ভারতে ব্রিটিশ রাজত্বকাল (১৭৫৭ -১৯৪৭) ১৯০ বৎসর স্থায়ী ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে সারা ভারতে ৫০০ বা তার ও অধিক ছোট বড়ো দেশীয় রাজ্য (Princely states ) এবং ফ্রেঞ্চ ও ফর্তুগীজ উপনিবেশ ছিল। ১৯৪৭ সনে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন ভারত ও পাকিস্তানকে দুটি স্বতন্ত্র ও পৃথক রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার সময় ব্রিটিশ সরকার দেশীয় রাজ্যগুলিকে তিনটি বিকল্প পন্থা থেকে যে কোনো একটি বেঁচে নিতে সুযোগ দিয়েছিল : ক) ভারতে যোগদান করন , খ) পাকিস্তানে যোগদান করন বা গ) তাদের নিজস্ব স্বাধীনতা বজায় রাখা । তাছাড়া ভারতে পর্তুগিজ ও ওলন্দাজ উপনিবেশ সম্পর্কে ব্রিটিশ যে কোনো সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকে। দেশীয় রাজ্যগুলির প্রায় সবগুলিই নতুন দেশ ভারতীয় সীমানার মধ্যে যা ভারত আপোসে বা জোর করে একত্রীকরণ করতে গিয়ে পুলিশি হামলা ও করতে হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে জুনাগড় (গুজরাট), হায়দরাবাদ, ভোপাল,কেরালা,কাশ্মীর আর ও অসংখ্য দেশীয় রাজ্য আলাদা স্বত্বা নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আপোসে মিলেমিশে ছিল । ১৯৪৭ সনে ভারত ভাগ করার সময় জুনাগড় (গুজরাট), হায়দরাবাদ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা হিসাবে পাকিস্তানের সঙ্গে দেয়া হয়ে ছিল। কিন্তু ভারত পুলিশি হামলার মাধ্যমে দখল করে নেয় । এতে হাজার হাজার লোক প্রাণ দিয়েছে ;হায়দরাবাদ থেকে যে সব মুসলমান করাচী (পাকিস্তান) মাইগ্রেট করেছে,তাদেরকে মুহাজির বলা হয় এবং আজ ও এ সব লোক পাকিস্তানে মুহাজির হিসাবে পরিচিত। কাশ্মীর আর এক সমস্যা;১৯৪৮ সনে যখন ভারত জুনাগড় (গুজরাট) এবং হায়দরাবাদ দখল করে নেয়, তখন পাকিস্তান কাশ্মীরের কিছু অংশ দখল করে আজাদ কাশ্মীর নাম দিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করে। কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে কয়েক দফা যুদ্ধ হয়েছে এবং আজ ও তার কোনো মীমাংসা হয় নি ; এ নিয়ে গত ৭৫ বৎসর দুই দেশের মধ্যে মতো বিরোধ যার সমাধান হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
২
১৯৪৭ থেকে এ যাবৎ পাকিস্তানে কোনো প্রধানমন্ত্রীই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি; মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই সামরিক শাসন জারি হয়েছে। ১৯৪৭ সনে দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় পূর্ব পাকিস্তানে ৫৬ % এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ৪৪% জনসংখ্যা ছিল। দেশ শাসন করার ক্ষেত্রে এটাই বড়ো ধরণের বাধা ছিল ; কারণ পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ পূর্ব পাকিস্তানি সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতৃস্থানীয়দের হাতে ক্ষমতা দিতে চায় নি।পূর্ব পাকিস্তানী দেশ শাসন করবে ! এটা পশ্চিম পাজিস্তানী অভিজাত, সেনা কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের মেনে নেয়া সম্ভব ছিল না। তখনকার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী বগুড়া এক ইউনিট নীতির অধীনে পশ্চিম পাকিস্তানের চারটি প্রদেশ ও পূর্ব পাকিস্তানকে একীভূত করেন । পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র- রাজনীতিবিদ ওয়ান ইউনিট প্রোগ্রামটি দুর্দান্ত প্রতিরোধের সাথে মোকাবেলা করে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের দ্বারা ও অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল। “পণ্ডিত জুলিয়েন লেভেস্কের মতে, ওয়ান ইউনিট প্রকল্পটি পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাবি অভিজাতরা পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের কেন্দ্রে ক্ষমতা অর্জন করতে বাধা দেওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছিল। ” ওয়ান ইউনিট কর্মসূচি ১৯৭০ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল। অবশেষে, রাষ্ট্রপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খান এক ইউনিট কর্মসূচির সমাপ্তি এবং ১৯৪৭ সালের আগস্ট থেকে চারটি প্রদেশের অস্থায়ী অবস্থা পুনর্বহাল করার জন্য আইনি কাঠামো আদেশ নং ১৯৭০ জারি করেছিলেন, যার ফলে ১৯৭০ সনের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান জনসংখ্যার ভিত্তিতে অধিক সংখক সদস্য (কোটা ) পেয়েছিলেন।
৩
১৯৪৭ থেকে ১৯৫৭ এক দশকের পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুবের নাটকীয় ক্ষমতায় আরোহণ নিয়ে পূর্বে ও কিছু আলোচনা করা হয়েছে । ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান চারজন রাষ্ট্রপ্রধান এবং সাতজন প্রধানমন্ত্রী দ্বারা শাসিত হয়েছিল।
আয়ুব খান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে তড়িগড়ি করে প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দর আলী মির্জাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ইংল্যান্ডে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়ে পাকাপোক্ত ভাবে ক্ষমতা নিয়ে যে কাজগুলি করেছিলেন তার কিছু বিবরণ নিম্নে দেয়া হলো :
১ ) আয়ুব খান, প্রথমে-ই পূর্ব পাকিস্তানে শহর ও গ্রামগঞ্জ, রাস্তাঘাট পরিস্কার করার নির্দেশ দেন। ১৯৫৮ সনের দিকে পূর্ব পাকিস্তানে খুব একটা রাস্তাঘাট ছিল না। বর্ষা শুরু হলেই চারিদিকে ব্যাঙের ডাক শুরু হতো, নৌকা ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যেত না;সে যুগে বর্ষার মৌসুমে খালবিল কচুরি পানায় ভর্তি থাকতো। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটি থানায় নির্দেশ আসলো কচুরি পানা ও জঙ্গল পরিষ্কার করতে হবে। গ্রাম পরিষ্কারের হিড়িক পড়ে গেলো; ইউনিয়নের মেম্বার, প্রেসিডেন্ট ( চেয়ারম্যান) গ্রামে গ্রামে গিয়ে কচুরি পানা পরিষ্কারে লোকজনদের নির্দেশ দিলেন। পরিষ্কার না করা হলে থানা থেকে এসে ধরে নিয়ে যেত। আমাদের পার্শবর্তী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কে ধরে নিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে লোকমুখে শুনেছি। সে যুগে কচুরি পানার দরকার ও ছিল; বর্ষার সময় পাট কেটে পানিতে ভিজিয়ে কচুরি পান দিয়ে ঢেকে রাখা হতো, বর্ষায় অনবরত বৃষ্টি , বাড়ির চারিদিকে ঝোপ জঙ্গল, নৌকা ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যেত না ;অযথা পরিষ্কারের নামে হয়রানি ।
২) সে সময় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কে প্রেসিডেন্ট বলা হতো এবং এই পদবি পরিবর্তন করে চেয়ারম্যান করা হলো।
৩ ) গ্রাম রক্ষিবাহিনীর মাধ্যমে পাহারার ব্যবস্থা করা হলো এবং মানুষ রাতে পালাক্রমে গ্রাম পাহারা দেয়া শুরু করে, থানা থেকে ঘন ঘন পুলিশ, কনস্টবল এসে পরিদর্শনের নামে হয়রানি শুরু হলো। তবে সে সময় গ্রামে অভাব,রাতে সিঁদেল চোরের উপদ্রব হতো এবং লোকজনের ঘরে চোর ঢুকে চুরি করতো।
৪ ) গ্রাম্য বয়স্ক শিক্ষার ব্যবস্থা : বিনামূল্যে প্রতিটি নিরক্ষর লোককে ছবির সাহায্যে বাংলা অক্ষর জ্ঞানের জন্য বই পাঠানো হলো। গ্রামে কদাচিৎ লোকজন পড়াশুনা জানতো , ওদের বই নিয়ে নাড়াচাড়া করতে দেখেছি ; এমন কি আমার মতো স্কুল ছাত্ররা ওদের সাহায্য করতে ও চেষ্টা করেছি।
৫ ) স্কুলে উর্দু ভাষা চালু করন : আমরা কিছুই জানি না, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে উর্দু পড়া বাধ্যতামূলক করা হলো; আমি নিজেও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলাম। এ নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের আবহাওয়া চরমে ; ছাত্র ও রাজনৈতিক প্রতিবাদ, মিছিল ও ধর্মঘটের মুখে আয়ুব খান উর্দু পড়া এবং গ্রাম রক্ষিবাহিনী, কচুরি পানা পরিষ্কার বাদ দিতে হলো।
