আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে বাহিরে তাকিয়ে পেঁজা তুলার মতো শুভ্র বরফ (স্নো) পড়তে দেখে বিস্ময় প্রকাশ করি,” আরে কী শুভ্র সুন্দর স্নো রাস্তা,ঘরের ছাদ, গাছের ডাল, ড্রাইভওয়ে, গাড়ির উপর ঢেকে আছে! আমার স্ত্রী মায়া পিছন থেকে এসে বলে এতে আর আশ্চর্য্য হওয়ার কি আছে?
তুমিতো এ দেশে নতুন আসো নি, আর কাজে ও যাবে না ।
এর চেয়ে বেশি বরফের মধ্যে ও আমরা সকালে গরম কাপড়, বুট, কোট পরে বাসা থেকে হেঁটে গিয়ে বাসের জন্য কত দাঁড়িয়ে থেকেছি। আমি বলি সে তো গত ৩৪ বৎসরের অনেক ইতিহাস, বলে শেষ করা যাবে না।
মায়া বলে , যখন এ দেশে আসি ,ছেলে মেয়েরা ছিল অত্যন্ত ছোট, একটাকে স্ট্রলার এ ঢুকিয়ে, দুইটাকে হাঁটিয়ে নিয়ে ঠান্ডা ও বরফের মধ্যে কত কষ্ট করেছি। সকালে একবার স্কুলে দিয়ে এসেছি , বিকেলে আবার ছোটটাকে স্ট্রলার এ ঢুকিয়ে স্কুলে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে দুইটাকে নিয়ে স্ট্রলার ঠেলে বাসায় এসেছি।
আমি বললাম ঠিকই বলছো , সব ভুলা যায়; কিন্তু সে কষ্টের দিন গুলিকে ভুলা যায় না।
১৯৮৮ সন, সবে মাত্র এ দেশে এসেছি। না ছিল কাজের ব্যবস্থা,না ছিল থাকার যায়গা। সে সময় এখানে বাসা ভাড়া পেতে অনেক কষ্ট, চাকুরীর লেটার, ব্যাঙ্ক ব্যালান্স দেখাতে হতো। অনেক চেষ্টার পর একজনকে অনুরোধ করে তাঁর বাসার বেসমেন্ট ভাড়া নিয়েছি। সে তো আমাকে ভাড়া দিতেই চায় নি, কারণ আমি নতুন এসেছি , কাজ নেই, যদি বাড়ি ভাড়া দিতে না পারি। আমি বললাম, আমার কিছু ব্যাঙ্ক ব্যালান্স আছে, আপনাকে ভাড়া দিতে পারবো। তাও রাজি করাতে কষ্ট, শেষে ব্যাঙ্ক ব্যালান্স দেখাতে হলো । বাসমেন্টে নাই কোনো জানালা, অন্ধকার, আমার ছেলেমেয়েরা বলে আব্বু ,এখন কী দিন, না রাত্রি ?
ঘর থেকে বের হলে সূর্য্যের আলো দেখি , ঘরে ঢুকলে অন্ধকার, দিনে ও বাতি (লাইট)) জ্বালাতে হয়।
কাজ নেই ,ভোর ৭টা থেকে টেলিফোন নিয়ে বিভিন্ন এজেন্সিতে টেলিফোন করতে শুরু করি , “ক্যান ইউ গিভ মি ওয়ার্ক ফর টুডে “?
ঘন্টার পর ঘন্টা বিভিন্ন এজেন্সিতে টেলিফোন করেই যাচ্ছি। ভাগ্য ভালো হলে কেউ হয়তো বলে এই ঠিকানায় যাও। কাজতো কোনো রকমে বলে কহে আজকের জন্য পেলাম, এবার TTC ( টরন্টো ট্রানসিট কমিশন ) টেলিফোন করে বলি আমি এই এড্রেস থেকে এই এড্ড্রেসে কী ভাবে যাবো ?
কয়টা বাস পাল্টাতে হবে এবং কত সময় লাগবে জিজ্ঞেস করি। গাড়িতো নেই, এ বার বরফের মধ্যে ঘন ঘন পা চালিয়ে হাঁটি, বাস দেখলে দৌড়াতে শুরু করি। অনেক সময় কাজের জায়গায় যাইতে দেরি হয়েছে, এজেন্সী থেকে ওয়ার্নিং দিতো, এ ভাবে দেরি হলে তো কাজ আর দেয়া যাবে না। অনুরোধ করি, স্যার আমি নিউ ইমিগ্র্যান্ট, আমার প্রতি একটু সহানুভূতি দেখিয়ো। যাও যাও আর কখনো দেরি করবে না। পিচ্ছিল রাস্তা জোরে হাঁটতে গিয়ে কতবার পড়ে ব্যথা পেয়েছি এবং চোখের চশমা ভেঙেছি তার হিসেব তো দেয়া যাবে না। অনেক সময় দুঃখে চোখের পানি ফেলেছি আর মনে মনে ধিক্কার দিয়েছি, আমি তো ঢাকা ফার্ম গাঁটের “ওঁরা কোদাল” নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো লোকদের চেয়ে ভালো অবস্থায় নেই।
বিকেলে কাজ থেকে এসে কিছু খেয়ে এবার দৌড়ে বাসে উঠি। Sheridan college, Brampton যেতে হবে, কম্পিউটার কোর্সে এডমিশন নিয়েছি। থাকি মিসিসাগা (Mississauga ) , যাই ক্লাস করতে ব্রাম্পটন (Brampton ) অন্য শহর , ক্লাস ৭টা থেকে ১০টা, বাস একটার পর একটা পাল্টিয়ে বাসায় ফিরি রাত ১২টায় । ঘোমাতে হবে এবং সকালে কাজ খোঁজ করে,যদি মিলে আবার দৌড়াতে হবে। মায়া বলে এত কষ্ট করার কি দরকার, কলেজের কোর্স বাদ দিয়ে দাও।
আরে ভাই, কম্পিউটার না জানলে তো এ দেশে চলবে না। এমন দেশ থেকে এসেছি, যে দেশে টাইপ শিখে টাইপিস্ট কাজের জন্য, ছোটোখাটো কাজ, যাদের সঙ্গে কর্মকর্তারা কথা বলে নাক ছিটকিয়ে। এ দেশে প্রতিটি ছেলেমেয়ে টাইপ জানে । সে যুগে আমাদের দেশে এ সব শিক্ষার গুরুত্ব ছিল না; তবে আজকাল আমাদের দেশে ও সব ছেলেমেয়েকে টাইপ এবং কম্পিউটার শিখতে হয়। Garaze sale থেকে একটা used টাইপরাইটার উঠিয়ে নিয়ে এসেছি এবং যখনই বাসায় থাকি, শুধু প্র্যাকটিস করি। যত তাড়া তাড়ি সম্ভব কম্পিউটার স্পিড বাড়াতে হবে।
এ দেশের ঠান্ডা নিয়ে আমার জীবনে অনেক অভিজ্ঞতা, একদিনের ঘটনা, আমি ডান্ডাস স্ট্রিট (মিসিসাগা) বাস স্টপে পৌঁছেতে কয়েক মিনিট দেরি হয়েছে। বাস মিস করেছি , পরের বাস কখন আসবে বলতে পারি না, তবে অপেক্ষা না করে উপায় কি ?
অতিরিক্ত ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি । হঠাৎ কেউ একজন গাড়ি থামিয়ে আমাকে ইশারা করছে এই মিস্টার, এই মিস্টার। আমি গাড়ির কাছে গিয়ে দেখে অবাক, এতো সেই ভদ্রলোক যার অফিসে গত সপ্তাহে কাজ করেছি।
তুমি কোথায় যাবে ?
আমি এড্রেস দেখাতেই, সে বলে গাড়িতে উঠো, আমি নামিয়ে দেব। অপ্রত্যাশিত ভাবে ,আজ ঠিক সময়ের কয়েক মিনিট আগে কাজে পৌঁছতে পেরে কত যে খুশি! দুপুরে মায়াকে টেলিফোন করে বলি আজ একজন আমাকে ড্রাইভ দিয়েছে ?
সে তো খুশি হয়ে বলে এ দেশে ভালো মানুষ আছে।
মায়ার দাঁতে সমস্যা। মিসিসাগা স্কোয়ার ওয়ান ডেন্টিস্ট এপয়েন্টমেন্ট সন্ধ্যা ৭টা, ডাক্তার দেখানোর পর আমরা বের হয়েছি ৮টার পরে। ছোট বাচ্চা নিয়ে বরফ ও ঠান্ডায় কাঁপতেছি বাস স্টপেজে। শপিং মল প্রায় খালি, এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায়, ডেন্টিস্ট পার্কিং লটে এসে গাড়ি নিয়ে চলে যাওয়ার পথে আমাদের দেখে বলে তোমরা এখন ও দাঁড়িয়ে, কোথায় যাবে ?
আমি এড্রেস বলাতে, সে বলে এস আমি নামিয়ে দেব।
এবার আজকের প্রসঙ্গে আসা যাক:
আমি মায়াকে বলি, তাকিয়ে দেখো পাশের বাড়ির বরফ বাতাসে উড়িয়ে আমার ড্রাইভওয়েতে জমা হয়েছে এবং আমাকে নিজের এবং প্রতিবারই আমার প্রতিবেশীর বরফ ও পরিষ্কার করতে হয়, নতুবা ঘরের দরজা খোলা যায় না। আমার প্রতিবেশী তার বাড়ির জানালা দিয়ে হয়তো তাকিয়ে মিসকি হেঁসে বলে “যা বেটা দুই বাড়ির বরফ পরিষ্কার কর। ” সে একবার ও বলে না, তোমাকে একটু সাহায্য করি।
আমি কথা না বাড়িয়ে টেলিভিশনের ২৩ চ্যানেল খুলে দেখি আজ সারা দিনই বরফ পড়বে। কিন্তু, আমাকে তো একটু বাহিরেও যেতে হবে। ড্রাইভওয়ে পরিষ্কার না করলে কি ভাবে গাড়ি নিয়ে বের হবো ! ভাগ্গিস ! আমার ছোট ছেলে আদিব অটোয়া থেকে ছুটিতে বাসায় এসেছে। সে বলে আব্বু, আমি ক্লিন করবো। আজকের জন্য আমি বেঁচে গেলাম, বরফ পরিষ্কার না করে।
কানাডা চার ঋতুর দেশ, শীত,বসন্ত,গ্রীষ্ম ও শরৎ:
শীত: শীতকাল সাধারণত ডিসেম্বর,জানুয়ারী এবং ফেব্রুয়ারী, যদি ও শীতের আবহাওয়া নভেম্বরে শুরু হতে পারে এবং মার্চের শেষের দিকে বা এপ্রিলের প্রথম দিকে হ্রাস পায়। দেশের কিছু অংশ যথা নিউফাউন্ডল্যান্ড, সাস্কাচেওন, আলবার্টা , নুনাভুত, হোয়াইট হর্স, ল্যাব্রাডর, ইউকোন টেরিটোরি এবং অন্টারিওর উত্তরাংশ অতিরিক্ত ঠান্ডা যে জন্য লোকবসতি সে সব এলাকায় কম।
বসন্ত: কানাডার তাপমাত্রা বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরণের। এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে এই তাপমাত্রা কোনো কোনো এরিয়াতে আরামদায়ক। এ সময় মাঠে, বাড়ির আঙিনায় টিউলিপ,গোলাপ, জবা ও অন্যান্য ফুল ফুটে, প্রতিটি বাড়ির সম্মুখ, রাস্তার পার্শে, পার্ক, ফুলের সমারোহ দেখে মনে হবে এই দেশে ঠান্ডা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কখনো ছিল না। তবে এই মৌসুমকে আপনি কখনই সহজ ভাবে নিতে পারেন না , মে মাসে ও কোনো কোনো এরিয়াতে তুষার ঝড় অনুভব করতে পারেন।
গ্রীষ্ম: গ্রীষ্মকালীন -গরম অদ্রো আবহাওয়া এবং উত্তরে বর্ধিত দিবালোক, সবুজের সমারোহ, সারা দেশ যেখানেই তাকাবেন মনে হবে ফুল আর সবুজে ঢাকা; যদি ও দেখি নি, মনে হবে পৃথিবীতে স্বর্গ নেমে এসেছে। জুন থেকে অগাস্ট পর্যন্ত কানাডায় গ্রীষ্মকাল, বাহিরে ঘোরে ঘোরে সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য । নায়াগ্রা ওয়াটার ফলস, ব্লু মাউন্টেন, বিভিন্ন কটেজে, ক্যাম্পিং, মাছ ধরা ও ছেলেমেয়ে নিয়ে উপভোগ করার উপযুক্ত সময়। নিজের ইচ্ছা না থাকলেও অন্যের দেখে বা শুনে মনে হবে ছেলেমেয়ে নিয়ে একটু ঘুরে আসি। তবে ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে ও ক্যাম্পিং এ গিয়ে এ দৃশ্য দেখে আসে।
শরৎ( Fall ): আরামদায়ক আবহাওয়া, হালকা কাপড় পরে বাহিরে এ বাড়ি সে বাড়ি, বিভিন্ন লেক স্পটে মাছ ধরা, ছেলেমেয়েদের নিয়ে বেড়ানোর জন্য উপযুক্ত সময়। নিজেদের বাগানের আপেল, পিয়ার, আঙ্গুর এবং প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় সবজির বাগান, নিজে খাবেন এবং বন্ধুদের দেবেন । আমি এবং অনেকেই বাগানের সবজি ফ্রীজে রেখে দিয়ে কয়েক মাস উপভোগ করি। এখানে সেখানে গার্ডেনে পিকনিক স্পটে কমিউনিটি গ্যাদারিং এবং রান্না, বা ঘর থেকে পছন্দের খাওয়া তৈরী করে এনে বসে শেয়ার করে খাবেন এবং যার যেভাবে মন চায়, গান গেয়ে, খেলাধুলা করে আনন্দ করবেন। ছেলেমেয়ে নিয়ে খেলাধুলা, গানবাজনা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে উপভোগ করে সময় কাটানোর উপযুক্ত সময় । সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এ সময় গাছের পাতা লাল , হলুদ, বাদামি , কমলা রং ধারণ করে আস্তে আস্তে ঝরে পরে এবং শীতের প্রারম্ভে শুধু গাছ দাঁড়িয়ে থাকে; মনেই হবে না যে এই দেশে সবুজ, ফল, ফুলের সমারোহ কখন ও ছিল।
শীতে কোথায় ও একটি গাছের পাতা ও দেখা যাবে না। এ দেশে গাড়ি, বাস, ট্রেন, শপিং মল, অফিস, কল কারখানা, এবং বাড়ি ঘরে ২৪ ঘন্টা তাপ (হিট) দেয়া থাকে। কানাডার কোনো কোনো অঞ্চলে শীতে টেম্পারেচার minus -২৫ সেলসিয়াস থেকে minus – ৪৫ সেলসিয়াসে পর্যন্ত উঠা নামা করে। প্রতিটি বাস স্টপে গ্লাস দিয়ে ছাউনি দেয়া থাকে অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে রক্ষার জন্য। লোকাল সড়ক এবং হাইওয়তে মিউনিসিপ্যালিটির লোক স্নো ব্লোয়ার দিয়ে এক দিকে বরফ পরিষ্কার করে, ওপর দিকে লবন ছিটিয়ে দেয়। বরফ পরিষ্কার এবং লবন ছিটানো না হলে, বরফ পাথর হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পরে এবং গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়ে থাকে। এ ছাড়া প্রতিটি বাড়িতেই স্নো ব্লোয়ার মেশিন,শোভেল থাকে নিজেদের ড্রাইভওয়ে স্নো পরিষ্কার করার জন্য।
এ দেশের বাড়ি ভিতরে কাঠ, ফোম,বাহিরে ইট এবং ছাদ একজাতীয় সিঙ্গলস যাকে আমি বলি বাংলাদেশের পুরানো দিনের ছনের ঘর, অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে রক্ষার জন্য এ জাতীয় বাড়ি তৈরী করা হয়। । ঝড় তুফান হলে সিঙ্গেলস উড়িয়ে নিয়ে যায়। গত ৬ বৎসরে তিনবার আমার বাড়ির চাঁদের কিছু কিছু সিঙ্গেলস উড়িয়ে নিয়ে গেছে। প্রচন্ড বেগে ঝড় শুরু হলে দেখা যায় এক বাড়ির সিঙ্গেলস অন্য বাড়িতে বা রাস্তায় উড়িয়ে নিয়েছে। সিঙ্গেলস সরে গেলে, নিচে কাঠ এবং ফোম বৃষ্টিতে ভিজে ভিতরে ফ্লোরে পানি পড়ার সম্ভবনা থাকে। সিঙ্গেলস উড়িয়ে নিয়ে গেলে জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করতে হয়। মেরামতের জন্য কাজের লোক খোঁজ করা বা বেশি ক্ষতি হলে বাড়ির ইন্সুরেন্স কোম্পানি কে ডেকে বাড়ি ঠিক করতে হয়। এ সব দেশের বাড়িঘর এতো হালকা যে ঝড়, বৃষ্টি এবং বন্যা হলে রক্ষা নেই।
অতি ঝড় বৃষ্টি বা বন্যা হলে হাজার হাজার বাড়ি ধ্বংস হয়ে মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়। ইন্সুরেন্স কোম্পানি এই সব বাড়ি কবে ঠিক করবে, তার ঠিক নেই। প্রতিটি বাড়িতে ফায়ার অ্যালার্ম বাধ্যতামূলক লাগাতে হয় সতর্কতা হিসাবে ।
গত নভেম্বর ২০২১, ভ্যাঙ্কুভার,ব্রিটিশ কলম্বিয়া হাজার হাজার ঘর বাড়ি,কলকারখানা এবং সড়ক ও জনপদ বন্যার কবলে পড়ে ধ্বংস হয়েছে । সরকার হাজার হাজার আশ্রয়হীন মানুষ জরুরি আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে জীবন বাঁচিয়েছে । যে সব বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে , মেরামত করতে বহুদিন লাগতে পারে। আমাদের দেশে গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু, বন্যা হলে লোকজন এখানে সেখানে থাকতে পারে। কিন্তু এই ঠান্ডার দেশে তা সম্ভব হয় না। এখানে একদিকে ঠান্ডা ওপর দিকে বরফ, বাহিরে আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না।
আমার আজ ও মনে পড়ে ১৯৮৮ সনের অগাস্ট আমি এবং সেপ্টেম্বর আমার স্ত্রী ছেলে গালিব(৬ বৎসর), রুমকি(২ বৎসর) ইমিগ্রেশন নিয়ে টরন্টো আসি । ওরা বাংলাদেশ থেকে এবং আমি USA (নেউয়র্ক) থেকে এসেছি । আমার কানাডা আসার পূর্বেই এ দেশের ঠান্ডা ও বরফের অভিজ্ঞতা ছিল । ছেলেমেয়েরা এসে দেখে অতি মনোরম আবহাওয়া , চারিদিকে ফুল আর সবুজের সমারোহ। কিন্তু ওরা বাংলাদেশে শুনেছে কানাডা ঠান্ডার দেশ; ওরা আমাকে প্রশ্ন করতো “আব্বু এখানে তো ঠান্ডা দেখি না। ” আমি হেঁসে হেঁসে বলতাম ১ -২ মাস অপেক্ষা করো।
বরফ পড়া শুরু হলে ওদের আনন্দ কে দেখে, সাদা পেজা তুলার মতো বরফ ওরা কুড়িয়ে স্নোবল বানিয়ে খেলা এবং বাসায় নিয়ে আসার আনন্দ , আর ঠান্ডা লাগিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার দুর্ভোগ আমি ও আমার স্ত্রীর । যতই বলি বরফ নিয়ে খেলবে না; কে কার কথা শুনে, স্কুলে যাওয়া আসার পথে বা বাসা থেকে বের হয়ে বাহিরে গিয়ে বরফ নিয়ে খেলা এবং ঘরে নিয়ে আসা থেকে বিরত থাকতে বললে তর্ক শুরু। একদিন স্কুলে বরফ নিয়ে খেলা করতে গিয়ে অন্য এক ছেলের সঙ্গে ঝামেলা বাঁধিয়ে শেষে স্কুল থেকে বাসায় অভিযোগ এসেছে।
কানাডার বরফের কাহিনী বলে শেষ করা যাবে না।রাস্তা এবং পায়ে হাঁটার পথে যতই লবন ছিটানো হোক না কেন ; সব সময় হাঁটতে গিয়ে বা গাড়ি স্লিপ (স্খলন ) কেটে কত দুর্ঘটনা হয় তার বিবরন দিয়ে শেষ করা যাবে না। তবে ইন্সুরেন্স কোম্পানি বা ডিসেবিলিটি বেনিফিট তো অবশ্য রয়েছে। এখানে কোনোপ্রকার দুর্ঘটনা হলে, সরকার তাৎক্ষণিক নানাহ ধরণের সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে।
চরম আবহাওয়া ও ঠান্ডার দুরুন এখানে বাতাসে পোকা মাকড়, ধুলাবালি থাকে না; ঠান্ডা জনিত রোগজীবাণু কম; আমাদের দেশে সর্দ্দি, কাশি, খুঁতখুঁতে জ্বর প্রায়ই লেগে থাকে। এখানে ছোট বাচ্চাদের পেটের অসুখ, ঠান্ডা জনিত রোগবালাই অপেক্ষাকৃত কম।
এতবড়ো সম্পদশালী দেশ, লোকসংখ্যা মাত্র সাড়ে তিন কোটি। আমাদের দেশের এবং পৃথিবীর প্রায় সব ক’টি দেশের মেধাবী ছেলেমেয়েরা, তাদের মেধা দেখিয়ে ইমিগ্রেশন বা পড়াশুনার সুযোগ নিয়ে এ দেশে আসে, পড়াশুনা শেষ করে এরা আর ফেরত যায় না। কানাডাকে রেফিউজি বা ইমিগ্র্যান্ট কান্ট্রি বলা হয়।
সমাপ্ত