তখন  আমি অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ।  ঠিক এমনই টানা বৃষ্টির  শ্রাবণ      ক্লাসে মাত্র কয়েকজন উপস্থিত ক্লাসে ঢুকে বাংলা স্যার বললেন, আজ পড়াতে ভালো লাগছে না এককাজ কর, তোরা গরুর রচনা লেখ সময় দশ মিনিট , এর মধ্যে যা লিখতে পারিস, মনে কর একটা খেলা ভাবলাম খেলা যখন,তখন দুষ্টুমি করাই যায়

আমি লিখলাম…

গরু একটি গৃহপালিত প্রাণী ইহার একটি লম্বা মাথা , চারখানা পা, দুটি শিং, ডাগর দুটি চোখ আর মশামাছি তাড়ানো পিঠ চুলকানোর জন্য একগুচ্ছ চুল সহ লম্বা লেজ আছে ( আমি এই লেজটির অভাব খুব করে অনুভব করি, কারণ স্কেল দিয়ে চুলকালে পিঠ ছুলে যায় ) গরু ঘাস খায় মাঠে ঘাস হয় , সুন্দর সবুজ মাঠ, দেখলে মন ভরে যায় আহারে আমার সবুজ সোনার বাংলাদেশ কতশত নদী বয়ে যায়, মাঝি ভাটিয়ালী গান গেয়ে গেয়ে নৌকা চালায় ,, মন মাঝি তো বৈঠা নে রে আমি আর বৈতে পারলাম না

স্যার হাঁক দিলেন দশ মিনিট শেষ, সবাই এসে টেবিলে জমা দাও আমরা জমা দিলাম, তিনি এক এক করে দেখছেন এবার আমার পালা, ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন হঠাৎ হেসে বললেন, কাওনাইন এই তোর গরুর রচনা !! গরু দিয়ে শুরু করে নৌকায় উঠে বসে আছিস !! ফাজিল কোথাকার, যা আজ থেকে তুই কাওনাইন না কাউনাইন অর্থাৎ নয়টা গরুর সমান ( আমার নামের শেষে কাওনাইন ছিল, বোর্ড রেজিস্ট্রেশনের সময় ওটা বাদ দিয়েছিলাম ) ব্যস আর যায় কোথায় ? সহপাঠী আর পাঠিনীরা ক্যাচটা ধরে ফেললো সবার মুখে মুখে ডাক , কাউনাইন

জীবনের অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছি পাহাড়ী পথের মতো জীবন আমার ভ্রমণ আমার মজ্জাগত আমার ভ্রমণের সবচেয়ে পছন্দের দেশ ভারত, কেমন যেন আপন মনে হয় এক সময় তো একসাথেই ছিলাম, তাই হয়তো এর রাজ্যে রাজ্যে ঘুরে বেড়াতে খুব ভালো লাগে

কিন্তু যখন দেখি, আজ সেখানে মানুষের উপরে গরুর স্থান দিতে গিয়ে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, সম্প্রদায়ীক দাঙ্গা হচ্ছে তখন মনে হয়, বাংলা স্যারের দেয়া নামটাই হয়তো আমার জন্য সঠিক ছিল, ,,,,

………কাউনাইন … নয়টা গরুর সমান

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন