ফ্লোরিডা থেকে:-

জানোছ ,আমার একটা ঘোড়া আছিল , কালো মিশমিইশ্যা শরীল, ইয়া বড় ,বারো হাত লম্বা আট হাত উঁচা। অর চামড়ায় ঘি চকচক করতো,এত সুন্দর ! বড় বড় দুটো চোক্ষু আর ঘাড়ে কালো মখমলের মত চুল, দৌড়াইলে ওই চুলগুলো উড়তো । অর চার পায়ের খুরের একটু উপরে কে যেন আদর কইরা চাইরটা সাদা রুমাইল বাইন্দা দিছিল। মাথায় দুই চক্ষুর মাঝখান দিয়া নাক পর্যন্ত নাইম্মা গেছিল সাদা রাজার তিলক। আহ্ যেন দুল দুল ঘোড়া । আমি অর শরীর ব্রাশ কইরা দিতাম ,আর ও বড় বড় চোক্ষু কইরা চাইয়া থাকতো । ও অর মা’র কথা ভাবতো , কারন অই সময় আমি অর চক্ষে-মুখে এমুন একটা অদ্ভুত আলো দেখতে পাইতাম, ওই আলো খালি মা’র কথা ভাবলেই দেখা যায়। আমি যহন মা’র কথা ভাবি তরে কি কমু আমির হোসেন , কইলজাডা ফাইট্টা যায়।
তর কি আমার মা’র সাথে দেহা অয়? না দেহা অইলেও তুই তারে চিনবিনা, তুই যহন গেলিগা হে কত সুন্দরী আছিল। তার পরে রোগে ভুইগ্গা ভুইগ্গা চেহারাডা তো বদলাইয়া গেছে গা। তুই তারে চিনবিনা, মরনের আগ দিয়া আমারই খালি মনে হইতো এইডা আমার মা অইতে পারেনা। আসলে তো হে আমার মা-ই আছিল।

আমি ওই ঘোড়াডার দিকে তাকাইয়া তাকাইয়া ভাবতাম, ও এত বড় একডা প্রানী আর আমি এত ছোট্ট ,একডা লাত্থি দিলে দশ মাইল দূরে যাইয়া পড়ুম অথচ কেমনে মাথাডা নোয়াইয়া দেয় আমার আদরের লাইগ্যা। তহন সত্যিই আমার নিজেরে মানুষ বইল্যা ভাবতে খুব ভালো লাগেরে,
না মেকি মানুষ না ,এক্কেবারে আসল একজন মানুষ।
আচ্ছা আমির হোসেন তুই কখনও সত্যিকারের মানুষ দেখছস ? অরা কেমন দেখতে? আমগো মতন?

আমি একবার আমার ঘোড়ার কাঁন্দে চইড়া বইলাম ,ও আমারে লইয়া খুশীতে এমন দৌড় দিল, ডরে কইলজাডা কে যেন্ যাইত্তা ধরলো। তারপরে অইল কি, চামড়ার যে বেল্টডা দিয়া ঘোড়ার জীনডা বান্দা আছিল অর পেডের লগে, পটাস কইড়া ছিঁড়া গেল, কি ভয়ন্কর ব্যাপার ! ঘোড়ার থাইক্যা পইড়া কত মানুষ ঘাড় মচকাইয়া অবশ অইয়া গেছে ! কিন্তু আমার ঘোড়াডা এমন ভাবে একটা মোচর দিল যে আমি পড়লাম সাইডে, মনে হইল আমার কয়ডা হাড্ডি ভাইঙা গেল , কিন্তু জানছ আমার কিচ্ছু অয় নাই। কিন্তু আমি ভয় পাইয়া মুইত্যা দিছিলাম।

নারে আমির হোসেন , দুল দুল ঘোড়ায় চড়নের কপাল কি আমার আছে ? আমি তো সাধক না ,আমি অইলাম
দশজন অন্ধ দিগম্বরের এক নম্বর দিগম্বর!
লেহা পড়া করতে পারি নাইরে, আমির হোসেন, অথচ স্কুলে ফার্স্ট বয় আছিলাম। খুব ভালো রেজাল্ট করবার কথা আছিল বোর্ডে। হেড স্যারে কইলো তার মাইয়্যারে একডু লেহা পড়া করাইয়া দিতে ,হে ও পরীক্ষা দিব। কিন্তু কি অইতে কি অইয়া গেল, পরীক্ষা আর দিলামই না। মনে অইল এই পড়া লেহা কইরা কি অইব অরে যদি না-ই পাইলাম। পাগল আছিলামরে, নির্বোধ আছিলাম। তাই তো দালাল ধইরা,কত বন জঙল ঘুইরা, খাইয়া না খাইয়া থাইক্যা, পুলিশের গুতা খাইয়া, ইন্দুরের মতন ১০-১৫ জন এক রুমে থাইক্যা, শেষে একডা বিদেশী মাইয়্যারে বিয়া কইরা কাগজ পত্র অইছে।

ভালোই আছি রে আমির হোসেন, ভালোই আছি ।বত্রিশ বচ্ছর পরে দেশে আইছি, তর কব্বর দেইখ্যা গেলাম। চুল তো পাইক্কা গেছে । আর যদি দেহা না অয়!

কুত্তা বিলাই হাঁস মুরগী গরু গাধা ঘোড়া মাইনসের চাইতে ভালো। ওরা ট্যাকা চায়না,উপদেশ দেয়না,ধর্ম কর্ম লইয়া মাতেনা, ডাক দিলে কাছে আহে আর ঘাড়ডা বাড়াইয়া আদর চায়। আদর দিলে জানডা দিয়া দেয় । অথচ হালায় মানুষ ,খালি কথা কয় ,খালি প্রতিশ্রুতি দেয় যা চেডের বাল কোন কামেই আহেনা।

শাহাব আহমেদ
জুন ৭-৮,২০১৬

LikeShow more reactions

Comment

 

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন