এ লেখাটিতে আমরা ৩টি পর্বের মাধ্যমে সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করব কোন কোন পদ্ধতিতে কানাডাতে আসা যায় এবং স্থায়ী ভাবে থাকা যায়। মনে রাখবেন এখানে আসার ব্যাপারে আপনার কোন পরামর্শকেন্দ্রে যওয়ার প্রয়োজন নেই, In fact কানাডিয়ান সরকারও এব্যাপারে উৎসাহ দেন না, কারন এদের সাহায্য নিলে আপনার ভিসা প্রাপ্তিতে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলবেনা। নিজে একটু খেয়াল করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে আবেদন করলে ভাল হয়। তবে অনেকের সময় বা ধৈয্য থাকেনা সেক্ষেত্রে তারা অবশ্য এইসমস্ত পরামর্শকেন্দ্রের স্মরনাপন্ন হতে পারেন। শুধু সতর্ক থাকবেন এরা বৈধ কিনা।
এখন আমি যে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করব সেগুলি অনেকেরই জানা থাকতে পারে বা তারা আরো ভাল জানতে পারেন। আমার এইব্লগে কানাডা ইমিগ্রেশন বিষয়ে বিগত লেখার পর অনেকে সংক্ষেপে উপরোক্ত বিষয়ে লেখার অনুরোধ জানিয়েছেন, তাই লেখাটি মূলত তাদের জন্য। এবার দেখা যাক মেপেললিফের দেশে কিভাবে আসবেন এবং স্থায়ী ভাবে থাকবেন।
৯,৯৮৪,৬৭০ কিলোমিটারের এই দেশটিতে সবসময়ই দ্ক্ষ এবং যোগ্য লোকের দরকার
এখানে আসার এবং স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে, তবে আমি মূলত আলোচনা করব কিভাবে উচ্চশিক্ষা, রাজনৈতিক আশ্রয় বা স্কিলড ইমমিগ্রান্ট হিসাবে আসবেন এবং এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হবেন। আমি মনে করি বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকের জন্য এ পদ্ধতিগুলি তুলনামূলক ভাবে সহজ এবং আওতার মধ্যে।
উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে কিভাবে এখানে স্থায়ী ভাবে বসবাস করবেন
উচ্চশিক্ষার জন্য আপনি আন্ডারগ্রাজুয়েট, গ্রাজুয়েট বা পোস্টগ্রাজুয়েট করতে আসতে পারেন। আপনার ডিগ্রি শেষে Post Graduate Work Permit (PGWP) এর মাধ্যমে কাজ করে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে স্থায়ী ভাবে থাকার জন্য আবেদন করতে পারেন। এ সুবিধাটি অনেক দেশে নেই, কানাডাতেও আগে ছিলনা। এখন আপনি কত দিনের ডিগ্রি অর্জন করেছেন তার উপর PGWPP (Post Graduate Work Permit) ওয়ার্ক পারমিটি পাবেন এবং আপনার কাজের অভিজ্ঞতার কমবেশির কারনে আপনার স্থায়ীভাবে থাকার আবেদনের উপর প্রভাব ফেলবে। যেমন ধরুন আপনি ৪ বছরের ডিগ্রি প্রগ্রাম করলেন তাহলে আপনি সর্বোচ্চ কাজের অনুমতি পাবেন ৩ বছর যা কিনা আপনার পয়েন্টকে অনেক এগিয়ে দিবে। আবার আপনি হয়তো কোন ৮ মাসের একটি সার্টিফিকেট প্রোগ্রাম করলেন তাহলে আপনি ৮ মাসের বেশি কাজ করার অনুমতি পাচ্ছেন না। আর মাত্র ৮ মাসের কাজের অভিজ্ঞতা দিয়ে স্থায়ী ভাবে বসবাসের আবেদন করলে তা ফলপ্রসু হবেনা। এজন্য অন্তত ২ বছরের কোন ডিগ্রী প্রোগ্রামে এসে পড়াশুনা শেষ করে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করে স্থায়ী ভাবে বসবাসের আবেদন করা ভাল।
এ ধরণের অনেক কানাডিয়ান University-ই আপনাকে উচ্চ শিক্ষার জণ্য আমন্ত্ত্রণ জানাচছে
কানাডাতে উচ্চ শিক্ষার খরচ আমেরিকা বা যুক্তরাজ্য থেকে কম হলেও গড় বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের জন্য অনেক বেশী। এই বেপারে ছোট একটি ধারনা দেই। গত September-এ বাংলাদেশ থেকে মার্কেটিং মেজরে Graduate করতে এসেছেন একজন বাংলাদেশী ছাত্র, তিনি Already ১৩০০০ কানাডিয়ান ডলারের মত শুধূ এক বছরের টিউশন ফিস জমা দিয়েছেন। থাকাখাওয়া এবং আনুষাঙ্গিক অন্যান্য খরচ হয়তো আরো ১০০০০/১২০০০ ডলার খরচ হবে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বাংলাদেশী টাকার বর্তমান রেটে প্রায় ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকার মত বছরের খরচ।
অবশ্য ২/১ বছরের পড়াশুনা করার পর কিছু অনুদান, পার্টটাইম কাজ বা ইউনিভার্সিটিতে এ্যাসিষ্টান্সশীপ পেতে পারেন কিন্তু সেটা আপনার পড়াশুনার ফলাফলের উপর নির্ভর করবে। আপনি দেশ থেকে এলেভেল বা ইনটারমিডিয়েট পাশ করে এখানে আন্ডারগ্রাজুয়েট করতে আসতে পারেন। বাংলাদেশ থেকে মাস্টারস বা আন্ডারগ্রাজুয়েট করে এসে এখানে পোষ্টগ্রাজুয়েট ডিগ্রি করতে পারেন। কোন কোন প্রতিষ্টানে এখানে মাস্টার্সে ভর্তি হতে বাংলাদেশের ৪বছরের আন্ডারগ্রাজুয়েট হলে চলবে, আবার কোথাও বাংলাদেশের মাস্টারস লাগবে। আপনার পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের Website –এ গিয়ে এ বিষয়ে বিস্তারীত জানতে পারবেন অথবা Admission Office –এ লিখে ইনফরমেশন গাইডের হার্ড কপির জন্যও অনুরোধ পারেন।
এই দফতরটি হয়তো আপনারই আগমনের অপেক্ষায়
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পছন্দ করার ক্ষেত্রে আপনাকে একটু সচেতন হতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া সহজ বা খরচ কম মনে হলে তড়িঘড়ি সেখানে চলে আসা ঠিক হবেনা। অবশ্য আপনার টার্গেট যদি শুধু পড়াশুনা করতে আশা এবং ডিগ্রি শেষে দেশে ফিরে যাওয়া হয় তাহলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার টার্গেট যদি এখানে স্থায়ী ভাবে থেকে যাওয়া হয় তাহলে কোন শিক্ষা প্রতিষ্টানে ভর্তি হওয়ার আগে আপনার পছন্দের Subject এর ডিগ্রি শেষে এখানে কাজের ডিমান্ডের খবর নিন। শিক্ষা প্রতিষ্টানটি কোন শহরে অবস্থিত, সেখানে স্থানীয়দের বেকারত্বের হার কত, প্রতিষ্ঠাটি কি সরকারী অনুদানে চলে নাকি ব্যক্তিগত মালিকানা। ব্যক্তিগত মালিকানার প্রতিষ্ঠানকে বর্জন করা ভাল। সম্প্রতি এমন একটি প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়া ঘোষনার ফলে অনেক ছাত্রছাত্রী বিপাকে পড়েছেন। সবসময় আপনার পছন্দ, আগ্রহ এবং দক্ষতার সমন্বয়ে আপনার ডিগ্রির সিদ্ধান্ত নিবেন। আর বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ মার্কেটভ্যালুও বিবেচনা করবেন। দেখা গেল আপনি একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে ভিসা নিয়ে আসলেন এবং ডিগ্রিও করলেন কিন্তু কাজ পাচ্ছেননা তাহলে আপনি স্থায়ী ভাবে বসবাসের আবেদন করতে পারছেন না। কোন পরামর্শ কেন্দ্র আপনাকে হয়তো বলবেনা যেসব প্রতিষ্ঠানে বা সব বিষয়ে ডিগ্রি করে কানাডাতে কাজ করার বা স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম, কারন এটা তাদের ব্যবসা তাই পরামর্শকেন্দ্র বা Consultancy ফার্মের স্মরনাপন্ন হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পছন্দের বিষয় সম্নদ্ধে নিজে আগে ধারনা নিন তারপর আপনার কাগজপত্র Processing এর ধৈর্য না থাকলে এবং অর্থ থাকলে তাদের সাহায্য নিন। মনে রাখবেন এটি আপনার সময় এবং অর্থের বড় একটি Investment. এখন ডিজিটাল Communication এর যুগ তাই আমি মনে করি তথ্য সংগ্রহ করা খুব একটা কঠিন নয়। কানাডিয়ান Job মার্কেটে একটি কথা আছে সেটা হলো চাকরি খোজা একটা ফুলটাইম চাকরির মত। তাই আপনিও এখানে আসার আগে এমনকি আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালভাবে খোজখবর নিন। যেমন, যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তি হতে চাচ্ছেন এবং যে শহরে থাকতে চাচ্ছেন সেখানকার পূর্ববর্তী ছাত্রছাত্রীদের সাথে আগে থেকে যোগাযোগ করুন এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোজখবর নিন। কোন আত্বীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব থাকলে তাদের মাধ্যমে খোজ খবর নিন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
আমার জানা মতে সম্প্রতি বেশ কিছু বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা শেষ করে কাজের মাধ্যমে এখানে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন। এদের অনেকেই এখানে স্কিল্ড ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আসা বাংলাদেশীদের চেয়ে ভাল আছেন। তাই আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং আর্থিক সামর্থ থাকলে বা কানাডা সরকারের বা কোনো কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠাণের অনুদান পেলে ভাল করে খোজখবর নিয়ে চলে আসুন আপনাকে কানাডা স্বাগত জানাবে এদেশের সুযোগ সুবিধা নেওয়ার জন্য। আপনি এখানে স্হায়ী হলে আপনর নিকট আত্তীয়দেরকে সপন্সর কোরতে পারবেন। এখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা বা গবেষনার ক্ষেত্রে বৃত্তি প্রদান করা হয়, সেক্ষেত্রে আপনার Result খুব ভাল হতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে খোজখবর নিলে এ বিষয়ে তথ্য জানতে পারবেন। ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার অভিবাবকের আয়ের চলমান অবস্থা দেখাতে হবে, অর্থাত শুধু মাত্র ব্যাংকে কোটি টাকা থাকলে চলবে না, টাকাটা কিভাবে আসছে, অর্থাত যদি ব্যবসা হয় তাহলে ব্যবসাটির বিস্তারিত বিবরণ এবং প্রতি নিয়ত লেনদেন বা কোন চাকরি হলে তারও বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে। এরা জানতে চায় যে আপনার অভিবাবকের আপনার খরচ চালানোর সামর্থ আছে। এ বিষয়গুলি অবশ্য অনেকের জানা। কোন প্রতিষ্ঠানে কি Admission প্রক্রিয়া, কত টাকা টিউশন ফিস তাদের Website-এ বিস্তারিত জানতে পারবেন। কোন বিষয় প্রশ্ন থাকলে Website থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের এডমিশন ডিপার্টমেন্ট এর ফোন নম্বর জোগাড় করে ফোনে সরাসরি আলোচনা করতে পারেন। আপনি এই ব্লগের Comment প্রশ্ন রাখলে আমরা চেষ্টা করব আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে অথবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে রেফার করতে। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডা, লোকসংখ্যা মাত্র 35 মিলিয়ন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ও কম তাই প্রতিবছর এদের লোক লাগে। আমরা চাই বেশী বেশী বাংলাদেশী এখানে আসুন, তবে আবার ও বলছি ভাল করে খোজ খবর নিয়ে আসুন। পরবতী পরবে আমরা জানবো রিফিউজি হিসাবে এখানে আসার পদ্ধতি নিয়ে। সে পর্যন্ত ভাল থাকুন।
মুকুলবি.জামান
টরন্টো ,কানাডা
৬ডিসেম্বর, ২০১৫
তথ্যমুলক সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।
পরবর্তী অংশের অপেক্ষায় রইলাম।
অভিবাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট বাস্তবভিত্তিক কিছু বিষয় আছে যা “Tinted Vision” এবং অভিবাসনের উক্তেজনায় প্রায়সই আমরা ভুলে যাই. যখন এই বিষয়ে ভাবি তখন হয়ত তেমন কিছু করার থাকে না. আপনার লেখায় এই বিষয়গুলো অনেকটাই উঠে এসেছে. সব বিষয়কে একসাথে না রেখে, এক একটি প্রক্রিয়া ধরে আলোচনা করাতে আমার বিশ্বাস এই লেখা থেকে অনেকেই উপকৃত হবেন.ধন্যবাদ মুকুল ভাই.