পঞ্চম পর্ব-
রেইকি। ভাইটাল লাইফ ফোর্স এনার্জি। রেইকি গ্রান্ড মাষ্টার পারুল দত্তের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখাটি লিখেছেন দীপান্বিতা নায়ার। নব্বই-এর দশকের সানন্দা থেকে সংগৃহীত।
রেইকি কি ওজন কমাতে পারে?
হ্যাঁ নিশ্চয়ই পারে। ওজন বাড়ে কি করে? যারা খুব ডিপ্রেশনে ভুগছেন তাদের ওজন বাড়ে। কি করে? যারা নিজেদের নিয়ে অতৃপ্তিতে ভুগছেন তারা সব সময় কোনো তৃপ্তির আশ্রয় খোঁজেন। হতে পারে সেটা খাবার। তাই তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খান। যেটা শেষ পর্যন্ত নেগেটিভ এনার্জিতে পরিণত হয়। ভাইটাল লাইফ ফোর্স এনার্জি বা রেইকি হলো এমন এক পদ্ধতি যা যে কোনো নেগেটিভ এনার্জি থেকে আপনাকে বাঁচাবো। আমাদের শরীর, মন, আত্মার ভারসাম্য যদি ঠিক থাকে তাহলে বাড়তি মেদ জমার কোনো প্রশ্ন নেই। কারণ আমাদের যতটুকু খাবার দরকার এনার্জির জন্য তখন আমরা তা’হলে ততটুকুই খাবো।, তার বেশি নয়। এই ভারসাম্য চলে গেলেই বেশি খাওয়া, অ্যালকোহল ইত্যাদি প্রয়োজন, অতিরিক্ত উদ্দীপনার দরকার হয় যা আমাদের ওজন বাড়ায়। রেইকি এই মন-শরীর-আত্মার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। যার ফলে আমাদের এই বাড়তি খেয়ে বা ড্রিংক করে তৃপ্তির সন্ধান পেতে হয় না। তাছাড়া থাইরয়েড বা অন্য কোনো অসুখের জন্য যদি মেদ জমতে থাকে তা’হলে তার চিকিৎসাও অবশ্যই রেইকি করতে পারে। আসলে রেইকি সরাসরি না করলেও আমাকে দিয়েই ওজন কমানোর জন্য যা যা তাই করাবে। তাছাড়া যখন আমরা মোটা হই তখন আমাদের মধ্যে একটা নেগেটিভ মনোভাব কাজ করে। দূর ঠিকই তো আছে, কি হবে রোগা হয়ে? এই তো বেশ আছি। এ সব কথা আমরা ভাবি। কিন্তু রেইকি আমাদের পজিটিভ আউটলুক দেয়। তাই তখন আমরা নিজেকে সুন্দর সুস্থ রাখার চেষ্টা করবো।
অ্যালোপ্যাথি ঔষধের সাথে রেইকি ব্যবহার করা যায় কি?
রেইকি অ্যালোপ্যাথি এই দুই চিকিৎসার সমন্বয় আজ পৃথিবী স্বীকৃত। এর কারণ রেইকি করলে ঔষধের মাত্রা অনেক কম হয়। যেমন, যদি কেউ ডায়াবেটিসে ভুগছেন তা’হলে যতটা ইনসুলিন নিতে হবে তার থেকে অনেক কম মাত্রার ইনসুলিন কাজ করবে বেশি। কারণ হিলিং-এর কাজ সমান্তরালভাবে রেইকি করছে। তাছাড়া রেইকি করলে ঔষধের কর্মক্ষমতা বাড়বে। অনেকের অসুখে ঔষধের সাথে দৈনন্দিন জীবনের ওপর অনেক নিয়ন্ত্রণ, নির্দেশ থাকে, যা মেনে চললে রোগ প্রতিরোধ তথা নিরাময়ে যথেষ্ট সাহায্য হয়। যেমন – ডায়াবেটিস হলে মিষ্টি না খাওয়া। ঔষধ খেলেও অনেকের মধ্যে কিন্তু মিষ্টি খেয়ে ফেলার বা নিয়ম না মানার একটা প্রবণতা থাকে। রেইকি যেহেতু আমাদের মেন্টাল বডির ওপর কাজ করে তাই রেইকি করলে এই নিয়মের বেড়া লোভের হাতছানিতে ডিঙিয়ে ফেলার ইচ্ছেটাও চলে যায়। তবে একটা কথা রেইকি আর মেডিসিন একসাথে চললে ঔষধের ডোজের দিকে নিশ্চয়ই নজর রাখবেন। কারণ এমন হয় যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাত্রায় ঔষধ আপনি খেয়ে নিচ্ছেন, এরফলে বিপর্যয় ঘটতেই পারে। তাই যিনি রেইকি চিকিৎসা করছেন ও আপনার ডাক্তার যেনো ক্রমাগত পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন।
খাবারের উপর কি রেইকি করা যায়?
