আমাদের এ বছরের প্রথম ক্যাম্পিং এবং আউটিং ছিলো Balsam Lake Provincial Park-এ ক্যাম্পিং। এবারে আমাদের বিশেষ অতিথি ছিল আমাদের ঘনিষ্ঠ বনধু মান্নান এবং তার মেয়ে ঐশী। উল্লেখ মান্নান এয়ারলাইনে চাকরি করার সুবাধে গত ২০/২২ বছরে অনেক দেশে গিয়েছেন কিন্তু এই অভিজ্ঞতা ছিল তার কাছে প্রথম এবং উনি এই অভিজ্ঞতাকে প্রতি মুহূর্ত উপভোগ করেছেন। আমরা আনন্দিত যে উনাদেরকে আমরা অন্টারিও তথা কানাডিয়ান wildernessকে কিছুটা হলেও তুলে ধরতে পেরেছি। উনারা ছাড়া আমাদের সাথে ছিল আরো দুটি পরিবার, আমার বনধু টোকন এবং শামীম ভাই ফ্যামিলি।
আমরা ঠিক ঈদের পরের দিনই রওনা হই। weather ছিল একেবারে perfect, Bob Marleyর সেই গানের মতো, “The Sun is shining, weather is sweet!!”. আমাদের তিনটি গাড়ির বহর নিয়ে রওয়ানা হই। পার্কটি টরন্টো থেকে মাত্র দুই ঘন্টার পথ। পথি মধ্যে ২/১ টি Tim Horton বিরতির পর আমরা আমাদের ক্যাম্পসাইটে পৌঁছে যাই। সাথে নেওয়া খাবার দিয়ে দ্রুত লাঞ্চ সেরে ফেলি। তার পর সবাই মিলে ৪ টি টেন্ট সেট করে ফেলি। এর পর টোকন ভাই প্রথমে কিডসদের নিয়ে, তারপর বাবা-মা সবাইকে engage করে ফেলেন ভলি বল খেলায়। বেশ কিছুক্ষন চললো। এর পর সবাই যখন টায়ার্ড তখন পার্শবর্তী লেকের পাড়ে গিয়ে বিশ্রাম নিলাম। কেউ কেউ লেকের পানিতে নামলেন এবং কেউ হাত পা ধুয়ে ফেললেন।
এর পর ফিরে এলাম ক্যাম্পসাইটে। সেরে নিলাম ডিনার। উল্লেখ, এবার আমরা সমস্ত খাবার অর্ডার করে নিয়ে গিয়েছিলাম, শুধু মাত্র BBQ ছাড়া, তাই শুধু মাত্র গরম করা আর খাওয়া। এতে করে সময় অনেক সেভ হয়েছে। এর পর ক্যাম্পফায়ার করে সবাই মিলে আড্ডা হলো। সন্ধ্যায় আবার সবাই হাঠতে বের হলাম। এসময় আমি এবং বন্ধু মান্না লেকের সুন্দর পানিতে গোসল করলাম। রাত ১১টার মধ্যে সবাই ঘুমিয়ে গেলো। দিনে অনেক activities থাকায় সবার ঘুম ভালো হলো। সকালে উঠে কেউ কেউ মর্নিং ওয়াকে গেলো আর বাদবাকি নাস্তা তৈরী করলো। নাস্তা সেরে সবাই মিলে বের হলাম ২.৭ কিঃমিঃ একটি হাইকিংএ। একদম ছোট-বড়ো, ছেলে-মেয়ে সবাই মিলে। একটু টায়ার্ড হলেও সবাই খুব এনজয় করলো।
হাইকিং শেষে রওয়ানা হলাম পার্শবর্তী শহর Fenelons Falls এ। ওখানে Tim Hortone শর্ট লাঞ্চ সেরে ফেললাম। তারপর বাচ্চারা ওখানকার লেকের লকে নিচু লেক থেকে উপরের লেকে জাহাজ উঠানো দেখলো। ওদেরকে বইয়ে পোড়ানোর সময় আমি promise করেছিলাম বাস্তবে দেখাবো। এর পর একটি গাছের ছায়াতে সবাই মাইল বসে আইস করিম খেলাম। তারপর ফিরে গেলাম ক্যাম্পসাইটে। সবাই ড্রেস চেঞ্জ করে চলে গেলাম বিচে। বেশ কিছুক্ষন সাঁতার এবং গোসল সেরে ফিরে এলাম ক্যাম্পসাইটে। লুনা ভাবির আইডিয়া থেকে আমরা আয়োজন করেছিলাম ফাদার্স ডে। এটা ছিল ফাদারসদের জন্য surprise . আগের থেকে পার্শবর্তী শহরের একটি দোকানে কেকের অর্ডার দেওয়া ছিল। খুব মজা হলো, বিশেষ করে বাচ্চারা খুব মজা করলো।
এর পর শুরু হলো আমাদের প্রতিবারের signature dish, BBQ . সবাই মজা করে খেলাম। তারপর আমাদের ভাবিরা যেহেতু দুপুরে পানিতে নামেন নাই, তাই আমরা আমাদের ঠিক ক্যাম্পসাইটের পাশে একটু ছোট প্রাইভেট টাইপ বিচে তাদের জন্য পোর্টেবল চেঞ্জ রুম সেট করে তাদেরকে সুইমিংয়ে পাঠালাম। এদিকে আমরা কিডসদের নিয়ে ক্যাম্পসাইটে খেলাধুলা করলাম। মায়েরা কিডস এবং তাদের বর-ফ্রি সময় কাটালেন এবং খুব এনজয় করলেন। তাদের swim এবং চেঞ্জ শেষ করে আমাদেরকে ফোন করলেন, আমরা গরম গরমম কফি এবং চা বানিয়ে তাদেরকে আপ্পায়ন করতে গেলাম। সাথে আমরাও লেকের পাড়ে বসে চা-কফি পান সহ লেকের পরিষ্কার হওয়া খেতে লাগলাম। বাচ্চারা খেলতে লাগলো। আমি এবং টোকন ভাই আবারো গা ভেজালাম।
এর পর ফিরে আসলাম ক্যাম্পসাইটে এবং ক্যাম্পফায়ারের পাশে বসে শুরু হলো আড্ডা। ১১টার মধ্যে সবাই ঘুমাতে গেলো। ঘন্টা খানকে পরে ঐশী এসে বললো আঙ্কেল ঘুম আসছে না, কোনো পিল আছে কি না। বললাম এখানে প্রাকৃতিক পিল আছে। বলে ওকে নিয়ে তখন হাটতে হাটতে লেকের পাড়ে গিয়ে বসলাম এবং লেকের পানির শব্দ ও মলিন হওয়া খেতে লাগলাম, বেশ কিছুক্ষন থাকার পরে ঘুম এসে গেলো, ফিরে আসলাম টেন্টে।
পরের দিন সকালে নাস্তা সেরে, সব গোজ-গাজ করে রওয়ানা হলাম টরোন্টোর উদ্দেশ্যে। যদিও মাত্র ২/৩ দিন তবুও সবার মনে হোলো অনেকটা সময় শান্তি এবং নিরিবিলিতে কাটিয়ে আসলাম। আমরা খারাপ লাগলো শামীম ভাইয়ের ৪/৫ বছরের মেয়েটির আবদার রাখতে পারিনি, ও বলেছিলো ও অন্তত ৭ দি থাকতে চায়। এভাবেই শেষ হলো আমাদের ২০১৮ সালের প্রথম সামার ক্যাম্পিং। লুনা ভাবির জীবনেও এটি প্রথম ছিল ক্যাম্পিং, কিন্তু উনি পছন্দ করেছেন এবং অলরেডি next টাতে বুকিং দিয়েছেন। আমি আবারো বনধু, টোকন ভাইকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ উনি প্রতিটি এক্টিভিটিতে ছেলে মেয়ে সবাইকে এনগেজ করেছেন।
আমাদের কিডসরা এবং আমরাও অপেক্ষায় আছি আমাদের পরবর্তী মাসের পর্বে। সেই অভিজ্ঞতাও আপনাদেরকে শেয়ার করবো। অপেক্ষায় থাকুন এবং ভালো থাকুন।
বি. মুকুল
টরন্টো