আমার বিএসসি এবং মাস্টার্সে শিক্ষার বিষয় ছিল Child Development and family relations. আর গত বছর ডিসেম্বরেই শেষ করলাম Early Childhood Education এর উপর ২ বছরের ডিপ্লোমা । কাজ করছি Registered Early Childhood educator হিসাবে একটা মন্তসরি স্কুলে । স্বভাবতঃই শিশুদের শিক্ষার বিষয়টি আমাকে ভাবায়। আমার সব সময়ই মনে হয় শিশুরা শিখবে মনের আনন্দে। শিক্ষার জন্য তাদেরকে জোর করতে হবে না। বাচ্চাদের মধ্যে স্কুল ভীতি কাজ করবে না। তারা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করবে স্কুলে যাওয়ার জন্য।ব্যাগ ভর্তি বইয়ের ভারে ছোট কাঁধটি নুয়ে পড়বে না। তোঁতা পাখির মত মুখস্থ করার দিন শেষ হবে। কোন কিছু দেখে নিজের মত করে চিন্তা করতে শিখবে এবং নিজের বিশ্বাস কে প্রকাশ করতে পারবে। যে পদ্ধতিটা কানাডায় অনুসরন করা হয়। পুর্বে Child care গুলোতে বা kindergarten এ নির্ধারিত কারিকুলাম অনুসরন করা হত। কিন্তু এখন সেই নির্ধারিত কারিকুলাম অনুসরন করা হয় না। শিশুদের আগ্রহের ভিত্তিতে সাপ্তাহিকভাবে কারিকুলাম তৈরি করা হয় । দিনের নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী Activities গুলো সাজানো হয়। কিন্তু শিশুরা যদি সেই Activities না পছন্দ করে তাহলে কোন শিশু কে জোড় করা হয় না। বরং শিক্ষক কে দেখতে হয় বাচ্চাটি কি করতে বা খেলতে পছন্দ করছে। প্রয়োজন বোধে বাচ্চাদের বাবামায়ের সাথে কথা বলে শিশুদের পছন্দ অপছন্দের বিষয়গুলো জেনে নেয়া হয় সে অনুযায়ী শিক্ষার পরিবেশ তৈরির জন্য । একবার আমি ক্লাশে প্রি- স্কুলের বাচ্চাদের জন্য Subway train এর Set up করেছিলাম কিছু ছোট ছোট চেয়ার, কাগজ দিয়ে বানানো ট্রেন, কিছু টিকেট আর রাস্তা পারাপারের কিছু sign দিয়ে । আর এসব কাজে বাচ্চারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমি বাচ্চাদের খেলা, কথোপকথন , বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব বোধ, নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা দেখে অবাক হচ্ছিলাম। আমিই ওদের কাছ থেকে শিখছিলাম। আসলে এখনে একজন শিক্ষক শিক্ষিকা পাশাপাশি একজন সহশিক্ষারথী ও বটে। পরে আমরা বাচ্চাগুলোকে TTC’র ট্রেন দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। একটি বাচ্চা খেলার সময়ে যদি open ended question ( যে প্রশ্ন গুলো হা বা না এর মধ্যে সীমা বদ্ধ থাকে না) করা হয় দেখা যাবে শিশুটি তার কল্পনাশক্তি দিয়ে এমন কিছু উত্তর করেছে যা হয়ত আপনি চিন্তা ও করেননি। আমি স্বপ্ন দেখি আমাদের দেশেও শিশুরা খেলার মাধ্যমে নিজের খেলনাটি পাশের বন্ধুটির সঙে শেয়ার করতে শিখবে, পালা করে খেলতে শিখবে, নিজের মত প্রকাশ করতে শিখবে, অপরের মতকেও প্রাধান্য দিতে শিখবে। মাঠে ছুটাছুটি করে খেলবে।( ঢাকা শহরের স্কুল গুলো থেকেতো মাঠ শব্দটি উঠে গেছে।)
শিশুদের শিক্ষার জন্য পরিবশ সৃষ্টি করে দিতে হবে আমাদেরই। তার জন্য যে বিশাল অঙ্কের টাকা খরচের দরকার, তা নয় । দরকার শুধু আমদের সময়ের কিছুটা অংশ আমাদের শিশুদের কে দেয়া আর নিশ্চিত করা নিরাপদ প্রাকৃতিক পরিবেশ। যেখানে থাকবে একটি খেলার মাঠ। এই প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে শিশুটি যে শিক্ষা পাবে তার মূল্য কোন কিছু দিয়েই পরিমাপ করা যাবে না।
(ছবি:- সৌজন্যে mansfieldplayforum)