বিবেক মানুষের অভ্যন্তরীণ অনুভূতি যা ন্যায়- অন্যায়ের নির্দেশিকা হিসাবে কাজ করে। এটি নিজের আচরণ বা চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ, পাশাপাশি সঠিক কাজ করার বা ভাল হওয়ার বাধ্যবাধকতার অনুভূতি; ব্যক্তিগত দৈনন্দিন জীবনে নৈতিকভাবে কাজ করতে বাধ্য করে, অন্যের কষ্ট এড়াতে বা উপশম করতে সহায়তা করে; অন্যদিকে সামাজিক পরিবর্তন এক সমাজ থেকে অন্য সমাজ এবং দেশ ও জাতির পরিবর্তন করে। সঠিক যত্নের অভাবে জমিতে ভালো ফসল হয় না, ঘরের খুঁটি যদি দুর্বল হয়, সে ঘর বেশিদিন টিকে না। সৎ ও সঠিক নেতৃত্বের অভাবে একটি জাতি ও ভালোভাবে বেড়ে উঠে না ।
আমরা ছোটকালে “চরিত্র” রচনা মুখস্ত করে পরীক্ষার খাতায় লিখতাম। ” অর্থ হারিয়ে গেলে কিছুই নষ্ট হয় না, স্বাস্থ্য হারিয়ে গেলে কিছু হারিয়ে যায়, চরিত্র হারিয়ে গেলে সবকিছু হারিয়ে যায়। ” “চুরি করা পাপ ” আদর্শলিপি বইতে ছোট সময়ে পড়েছি। ঘরে সিঁদ কেটে ধান চাল , সোনাগহনা, চুরি করে ;বাজারে ভিড়ে বা বাসে পকেটমার টাকা চুরি করলে আমরা চোর বলি। এ সব লোক পেটের দায়ে ঠুনকো চুরি করে; কেউ কি সাদে সিঁদ কাটতে বা পকেট মারতে যায় ? আমরা চোরকে চোর চোর বলে মারধর করে থানায় পাঠাই। কিন্তু আমাদের শিক্ষিত সমাজে লোকজন স্যুট টাই পরে অফিসে চাকুরী করে একদিকে বেতন ,অপরদিকে দুর্নীতি করে রাতারাতি বড়ো লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। এ সব লোকদের আমরা চোর বলি না ; বরং দাঁড়িয়ে সম্মান করি, এদের ক্ষমতার জন্য চোখ বুজে আমরা নীরবে সব কিছু সহ্য করি। এই হলো আমাদের তৃতীয় বিশ্বের সামাজিক ব্যবস্থা। আমাদের সামাজিক বিবেক জটিল, বহুমুখী যা ঘুনেধরা শিক্ষা, সমাজ ব্যবস্থা এবং অভিজ্ঞতার মতো বিভিন্ন কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয়।
সামাজিক সুষ্ঠ বিবেক বিকাশের সঠিক সময় অনুমান করা কঠিন। সমাজে সরকার ও জনগণের যৌথ উদ্যোগে সামাজিক পরিবর্তন ধীরে ধীরে আসতে পারে। অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলির সামাজিক অবস্থা একসময় আমেরিকার মতো উন্নত দেশে ও ছিল। ১৯৬০ এর দিকে কৃষ্ণ আমেরিকানদের ভোটের অধিকার ও ছিল না। মার্টিন লুথার কিং (জুনিয়র ) এর মতো অনেকেই সামাজিক পরিবর্তনের জন্য নিজেদের জীবন দিয়েছেন । কৃষ্ণ আফ্রিকানদের পণ্যের মতো এক সময় কেনাবেচা হতো, তাদের ক্রীতদাস হিসাবে ব্যবহার করা হতো। বহুদিন হয় এই ক্রীতদাস প্রথা উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং ধীরে ধীরে পরিবর্তন এসেছে। কোনো কিছুই সহজে পরিবর্তন হয় না , তার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।
অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের সামাজিক বিবেক একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া যা আমাদের চারপাশের বিশ্বের সাথে আত্ম-প্রতিফলন, সহানুভূতি এবং সক্রিয় সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। প্রথমে সমাজে বিদ্যমান সমস্যাগুলি সনাক্ত করা এবং তাদের সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন । ব্যক্তি বা সামাজিক পরিস্থিতি এবং প্রতিশ্রুতির বিভিন্ন স্তরের উপর নির্ভর করে এই প্রক্রিয়াটি কয়েক বছর বা এমনকি কয়েক দশক সময় ও নিতে পারে।
সামাজিক বিবেক গড়ে তোলা একটি চলমান যাত্রা যার জন্য ধৈর্য, অধ্যবসায়, সু-শিক্ষা এবং বেড়ে ওঠার ইচ্ছা প্রয়োজন। এটি এমন কিছু নয় যা রাতারাতি অর্জন করা যেতে পারে, বরং ন্যায়সঙ্গত সামাজিক বিবেক তৈরির আজীবন প্রচেষ্টা। উন্নত বিশ্বের দেশগুলিতে আজীবন চেষ্টা করে সামাজিক পরিবর্তন এনেছে। আমাদের ভালোভাবে বেঁচে থাকতে হলে চারিপার্শের সামাজিক অবস্থার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে হবে -তবেই আমাদের সামাজিক পরিবর্তন আসবে।
সমাপ্ত