লেখার শিরোনামঃ পড়ে আবার ভাববেন না, আমি আপনাদের কাছে টাকা/পয়সা জাতীয় কিছু সাহায্যের জন্যে আহব্বান করছি। আমার পাঠকের কাছে একটি ভিন্নমাত্রার বিনীত আবেদন জানিয়ে এ লেখাটি লিখছি।
পহেলা জুলাই নিয়ে রবিবারের সকাল থেকে একটি লেখা লিখছিলাম। একটু ব্রেকের জন্য, বাংলাদেশে আমার বগুড়া জিলা স্কুলের সহপাঠী ডাক্তার বন্ধু ডাঃ সামির মিশু কে ফোন দিলাম, ওর অবস্থা জানার জন্য, বন্ধুটি বগুড়াবাসীর জন্যে করোনা ভাইরাস ব্যাপারে বহু কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থেকে সেবা দিতে যেয়ে নিজেই আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ওকে মেসেঞ্জারে না পেয়ে আরেক ডাক্তার বন্ধু ডাঃ শফীন জব্বারকে ফোন দিলাম। এই বন্ধুর বাবা হচ্ছে শহীদ জব্বার যাকে রাজাকারের প্ররোচনায় নির্মমভাবে ৭১ সালে হত্যা করা হয়েছিল। আমি, ফেসবুকের কল্যানে দেখেছিলাম, এপ্রিল মাসের শুরুতে যখন বাংলাদেশে তেমন প্রকটভাবে এই ভাইরাস ছড়ায়নি, এই বন্ধুটি হ্যান্ড মাইক নিয়ে উপজেলার অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রানপনে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করছে। আমার এই বন্ধুটিও আক্রান্ত। তাই ভাবলাম, ওর একটু খোঁজ নেই। কপাল ভালো। মেসেঞ্জারে এক বার নাড়তেই বন্ধুকে পেলাম। বন্ধু ডাঃ শফীন জব্বার এর সাথে প্রায় আধা ঘন্টারও বেশি সময় নিয়ে অনেক কথা হলো। ওরসাথে কথা বলার পরে আফসোস হলো কেন ওর কথাগুলি রেকর্ড করলাম না। বন্ধু আমার অনেক মূল্যবান কথা বললো যা শুনে আমি আমার পহেলা জুলাই নিয়ে প্রায় শেষের দিকে থাকা লেখাটি ফেলে দিয়ে তড়িঘড়ি করে নতুন করে এই লেখাটি লিখতে বসলাম, আমার পাঠকের কাছে একটি আকুতি নিয়ে।
বন্ধুটি সবচেয়ে ভয়াবহ যে খবরটি দিলো তা হচ্ছে তার এক রুগী তার কাছে স্যাম্পল দিয়েছিলো কিছুদিন আগে। কয়েকদিন পরে আমার ডাক্তার বন্ধুটি সেই টেস্টের রিপোর্ট দেখে পজিটিভ। তারপর, বন্ধুটি হন্যে হয়ে সেই রুগীকে খুঁজে দেখে ভদ্রলোক বহাল তবিয়তে ব্যাংকে চাকুরী করে যাচ্ছে। পরে, উপজেলার অন্যান্য কর্মকর্তাদের সহায়তায় বন্ধুটি পুরো ব্যাংকটিকে লোকডাউন ঘোষণা করে বন্ধ করে দেয়। একজন শিক্ষিত মানুষ কতখানি অসচেতন হলে এরকম কাজ করতে পারে। আমি যখন খবরটি শুনে আঁতকে উঠলাম, আমার ডাক্তার বন্ধুটি হেসে বললো, দোস্ত, এরকম শত শত ঘটনা প্রায় প্রতি উপজেলায় হচ্ছে, কতজনকে তুই বোঝাবি ? বন্ধুটির শেষের দিকের কথাগুলি অভিমান, ইমোশন মেশানো। বন্ধুটি বললো, কি করবি দোস্ত, আমাদের আসলে মোরে যাওয়াই ভালো । আমাদের পূর্ব পুরুষদের এনে দেওয়া স্বাধীনতাকে আমরা ধরে রাখতে পারলাম না। এরকম অসচেতন জাতির মোরে যাওয়াই ভালো।’
বন্ধুটি আরো বলতে থাকলো, দেখ, কখনো চোর হতে পারিনি। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, পারিবারিক শিক্ষা আমাকে চোর হতে শেখায় নি। তাই, পেশাগত দায়িত্বের প্রতি সম্মান জানিয়ে উপজেলায় থেকে মাঠে ময়দানে মানুষদের সাথে কাজ করেছি, সচেতন করার চেষ্টা করেছি, সব বুঝি জলে গেলো দোস্ত, মানুষ কথা শোনে না। এখন শুধু মির্ত্যুর জন্যে প্রহর গুনছি আর প্রার্থনা করছি আল্লাহ যেন ভালোভাবে আমাদের যান নিয়ে নেন।
বন্ধুটির সাথে আরো অনেক বিষয়ে কথা বলা যখন চলছিল, আমার সেল ফোনে ক্রমাগত আমম্বর এলার্ট বেজে চলছে: ‘নায়াগ্রা ফলস এলাকায় একটি ছয় বছরের বালককে অপহরণ করা হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে চুয়াল্লিশ বছরের জন মিশেল নাম একটি ব্যাক্তি যাকে ভোর সাড়ে আটটার সময় শেষ দেখা গেছে, কেউ যদি এ ব্যাপারে কোনো খবর পায়, পুলিশকে যেন অতিসত্তর যোগাযোগ করে।’
আহা!! কি দেশ!! একটি শিশুর অপহরণ নিয়ে সরকারের কত চেষ্টা, আমরা কি বাংলাদেশে হাজার হাজার শিশুকে , শিশুর বাবা.মা/ভাই/বোনদের বাঁচাতে একটুখানি সচেতন হতে পারি না !!!!!! বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকে আমার পাঠকদের কাছে সবিনয় উনরোধ করছি, প্লিজ একজন করে হলেও মানুষ কে বুঝান, কেউ যেন করোনা ভাইরাসের জন্য স্যাম্পল জমা দিয়ে অন্তত ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত নিজেকে আইসোলেশন রেখে, নিজেকে বাঁচায়, নিজের পরিবারকে বাঁচায়, নিজের চারপাশের মানুষকে বাঁচায় ও আমাদের অনেক মূল্যবান জীবন দিয়ে কেনা এই স্বাধীন বাংলাদেশকে বাঁচায়!!!!! ভালো থেকো ডাঃ মিশু, ভালো থেকো ডাঃ সাফিন , ভালো থেকো সামনে থেকে যুদ্ধ করা তাবৎ ডাক্তারেরা, ভালো থেকো আমার প্রিয় জন্মভুমি , ভালো থেকো পৃথিবী ।