মহান আল্লাহতালার সকল সৃষ্টির মধ্যে মানুষই সেরা। একথা আমরা সবাই জানি। এই মানুষ কে আল্লাহতালা কিভাবে বা কোন প্রেক্ষিতে সৃষ্টি করেছিলেন তাও আমরা জানি।

আবার বিজ্ঞানের দৃষ্টি কোন থেকে মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে কি  বলা হয়েছে তাও আমরা জানি। কেহ বানর বা বানর জাতীয় প্রাণী থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের উত্পত্তি ,আবার কেহ  একপ্রকার জলজ ব্যাকটেরিয়া থেকে মানুষের উত্পত্তি বলে মনে করেন। এভাবে মানুষের উত্পত্তি নিয়ে আরো মতভেদ রয়েছে।

অতি সম্প্রতি, এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবী নয় , পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনও পরিবেশে। পরে তাদের পৃথিবীতে পাঠানো হয়। মানুষ পৃথিবীতে আসার পর থেকে তার পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে বসবাসের চেষ্টা করছে। ক্রমাগত মানুষের সংখা বৃদ্ধির সাথে সাথে পৃথিবীর পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। মানুষ সৃষ্টির এ ধারনাটি এখনও প্রমানিত সত্য নয়। তবে ধারনাটি এতই আধুনিক ও বাস্তব সম্মত যে গবেষকরা বিষয়টি নিয়ে বেশ ভাবছেন।

মার্কিন পরিবেশবিদ এলিস সিলভার তার লেখায় এ  বিষয়ে কিছু চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছেন। এলিস তার লেখা ” হিউমানস আর নট ফ্রম অর্থ : এ সায়েন্টিফিক ইভোলুশন অব দি এভিডেন্স ” বইতে দাবি করেছেন ,মানুষ পৃথিবীর জীবই নয় বরং ভিন গ্রহের প্রাণী। বহু বছর আগে ভিন গ্রহের কিছু প্রাণী পৃথিবীতে এসেছিল। তাদের জনাকয়েক মানুষ পৃথিবীতে রেখে বাকিরা নিজের গ্রহে ফিরে যায়।

এলিসের দাবি,কম মধ্যাকর্ষণ শক্তিবিশিষ্ট কোনও গ্রহেই মানুষের জন্ম। তাই পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণের সাথে মানিয়ে নিতে মানুষের বিভিন্ন কষ্ট বা প্রতিকুল অবস্থার সৃষ্টি হয়। অধিকাংশ মানুষই তার কোমর ও পিঠ বাথায় ভোগে।

এলিস তার বইতে আরো লিখেছেন,ভিন গ্রহের উন্নত প্রজাতি কে পৃথিবীতে আনা হয়েছিল তাই মানুষই এই গ্রহের সবচেয়ে উন্নত জীব। কিন্তু পৃথিবীর পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারেনি তারা। সুর্যের আলোর উত্তাপে  তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রকৃতির বুকে স্বাভাবিক ভাবে যে সমস্ত খাবার দাবার পাওয়া যায় ,তা মানুষের পছন্দ হয় না ,তাই মানুষ খুব সহজেই ক্রনিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে ।

তিনি আরো বলেন ,মানব শিশুর জন্মের সময় তার মাথাটা এতই বড় হয় যে অনেক সময় মায়েদের প্রসবকালীন বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। কখনও আবার মা ও শিশুর প্রাণহানিও ঘটে থাকে।

এলিসের দাবি ,পৃথিবীর অন্য কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা দেখা যায় না। টিকটিকির মত বেশ কিছু সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী দিনের পর দিন রোদে থাকলেও তাদের ত্বকে কোনও ক্ষতি হয় না। অথচ মানুষ কয়েকদিন টানা সানবাথ (সুর্য স্নান )নিলে ,অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার ত্বকে সমস্যা দেখা দেয়।

এমনকি মানুষের বডিক্লক দিনে ২৫ ঘন্টার ভিত্তিতে তৈরী। পৃথিবীর সময়ের সাথে তা মেলে না বলেই প্রায়ই মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে।মানবজাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এমন ভুটি ভুরি ভুরি প্রমান মিলবে বলে এলিস  মনে করেন।

কিন্তু উন্নত প্রজাতির মানুষকে তবে হঠাথ  করে কম উন্নত গ্রহে এনে ছেড়ে দেয়া হলো কেন ,এমন প্রশ্নের জবাবে এলিস বলেন,”পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব অনেকটাই দীপান্তরে নির্বাসনের মতো। ভিন গ্রহের প্রানীদের কাছে পৃথিবী অনেকটা  জেলখানার মতো। প্রকৃতিগত ভাবে মানুষ হিংস্র। তাই সঠিক আচার-আচরণ শিখতেই পৃথিবীতে নির্বাসনে পাঠানো হয় তাদের। “

এলিস সিলভারের মতবাদ নিয়ে আলোচনা আপাতত এখানে স্থগিত রাখছি।  মানুষ সৃষ্টি ও তাকে পৃথিবীতে প্রেরণের বিষয়ে ধর্মগ্রন্থে কি বলা হয়েছে সেটা স্মরণ করা যেতে পারে। আমাদের মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআন মজিদ,ইহুদি দের ধর্মগ্রন্থ তাওরাত ও বাইবেল গ্রন্থেও  বলা হয়েছে যে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র মাটি থেকে আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আ) ও বিবি হওয়া কে সৃষ্টি করেন এবং তাদের বেহেশতে বসবাস করার সুযোগ দেন। তারা বেহেশতের ঐ সুন্দর পরিবেশে বসবাস করবে এবং শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে তারা মহান আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করবে এটাই ছিল মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য।

এর পরে হজরত আদম(আ) ও বিবি হওয়া একসময় শয়তানের প্ররোচনায় নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে আল্লাহ তায়ালার আদেশ লঙ্ঘন করেন। তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের বেহেশতের ঐ সুন্দর বাসস্থান বা পরিবেশ থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন। মানুষ ছিলো চির সুখময় বেহেস্তে যার পরিবেশ পৃথিবীর পরিবেশের থেকে অনেক উন্নত।

কিন্তু যেহেতু শাস্তি দেবার বা তার পাপ মোচনের জন্য তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে সেহেতু  পৃথিবীর আবহাওয়া বসবাসের উপযোগী হলেও মানুষের জন্য পুরাপুরি ফিট না।

উপরিউল্লিখিত সকল উদহরণই এ ধারণা আরো বদ্ধমূল করে যে মানুষের জন্ম এই পৃথিবীতে নয়। অন্য কোথাও। আর ইসলাম ধর্ম বা অন্য কয়েকটি ধর্মগ্রন্থে  তো সেবিষয়ে পরিষ্কার বলাই আছে। পরিবেশবিদ এলিসের মতবাদও ধর্মীয় তত্তের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেছে। কাজেই শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞান কি সাতপাক ঘুরে অবশেষে ধর্মের মতবাদের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে না ?

(লেখাটির তথ্য উপাত্ত বিভিন্ন অনলাইন ও  সাপ্তাহিক পত্রিকা সূত্রে সংগৃহীত )

.

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন