যুগে যুগে পৃথিবীতে বিশেষ মেধা নিয়ে কিছু মানুষ এসেছে  যাদের সৎ ও একনিষ্ট  প্রচেষ্টার   মাধ্যমে  জাতিকে  আলোর পথ দেখিয়েছে  ।  এ সব মানুষ মরিয়া ও অমর;  এরা মানুষের মাঝে চিরস্বরণীয় হয়ে বেঁচে আছে  এবং  ইতিহাস থেকে এদের নাম কখনও মুছে ফেলা যায় না। আবার কিছু নেতার ভুল সিদ্ধান্ত ও  ধংসাত্বক কার্যকলাপে  জাতি বা গুষ্ঠি  সীমাহীন দুঃখ কষ্ট  পায়; এদের নাম  ও কুখ্যাত ব্যক্তিদের খাতায় লেখা থাকে।  কোনো নেতা বা নেতাদের  ক্ষমতার লোভ, দুর্নীতি,অত্যাচার,  ভুল সিদ্ধান্তে যে কোনো   জাতিকে বিপথে  পরিচালিত  করে।  নেতার সৎ চিন্তা ও সৎ কাজের মাধ্যমে দেশের মানুষের মুখে হাঁসি ফোটে। 

এশিয়া এবং আফ্রিকার  অনেক দেশেই লাখ লাখ মানুষ যুদ্ধবিগ্রহে নিরাপত্তাহীনতায় তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এবং বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের মতো পরিস্থিতি দুটি উদাহরণ মাত্র। সুদানের সংঘাতের কারণে দেশটির অভ্যন্তরে ৩৪ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যারা সুদান থেকে পালিয়ে গেছে তারা মিশর, লিবিয়া, চাদ, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র,  এবং ইথিওপিয়াসহ এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে আশ্রয়হীন অবস্থায় রয়েছে।  

নিম্নে লিবিয়ায় মোয়ামার গাদ্দাফির সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে কিছু আলোচনা করা হলো :

১৯৬৯ সনে লিবিয়ার নেতা কর্নেল মোয়ামার  গাদ্দাফি  তাঁর দেশের রাজতন্ত্র বিলোপ করে ক্ষমতায় এসেছিলেন; সে সময় এই মরুভূমি দেশের লোকসংখ্যা মাত্র  ২ মিলিয়ন ছিল।   তিনি লিবিয়াকে  ৪২ বৎসর নেতৃত্ব দিয়ে  একটা ধনী দেশ করেছিলেন,  যার   ৯০%   সাহারা  মরুভুমি। ১৯৬৯ সনে  মাথাপিছু আয়  ছিল  ১,০১৮ ডলার এবং তাঁর সময়   মাথাপিছু আয়  ১১,০০০  ডলার । লিবিয়াকে আফ্রিকার মধ্যে একটি উন্নয়নশীল  দেশ  বলা হতো। পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার ও বিভিন্ন পেশার লোক ওই দেশে কাজ করে দেশে রেমিটেন্স পাঠাতো। আমাদের বাংলাদেশ থেকে ও বিভিন্ন পেশার লোক এই দেশে বহুদিন কাজ করেছে।   

গাদ্দাফি তাঁর এই দীর্ঘ শাসনামলে দেশে অনেক কাজ করেছেন: তন্মধ্যে ” মানবসৃষ্ট মহান নদী (Great man made river) বৃহত্তর কাজ, যাকে বলা হয় পাইপের নেটওয়ার্ক, মরুভূমির দেশ  লিবিয়া জুড়ে  জল সরবরাহ করেছেন । ১৬০০  কিলোমিটার দীর্ঘ  মরুভুমি  অতিক্রম করে,দেশের মিঠা পানি ৭০%  জনগণের চাহিদা পূরণ করেছেন ।

১৯৬৯ সাল থেকে ২০১১ সালের শুরু পর্যন্ত, লিবিয়ার রাজনীতি কার্যত মুয়াম্মার গাদ্দাফি দ্বারা  পরিচালিত  হয়েছিল। গাদ্দাফি ১৯৫১-পরবর্তী লিবিয়ার সংবিধান বিলুপ্ত করেন এবং ১৯৭০-এর দশকে প্রকাশিত তার সবুজ বইয়ের(Green book) উপর ভিত্তি করে তার নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শন প্রবর্তন করেন। তাঁর রাজনীতির মতাদর্শ এই বইতে দেখানো হয়েছিল এবং যা স্কুল ,কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হতো।  লিবিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থা তত্ত্বগতভাবে গাদ্দাফির  গ্রিন বইয়ের রাজনৈতিক দর্শনের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা সমাজতান্ত্রিক ও ইসলামী তত্ত্বগুলিকে একত্রিত করে এবং সংসদীয় গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রত্যাখ্যান করে এক নায়কত্ব শাসন ব্যবস্থা চালু করেন।  

লিবিয়া ১৯৬১  সনে   তেল উৎপাদন  শুরু করে  এবং ১৯৬৫ সালের মধ্যে লিবিয়া বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম তেল রফতানিকারক দেশ পরিচিতি লাভ করে ।   

গাদ্দাফির আমলে কোনো ব্যক্তি বা ব্যাক্তিবর্গ বা ভিন্ন মতাদর্শের কোনো রাজনৈতিক দল তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে নি।  তিনি এক নায়কত্ব কায়েম করে দেশ পরিচালনা করেন ।  তবে তাঁর শাসনামলে দেশের লোক সুখশান্তিতে ছিল। মানুষের বাক স্বাধীনতা না থাকলে,শুধু খেয়েদেয়ে ভালো থাকলেই সুখী হয় না। গণতন্ত্রের মাধ্যমে একটা জাতি মত প্রকাশের স্বাধীনতা পায়,আর এই স্বাধীনতা না থাকলে, নিজ দেশে জনগণ পরাধীন।   

মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে কেন হত্যা করা হয়েছিল?  বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তার উত্তরাধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং অনেকে ভাবছে যে তিনি একজন স্বৈরশাসক  নায়ক ছিলেন, দেশের লোক তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার ছিল না।  যারাই তাঁর বিরুদ্ধেই কথা বলতে গেছে,তারাই জেল,ফাঁসির স্বীকার হতে হয়েছে। 

আবার অনেকের মতে  মুয়াম্মার গাদ্দাফি একজন সত্যিকারের আফ্রিকান হিরো ছিলেন, আফ্রিকান অখণ্ডতার রক্ষক এবং আফ্রিকান ঐক্যের যোদ্ধা ছিলেন। আফ্রিকা রাতারাতি উন্নত দেশগুলির কাতারে চলে আসবে এটা অনেক দেশ সহ্য করতে পারতো না।  তবে আর যাই হোক না কেন, দেশের মানুষের বাক স্বাধীনতা ছিল না ।   

ব্রিটিশ শাসন শেষ হওয়ার প্রাক্কালে প্যালেস্টাইন  ভূখণ্ডকে ইসরাইল ( ইহুদি )রাষ্ট্র হিসাবে মে ১৪,১৯৪৮ ঘোষণা করে;  প্যালেস্টাইনের নেতা ইয়াসির আরাফাত ও প্যালেসটিন বিতাড়িত মুসলমান এই রাষ্ট্রের বিরুধিতা করে;সে সময় আরাফাতকে  সন্ত্রাসী  হিসাবে পশ্চিমা দেশগুলি চিহ্নিত করা হতো। যেহেতু মোয়ামার গাদ্দাফি ইয়াসার আরাফাতের সঙ্গে ঘনিষ্ট ছিলেন, তাই তাঁকে  ও সন্ত্রাসী হিসাবে ধরা হতো।  ১৯৮৬  সনে আমেরিকা গাদ্দাফিকে শাস্তি দেয়ার জন্য তাঁর রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করে।  গাদ্দাফি প্যালেসটিন এর ইয়াসির  আরাফাতকে আর্থিক  সহযোগিতা ও  সমর্থন করতেন যা পশ্চিমা দেশগুলি এক সময় পছন্দ করতো না। আরাফাত ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্যালেসটিন জনগণের দাবি নিয়ে সারা জীবনই সংগ্রাম করেছেন। আরাফাত  পশ্চিমা বিশ্বে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং পশ্চিমা দেশগুলির সাথে তার সম্পর্ক প্রায়শই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল;এর অন্যতম কারণ ছিল পশ্চিমা বিশ্বের দৃষ্টিতে   সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা।  এই একই কারণে গাদ্দাফি ও পশ্চিমা দেশগুলির নিকট সন্ত্রাসী বলে সমালোচিত ব্যক্তি ছিলেন।   দেশের জনগণের জন্য গাদ্দাফি অনেক ভালো কাজ করেছিলেন ; অনেকের ধারণা  গাদ্দাফির  এ ভাবে মৃত্যু দেশের জন্য ভালো কিছু নিয়ে আসে নি; বরং ওর মৃত্যুতে দেশে বিশৃঙ্খলতা এনেছে। গাদ্দাফি ৪২ বৎসর লিবিয়া তে স্বৈরতান্ত্রিক সরকার পরিচালনা করলে ও অনেক জনহিতকর কাজ করেছে।  

