আমরা যথা সময়ে গাবতলী থেকে সুবর্ণ পরিবহনে উঠেছি । ৬ জনের জন্য ৫ টি পাশাপাশি সিটে বসে ও পড়েছি এর মধ্যে এক লোক তার বউ আর বাচ্চা সহ এসে খুব জোর গলায় বলতে থাকল ৩৫/৩৬ নাম্বার সিট থেকে উঠেন এই সিট আমরা কিনছি এই দেখেন টিকেট । আমাদেরও টিকেট আছে , আমরা দুই জনই বাসের কন্টাকটারকে টিকেট দেখালাম , মনে হল উনি কিছু বুঝতে পারছেন না ! বলল কি করবেন ঈদের সময় সবার ই বাড়ি যাইতে মন চায় । তাই বলে এক টিকেট দুইবার বেচবেন !! উনি কোন কথায়ই কর্ণপাত করল না , মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আরও ২ জনের সেম কেস , ড্রাইভার তো কোন রা করছে না আর কন্টাক্টার তো ভাব ধরছে উনি কিছু বুঝছে না , কেমনে এই ঘটনা ঘটল !
:আপনের ৪ টা লাগেজ উঠাইছি দুই হাজার টাকা দেওয়া লাগব ?
আবুল কালাম ওই লোকের কথার জবাব না দিয়ে বলে যাচ্ছে এইটা কি মগের মুল্লুক নাকি ? কে কইছে তোমারে লাগেজ ধরতে তোমারে আমি ডাকি নাই , তুমি জোর কইরা ২ টা তুলছ ।
কেউ একজন বলল ভাই দিয়া দেন ৫০০ টাকা , কি করবেন ! এইতো দ্যাশের অবস্থা ! না উনি এত কম টাকায় রাজি না , সে বার বার তাদের বাস থেকে নেমে ফয়সালা করতে শাসাচ্ছে ।
আবুল কালাম এইবার সত্যি রেগে গিয়ে বলল: আমি র্যাবরে জানাব।
:শুনেন আপনের ওই র্যাব আমার পকেটে ঘুরে , আপনে কথা না বাড়াইয়া টাকা দেন । বিদেশ থাইক্যা আসছেন ? লাগেজে ট্যাগ আছে ? দাবী মত টাকা না দিলে বাস ছাড়ব না কইলাম !
:আমরা সবাই এমনিতে খুব ঝামেলায় আছি , আপনি এখান থেকে যান ।
:না এমনি যামু না ! উনি বিদেশ থেকে আসছে । ভিতরে কত কিছু নিয়া আসছে কে জানে ?
এইবার আবুল হাসেম এর স্ত্রী প্রচণ্ড রেগে গিয়ে তার ভাই বা দেবর কে বলল এই যে তোমাগ কয় ভাইএর কিপ্টামী স্বভাব মরলেও যাবে না ! কতবার বললাম মাইক্রবাস ভাড়া কর , এইবার ভালো হইছে না , মহিলার অগ্নিমূর্তি দেখে মনে হল উনি ওই লোকটার পক্ষে আর ওনার স্বামী আর দেবরের উপযুক্ত একটা বিহিত হলেই ভালো হয় ।
আমরা অনেকেই বাস ছাড়ার আর ওই লোককে নামিয়ে দিতে ড্রাইভার কে তাড়া দিতে থাকলাম , কিন্তু তার কোন ভাবান্তর নাই । ইতিমধ্যে দুই যুবক লোকটাকে না নামলে নামানোর ব্যবস্থা নেবার হুমকি দিল । মুরুব্বী গোছের এজকন বলল তুমরা মিয়া আজাইরা ঝামেলায় জড়াইয়ো না , ওনার লাগেজের জিনিস আমার বউ বা তোমার বউ দের জন্য আনে নাই , আর এই লোকের সাথে আরও মানুষ আছে , ড্রাইভারও ভাগ পায় মনে হয় দেখলা না চুপ মাইরা রইছে । যাহোক ৮০০ টাকায় বিহিত হইল মুরুব্বীর কথায় , মুরুব্বী আরও একটা বুদ্ধি দিল শুনেন ঢাকা য় ইসা মালপত্র পালিস্টিকের ব্যাগে , আর বিদেশী ট্যাগ কাইটা আইনেন ।
এইবার আমাদের সীটের একটা সাময়িক বিহিত হইল , আমরা পাঁচ জন তিন সীটে আর ভাগিনা পিছনের কোন এক বস্তার উপর বসল । ভাবলাম অন্তত আরিচা ঘাট যাওয়া পর্যন্ত একটু ঘুমাবো , পিছনের সীটের দুইজন এমন গল্প শুরু করল তাদের নাক ডাকা সম্পর্কিত বিষয় আরও অনেক বিষয় নিয়ে , বললাম ভাই অনেক হইছে একটু থামেন । না তারা থামছে না একজন আরেকজন কে বলছে নাক ডাকলে ধাক্কা দিয়েন । আমি বললাম চলেন আমরা গল্প করি , একজন কি বুঝল জানিনা বলে আপা দাঁড়াইয়া গল্প করার জায়গা না এটা , লঞ্চে উইঠা কথা বলব, আচ্ছা তাইলে এখন থামেন ।
লঞ্চে ওঠার পর ভাগিনা বলে মামী এইবার ওই লোক দাঁড়াইয়া যাবে না বস্তার উপর বসবে আমারা সেটা দেখব না , আপনি ওনার বউ এর পাশে বসবেন আর আমি আপনার সীটে বসব । আমি লোকটার সাথে একটু ভাব জমানোর চেষ্টা করছি , তার নাম আলী খাঁ , বললাম ভাই চা খাবেন , বলে দেন , আর প্রস্তাব রাখলাম আপনি ওই পারে গিয়ে যেখানে পারেন বসবেন , টিকেট তো আমরাও কাটছি , না সে আমার কথার কোন পাত্তা দিচ্ছে না , কাজ হবে বলে মনে হল না ।
ওনার স্ত্রী লঞ্চের একপাশে গিয়ে আমাকে বলে আপা উনি খুব ঘাঊরা লোক , কথা শুনে না । যাহোক যথা সময়ে ঘাটে লঞ্চ থামলে এইবার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভাগিনা দুই সীটের একটা দখল করার জন্য দ্রুত হাটা দিল , দখল নিছে । আমি কায়দা করে বললাম মামা ওই পাশের ( আমার ছোট বোন , দুই কন্যা আর আমাদের সহযোগী সেলিনা ) ওদের পাশে বসেন যান, আমি আর এই আলী ভাইর বউ একজায়গায় বসি । এইবার আলী ভাই প্রথম ধরা খাইল মনে হয় , বাস ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু সে বসে না , কিছুদুর আসার পর বললাম ভাই পিছনে বস্তার ওপর বসেন , আর মুখের সামনে থেকে সরেন । নাছোড় বান্দা সরে না , আমি একসময় বিরক্ত হয়ে বললাম কি ভাই আপনি কি কোলে বসবেন ! ব্যাপারকি ? এইবার আলী ভাই মওকা পেয়ে গেল বলে কোলেই বসব তবে আপনার না আপনার ভাগিনার , যেই কথা সেই কাজ সে ধাম করে তার কোলের উপর বসে পড়ল আমরা হতভম্ভ হলেও অন্য যাত্রীরা খুব মজা পাচ্ছে ব্যাপারটাতে। একসময় বাধ্য হয়ে ভাগিনা উঠে আবার বস্তার উপর বসল ???? আলী ভাইর স্ত্রী আমাকে বলল , কি আপা কইছিলাম না আমার উনি খুব ঘাউরা । আমরা এখনো মামী ভাগিনা সেই গল্প করি ।
আমার সেই ভাগিনা এখন হাইকোর্টের বড় উকিল , আর ছোট বোন ও মাঝে মাঝে বলে আপা সেই দিনের গল্প টা লিখেন । দিলাম আজকে লেইখ্যা ।