“বউ ” শব্দটির উত্পত্তি কোথায় এবং কি ভাবে জানি না। বউ বা স্ত্রী বা অর্ধাঙ্গিনী বা জীবন সাথী যাই বলি না কেন তারা আমাদের সামাজিক জীবনের অন্যতম প্রধান পরিপূরক। বউ নিয়ে অনেক কিছু বলার আছে। অনেকে বিষয়টি এড়িয়ে যান ,অনেকে গর্ব করে প্রচার করেন আবার অনেকে বউ নিয়ে কিছু বলতে ভয় পান। ব্যাক্তি বিশেষে বউদের নিয়ে প্রচার প্রকাশের ধরনও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। আজ্ আমি বউদের নিয়েই লিখব।
সামাজিক ও ধর্মীয় মতে বউ বা স্ত্রী জীবন সঙ্গিনী। তাই বউ এর সাথে যে কোনো মূল্যে সুসম্পর্ক থাকতে হবে।থাকতে হবে যথাযথ সমঝোতা। তা না হলে সারা জীবনই বৃথা। এটা না থাকলে যেন বিবাহিত জীবনের কোনো অর্থ নেই। এখন কথা হলো আমরা কয়জন বউ নিয়ে সুখী? কয়জন বউদের যথাযথ মর্যাদা দেই? প্রায় সব পরিবারেই এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে যা অতান্ত তিক্ত ও অবমাননাকর বা আপত্তিকর। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ব্যাক্তির জীবনের অনেক অপূর্ণতা থাকে ,বার্থতা থাকে,নিজেকে নিয়ে দ্বিধাদ্বন্ধে ভোগেন ,তাদের মধ্যে অনেকের বউকে ছোট করে দেখার প্রবণতা রয়েছে। আবার বউ যদি স্বামীর থেকে বেশি বেতন পান,সামাজিক পরিমন্ডলে ক্ষমতাবান হন তখন এক ধরনের হিংসাত্মক মনোভাব কাজ করে স্বামীর আচরণে।হান্টিং টন পোস্ট এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ,বউ যদি রান্না করতে না পারেন,গাড়ি চালাতে না পারেন বা বিষয়ে দক্ষ না হন তবু ও তাকে নিয়ে রসিকতা করা ঠিক নয়। এতে বিবাহিত জীবনের ভার সাম্য নষ্ট হয়। বউদের মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো ভালো গুন আছে ,সেটা খুঁজে দেখতে হবে।
সংসার জীবন কে উপভোগ্য বা আনন্দ ময় করে উপভোগ করতে হলে পারস্পরিক শ্রধা বোধ থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টাটাই বেশি দেখা যায়। অনেক সময় আমরা এমন সব বিষয়ে বউদের নিয়ে কথা বলি যা কিনা তার জন্য প্রচন্ড কষ্টের কারণ। অনেক স্বামী মনে করেন জীবন কে আনন্দময় করতে একটু রসিকতা করলে কষ্টের কি আছে ? কিন্তু আমরা ভেবে দেখি না যেটা আমাদের আনন্দের কারণ সেটা বউদের জন্য কষ্ট বা অপমানের কারণ। দু একটি উদাহরণ দিলে এ জাতীয় ঘটনা আরো পরিষ্কার হবে। দেখা গেল কোনো দাওয়াত বা সামাজিক অনুষ্ঠানে স্বামী তার বউকে উদ্দেশ্য করে বললেন, দেখেছ ,এই ভাবির রান্না কি রকম ? তার কাছে হাতে খড়ি দাও যদি কিছু শিখতে চাও। এখানে স্বামী সাহেব একবারও ভাবলেন না লোকজনের মাঝে তার বউ কি পরিমান ছোট হয়ে গেল বা কতটা অপদস্ত হলো। আবার হয়ত দেখা গেল বাড়ি ভর্তি লোকদের সামনে স্বামী তার বউকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ও তো অফিস বসে বসে থেকে ফুলে মত হয়ে যাচ্ছে। ঘরের কাজ একম কিছু করলে স্বাস্থ্য একটু কমতো। এছাড়া,কোনো অনুষ্ঠানে গেলে ,অন্য কোনো মহিলাকে দেখে হয়তো তার বউকে বললেন,দেখে দেখে শেখো কিভাবে মানুষের সাথে কথা বলতে হয়, কিভাবে সাজ গোজ করতে হয়। এ ভাবে জেনে যা জেনে প্রতিনিয়তই আমরা অনেকেই বউ দের অপমান করে থাকি। স্বামীর এ ধরনের ব্যবহার তার বউকে লোকসমাজে যেমন হেয় করে সাথে সাথে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক নষ্ট হয় ও পারস্পরিক দুরত্ব বেড়ে যায়।
দি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ,স্ত্রীরা সব চাইতে কষ্ট পান যখন স্বামী তার দুর্বল কোনো জায়গা নিয়ে অন্যের সামনে এ বিষয়ে কিছু বলেন। এসব তাদের কাছে স্বামীর নিস্ঠুর আচরণ মনে হয়। অনেক স্বামী এটাকে আড্ডায় নিজেকে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু তে আনতে এ ধরনের বিষয়ের সূত্রপাত করেন। এসব আচরণ করে আমরা এটা কখনও ভেবে দেখি না যে এতে আমরা নিজেরাও অন্যের কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছি। স্ত্রী তার স্বামীর এ আচরণ নিয়ে তাত্ক্ষণিক কিছু না বললেও বাসায় এসে স্বামীর সাথে হয়তো ঝগড়া ঝাটি বা কথা কাটাকাটি করেন। ছেলে মেয়েদের সামনে স্বামী স্ত্রীর এসব আচরণ তাদের উপর মা বাবার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি করে। নষ্ট হয় পারস্পরিক সমঝোতা ও পারিবারিক সুখ শান্তি। সামাজিক জীবনে রসিকতার অবশ্যই প্রয়োজন এবং তা করবেনও। কিন্তু তা একে অপরকে কষ্ট দিয়ে বা ছোট করে নয়।
অবশ বউএর সাথে স্বামীর এ ধরনের আচরণের বিপরীত চিত্রও দেখা যায়। স্বামী বউকে যান প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন। বউএর কোথায় ওঠেন বসেন। শুদ্ধ ভাষায় এটাকে ‘স্ত্রৈণ’ বলা হয়। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের এদিক নিয়ে পরে লিখবো আশাকরি।