নিম্নে  মোয়ামার গাদ্দাফির  কিছু ভালো কাজের বিশ্লেষণ করা হলো :

১ )  মোয়ামার গাদ্দাফির সময়  লিবিয়ার জনগণ  কোনও বিদ্যুৎ বিল দিতে হতো না ,  সমস্ত নাগরিকের জন্য বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দেয়া হতো।  

২ )লিবিয়ার ব্যাংকগুলি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং দেশের  সমস্ত নাগরিককে দেওয়া ঋণ আইন দ্বারা 0% সুদে দেওয়া হতো । ঋণের টাকা সহজ কিস্তিতে আদায় করা হতো এবং কেউ অপারগ হলে রাষ্ট্র মাফ করে দিতো।  

৩) লিবিয়ায়  বাসস্থানকে একটি মানবাধিকার হিসাবে বিবেচনা করা হত, এবং কার্যত কোনও গৃহহীন লিবীয় রাস্তাঘাটে বা আশ্রয়হীন ছিল না।    গাদ্দাফির অধীনে লিবিয়া পুরোপুরি নারকীয় ছিল না, যেমনটি বিশ্বকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করা হয়েছে এবং বাক স্বাধীনতা না থাকলে ও নাগরিকদের জীবনযাত্রার উচ্চ মান ছিল। গাদ্দাফি অঙ্গীকার করেছিলেন যে ” লিবিয়ার প্রত্যেকের কাছে একটি বাড়ি না থাকা পর্যন্ত তাঁর   বাবা-মা একটি বাড়ি পাবেন না। ” 

৪) লিবিয়ার প্রতিটি  নব-দম্পতিকে  প্রথম অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য সরকার  বিনা শর্তে  ৫০,০০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ  লিবিয়ান মুদ্রা অনুদান দেওয়া হতো ।

৫) লিবিয়ায় প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা  বিনামূল্যে দেয়া হতো । গাদ্দাফি ক্ষমতায় আসার পূর্বে  লিবিয়ার মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ লেখাপড়া জানতো। গাদ্দাফি এই শিক্ষা ব্যাবস্থাকে সার্বজনীন করে দেয়ার ফলে  বর্তমানে এ হার দাঁড়িয়েছে ৮৩ শতাংশে। যদি  নাগরিকরা লিবিয়ায় তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা বা সুবিধা না পায়, সে ক্ষেত্রে  সরকার তাদের বিদেশে যাওয়ার জন্য অর্থায়ন করতো । দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থাকে উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করে গাদ্দাফি তাঁর দেশের ছেলেমেয়েদের বিদেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশে  এনে কাজে লাগিয়ে  দেশকে উন্নয়নমুখী করে নিয়েছিলেন।    

৬) গাদ্দাফির সময়  লিবিয়ানরা কৃষিকাজ প্রাধান্য দিয়ে উৎপাদনের নিমিত্তে  খামার জমি, সরঞ্জাম, বীজ এবং গবাদি পশু খরিদ করার জন্য সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে অর্থ পেতেন।

৭)  লিবিয়ানরা তাঁর সময়  বিনামূল্যে চিকিৎসার  সুবিধা পেতো,   যাতে দেশের মানুষ সু-চিকিৎসা পায়  ; দুরারোগ্য চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষকে সরকারি খরচে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সুবিধা দেয়া হতো ।  

৮) গাদ্দাফির সময়  যদি কোনো লিবিয়ান গাড়ি খরিদ করতো ,  সরকার  দামের ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেয়ার নিয়ম ছিল।

৯) লিবিয়ায় কোনো গাড়ির মালিক পেট্রোলের জন্য কিছুই দিতে হতো না,যার যা খুশি  বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে পারতো।  

১০) গাদ্দাফির  সময়  লিবিয়ার কোন বৈদেশিক ঋণ ছিল না  এবং দেশের  রিজার্ভের পরিমাণ ১৫০ বিলিয়ন ডলার যা বর্তমানে বিদেশী ব্যাংকে হিমায়িত।

১১ ) যদি কোনও লিবিয়ান পড়াশুনার শেষে  চাকরি পেতে অক্ষম হতো, রাষ্ট্র  বেকারত্ব ভাতা  প্রদান করতো  যে পর্যন্ত  কর্মসংস্থান না হয়।  

১২ ) লিবিয়ার তেল বিক্রয়ের একটি অংশ সরাসরি সমস্ত লিবিয়ার নাগরিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হতো যাতে জনগণ পরিবার নিয়ে সুখে থাকতে পারে।  

১৩) গাদ্দাফির সময় সন্তান জন্ম দানকারী  মা  মাতৃত্বকালীন ভাতা ৫,০০০ মার্কিন ডলারের সম-পরিমান  লিবিয়ান মুদ্রা  পেতেন।  

অনেকের মতে গাদ্দাফি আফ্রিকার একজন সেরা নেতা ছিলেন। দেশের মানুষের জন্য এত কিছু করার পর ও দেশের লোক কেন তাঁকে পছন্দ করতেন না ? কিছু  কারণ  নিম্নে বর্ণনা করা হলো :

১ ) লিবিয়ার বিপ্লবকারীদের মতে গাদ্দাফি একজন স্বৈচারী নেতা ছিলেন।  কেউ তাঁর সমালোচনা করুক তা তিনি পছন্দ করতেন না। ১৯৭৪ সালের ৯ নভেম্বর এক ভাষণে গাদ্দাফি বলেছিলেন- “আমি যে কোনো মুহূর্তে তাদের গণআদালতে পাঠাতে পারি; গণআদালত  আইনের উপর ভিত্তি করে মৃত্যুদণ্ড জারি করবে, যদি কোনো ব্যাক্তি বা গুষ্ঠি   রাজনৈতিক দল গঠন করে, তার বা তাদের ভাগ্যে মৃত্যুদণ্ড ” ।  লিবিয়ার জনগণের বাকস্বাধীনতা ছিল না ,অপরদিকে আরব বিশ্বের জনগণ আজকাল  রাজতন্ত্র বা স্বৈচারী সরকার চায় না।  তারা দুনিয়ার সবার মতো স্বাধীন হতে চায়।  ১৯৭৬ সালে গাদ্দাফির বিরুদ্ধে ব্যার্থ অভ্যুর্থানের ফলে   বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক   এবং কিছু  সরকারি কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন। 

২ ) ১৯৮৪ সালের মে মাসে দেশের  ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার ফলে হাজার হাজার লোককে কারারুদ্ধ করা হয় এবং বহু লোককে  মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।  

৩) অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, লিবিয়া সরকার “গণ নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক, “গুম”, নির্যাতন এবং মৃত্যুদণ্ড” চালু করেছিল। দেশে কেউ  গাদ্দাফির বিরুদ্ধে কোনো রকম সমালোচনা করলে তাকে বা তাদেরকে চরম মূল্য  দিতে হতো।  

৪  ) ১৯৯৬ সালের গণহত্যা : মোয়ামার গাদ্দাফি দেশের আবু সেলিম কারাগারে ১২০০ জন কয়েদি বিনা কারণে হত্যা করে  এবং তার খবর নিজ নিজ পরিবারকে সময়মতো জানানো হয় নি, এবং এই হত্যাকান্ড সে সময় সরকার অস্বীকার করেছে ।

অবশেষে ২০০৪ সালের এপ্রিলে গাদ্দাফি স্বয়ং বলেছিলেন যে সেখানে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এবং বন্দীদের পরিবারের কী ঘটেছে তা জানার অধিকার রয়েছে। কিন্তু কিভাবে কারাগারের  এত এত লোক হত্যা করা হয়েছিল, ঘটনার কোনও আনুষ্ঠানিক বিবরণ পাওয়া যায়নি। 

দেশের  জনগণ  : মোয়ামার  গাদ্দাফি এবং তাঁর সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক কার্যকলাপের দরুন অতিষ্ঠ হয়ে বিপ্লব করে শেষ পর্যন্ত তাঁকে হত্যা করে।  ইতিহাসে এই জাতীয় হত্যাকান্ড বিরল।  

লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে মুয়াম্মার  গাদ্দাফির সশস্ত্র বাহিনী বহুদিক থেকে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্গন করেছে বলে  অভিযোগ রয়েছে  । এসব লঙ্ঘনের মধ্যে রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যা, জাতিগত নিধন  এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বোমা হামলা।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের  প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে “আল-গাদ্দাফি বাহিনী যুদ্ধাপরাধ এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন সহ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের  গুরুতর লঙ্ঘন করেছে, যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দিকে ইঙ্গিত করে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে অসংখ্য নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীকে হত্যা ও আহত করেছে; প্রতিপক্ষ ও সমালোচকদের জোরপূর্বক গুম ও নির্যাতন  এবং নির্বিচারে অসংখ্য বেসামরিক নাগরিককে আটক করেছে।  

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে গণতন্ত্র, জবাবদিহিতা  না থাকার দরুন অনেক দেশে-ই  সময়  সময় গণ-  বিপ্লব দেখা দিয়ে   থাকে; এ বিপ্লবকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সরকার ভাড়াটিয়া বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে গণহত্যার মতো জঘন্য কাজ করে এবং অতীতে যে ভালো কাজটুকু করে, তাও মুছে যায়। বিপ্লবের ফলে নিরীহ জনগণের দুঃখ দুর্দশা চরমে পৌঁছে।  এ ভাবেই পৃথিবীর গরিব দেশগুলির জনগণ দিনের পর দিন না খেয়ে  এবং বেঁচে থাকার তাগিদে  অন্য দেশে আশ্রয় নিয়ে চরম দুর্দশায়  বৎসরের পর বৎসর ভুগে ।  

ত্রুটিপূর্ণ শাসন ব্যাবস্থা এবং স্বার্থন্নেষী শাসক গুষ্ঠীর কারণে আফ্রিকা, এশিয়া এবং ইউরোপের উদ্বাস্তু সমস্যা দিনের পর দিন বেড়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা মুসলিম শত শত বৎসর মিয়ানমারের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া স্বত্ত্বে ও  ওখানকার নাগরিকত্ব পায় নি;   সামরিক সরকার এক মিলিয়নের উপর রোহিঙ্গা মুসলিম বে-আইনি ভাবে  বাংলাদেশে  পাঠিয়ে উদ্বাস্তু সমস্যার সৃষ্টি করেছে।  জাতিসংঘ, ইউরোপ, আমেরিকার ও অন্যান্য দেশগুলি এগিয়ে এসে স্থায়ী  সমাধান করে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে  বলে আশা করছি।  

সমাপ্ত

পূর্ববর্তী নিবন্ধকলম
পরবর্তী নিবন্ধশ্রেনীকক্ষে ফিরে আসছে বাংলা স্কুলের কার্যক্রম
নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম - জন্ম:- ১৯৪৮ সাল । এনায়েতপুর, কচুয়া, চাঁদপুর, বাংলাদেশ। শিক্ষা:- এম, কম ( ব্যাবস্থাপনা ), ঢাকা ইউনিভার্সিটি। এম, এ (অর্থনীতি ) জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি। চাকুরী জীবন:-ইসলামাবাদ, পাকিস্তান,বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া,আমেরিকা ও কানাডা। বর্তমানে :- অবসর জীবন- কানাডাতে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত বই:-আমার সংগ্রামী জীবন,সাদা ঘোড়া,জীবন চক্র,শুচিতা ও জীবনের মুখোমুখি।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন