ডলি বেগম আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। গত রাতে Royal Canadian Legion 1577 Kingston Rd, Scarborough ঠিকানায় এই জয়ী বাংলাদেশী কন্যার সাথে তাঁর জয়োৎসবে উপস্থিত হওয়ার আমার সৌভাগ্য হয়েছিল। আসুন বিস্তারিত শোনা যাক তাঁর জয়ের গল্প।
গতকাল ছিল কানাডার ওন্টারিওতে প্রভিন্সিয়াল ইলেকশনের দিন। গত বেশ কিছুদিন ধরেই স্কারবোরো এলাকাতে সব বাংলাদেশিরা স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট রাইডিংয়ের ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এন ডি পি)-র প্রার্থী ডলি বেগমের পক্ষে দল-মত সবকিছুর উর্ধে কাঁধে কাঁধ মিলে একাট্টা হয়ে চালিয়ে যাচ্ছিলো ভোটার প্রচারণা। অবশেষে, গতরাতে সব জল্পনা কল্পনাকে উল্টিয়ে নিকটতম প্রার্থীর চেয়ে প্রায় দ্বিগুন ভোটের ব্যাবধানে এই রাইডিংয়ে দ্বিতীয় বারের মতো এম মি পি (মেম্বার অব প্রভিন্যিল পার্লামেন্ট) নির্বাচিত হলেন বাংলাদেশী কন্যা ডলি বেগম।
অন্টারিও প্রভিন্সের ইতিহাসে এ এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পর পর দুবার বিজয়ী এই বঙ্গ কন্যা এন ডি পি প্রার্থী ডলি বেগম পেয়েছেন ৪৭.১ % ভোট (১৫, ৯৫৪ ), তাঁর নিকটতম পি সি পার্টির প্রার্থী Bret Snider পেয়েছেন ২৭.৯ % (৯,৪৩৬) এবং প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো-র লিবারেল পার্টির প্রার্থী Lisa Patel পেয়েছেন ১৮.৮ % (৬,৩৫৬ ) ভোট। (তথ্য সূত্র : https://globalnews.ca/news/8826187/ontario-election-2022-scarborough-southwest/)
আসুন জেনে নেই কে এই ডলি বেগম ? সিলেটের মৌলভীবাজারে জন্ম নেয়া এই ডলি বেগম শিশু অবস্থায় বাবা মায়ের সাথে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য কানাডাতে চলে আসেন। এরপর, স্কুল, ইউনিভার্সিটি পড়া শেষে মূলধারার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। স্কারবোরোতে বেড়ে ওঠা এই বালিকা শুরুতে Gordon A Brown Middle স্কুল এ ভর্তি হোন। পরবর্তীতে, তিনি SATEC @ W A Porter Collegiate Institute থেকে গ্রেড টুয়েলভ কমপ্লিট করে University of Toronto থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে University College লন্ডন থেকে Development, Administration & Planning বিষয়ে মাষ্টার ডিগ্রি অর্জন করেন।
চিফ কোর্ডিনেটর হিসাবে প্রভিন্স ব্যাপী Hydro Public campaign এর কারণে Toronto Hydro and Wasaga ডিস্ট্রিবিউশন বন্ধের মধ্যে দিয়ে তিনি লাইম লাইটে আসেন। এ ছাড়া, স্কারবোরো হেলথ কোয়ালেশনে কো-চেয়ার হিসাবে এবং ভাইস চেয়ার হিসাবে ওয়ার্ডেন উড কমিউনিটি সেন্টারে কঠোর পরিশ্রমের সাথে দায়িত্ব পালনকালে তিনি স্কারবোরোবাসীর সুনজরে আসেন।
গত ২০০১৮ সালে ডলি বেগম এন ডি পি-এর প্রাথী হিসাবে একই জায়গা থেকে নির্বাচিত হয়ে প্রথম বাংলাদেশী নারী হিসাবে অন্টারিও পার্লামেন্টে এম পি পি হিসাবে যোগদান করেন এবং সততার সাথে কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সাথে তার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।
একজন বাংলাদেশী জনপ্রতিনিধিকে সহায়তার উদ্দেশ্যে দুপরের মধ্যে অফিসের কাজ ছেড়ে গেলাম ডলি বেগমের পার্টি অফিসে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোটারদেরকে, বাড়ি থেকে ভোট কেন্দ্রে গাড়িতে করে পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন করে Royal Canadian Legion এ ছুঁটে গেলাম। সেখানে ডলি বেগমের শুভাকাঙ্খী শতাধিক মানুষের সাথে বড় স্ক্রিনে চোখ রাখছিলাম ফলাফলের দিকে। দু এক মিনিট পর পর একেকজন চিৎকার করে আপডেট দিচ্ছে আর হল শুদ্ধ সবাই উল্লাসে ফেটে পড়ছে, সে এক দেখার মতো দৃশ্য। রাত প্রায় সাড়ে দশটার দিকে এলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ। ডলি বেগমকে জয়ী ঘোষণা করা মাত্র কানা ফাটা আনন্দ চিৎকারে মেতে উঠলেন সবাই। মঞ্চে উঠে কথা বলতে উঠলেন ডলি বেগম। আমি বিষয়ের সাথে দেখলাম অনেকেই আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়ছে । আমি অভিভূত হয়ে একটার পর একটা ছবি তুলতে থাকলাম।
রাজনীতি মানে রাজার নীতি না, রাজনীতি হচ্ছে নীতির রাজা। প্রবাসীরা নীতির এতো রাজা প্রজা এসব তত্ত্ব কথা এড়িয়ে তাদের জনপ্রতিনিধি হিসাবে একজন যোগ্য বাংলাদেশীকে দেখতে চায়। ডলি বেগমের এই জয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো বাংলাদেশী কন্যা ডলি বেগম তার সেই যোগ্যতার পরীক্ষায় লেটার মার্ক নিয়ে পাশ করেছেন। আর এই কৃতিত্বের জন্য বাংলাদেশীদের পাশাপাশি মাল্টিকালচারের দেশ কানাডার এই অন্টারিও প্রভিন্সের সকল অধিবাসীদের মাঝে তিনি কত যে জনপ্রিয় সেটাই প্রমাণিত হলো। আমরা তার এই জয়কে স্বাগত জানাই, অভিনন্দন জানাই।
অদূর ভবিষ্যতে এই ডলি বেগম প্রভিন্স থেকে হয়তো আরো আরো বড় দায়ীত্ব নিয়ে কানাডার কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টে জায়গা করে নিবেন, কিন্তু, আমাদের চোখ থাকবে আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মের দিকে আমার আশা করবো, আরও অনেক অনেক ডলি বেগম প্রভিন্স ও কেন্দ্রের পার্লামেন্টে যেয়ে বাংলাদেশীদের দাবিদাওয়া আকাঙ্খা মিটিয়ে এই প্রবাসে বাংলাদেশীদেরকে অনেক অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবেন।