ফারুক আহমেদ, পার্থ, অস্ট্রেলিয়া থেকে:-
আমার ছেলে টু-তে, মেয়ে সেভেনে পড়ে । দুইজনকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলাম । এমন সময় কাস্টমারের ফোন – ব্যাগ লাগবে।
ফোনে কথা বলছি গাড়ির ব্লটুথে, পেছনের সিটে বসে দুইজন চুপচাপ শোনে – কাস্টমার ফোন করলে তাদের হাসাহাসি নিষেধ।
জিজ্ঞাসা করলাম, “ব্যাগ কয়টা লাগবে?”
সে বলে, “আই নিড টেন ব্যাগস । তোমার এড্রেস বলো ।”
বললাম, “ওকে, ইউনিট থ্রি …..”
সে আমাকে থামিয়ে বলে, “নো নো নট থ্রি, আই নিড টেন।”
আমি বলি, “আই নো । ইউনিট থ্রি……।”
সে উত্তেজিত, “নো নো নট থ্রি, আই নিড টেন – টেন ব্যাগস ।””
আমি ফাঁপড়ে পড়ে গেলাম । কিভাবে বোঝাই ! বললাম, “হাতের কাছে কাগজ কলম থাকলে লেখো – থ্রি বাই এইট ল্যাঙ্কাস্টার স্ট্রিট ……”
সে হো হো করে হাসে, “ওহ ইউ সেড ইউনিট থ্রি, আই হার্ড ইউ নিড থ্রি ।”
ফোন রাখার সাথে সাথে পেছনে বসা ইংরাজীর দুই জাহাজ হঠাৎ খুলে দেয়া ফোয়ারার পানির মতো করে হেসে উঠে ।
তারা হাসে বলে ধারণা করার কারণ নাই যে আমি ইংরাজিতে কাঁচা । প্রমাণ দিচ্ছি আমার ইংরাজী দক্ষতার ।
স্কুল থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরতাম পুলিশ লাইনের ভেতর দিয়ে । প্রহরারত পুলিশ থামিয়ে আলাপ শুরু করতো –
“ভাতিজার নাম কি?”
“কোন ক্লাসে পড়?”
বলতাম, “সেভেনে পড়ি ।”
এক পুলিশ জিজ্ঞাসা করেছিল, “ভাতিজা সেভেন বানান করো তো দেখি ?”
বানান করলাম, “এস ই ভি ই এন – সেভেন ।”
“বাহ, তুমি তো ইংরাজিতে সাংঘাতিক !” – সেই পুলিশ কাকা আমাকে দেখলেই কাছে থাকা অন্য পুলিশকে দেখিয়ে বলতো – “এই ভাতিজা ইংরাজিতে সাংঘাতিক” ।
আমার ইংরাজি দক্ষতার আরো প্রমাণ দিতে পারি । মেট্রিকের মার্কশিট একদিন ফেসবুকে পোস্ট দেব ।
অনেক কষ্টে এই দক্ষতা অর্জন করতে হয়েছে, কারণ ইংরাজি ভাষাটা দুষ্টু – নিয়ম কানুন মানে না । থাইল্যান্ডে তা প্রথম অনুভব করলাম।
থাইল্যান্ডে কাজ করতাম এআইটি র আই টি ডিপার্টমেন্টে । পাশের ডেস্কে বসতো এক নেপালী – রূপেশ শ্রেষ্ঠা, সে কম্পিউটার প্রোগ্রামার। ফাইন্যান্স ম্যানেজার মিস্টার নপাডন (থাই) তার কাছে আসতো – ফিসফিস করে কথা বলতো । মিস্টার নপাডন রূপেশকে ট্যাক্সের নিয়ম বোঝাতো, রূপেশ সে মোতাবেক একাউন্টিং সফটওয়্যার কোড লিখতো ।
একদিন দুইজনের গলার স্বর উঁচু ।
নপাডন বলছে, “ডটার স্পেলিং D O T A R. হুয়াই ইউ রাইটিং সো মেনি আদার লেতারস (letters)?”
রূপেশ মাথা এপাশ ওপাশ করছে – নপাডনকে বোঝাতে পারছে না কেন ডটার বানান Daughter ।
নপাডন জিজ্ঞাসা করছে, “টেল মি হুয়াই?”
রূপেশ মাথা উঁচিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করে, “ফারুক, হুয়াট ইজ ডটার স্পেলিং?” বুঝলাম সে আমার সমর্থন চায় ।
আমি উত্তরে বললাম, “D O T E R”
নপাডন উত্তেজিত হয়ে যায়, “সি ! হি ইজ অলসো উইথ মি ।”
রূপেশ বলে, “সে বলছে E R, তুমি বলছো A R।”
“সেম সেম, বাত ইউ আর রাইটিং মেনি মেনি লেতারস, হুয়াই??”, নপাডন স্বস্তি পায় ।
রূপেশ ফাঁপড়ে পড়ে যায় । আমাকে বলে, “ফারুক, ডোন্ট জোক । কফি খাওয়াবো ।”
এবার নপাডনের গলা আরেকটু উঁচুতে, “কফি? হুয়াই কফি? হুয়াই মেনি মেনি লেতারস?”
উদ্ভট ! মিস্টার নপাডন নাকি ইংরাজি ভাষা?
গুয়াতেমালা ভ্রমণের স্মৃতি মনে পড়ায় বুঝলাম মিস্টার নপাডন না, ইংরাজিই উদ্ভট । মিস্টার নপাডন ইজ রাইট – হুয়াই মেনি মেনি লেতারস?
গুয়াতেমালা গিয়ে স্প্যানিশ শিখেছিলাম এক-আধটু । “ফুতুরো” (Futuro) কে “ফিউচার” বলতে হয় না – শান্তি । যেভাবে বানান, সেভাবেই উচ্চারণ । দুই হপ্তার চেষ্টায় এতো সুন্দর স্প্যানিশ বলতাম যে এক গুয়াতেমালান সহকর্মিনী (Irma Rodas) আমাকে বলেছিলো – “আগের জন্মে তোমার ভাষা ছিল স্প্যানিয়ল”।
স্প্যানিশ, কিংবা বাংলা ভাষাতে শোনার ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম – কারণ বানান এবং উচ্চারণ নিয়ম অনুসরণ করে ৷ অনেক সময় ইংরাজির বানান এবং উচ্চারণে নিয়ম নীতি নাই ৷
বড় জর্জ বুশ সাদ্দাম হোসেনকে ইরানের বিষয়ে নানা পরামর্শ দিয়ে ফোন রাখার আগে বললো – “All good, now quiet.”
সাদ্দাম শুনলো, “All good, now Kuwait.”
বুশ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখে সাদ্দাম কুয়েত আক্রমণ করে বসে আছে ৷ (জোক)
বলতেও সমস্যা, শুনতেও সমস্যা – সমস্যার ভাষা ৷