে তাহলে তোমার সঙ্গে আমার কি ভাবে দেখা হবে ?
দেখি আমি যদি ভালো হয়ে উঠি তবে কোথায় ও দেখা হবে। আমি এখনো ও নার্সের কেয়ার এ আছি , সপ্তাহে দুইবার নার্স এসে আমাকে হাঁটানো থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন্য শারীরিক ব্যায়াম করিয়ে যায়। আমি বাহিরে যেতে পারি না এবং বাসার সবাই আমাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে।
আরতি বলে কে তোমাকে টেলিফোন করেছে ?
মা শুচিতা হাসপাতালে ওর মাবাবাকে নিয়ে আমাকে দেখতে গিয়েছিলো,না পেয়ে টেলিফোন করেছে। আরতি কিছু না বলে রান্না ঘরে গিয়ে রাতের খাওয়া তৈরী করতে শুরু করে এবং কিছু না বললে ও মুখের দিকে তাকালে বুঝা যায় যে সে শুচিতার টেলিফোন পছন্দ করে নি ।
শুচিতা সুনীলের কাছে শুনেছে শর্মা এক্সিডেন্ট হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শুচিতা বলে মা অনিতার হাসব্যান্ড এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে আছ। চলো ওকে একটু দেখে যাই। প্রীতম ও আভা বলে তুমি ওদের কি ভাবে চিন ?
মা সুনীল আংকেলের স্ত্রী অধরা আমাকে বলেছে। ওরা ওর রুমে গিয়ে কিছু সময় রোগী দেখে কথা বলতে গিয়ে প্রসঙ্গে ক্রমে অনিতা বলে সুমিত হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে গেছে। শুচিতা বলে আমরা শুনি নাই , দেখতে এসে জেনেছি যে সে বাসায় গিয়েছে। অনিতা বলে ও দুর্বল এবং হাঁটাচলা করতে পারে না। হ্যাঁ , ঠিকই বলছ আমরা বাসায় গিয়ে দেখে আসবো। ওরা শর্মাকে দেখে বাসায় চলে যায়।
প্রীতম ও আভা বলে আমরা ইন্ডিয়া থেকে কিছু জিনিসপত্র ওদের জন্য এনেছি। চলো গিয়ে দেখে আসি। আজ না , মা আমরা উইকেন্ডে দেখি যেতে পারি কিনা।
রাতে প্রদীপ এসে বাসার কলিং বেল টিপতেই দ্রুব দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে চিৎকার করে বলে আংকেল এসেছে । আভা বলে দ্রুব প্রদীপের খুবই ভক্ত। দেখো কিভাবে দৌড়ে গিয়ে চিৎকার দিয়ে জড়িয়ে ধরে। শুচিতা বলে ওসব কিছু না। ও দ্রুবের পছন্দের পিজা নিয়ে আসে, সে জন্য দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে, তাই না দ্রুব?
দ্রুব হাঁসে এবং পিজা নিয়ে কাউকে না বলে খাওয়া শুরু করে। দেখো, কাউকে কিছু না বলে সবার আগে খাওয়া শুরু করেছে । প্রদীপ বলে থাক ও ছোট্ট ছেলে, ও খাইলেই আমরা খুশি। তোমরা কি সুমিতকে দেখতে গিয়েছো ?
হ্যাঁ , গিয়েছি ; তবে ওকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দিয়েছে। বাসায় গিয়ে দেশ থেকে যা যা এনেছো ওদের দিয়ে এবং ওকে দেখে ও এস । আভা বলে সুমিত যাইতে নিষেধ করতেছে , ওরা পছন্দ করে না অযথা রাগারাগি করবে। সুমিত বলেছে, শুচিতা তুমি বরং পরে আমার সঙ্গে দেখা করবে।
প্রদীপ বলে তোমরা চলো আমি সহ সুমিতকে তাদের বাসায় দেখতে যাই। শুচিতা বলে এটা মন্দ না , দেখি ওরা কে কি বলে এবং ওদের কি সমস্যা যে জন্য আমাদের দেখতে পারে না।
পরের উইকেন্ডে বাসা থেকে সুমিত ও ওদের পরিবারের জন্য কিছু খাওয়া তৈরী করে সবাই গিয়ে বাসায় উপস্থিত। প্রীতম বলে আমরা দুই মাসের ও অধিক ইন্ডিয়া ছিলাম এবং সুমিতের বাবার বাড়িতেও গিয়ে তাদের লোকজনের সঙ্গে দেখা করেছি। ওর চাচা ও বাড়ির অন্যান্যরা আমাদের সাদরে আপ্যায়ন করিয়েছে এবং ঘুরে ঘুরে আমরা তোমাদের বিল্ডিং ও জমি জমার খোঁজ খবর নিয়েছি। আমরা বলেছি সুমিত সুস্থ হলে কমল এবং আরতি বাড়ি চলে আসবে। ওরা বলেছে তোমরা চলে গেলে, ওরা তোমাদের দেখাশুনা করবে । এই কথা শুনার পর কমল ও আরতি কিছুটা নরম মেজাজে কথা বলা শুরু করেছে । কমল বলে আমরা মানুষের কাছে শুনি ওরা আমাদের সব কিছু দখল করে নিয়েছে। প্রীতম বলে আমার তা মনে হয় নি। মানুষ না থাকলে যা হয় ; তবে তোমার বাবার সম্পত্তি তোমার ভাই পুরা দখল কেন করবে ?
কমল বলে আজকাল সবই সম্ভব “জোর যার মুল্লক তার। ” আমরা কানাডা চলে এসেছি, ওরা মনে করে আমরা আর কোনোদিন ও দেশে ফেরত যাবো না। সে জন্য বাড়ি ও জমিজমার কাগজপত্র নিয়ে ওরা ভিতরে ভিতরে কি করতেছে আমরা এখানে থেকে কি ভাবে বলবো ?
প্রীতম বলে এটা সবার ব্যাপারেই হয়। আমি আজ বহুদিন এ দেশে এসেছি , আমার দাদার বাড়ি বাংলাদেশে এবং পরে কলিকাতা চাকুরীস্থলে বাড়ি করেছেন । এখন আমাদের কিছুই নাই, লোকজন সব কিছু দখল করে নিয়েছে । শুধু গিয়ে মিসকিনের মতো এখানে সেখানে থাকি। আপন রক্তের ভাই ভাইকে চিনে না,শত্রু ভাবে, জমিজমার ভাগ চাইলে হাঙ্গামা করে এবং মনে করে বাপদাদার সম্পত্তির আমি কোনো অংশীদার না।
সুমিত ওয়াকার ঠেলে ঠেলে কোরিডোর দিয়ে হাটাহাটি করছে । ওকে দুর্বল বলে মনে হয় এবং প্রীতম ও আভা শান্তনা দিয়ে বলে রোগ দিয়েছে ভগবান এবং আরোগ্য করবেন ও ভগবান।
চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে ভগবানকে স্বরণ করো, ভগবান তোমাকে মুক্তি দেবে। আরতি চা নাস্তা তৈরী করে ওদের দিয়েছে এবং কাছে বসেছে। ওকে দেখে মনে হয় আজ কিছুটা স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে। । সবাই চা খাওয়ার পর আভা ওদের জন্য ইন্ডিয়া থেকে নিয়ে আসা মিষ্টি ও কাপড় হাতে উঠিয়ে দিয়ে বলে এগুলি তোমাদের জন্য। আরতি ও ছেলেমেয়েরা বলে এসবের কোনো দরকার ছিল না। প্রদীপ সুমিতকে বলে কোনো সাহায্য দরকার লাগলে আমাকে টেলিফোন করে বলিও বা কোথাও যেতে চাইলে জানালে আমি ফ্রি থাকলে নিয়ে যাবো।
এবার ললিত আশ্রম থেকে এক মাসের ও অধিক কোথায় চলে গিয়েছে কেউ বলতে পারছে না। নিমি মন্ট্রিয়েল খোঁজ নিয়েছে, কোথায় ও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। নিমি তার দাদা প্রিয়ব্রত কে বলেছে তার খোঁজ নেয়ার জন্য যদি অটোয়া পুরানো শেল্টারে এসে থাকে। প্রিয়ব্রত ললিতের পুরানো ডাক্তার,শেল্টার এবং আত্মীয়স্বজনকে বলেছে খোঁজ নেয়ার জন্য। কিন্তু কেউ তাকে খুঁজে বের করতে পারছে না। নিমি কেঁদে তার দাদা প্রিয়ব্রতকে বলে আমি বাবাকে নিজের বাসায় নিয়ে এসে অতি যত্নের সঙ্গে রেখেছি যেন বাবার কোনো অসুবিধা না হয়। প্রতি সকালে বাবার নাস্তা এবং দুপুরের খাওয়া তৈরী করে রেখে কাজে যাই। তাছাড়া বাবা শেল্টারে থাকলে আমাদের দেশীয় লোকদের সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখার জন্য বলেছি । মাঝে মধ্যে গিয়ে বাবার বেড পাল্টিয়ে কাপড় লন্ড্রি করে দিয়ে আসি। এত যত্নের মধ্যে ও বাবা বাহিরে চলে গেলো,আজ এক মাস কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
মানস অটোয়া কাজ করে এবং প্রতি উইকেন্ডে মন্ট্রিয়েল গিয়ে নিমির সঙ্গ দিয়ে প্রতি সোমবারে ভোরে কাজে চলে আসে। ইন্ডিয়া থেকে মাবাবা চিঠির পর চিঠি দিয়ে বলে তুমি নিমিকে নিয়ে আমাদের দেখিয়ে যাও। কিন্তু আজ এ সমস্যা, কাল সে সমস্যা এর জন্য দেশে যাওয়া বিলম্বিত হচ্ছে। মানস কখনও তার শ্বশুর ললিতের ব্যাপার নিয়ে নিমিকে বা তার দাদা প্রিয়ব্রতকে কিছুই বলছে না। সে জানে ললিত মানসিক অসুস্থতার কারণে মাঝে মধ্যে বের হয়ে যায়। সে নিমিকে সব সময় শান্তনা দিয়ে বলে বাবা একদিন নিশ্চই ফিরে আসবে, চিন্তা করে কোনো সুরাহা হবে না। পুলিশ মন্ট্রিয়েল ও অটোয়া ললিতকে না পেয়ে বলে তোমরা নিরুৎসাহ না হয়ে ধৈর্য ধারণ কর, যদি কোনো দুর্ঘটনা না হয় একদিন আমরা ওকে খুঁজে বের করবো।
মানস এ যাবৎ মন্ট্রিয়েল কোনো কাজ ব্যবস্থা করতে পারে নি। সে প্রতি সপ্তাহ শেষে কাজ করে বাসে মন্ট্রিয়েল গিয়ে নিমির সঙ্গে দুই দিন থেকে চলে আসে । আবার কখনো ও নিমি অটোয়া এসে প্রিয়ব্রত,অদিতি ও নিলয়কে দেখে যায়। নিলয় গ্রেড ফোর এর ছাত্র; আজকাল নিজে নিজে স্কুলে যায় এবং ৪টার দিকে বাসায় এসে প্রিয়ব্রত ও অদিতির জন্য অপেক্ষা করে।
এক বিকেলে মানস প্রিয়ব্রতের বাসায় এসে বলে দেশ থেকে মাবাবা বারবার নিমিকে নিয়ে গিয়ে ঘুরে আসতে বলছে । অদিতি বলে তোমরা ইচ্ছা করলে যেতে পারো, বাবার খোঁজখবর আমরা রাখছি, এ নিয়ে তোমাদের ভাবনার কিছু নেই ; তবে বাবাকে পাওয়া গেলে যে করে হোক ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দেব। ইন্ডিয়া মানসিক রোগীর ভালো চিকিৎসা আছে, তাছাড়া ওখানে দেখাশুনার লোক আছে। নিমি বলে ইন্ডিয়া আমাদের জানাশুনা কেউ আছে বলে জানিনা। আমরা এখানে থাকি, এ নিয়ে আরও বেশি ভাবনা হবে। প্রিয়ব্রত বলে বাবাকে পাওয়া গেলে সে দেখা যাবে।
