ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সমাচার পত্রিকায় প্রকাশিত আমার লেখাসমূহ সন ও তারিখের ক্রমানুসারে পাঠকের নিকট তুলে ধরার চেষ্টা করছি। সাথে সাথে কিছু আলোচনাও করছি। এর আগে ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর পর্বে, ক্রমিক নম্বর ০১ থেকে ৪৭ নম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের লেখা উপস্থাপন করেছি। এখন, এ পর্বে, ক্রমিক নম্বর ৪৮ থেকে শুরু করে ৫৫ নম্বর পর্যন্ত মোট ০৮ টি লেখা তারিখের ক্রমানুসারে উপস্থাপন করছি। এ পর্বে মোট ০৮টি কবিতা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
৪৮. ‘চিহ্ন’ শিরোণামের একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকায় ‘সমাচার সাহিত্য’ বিভাগের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ১৯৯৮। এই কবিতাটি পরবর্তী সময়ে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘অপেক্ষায় আছি’-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। ‘চিহ্ন’ কবিতাটি পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরছি।
চিহ্ন যে রেখে যাবো
তারও কোনো চিহ্ন দেখি না।
ব্লাড প্রেসার কী মাইন্ড প্রেসার
বুঝতে পারিনা,
দশটি টেনোরিন যেন
দশ দিনের আয়ুর প্রার্থনা।
কতো কিছু মনে হয়
কতো নিভে যায়
হিংসুক মৃত্যু এসে
ভালবাসা কেড়ে নিতে চায়!
৪৯. ‘করি শুধু ভুল’ শিরোনামে আমার লেখা একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীর পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ রোববার ১৯৯৮, ২০ বৈশাখ ১৪০৫ বঙ্গাব্দ। কবিতাটি পরবর্তী সময়ে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘যদি দেখা হয়’-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। ‘করি শুধু ভুল’ কবিতাটি এরকম –
কে আমায় নিয়ে যাবে গোমতীর তীরে
কে আমায় নিয়ে যাবে সেই পুকুরের পাড়ে?
আজকের সুখ-দুঃখ এত ভালোবাসা
মান-অভিমান আর এই কাঁদা হাসা
সকলই হবে শেষ কোনো একদিন।
এমনই তো হয়, হচ্ছে চিরদিন।
ক্রমশ বুড়িয়ে যাই, পেকে যায় চুল
তবু্ও হই না শুদ্ধ, করি শুধু ভুল।
৫০. ‘ছোট হতে চাই’ শিরোণামে আমার লেখা একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকার ‘সমাচার সাহিত্য’ বিভাগের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৮। এই কবিতাটি পরবর্তী সময়ে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘অপেক্ষায় আছি’-এর ৩৭ পৃষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত হয়। ‘ছোট হতে চাই’ কবিতাটি পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরছি।
ছোটবেলা বড় হতে চেয়েছি যে কত
এটা করবো সেটা করবো, ভাবনা ছিলো শত।
মধ্য যৌবনে এসে ছোট হতে চাই।
চারদিকে চেয়ে দেখি, কোন পথ নাই।
ঘষামাজা করে শুধু দিন-রাত্রি পার
একতারা তো বাজেনা আর ছিঁড়ে গেছে তার।
আকাশ-কুসুম ভাবিনা আর ফুলকে দেখি ফুল
জীবন খাতায় দেখি শুধু লক্ষ-কোটি ভুল।
৫১. ‘একজন মানুষ’ শিরোনামে আমার লেখা একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকার একুশে ফেব্রুয়ারির বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৮। এই কবিতাটি পরবর্তী সময়ে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘অপেক্ষায় আছি’-এর ২১ পৃষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত হয়। ‘একজন মানুষ’ কবিতাটির অংশ বিশেষ উদ্বৃত্ত করছি।
একজন মানুষ প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হয়
কেউ জানে কী না, জানি না
আমি কিন্তু জানি, আর জানে
সেই হতভাগ্য লোকটি,
যাকে সৌভাগ্যবান মনে করে সবাই।
ঐ মানুষটি প্রতিদিন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে
বসে থাকে জানালার পাশে
অন্তহীন ভাবনা নিয়ে
অপলক তাকিয়ে থাকে বৃক্ষের দিকে
পৃথিবীর অতৃপ্ত সুধা নিয়ে বুকে
ভাবে শুধু, বৃক্ষরা অনেক ভালো।
৫২. ‘একটি কবিতা লিখবো বলে’ শিরোনামে আমার লেখা একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকার ‘সমাচার সাহিত্য’ বিভাগের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ১৫ মার্চ ১৯৯৮। এই কবিতাটি পরবর্তী সময়ে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘অপেক্ষায় আছি’-এর ১১ পৃষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত হয়। ‘একটি কবিতা লিখবো বলে’ কবিতাটি এরকম,
একটি কবিতা লিখবো বলে
বেঁচে আছি আজও।
একটি সুন্দর সকালের কবিতা লিখতে চাই।
লিখতে চাই, কিষাণ-কিষাণীর ভালোবাসার কথা
শ্রমিকের লাল সালামের কথা।
সোভিয়েত ভেঙ্গে গেছে বলে
শেষ হয়ে যায়নি সব
শেষেরও তো শেষ আছে
ধ্বংসের আছে পুনর্জাগরণ!
কবিতার শক্তি আছে জানি!
শব্দসৈনিক আমি শব্দ সাজাই।
সেই কবিতাটি আমি নাও লিখতে পারি,
লিখবেন আমারই মতো অন্য কোনো কবি!
তাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কবিতা গর্জে উঠবে আবার
মায়াকভস্কি টলষ্টয়ের জন্ম হবে ফের
হয়তো সোভিয়েত নয়, অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে।
নজরুল আর সুকান্তের জন্ম হবে ফের এই বাংলায়।
সেদিনের অপেক্ষায় আমি পথ চেয়ে আছি।
সেই কবিতাটি আমি না শুনলেও
শুনবে আমারই মতো অন্য কোন জন!
অন্য কোনো কবি,
সেই কবি ও কবিতার জন্যে আমি পথ চেয়ে আছি।
৫৩ . ‘মনে মনে’ শিরোনামে একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ০৭ এপ্রিল ১৯৯৮। এই কবিতাটি পরবর্তী সময়ে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘অপেক্ষায় আছি’-এর ৩৮ পৃষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত হয়। ‘মনে মনে কবিতা’টি পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরছি।
একটা মন চলতে চায়
আরেকটা চায় না
একটা মন হাসতে চায়
অন্যটা চায় না।
একটা মন হাঁটতে চায়
আরেকটা রয় শুয়ে
একটা মনে জমে কালি
আরেকটা দেয় ধুয়ে।
একটা মন উড়তে চায়
আরেকটাতে জরা
একটা মনে বৃষ্টি শুধু
আরেকটাতে খরা।
একটা মন ধরতে চায়
আরেকটা চায় ছাড়তে
একটা মন মরতে চায়
আরেকটা চায় বাঁচতে।
৫৪ . ‘দু’টি কবিতা’ শিরোণামে দুইটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কবিতা দুটির নাম যথাক্রমে ‘স্বপ্ন’ এবং ‘নিশাচরের স্বপ্ন’। প্রকাশের তারিখ ০৮ আগষ্ট ১৯৯৮। কবিতা দুটোই পরবর্তী সময়ে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘অপেক্ষায় আছি’-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। কবিতা দূটি থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
স্বপ্ন
প্রতি ভোরে স্বপ্ন দেখি
এটা যে দুঃস্বপ্ন তাও স্বপ্নে দেখি
হাসার স্বপ্ন নয় তবু হাসি।
স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝামাঝি বলে
কখনো কখনো দুঃখ হয়
ঘুম ভেঙে গেলে ফ্যালফ্যাল করে দেয়ালে তাকিয়ে থাকি ,
ডানে বামে কোথাও কেউ নেই
কিছুই দেখতে পাইনা আর।
জানি ওটা মিথ্যা, ডাহা মিথ্যা।
তবু প্রতি রাতে স্বপ্ন দেখি
বাস্তবে যা পাইনা স্বপ্নে তা পাই,
পৃথিবীর কঠোর বিধিনিষেধ
স্বপ্নেই আলগা হয়ে যায়।
তাই বুঝি স্বপ্ন ভালোবাসি।
নিশাচরের স্বপ্ন
নিশাচরের স্বপ্ন দেখা
সত্যি কী না জানি না
নিশাচরের স্বপ্ন দেখা
স্বপ্ন কী না ভাবি না।
নিশাচরের স্বপ্ন দেখা
কল্পনা কী হয়?
নিশাচরের স্বপ্ন দেখা
মন্দ মোটেই নয়।
নিশাচরের স্বপ্ন দেখা
কল্পনাকে ডাকা
নিশাচরের স্বপ্ন দেখা
জ্বরের ঘোরে থাকা।
৫৫. ‘তুমি শুধু তুমি’ শিরোনামে আমার একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীর পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ০৪ এপ্রিল ১৯৯৯, রোববার ২১ চৈত্র ১৪০৫ বঙ্গাব্দ। এই কবিতাটি পরবর্তী সময়ে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘যদি দেখা হয়’-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। ‘তুমি শুধু তুমি নও’ কবিতাটি পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরছি।
কবিতার একটি পংক্তিও মুখস্ত থাকে না
মনে থাকো তুমি, শুধু তুমি
যে তুমি বিরাজ করো সকাল – সন্ধ্যা – রাত
হিমালয় থেকে সুন্দর বন
আর বল্গা থেকে গঙ্গা।
আবারও বলি, বারবার বলি
শতবার বলি –
কবিতার পংক্তির মতো
অনেক কিছুই ভুলে যাই
শুধু, ভুলতে পারি না তোমায়।
স্মৃতি – স্বত্ত্বায় তুমি, শুধু তুমি।
তোমাকেই দেখতে পাই কবিতার সকল পংক্তিতে,
আমি যেন একটি শব্দ আর একটি পংক্তিই জানি
একটি কবিতাই যেন লিখতে চেয়েছি,
যে কবিতার শিরোনাম – তুমি
বিষয়বস্তু – তুমি
তুমি শুধু তুমি।
(চলবে)