‘এক থালা ভালোবাসা দিবেন গো, জোছনা দিয়ে খাবো, বুকে বড্ড যে ক্ষিদে ‘
কি এক অদভুত ভিক্ষুক রে বাবা, দ্বারে দ্বারে একটানা বলেই চলেছে, 
টাকা পয়সা না , চাল ডাল না, এমনকি বিশুদ্ধ অক্সিজেনের সিলিন্ডারও না,
উনার কেবলই চাই এক থালা ভালোবাসা যা আবার উনি খাবেন জোছনায় মিশিয়ে।

চারিদিকের বীভৎস নীরবতায় ভিক্ষুকের কথাগুলি রিন্ রিন্ করে বেজে উঠে
সদ্য স্নান সেরে উঠা যুবতীর কানে, জানালার গ্রিল গলে দুপুরের ঝলমলে তেজি রোদে
যুবতীর চুলের ডগায় ফোটা ফোটা জলের বিন্দুগুলি মুক্তার মতো চিক চিক করে, 
ভালোবাসার কাঙ্গালিনী যুবতী আগ্রহভরে উঁকি মেরে তাকায় অদভুত ভিক্ষুকটির দিকে ।

কনুই পর্যন্ত গুটানো হলুদ রঙ্গের খদ্দরের পাঞ্জাবির হাতা, হাঁটুর দিকে ছেড়া, 
রং চটা জিন্সের প্যান্ট, মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুলে খোঁচা খোঁচা দাড়িতে
আর যাই হোক, যুবকটিকে ট্রাডিশনাল ভিক্ষুকের সঙ্গে বেমানান মনে হয়
বরঞ্চ, তাকে নির্ঘাৎ কমিউনিষ্ট, কবি অথবা হুমায়ুনের হিমু চরিত্রের সাথেই বেশি মানায়।

স্বপ্নে বিভোর যুবতী নিরাপত্তার আশ্বাসে উদ্বেলিত হয়ে উচ্ছাসে, আনন্দে ডানা ঝাপটায়,
বুকের একেবারে তলায় অনেক দিনের জমানো তালাবদ্ধ ভালোবাসা অবশেষে মুক্তি পায়,
সারি সারি উৎসাহী লাল পিঁপড়েগুলি ভালোবাসার বৃষ্টির বার্তা নিয়ে ওদের অভিবাদন জানায়,
মধ্যবিত্তের জটিল সমীকরণের টানাপোড়ায় যুবতীটি কিছুটা কনফিউসড হয়ে যায়।

সহসাই, ভিক্ষুকটির দুনির্বার আকর্ষণে যুবতীটির হৃদয়ে নাড়া দিয়ে ভুলিয়ে দেয় যাবতীয় দুঃখ,
মুহূর্তেই নারীসুলভ লাজে রাঙ্গা হয়ে উঠে আতপ চালের মতো যুবতীটির ফর্সা মুখ,
লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে চোয়াল শক্ত করে জানালার মুখ বাড়িয়ে বলে-
‘থালায় নয় হে যুবক, পেতে দাও তোমার চওড়া বুক, ঢেলে দিবো আমার যাবতীয় সুখ।’

বুক চেতিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ভিক্ষুক ‘যা চেয়েছি আমি তা পেয়েছি’ বলে চিৎকার করে, 
বিশ্বাসী প্রজাপতিগুলো সুখের রাজ্য থেকে নেমে এসে পাহাড়ি উদ্দাম নাচে মেতে উঠে, 
তৃপ্তির ঢেকুর তুলে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী যুবকটির চোখে মুখে ফুটে উঠে অনাবিল হাসি,
স্পর্ধিত ভিক্ষুক বলে- ‘ওগো মেয়ে আমি তোমায় লবণের মতো ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধজীবন -সংগ্রাম পর্ব-৩
পরবর্তী নিবন্ধজাদুঘর থেকে বলছি-পর্ব ১৩
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন