তুমি কি এ শহরের পাতাটা আজ দেখেছো সূর্য?

দেখিনি, তবে ধারণা করতে পারি

শুনবে…?
সময় নেই খুব, শুধু হেডলাইন গুলো শোনাও

তিনটা ধর্ষণ, আটটা খুন, সাতটা সড়ক দূর্ঘটনা, একটা ক্রস ফায়ার, ক্ষেত ভরা ফসলের হাসির পাশে মাথায় হাত হাড্ডিসার কৃষক। পাশাপাশি ক্যাপশানে কাস্তে হাতে সানগ্লাস পরিহিতা মনলোভা পোশাকে ভ্যানিটি ম্যাডামের ফসল কাটার মহড়া। সাথে তিন পার্শ্ব চরিত্র। নিখুঁত ছবি। হাই ডেফিনিশন জুম ক্যামেরায় প্রফেশনাল শট। ডানের হেডলাইনে তাকালে মনে হবে, দেশের সবচেয়ে বড় পাগলা গারদের নাম এখন সংসদ ভবন।

আর সাহিত্যের পাতায় আছে…

না না ওটা শোনাতে হবে না ওটা আমার জানা আছে

জেনেছো…?

আরে ওখানে তো বেশীরভাগেরই কলমের সাথে সত্ত্বার কোন মিল নেই…!

একটু পরিস্কার করে বলবে সূর্য?

দেখ… ওরা কলমে প্রগতির কথা লিখে অথচ, ওরা সত্ত্বায় এই বোধ ধারণ করে না। সময়ের সাথে যে সবকিছুর পরিবর্তন হয় বা হওয়া প্রয়োজন এটা ওদের অনেকেই মানতে চায় না। ওরা নিজেদেরকে প্রগতিবাদী হিসেবে দাবী করে কিন্ত সমাজের ঘারে চেপে বসা অন্ধ বিশ্বাসের কুসংস্কার গুলোকে আঁকড়ে থাকে। এমন অনেক অসংগতি ওদের লেখা এবং বিশ্বাসের মধ্যে। কিন্তু স্বীকার করবে না! প্রকৃতপক্ষে ওরাই হলো সমাজ বদলের এবং একটি মুক্ত বিবেক সমাজের সবচেয়ে বড় অন্তরায়…!

এসব জেনেও এই ভোরে তুমি ফোকলা দাঁতে পূব আকাশে হেসে উঠলে কেন সূর্য?

তুমি দেখছি এক বড়ই অর্বাচীন বৎস

কেন? তা বলছো কেন…?

বলছি কারণ, তোমাদের মধ্যে কিছু মানুষ… যারা নিজেদের সুবিধার্থে স্বর্গের সুখ এবং নরকের যন্ত্রণাকে তোমাদের বিবেকের ভূমি থেকে সরিয়ে যেদিন অদৃশ্য পরলৌকিক কল্পনার অন্ধকারে নিয়ে গেলো সেদিনই তো পৃথিবী অঝোরে কেঁদেছিলো! নিজেদের অপকর্মের কারনে তোমাদের দূর্ভাগ্যের দায় অন্যের উপরে চাপিয়ে দিতে তোমাদেরই একটা অংশ আমাকেও তো দেবতা বা গড বানিয়েছিলো। পরে বুদ্ধি আর একটু খুললে বুঝতে পারলো নাহ্ এ গড দিয়ে তো চলবে না। কারণ আমার তো অস্তিত্ব আছে। তোমরা গোমরটা বুঝে ফেলবে তাই তারা ঈশ্বরকে সরিয়ে একেবারে অদৃশ্য লোকে নিয়ে গেলো। এক অদৃশ্য কাল্পনিক অস্তিত্বকে তোমাদের মাথায় বসিয়ে তার উপরে সব দায় চাপিয়ে দিব্যি ওরা সব অপকর্ম করে যাচ্ছে। আমি সর্বশক্তিমান হলে তোমাদের মাথায় প্রশ্ন আসতো। বলতে পারতে আরে আরও তো নক্ষত্র রয়েছে তাহলে তারাও তো গড। এখন আর সে প্রশ্ন তোমাদের নেই। আর তোমাদের বিবেকের বোধ থেকে স্বর্গ নরকের অনুভূতি সরিয়ে নিয়ে ওটাকে তো শূণ্য-মৃত আগেই করে রাখা হয়েছে। সুতরাং পৃথিবীকে নরক করার পথ একেবারে পরিস্কার এখন। তাহলে আর বাকী থাকলো কী?

সামাজিক আইন…?

হ্যাঁ ঠিক ধরেছো। কিন্তু ওটা সবসময়ই ক্ষমতাবানদের পক্ষে থাকে। আর তোমাদের বিবেক যেহেতু মৃত, যত বড় অন্যায়ই করো তোমরা যতোক্ষণ না পর্যন্ত তার শাস্তি ভোগ করো ততোক্ষণে অনুতপ্ত তো হও ই না বরং ভাবো সব কিছুই সঠিক করে যাচ্ছো। আর সেকারণেই তোমাদের রাজা মন্ত্রীরা দুহাতে তাজা রক্ত নিয়েও রাতে দিব্যি ঘুমিয়ে যায়! কারণ তাদের শাস্তি দিবে কে?

বুঝতে পারলাম কিন্তু আমার আর একটি প্রশ্ন আছে সূর্য…

সে আর একদিন হবে আমার সময় নেই। অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। তুমি আজ ভোরে পাখিদের গান শুনেছো…?

শুনেছি…

খুবই ভালো। সুতরাং তুমি জান, এ পৃথিবীতে তোমরাই তো শুধু একা নও। ফুল, পাখি, বৃক্ষ, নদী সবাই ই তো আছে। ওদের জন্যে ও তো প্রতিদিন প্রতি প্রান্তে আমাকে হাসতে হয়…!

________ফরিদ তালুকদার… / অক্টোবর ১১, ২০২০

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন