প্রসাশন বা সমাজ যখন দেশের উদীয়মান জনগোষ্ঠীকে বেআইনি কাজ করতে বা আইন ভাঙ্গতে বাধ্য করে তখন দেশ ও সমাজের ভবিষৎ খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। আর এর কুফল শুধু চলমান প্রশাসন নয় ভবিৎষতে সমস্ত প্রশাসনের জন্য অত্তান্ত ক্ষতিকর। আর যে দল, বা যে প্রশাসনই আসুক তাদেরকে ওই একই পুলিশ, একই মিলিটারি বা একই কর্মকর্তা দ্বারা দেশ চালাতে হবে, তাই দল-মত নির্বিশেষে, সমাজের প্রত্যেকেই আমাদের হারিয়ে যাওয়া “মূল্যবোধ” কে পুনরুদ্ধার এর কাজ করতে হবে এবং এ দায়িত্ব প্রতিটি দলের এবং প্রতিটি মানুষের, হয়তো অবস্থান অনুযায়ী এই দায়িত্ব কমবেশি হতে পারে কিন্তু হাত গুটিয়ে কেউ দর্শকের ভূমিকায় থেকে শুধু সমালোচনা করলে কাজ হবে না।
মানুষের মনে এবং মস্তিষ্কে সুস্থ মূল্যবোধ ফিরিয়ে না আনতে পারলে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেনো; কোনো কাজ হবে না। শুধু মাত্র দুর্নীতি বা অসামাজিক কাজ কর্মের ফর্ম বা ধারণ পাল্টাবে, যেটা আমরা বিগত বছরগুলিতে দেখে আসছি।
রাজনৈতিক দলগুলিকে সন্ত্রাসী/দুর্বৃত্ত বা অসামাজিক কার্যকলাপ করা মাসলম্যানদের দ্বারস্থ না হয়ে নিজেদের ভালো কাজ এবং মূল্যবোধের দ্বারা দেশের সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে হবে। আমার দেশে থাকা অবস্থায়, বিশেষে করে বিশ্ববিদ্দালয় থাকা অবস্থায় যে সমস্ত লোকজন সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিয়েছে তাদের অনেককেই মাঝে মাঝে দেখি বড় বড় দলের বড়ো বড়ো নেতাদের আসে পাশে। এক্ষেত্রে কোনও দলই দেশের মানুষ বা প্রশাসনের মূল্যবোধহীন আচরণের দায় দায়িত্ব এড়াতে করতে পারবে না।
গত ১৫/২০ বছরে দেশের অবকাঠামোর, বা বলতে পারেন অর্থনীতিরও অনেক উন্নতি ঘটেছে এবং সেটা কমবেশি সব দলের বা প্রশাসনের অবদান আছে, কিন্তু অত্তান্ত দুঃখজনক যে আমি দীর্ঘদিন আগে দেশত্যাগের সময় থেকে এ পর্যন্ত আমাদের সমাজের মানুষের অন্তরের উন্নতির একটা ছিটে ফোটাও দেখতে পাইনি বা পাই না, বরং দেশের মানুষের সাথে আলাপে জানা যায় সেটার নাকি আরো অবনতি ঘটেছে। তাহলে হলো টা কি। বড়ো বড়ো রাস্তা, শপিং মল, বিল্ডিং বা হাতে হাতে নতুন নতুন মডেলের ফোন ইত্যাদিতে কোনো কাজ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মনের বা অন্তরের উন্নতি হচ্ছে না।
একটি ধারালো চাকু একজন সার্জনকে তার রুগীকে ভালোভাবে অপারেশন করে দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে, আবার সেই ধারালো চাকুই দ্রুত একজন মানুষ খুন করতে পারে যদি চাকুটি পঁচা অন্তরের বা মূল্যবোধহীন মানুষের হাতে পড়ে। ঠিক তেমনি মূল্যবোধীন সমাজে শুধুমাত্র অবকাঠামোগত আর অর্থিনীতিক উন্নতি ধারালো চাকুর মতো মানুষ বাঁচানোর থেকে মানুষ খুনিই করে যাবে।
ছোট একটি সত্য গল্প দিয়ে শেষ করি। আমি তখন ফিনল্যান্ডে পড়াশুনা করি। ছুটির দিনে এক বনধুর গ্রামের বাড়ি গেছি। তার বরকে নিয়ে বৃদ্ধ বাবাকে বেশ কিছু দূরে ট্রেন থেকে পিক-আপ করতে গেছি। গ্রামের পথ, মাঝ দুপুর, আবার আমরা কিছুটা late তাই দ্রুত জাসছি। হটাৎ একটি stop sign. ভ্যদ্রলোক “oh shit” বলে ব্রেকে পা রাখলেন। আমি সদ্য দেশ থেকে যাওয়া তাই বললাম, তুমি তো একটু slow করে যেতে পারতে, সে উত্তরে বললো ” I am not supposed to”. লজ্জা তো পেলামই, আর সঙ্গে সঙ্গে একটা শিক্ষাও হলো। এখন ওই জনমানবহীন রাস্তায় তার ওই ” I am not supposed to” বোধের কারণে সে আসে পাশে ২/৪ মাইলের মধ্যে কেউ না থাকলেও থেমে গেছে। এখন কথা হলো আইন যত বেশি বা যত কঠিন করি না কেন, যতদিন ওই ” I am not supposed to” বোধ মানুষের মনে ফিরিয়ে আনতে না পারা যায় ততদিন শেওলাওয়ালা পুকুরে ঢিল ছোড়ার মতো হটাৎ হটাৎ হৈচৈ, চিল্লা চেল্লি বা আন্দোলন হবে, মানুষ রাস্তায় নামবে তোড়জোড় হবে, নতুন আইন হবে কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে কাজের কাজ কিছুই হবে না। এবং ওই সমস্ত চিল্লাচিল্লি করা লোকজনই একদিন প্রশাসনে যাবে এবং পাল্টে যাবে, আর যে গুটি কয়েক না পাল্টানো লোক থাকবে তারা কোনঠাসা হয়ে থাকবে।
আল্লাহ/ভগনান/ঈশ্বর আমাদের সহায় হউন, আমাদের দেশের মানুষের বিবেককে জাগ্রত করুন এবং আমাদের মূল্যবোধেকে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করুন। এবং বিশেষ করে বিনা পরিশ্রমে, বিনা কাজে ক্ষমতা আহরণের কুসিৎ ইচ্ছা থেকে আমাদেরকে দূরে রাখুন। আমিন।
বি মুকুল.
(ছবি:-সৌজন্যে jalandamai.org)