রেইকি করলে খাবারে আরো বাড়তি লাইফফোর্স এনার্জি বেড়ে যায়। ফলে পুষ্টিগুণ অবশ্যই বাড়ে। তাছাড়া খাবারে যেটা আমাদের ক্ষতি করবে এমন কিছু থাকে যেমন কোনো টক্সিন বা জার্ম যদি থাকে তা’হলে রেইকির পজিটিভ এনার্জি সেইসব নেগেটিভ এলিমেন্টস মুছে ফেলে খাবার শুদ্ধ করে। ফলে খাবারের মাধ্যমে যেসব জীবানু আমাদের মধ্যে আসে বা ফুড পয়জনিং জাতীয় সমস্যা থেকে আমরা বাঁচি। খাবার পরে পেটে সোলার প্লেকসাসের উপর রেইকি করলে হজম ভালো হয়। পানিও একইভাবে রেইকি করে নেয়া যায়।
গাছপালা জীবজন্তুর উপর কি রেইকি করা চলে?
জীবজন্তু বলতে পেটসদের সমস্যার সমাধান করা যায় অনায়াসে রেইকি দিয়ে। আমরা তো তবু রেইকি মাষ্টারকে বোঝাতে পারি আমাদের যন্ত্রণা কোথায়। তার থেকে সমস্যার সমাধান সূত্র বা রোগের উৎস কোথায় তা জানা যায়। আমাদের পোষা কুকুর, বিড়াল বা পাখি কথা বলতে পারে না, তাই তাদের কোথায় কষ্ট হচ্ছে সেটা জানা যায় না। রেইকি যেহেতু ইনটেলিজেন্ট এনার্জি তাই রেইকি ঠিক সমস্যার সূত্রে পৌঁছে যাবে ও সমাধান করবে। গাছপালার ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে রেইকি ভালো ফল ফলাতে, ফুল ফোঁটাতে সাহায্য করে। রেইকিতে গাছপালা আরো সজীব ও সুন্দর হয়ে ওঠে।
রেইকি চলার সময়ে কি ডায়েটে বদল আনার দরকার আছে?
আগেই বলা হয়েছে রেইকি চলাকালীন এমন খাবার খাওয়া উচিত নয় যা শরীরে টক্সিন তৈরী করে। যেমন চা, কফি, সিগারেট, এলকোহল, পান, মসলা ইত্যাদি। খাদ্য তালিকায় আনা উচিত সবজি, সালাদ ও ফল। কারণ এসবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। রেইকি চলাকলীন প্রচুর পানি পান করা উচিত। কারণ এতে সিষ্টেম থেকে সমস্ত টক্সিনের মতো নেগেটিভ এলিমেন্ট ফ্রি হবে ততই রেইকি ইফেকটিভ হবে।
রেইকি কি শুধু অসুস্থ মানুষের জন্য?