নিমি মানসকে বলে ঠিক আছে চলো এই শীতে ইন্ডিয়া গিয়ে ঘুরে আসি। নিমি ও মানস কেনাকাটা করে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি টিকেট কেটে ইন্ডিয়া চলে যায়।ওরা আমিরাতের প্লেনে লন্ডন গিয়ে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স এ দিল্লী এয়ারপোর্ট পৌঁছে। ওরা দিল্লী থেকে কলিকাতা দমদম এয়ারপোর্টে পৌঁছে বাহিরে এসেই মানসের মা বাবা ও ভাইবোনকে পেয়ে সবাই আনন্দে মেতে উঠে। ওরা ট্যাক্সি নিয়ে নিজেদের বাড়ি পৌঁছে। বাড়ির ও গ্রামের মানুষ মানসকে বহুদিন পর পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। সবাই বলে তুমি বহু বৎসর পর আমাদের দেখতে এসেছো।
এই গ্রামে সর্ব প্রথম মানস-ই বিদেশে পড়াশুনার জন্য গিয়েছে। ওর বাবা রথীন্দ্রের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায়, ওদের গ্রামের এক বিত্তশালী দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুর তার মেয়ে সবিতাকে বিয়ে দেয়ার পরিবর্তে তাকে টাকা খরচ করে পড়াশুনার জন্য কানাডা পাঠায়। কিন্তু কানাডা আসার পর সে ওই বিয়ে ভেঙে দিয়ে টাকা ফেরত দিয়ে দিতে চাইলে ওরা শত্রু হয়ে দেখা দেয় এবং গ্রামে তার বাবামা এবং ভাইবোনের উপর নানাহ ভাবে নির্যাতন চালায়। মানস দেশে গিয়ে লোকজন নিয়ে এর মীমাংসা করে ঋণের টাকা সুদ সহ দিতে চাইলে ওরা মারমূখী হয়ে উঠে। মানস বিয়ে ভেঙে দিলেও সবিতা এখনও কপালে সিঁদুর দিয়ে চলে এবং বলে আমার বিয়ে একবারই হয়েছে মানসের সাথে এবং আর বিয়ে করবো না। নিমি গ্রামে এ সব জানতে পেরে বলে তোমাদের গ্রামে আমাদের থাকা নিরাপদ নয়। কিন্তু মানস এর কোনো গুরুত্ব না দিয়ে বলে এতে কিছুই হবে না; তুমি অযথা ভয় করতেছো।
এই পরিস্থিতে মানসের কিছু কিছু আত্মীয় এসে নিমি ও মানসকে লুকিয়ে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে বলে তোমরা কলিকাতা চলে যাও। নিমি কলিকাতা তার এক আত্মীয়ের বাসায় উঠে ওদের এই সমস্যা জানায় ।
নিমির আত্মীয় এই সমস্যা জেনে বলে তোমাদের কলিকাতা থাকা নিরাপদ না; বরং দিল্লী আমাদের এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে থাকো। ওরা দিল্লী আসার পর গ্রামের বাড়িতে বা কলিকাতা ভয়ে ফেরত যায়নি ।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তার ছেলেরা মানসকে না পেয়ে মানসের আত্মীয়ের যে যেখানে আছে খোঁজ নিয়ে মানসকে বের করতে পারে নি। মানস দুই সপ্তাহ দিল্লী থাকার পর নিমিকে কানাডা পাঠিয়ে দিয়ে বলে আমি মাবাবার একটা ব্যবস্থা না করে যেতে পারি না। মানস দিল্লী এয়ারপোর্টে নিমিকে বিদায় দিতে গিয়ে মনের দুঃখে কেঁদে বলে এ ভুলের জন্য আমার দারিদ্রতা একমাত্র দায়ী। আর্থিক সাহায্যের জন্য আমি সবিতাকে বিয়ে করলেও তাকে ভালো বাসতে পারি নি এবং তাকে বিদায় করতে গিয়ে তোমাকে বিয়ে করতে দেরি করেছি। তুমি বারবার আমাকে বিয়ে করতে দেরি কেন করেছি এ নিয়ে অভিযোগ করলে আমি তার সঠিক জবাব দিতে পারি নি। নিমি কোনো কথার জবাব না দিয়ে বলে তুমি ভালো থেকো এবং আমি তোমার খোঁজ নেবো।
মানস এ অবস্থায় কোর্টের স্বরণাপর্ণ হয় এবং দেবেন্দ্রনাথ ও তার ছেলেদের বিরুদ্ধে কোর্ট কেস করে যে ওরা তার বাবার বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। অপরদিকে দেবেন্দ্রনাথ ও তার ছেলেরা সবিতাকে নিয়ে মানসের বিরুদ্ধে কেস দিয়ে ওর নিকট থেকে কোর্ট কতৃক পাসপোর্ট আটক করে । সবিতা মানসকে তার স্বামী বলে স্বীকার করে এবং কোর্টে গিয়ে কেস শেষ না হওয়া পৰ্যন্ত দেশ ত্যাগ করতে কোর্টের প্রতি অনুরোধ করে। মানসকে কোর্ট আসামি হিসাবে এরেস্ট করে যে মানস যে কোনো মুহূর্তে দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারে।
নিমি কাউকে কিছু না বলে অটোয়া এয়ারপোর্ট এসে ট্যাক্সি নিয়ে প্রিয়ব্রতের বাসায় উঠে। নিমি ও মানসের দুইমাস ইন্ডিয়া থাকার কথা। কিন্তু হঠাৎ করে চলে আসাতে বাসার সবাই হকচকিয়ে যায়। তারা বলে মানস আসেনি ?
ও কিছুই বলছে না, চোখের পানি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কেঁদে অদিতিকে জড়িয়ে ধরে। নিজেকে সামলিয়ে বলে মানসের আসতে দেরি হবে। ওদের গ্রামের বাড়িতে কে বা কাহারা শত্রুতা করে রাতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। মানস আমাকে নিয়ে কলিকাতা এবং শেষে দিল্লী এসে রিটার্ন বুকিং দিয়ে পাঠিয়েছে। ও এ সব ঝামেলা মিটিয়ে কবে আসবে বলতে পারছি না।
নিমি পরদিন কলিকাতায় তার আত্মীয়ের বাসায় টেলিফোন করে শুনেছে যে মানসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছ। ওকে ওর মাবাবা জামিনে নেয়ার জন্য চেষ্টা করতেছে।
সবিতা বাদী হয়ে ওর স্বামীর নামে কেস করেছে যে মানস তার বাবার নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাকে বিয়ে করে কানাডা গিয়েছে। কানাডা গিয়ে সে তার বাবামা ও ভাইদের নিকট থেকে পড়াশুনার নাম করে চাপ দিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে ওকে বিয়ে ভাঙার নোটিশ দিয়েছে। সবিতার পক্ষের উকিল বলে এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কোর্ট মানসকে জামিন না দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়।
অদিতি ও প্রিয়ব্রত ইন্ডিয়া কি সমস্যা হয়েছে তা না জেনে নিমিকে বলে তুমি কেন পুরা ছুটি না কাটিয়ে চলে আসলে ?
নিমি বলে দাদা আমি এ মুহূর্তে তোমাকে কিছু বলতে পারছি না। ঠিক আছে তুমি শান্ত হয়ে আমাকে পরে সব কিছু খুলে বলবে । এদিকে বাবা ললিতের কোনো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
নিমি কলিকাতা মানসের আত্মীয় অনির সঙ্গে টেলিফনে করে বলে আমি ভালোভাবে পৌঁছেছি। মানসের খোঁজখবর নিয়ে বলে আমি একটা অনুরোধ করবো যদি কিছু না মনে করো আমাকে মানসের স্ত্রী সবিতার টেলিফোন নম্বর সংগ্রহ করে দিতে পারবে কি ?
ওর টেলিফোন নম্বর দিয়ে তুমি কি করবে ?
আমি ওর সঙ্গে কথা বলে দেখি কিভাবে এর মীমাংসা করা যায়। ঠিক আছে আমি দেখবো যদি সংগ্রহ করতে পারি তোমাকে জানাবো।
সবিতা তার মোবাইল নম্বর নিমিকে দিয়েছে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য। নিমি টেলিফোন করে বলে আমি অটোয়া, কানাডা থেকে মনোসের স্ত্রী নিমি কথা বলছি। সবিতা বলে আমি মানসের স্ত্রী এবং আমি তোমাকে চিনি না। তুমি কিভাবে বিয়ে করো আমার স্বামীকে ?
নিমি বলে মানস বিয়ের পূর্বে তোমাকে বিয়ে করেছে বলে আমাকে জানিয়েছে এবং আইন মতে বিবাহ বিচ্ছেদ করেছে । সবিতা বলে হিন্দু ধর্ম মতে স্বামী-স্ত্রী জীবিত থাকতে আর কোনো বিয়ে করতে পারে না। তুমি আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে ধর্মমতে ভুল করেছো। নিমি বলে ধর্ম সম্পর্কে আমার ভালো জ্ঞান নাই। মানস বর্তমানে জেলে আছে এবং ইন্ডিয়ান আইন অনুসারে তার বিচার হবে। তুমি যদি কিছু বলতে চাও কোর্টে গিয়ে বলবে। মানস আমার বিবাহিত স্বামী, তুমি জেনেশুনে মানসকে বিয়ে করেছো;হিন্দু ধর্ম মতে দুই বিয়ে এক সাথে হয় না । তোমাকে মানস বিয়ে করলেও এই বিয়ে ধর্মমতে এবং আইনের চোখে টিকবে না ।
নিমি অনিকে টেলিফোন করে বলে আমি কি মানসের উকিলের সঙ্গে কথা বলতে পারি। অনি বলে আমি উকিলের সঙ্গে কথা বলে ওর টেলিফোন নম্বর নিয়ে দেব। অনি টেলিফোন নম্বর ব্যবস্থা করে দিয়ে বলে নিমি তুমি উকিলের সঙ্গে কথা বলতে পারো । পরদিন নিমি টেলিফোন করে উকিলকে বলে মানসের ক্যাসের কি অবস্থা ?
উকিল বলে ওর কেস আগামী মাসের ১৫ তারিখ সকাল ১০টা বাজে কোর্টে উঠবে । তুমি কি উপস্থিত থাকতে পারবে ?
নিমি বলে আমি কানাডা, কি ভাবে সম্ভব ?
উকিল বলে না থাকলে তোমার বিয়ের কাগজ কুরিয়ার সার্ভিস এ আমার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেবে এবং আমি কোর্টে জমা দেব। নিমি দুই দিন পর বিয়ের দলিল কুরিয়ার এ পাঠিয়ে দিয়ে বলে আমি আসতে পারবো না।
বাসায় অদিতি ও প্রিয়ব্রত বলে মানস একটা লম্পট যে তোমার জীবন ধ্বংস করেছে তার কথা মাথা থেকে সরিয়ে দেয়া ছাড়া আর কি আছে। সে দেশে বিয়ে করে অন্যের টাকায় বিদেশে এসে পড়াশুনা করে কি ভাবে অমানুষের মতো তার বিবাহিত স্ত্রীকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে। তাকে তুমি কোনো অবস্থাতেই বিশ্বাস করতে পারো না। সে গ্রামের একটা অবলা মেয়েকে বিয়ে করেছে এবং তার পরিবার নিজের সর্বস্ব তার পিছনে খরচ করেছে। এখন সে জেলে আছে এবং তার স্ত্রী ও লোকজন কোনোদিন তাকে ছেড়ে দেবে না। তার নির্ঘাত শাস্তি হবে। নিমি কোনো কিছুই শুনতে চায় না এবং বলে তোমরা আমাকে এ সম্পর্কে কিছুই বলবে না।
নিমি এক সপ্তাহ বাসায় থেকে পুনরায় কাজে যোগদান করেছে এবং তার পুরানো বন্ধু নাহিদকে টেলিফোনে বলেছে আমি কারণে ইন্ডিয়া থেকে ফিরে এসেছি। নাহিদ বলে আমি মানসকে এই ধরণের প্রতারক বলে মনে করি নি। সে তোমাকে কিছুই বলে নি তার অতীত বিয়ে নিয়ে ! নিমি বলে আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানিনা। তবে সে আমাকে তিন বৎসর ঘুরিয়েছে এই বলে যে দেশে তার অনেক ঋণ আছে যা আগে পরিশোধ করা দরকার। আমি এখন যা বুঝতে পারলাম, ওদের ঋণ শোধ করা দরকার, সে জন্য বিয়ে করতে দেরি করেছে। তা ছাড়া সে তার স্ত্রী সবিতাকে ডিভোর্স দিয়ে কাগজ পাঠিয়ে ওই দিক পরিষ্কার করতে সময় নিয়েছে ।
নিমি বলে আমি মানসকে নিয়ে ওদের গ্রামে গেলে এ নিয়ে লোকদের মধ্যে অনেক সমালোচনার মুখে পড়ি। লোকজন আমাকে সরাসরি বলে তুমি কি তার পূর্বের বিয়ে সম্পর্কে কিছুই জানতে না ?
আমি বলেছি যে আমি জেনে শুনে বিয়ে করেছি; যদিও আমি ওর আগের বিয়ের কিছুই জানিনে। আমি মানসকে নিয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে কলিকাতা চলে এসে জীবন রক্ষা করি। কলিকাতার ঠিকানা কেউ জানতে পারে যে জন্য আমরা ভয়ে দিল্লী চলে আসি। আমি মানসকে বলেছিলাম একত্রে কানাডা চলে আসার জন্য। চলে আসলে ওকে আজ কেস বা জেলে যাইতে হতো না এবং তার মাবাবা কোনোপ্রকার নিজেদের সামলিয়ে নিতে পারতো। কিন্তু সে বলে তুমি চলে যাও, আমি এর একটা কিছু মীমাংসা করে চলে আসবো।
পরের সপ্তাহে শুচিতা এবং নাহিদ মন্ট্রিয়েল নিমিকে দেখতে আসে। ওরা আসার পর নিমি ওদের নিয়ে বাহিরে ঘুরতে গিয়ে কিছু বাজার করে খেয়েদেয়ে বাসায় এসে তার ইন্ডিয়া ভ্রমণের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলে, মানসের মাবাবা আমাদের দেখে অনেক ভয় পেয়ে বলেছিলো যে তোমরা গ্রামের বাড়িতে থাকতে পারবে না। মানস বলে আমি সবিতাকে ডিভোর্স দিয়েছি, ওদের নিকট থেকে যা ঋণ করেছি আলাপ করে দিয়ে দিলেই হবে। কিন্তু পরিস্থিতি এত ঘোলাটে হয়ে পড়েছে যে সবিতার ভাই ও আত্মীয়রা এসে মারমূখী হয়ে আক্রমণ করে। আমি ভয়ে কাঁদতে থাকি এবং বাড়ির কিছু লোক এসে আমাকে শান্তনা দিয়ে বলে তোমার তো কোনো অপরাধ নাই, তুমি শান্ত থাকো আমরা বাড়ির লোকজন দেখবো। এই পরিস্থিতে মানসের কিছু কিছু আত্মীয় এসে আমি ও মানসে লুকিয়ে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে বলে তোমরা কলিকাতা চলে যাও। শুচিতা বলে আমি সুমিতকে বিয়ে করে যে ভুল করেছি ,তুমিও সেই একই ভুলের রাস্তায় পা দিয়েছো।
ক্রমশ :