দলের সবচেয়ে কাঙাল চাষীটি কিন্তু বসে বসে হাসে।
“ভারি তো ব্যপার – না, জমিদারের খাস–কামরায় গেছি! আমি ইচ্ছে করলে জমিদার বাবুর সঙ্গে একাসনে খেয়েও আসতে পারি।“”কী, জমিদার বাবুর সঙ্গে ভোজন? সারা জীবনেও পারবেনা হে!” পয়সাওয়ালাটা বলল চীৎকার করে।
“বলছি খেয়ে দেখিয়ে দেব!”
“কিছুতেই পারবে না!”তর্ক লেগে গেল ওদের। শেষকালে কাঙাল বলল:
“আচ্ছা, এক হাত বাজি হয়ে যাক। যদি জমিদার বাবুর সঙ্গে বসে খেতে পারি তবে তোমার কালো ঘোড়াটা, বাদামী ঘোড়াটা, দুইই আমার। আর জদি না পারি তবে তিন বছর বিনা পয়সায় তোমার কাছে খাটব।”
দোকানদার তো খুশি।
“ঠিক আছে, আমার কালো ঘোড়াটা, বাদামী ঘোড়াটা বাজি, তার সঙ্গে একটরা বাছুরও ফাউ রইল! তোমরা সবাই সাক্ষী!”
সাক্ষীদের সামনে হাতে হাতে চাপড় মেরে বাজি ধরা হল।
তারপর কাঙাল গেল জমিদার বাবুর কাছে।
“কিছু কথা আছে হুজুর, গোপনে জিজ্ঞেস করতে চাই – একটা সোনার তাল, ধরুন এই আমার টুপির মতো, কত দাম হবে?”
জমিদার বাবুর মুখে আর রা নেই। হাততালি দিয়ে ডেকে বললো :
“ওহে, কে আছ হে, আমাদের জন্য কিছু মদ পাঠিয়ে দাও শিগগির! খাবার টাবারও সব দিয়ে দাও! বসে, বসো, লজ্জা কোরো না, খাও–দাও, যা মন চায় নাও!”
কাঙালের সে কী আদর আপ্যায়ন, যেনএক সম্মানিত অতিথি, আর মনে মনে ছটফট করে জমিদার। কেবল চিন্তা কতক্ষনে ওই সোনার তালটি হস্তগত করবে।
“এবার তাহলে যাও তো বাপু, দৌড়ে সোনার তালটি নিয়ে এসো। তার বদলে আমি এক পুদ(১ পুদ = প্রায় ষোল চের ওজনের রুশীয় মাপ) ময়দা আর একটি আধুলি দেব তোমায়।”
“কিন্তু সোনার তাল তো আমার কাছে নেই। আমি কেবল জিজ্ঞেস করছিলুম আমার টুপির মতো এক তাল সোনার দাম কত হবে।”
জমিদার বাবু তো একেবারে রেগে কাঁই:
“বেরিয়ে যা, হতভাগা! হাঁদা কোথাকার!”
“বা রে! হাঁদা কোথায়, দেখুন না, আপনি নিজেই আমায় সম্মানিত অতিথির মত অপ্যায়ন করলেন। তাতে আবার এই খাওয়ার জন্যই দোকানদারও আমার দুটো ঘোড়া আর একটা বাছুর দেবে।”
এই বলে মনের আনন্দে ফিরে গেল চাষী।
(ছোটবেলায় পড়া রূশ উপকথাগুলো ব্লগে দেবার একটা প্রয়াস করেছিলাম ২০০৮ এর দিকে, কয়েকটা গল্প দেবার পরে আর ধৈর্য্য থাকেনি, যেখানে দিতাম সেই ব্লগেও আর যাওয়া হয় না, তাই এখানে এটা দিয়ে রাখলাম)