মোটেই নয়। বরং উল্টে বলা যায়, অসুস্থ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে রেইকি করা উচিত। আমরা অসুস্থ হই কখন? যখন আমাদের শরীরে অনেক নেতিবাচক শক্তি জমে তখন আমরা অসুস্থ হই। আমাদের শরীরে সাতটি চক্র আছে, যা ক্রমাগত এই এনার্জি শুষে নেয়। এবং তা ছড়িয়ে দেয় শরীরে। প্রবলেমটা তখন হয় যখন এই লাইফ ফোর্স এনার্জি চক্র থেকে এন্ডোক্রাইন সিষ্টেমে পৌঁছতে পারে না। একটা বাঁধা আছে। যখন আমরা পর্যাপ্ত শক্তি পাই না, তখন অসুস্থ বোধ করি। এখন প্রশ্ন, বেশ তো চলছিল। তা’হলে বাঁধটা এলো কোথা থেকে? এই বাঁধা কিন্তু আমাদের নিজেদেরই তৈরী। আমাদের নেগেটিভ অ্যাটিটিউড, নেগেটিভ ফিলিংস। যেমন- ভয়, ঈর্ষা, প্রতিশোধ স্পৃহা এগুলোই বাঁধা তৈরী করে। এগুলো থেকেই আমাদের খাওয়া-দাওয়া জীবনযাত্রা পদ্ধতিতে নেগেটিভ এনার্জি আসে। সুস্থ অবস্থাতেই রেইকি করুন অসুস্থতা এড়াবার জন্য।
ত্বক ও কেশ চর্চায় রেইকি কি কাজ করতে পারে?
আমার মুখ আমার মনের আয়না। মনের ভিতর ইরিটেশন, টেনশন থাকলে অবশ্য দ্রুত মুখে বলিরেখা পড়বে, ত্বকে বয়সের ছাপ পড়বে। রেইকি সে ক্ষেত্রে এইসব নেগেটিভ ফিলিংস দূর করে দেবে। ফলে ত্বকে একটা গ্লো আসবে। বয়সের ছাপ বা বুড়িয়ে যাওয়ার ভাব কমে যাবে। রেইকিতে একটা ইনার ক্লিনজিং হয়। ফলে ভিতর থেকে খুশি আসবে, আর খুশি হলেই আপনাকে সুন্দর দেখায়। ত্বকে যে কোনো ডিজিজের কারণ কি জানেন? ভিতরে জমা রাগ!
Kamal
Kamal Uddin
ভিতরে জমা রাগ থেকেই যত স্কিন ডিজিজ হয়। সেক্ষেত্রে রেইকি ছাড়াও বলা হয় বাথরুমে গিয়ে কাঁদা, বা কোনো একটা ফাঁকা জায়গায় গিয়ে জোরে চিৎকার করা। চুলের কোনো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই তার সূত্রটা রয়েছে লিভারে সে ক্ষেত্রে লিভারে রেইকি প্রয়োজন।
প্রসাধনে রেইকি কি সাহায্য করতে পারে?
আমাদের যেসব কসমেটিক্স আমরা ব্যবহার করি তাতে রেইকি করলে যেমন ফাংগাস বা ওই ধরণের ক্ষতিকর পদার্থ থাকলে তা সরে যাবে। এবং অবশ্যই ওই কসমেটিক্সের পোটেন্সি বাড়বে লাইফ ফোর্স এনার্জির জন্য।
গর্ভাবস্থায় কি রেইকি করা উচিত?
নিশ্চয়ই, তাতে শিশুর স্বাস্থ্য ভালো হয়। শিশু জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মায় না।
নিজে নিজে রেইকি করা যায় কি?
অবশ্যই করা যায়। ইদানীংকালে তাই রেকমেন্ড করা হয়। কারণ রোজ কারো কাছে গিয়ে রেইকি নেয়া সে এক ঝামেলার ব্যাপার। রেইকি শিখে সেলফ রেইকি করা ভালো।
রেইকি শিখতে কত সময় লাগে?
রেইকি শিখতে দু’দিন লাগে। রেইকি শেখার আগে জেনে নিন আপনি সঠিক গুরুর কাছে শিখছেন কি-না। কারণ তা’ না হলে রেইকির সব গুণ আপনি পাবেন না। আর একটা কথা, রেইকি শিখে শুধু নিজের নয় অন্যের ভালো করতে পারবেন। তবে রেইকি মাষ্টার না হলে রেইকি শেখানো যায় না। রেইকি একটি ডিভাইন লাইফ ফোর্স। রেইকি কোনো বাণিজ্যিক চাল নয়। অন্তত তা’ করে তোলা উচিত নয়।
সমাপ্ত