৬ ) পূর্ব পাকিস্তানে জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল বছর; এর পরিবর্তন করে জুলাই থেকে জুন করা হলো। জানুয়ারী/ফেব্রুয়ারী মাসে ফসল উঠানো হলে অভিবাবক ছেলেমেয়েদের স্কুল বেতন দেয়া সুবিধা হয় ; সে জন্য এই সিস্টেম পূর্ব পাকিস্তানে চালু আছে। হঠাৎ করে জুন থেকে জুলাই সিস্টেম চালু করা হলো; আমি নিজেও ৮ম শ্রেণীতে পড়ি, এই পরিবর্তনের দরুন ( ১৮ মাস ) এক ক্লাসে থাকতে হয়েছে। গণ আন্দোলনের মুখে তাও বাদ দিতে হলো । মূলতঃ পূর্ব পাকিস্তানে এ সব নিয়ম চালু করার পূর্বে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে আলাপ করা দরকার ছিল।
৭ ) ক্লাস নাইন ও টেন (নবম ও দশম ) দুইবার চার এবং ছয় বিষয়ে আলাদা আলাদা বোর্ড পরীক্ষা হয়ে একত্রে সার্টিফিকেট দেয়ার নিয়ম করা হলো । আমি নিজেও নবম (১৯৬২) ও দশ(১৯৬৩) দুই বার পরীক্ষা দিয়েছি। এই সিস্টেম ছাত্র/ছাত্রীদের ভালো ছিল বলে অনেকের ধার না ; তবে দুইবার বোর্ডে পরীক্ষার ফী দিতে হয় , গ্রামের ছেলেমেয়েদের পক্ষে দুইবার ফী দেয়া সম্ভব ছিল না।
৮ ) কিন্তু মজার ব্যাপার হলো , উপরে বর্ণিত নির্দেশগুলির কোনটিই টিকেনি।
৯ ) ১৯৬০ সালে দেশে (রেফারেন্ডাম) গণভোট (নির্বাচন) অনুষ্ঠিত হলো ; এই নির্বাচনে জনগণকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: “মুহাম্মদ আইয়ুব খানের প্রতি আপনার কি আস্থা আছে? হ্যাঁ বা না ভোটের মাধ্যমে উত্তর। আয়ুব খান সারা দেশে ৯৬ % ভোটে জয়ী হন এবং ৫ বৎসরের জন্য রাষ্ট্রপতি হলেন।
১০ ) মৌলিক গণতন্ত্র (বেসিক ডেমোক্রেসি ) : ১৯৬৫ সালে, আয়ুব খান বিরোধী প্রার্থী ফাতিমা জিন্নাহর বিরুদ্ধে (পাকিস্তানের সম্মিলিত বিরোধী দল) রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিযোগিতা করেন। পূর্ব পাকিস্তানের জন সংখ্যাগরিষ্ঠতা উপেক্ষা করে, ওয়ান ইউনিট দেখিয়ে সারা দেশের ( ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান-মেম্বার) ভোট দাতা ৮০ হাজার যার ৪০ হাজার পূর্ব ও ৪০ হাজার পশ্চিম পাকিস্তান ; পূর্ব পাকিস্তান থেকে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দল ফাতিমা জিন্নাহকে সমর্থন দিয়ে ছিল। আমি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র; ফাতেমা জিন্নাহকে দেখার জন্য কুমিল্লা রেল স্টেশনে হাজার হাজার লোকের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলাম। আইয়ুব খান দ্বিতীয় মেয়াদে ৫ বৎসরের জন্য পুনরায় নির্বাচিত হন।
১১) দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে, পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের ধরে জেল ভর্তি করা হয়েছে। দেশে চরম অভাব ; এর মধ্যে ভারত -পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধিয়েছে। ১৯৬৫ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাশ্মীরের বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধ শুরু, মূলত কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ ও বিদ্রোহ উস্কে দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের একটি গোপন অভিযান ছিল। আয়ুব খান মনে করেছিলেন, এই সুযোগে কাশ্মীর নিয়ে নেবেন। এই যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান অরক্ষিত ছিল বলে রাজনৈতিক মহলের অভিযোগ। রাজনৈতিক মহল এমনটি ও বলেছে যে ভারত ইচ্ছা করলে পূর্ব পাকিস্তান দখল করে নিতে পারতো। যুদ্ধের ফলাফল এই ছিল যে অল্পের জন্য ভারত লাহোর শহর দখল করে নিতে পারে নি।
১২ ) মোটামুটিভাবে জেনারেল আইয়ুব খানের দশ বছরের শাসনামলকে অগ্রগতি ও শিল্প বিকাশের যুগ হিসেবে দেখা হয়। আইয়ুব করাচি ও চট্টগ্রাম স্টিল মিলস ,চট্টগ্রাম তেল শোধনাগার,কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী পেপার মিল, পশ্চিম পাকিস্তানে ওয়ারসাক বাঁধ, মঙ্গলা এবং তারবেলা বাঁধ নির্মাণ করেন, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির লক্ষ্য ছিল শক্তি উত্পাদন বাড়ানো। করাচী থেকে রাজধানী মার্গালা, ইসলামাবাদ, পাহাড় কেটে (পাহাড়ের পাদদেশে )একটি নতুন রাজধানী নির্মাণের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছিলেন; এ ছাড়া রিসালপুর ও ইসলামাবাদে রেলওয়ে ইঞ্জিন উত্পাদন এবং পাকিস্তানের শিল্প সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট কাজ করেন। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি জেনারেল আইয়ুবের বছরের পর বছর পছন্দসই আচরণ পূর্ব পাকিস্তানিদের বিরক্ত করেছে । পাকিস্তানের দুই অংশের আর্থিক বৈষম্য ক্রমেই বেড়ে চলছে; পূর্ব পাকিস্তানের পাট রফতানিকৃত বৈদেশিক মুদ্রা পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নতি কল্পে ব্যবহার হচ্ছে বলে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহল সোচ্চার হয়ে উঠেছে এবং ঢাকা ও অন্যান্য শহরে ক্রমেই আলোড়ন ও হরতাল বেড়ে চলছে।
১৩) মূলতঃ জেনারেল আইয়ুব খান কখনই পূর্ব পাকিস্তানের কোনও আস্থাভাজন রাখেননি যারা তাঁকে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারে। তাঁর সমস্ত উপদেষ্টা পশ্চিম পাকিস্তানের, যাদের নির্দেশে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে অনেক কাজ করেছিলেন।
যেমন: আলতাফ হুসেন গওহর জানজুয়া,তিনি একজন প্রতিভাবান লেখক ছিলেন এবং রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন;এতটাই যে তিনি পাকিস্তানের ডি ফ্যাক্টো ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত “ফ্রেন্ডস নট মাস্টার্স ” নামে আত্মজীবনীর প্রধান ভূত লেখক ছিলেন। তিনি-ই সর্ব শেষ ব্যক্তি যিনি আয়ুব খানকে পদত্যাগ করতে নিষেধ করেছিলেন। ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের শেষ আনুষ্ঠানিক কাজটি ছিল আলতাফ গওহরকে তার পরিবারের সাথে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানানো,তার দীর্ঘদিনের কাজের উৎসর্গ হিসাবে তাকে “হিলাল-ই-কায়েদ-ই-আজম” এর উচ্চ বেসামরিক পুরস্কার প্রদান করা।
১৪ ) আয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তানে পরিদর্শন করতে যখন -ই আসতেন, মনে হতো তিনি বিদেশী বিশেষ অতিথি। তিনি সর্বজনীন কোনো সভা সমিতিতে বিশেষ বিশেষ লোকদের বিশেষ বিশেষ কাজের স্বীকৃতি হিসাবে পাকিস্তান সামরিক পুরস্কার : ক) হিলালী -জুরাত, খ) নিশান-ই -হায়দার, গ) সিতারা-ই -জুরাত, ঘ) তমঘা-ই জুরাত,তমঘা-ই খিদমত এবং আর ও অনেক ধরণের পদক দিয়ে খুশি করতেন। জনগণকে খুশি করার এটা একটা পন্থা বের করে ছিলেন ; কে বলবে হয়তো এটা ও আলতাফ হুসেন গওহর জানজুয়ার আবিষ্কার।
১৫ ) পূর্ব পাকিস্তানে যা কাজ হয়েছিল সব-ই রাজনীতিবিদ ও ছাত্র জনতার চাপের মুখে ; ঢাকাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছিল, তাও বাস্তবায়ন করতে পারেন নি।
১৬ ) আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছিল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আইয়ুব খানের শাসনামলে পাকিস্তানের একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, যা ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার আওয়ামী লীগ ও পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং আরও ৩৪ জনের বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ,ঢাকা সেনানিবাসে কোর্ট ট্রাইব্যুনাল ;পুরো মামলার নাম: “রাষ্ট্র বনাম শেখ মজিবুর রহমান এবং অন্যান্য “। এটাই সেই ঐতিহাসিক মামলা যার প্রভাব পুরো বাঙালি জাতির উপর পড়ে এবং প্রতিটি মানুষ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।
সমাপ্ত