নরওয়ে থেকেঃ-
২০০৮ সাল, রবিবার ছুটির দিন ছিল। লন্ডনের রাস্তায় হাঁটছি আর কোনো একটা সুন্দর দৃশ্য ক্যামেরায় বন্ধী করবো বলে এদিক ওদিক দেখছি। হটাৎ দেখি মাঝ বয়সী সুদর্শন এক বাংলাদেশী ভ্দ্রলোক আমার সামনে দাঁড়িয়ে একমনে লন্ডনের ব্যাস্ত রাস্তার ব্যাস্ততা দেখছেন। উনাকে এক নজর দেখেই চিনতে পারলাম যে উনি বাংলাদেশী নাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা। উনি প্রায় সময় নায়িকা বা নায়কের বড় ভাইয়ের অভিনয় করতেন এবং বিভিন্ন মোবাইল ফোন এবং হাউসিং কোম্পানিগুলোর হয়ে মডেলিং করতেন। উনাকে সালাম দিয়ে বললাম যে আমি বাংলাদেশী এবং আমি উনাকে সব সময় টিভিতে দেখি। বললাম যে উনার সাথে এভাবে দেখা হয়ে আমি নিতান্তই খুশি। উনি আমার কথা শুনে অত্যন্ত প্রফুল্য হয়ে বিনম্র একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন আমি লন্ডনে কি করি। আমার দেশের বাড়ি সিলেটে এবং আমি লন্ডনে পড়ালেখা করতে আসছি শুনে উনি বললেন তা হলেতো আপনি লন্ডনী দামান্দ, ইংল্যান্ডের সিটিজেন। উনি ইংল্যান্ডের সিটিজেন বলতে কি বুঝাতে চেয়েছেন তা বুঝতে আমার এক মিনিটও দেরী হয়নি কেননা লন্ডনে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের বেশির ভাগই সিলেট অঞ্চলের মানুষ। তাই সিলেটি কোনো ছেলে কিংবা মেয়ে লন্ডনে পড়তে আসলে ওখানে স্তায়ী হতে তাদের জন্য বেশি দেরি লাগেনা উনি উনার কথা দিয়ে সেটাই বুঝাতে চাইছিলেন। আমি বললাম যে আমি ইংল্যান্ডের সিটিজেনও না এবং আগামীতে এখানে কতদিন থাকতে পারবো তাও জানিনা।
উনাকে জিজ্ঞেস করলাম উনি কেন লন্ডনে আসছেন ? উনি বললেন যে উনি বাংলা একটা নাটকের কিছু দৃশ্যে অভিনয় করবার জন্য লন্ডনে এসেছেন এবং উনার কাজ শেষ হয়ে গেছে এবং আগামীকালই উনি ঢাকায় ফিরে যাবেন। যাওয়ার আগে লন্ডন শহরের ব্যস্ততা অবলোকন করছেন এই আর কি !
আমি উনাকে বললাম যে ভাইয়া, আপনি কত সুখী মানুষ,,আপনার মতো যদি হতে পারতাম। উনি আমার দিকে একপলক তাকিয়ে মিটিমিটি হাসলেন কতক্ষন। তারপর দীর্গ একটা নিঃস্বাশ নিয়ে বললেন শরীফ ভাই,, আপনি আমার মতো হওয়ার কোনো দরকার নেই। আপনি যেমন আছেন আমার চেয়ে হাজারগুন ভালো আছেন আর আমি চাইনা আপনি আমার মতো হোন। এক নিমিষে বুঝলাম যে মিডিয়া জগতে অনেক সুপরিচিত এবং সফল হয়েও ব্যক্তি জীবনে কোনো না কোনোভাবে উনি অসুখী। হয়তোবা সাংসারিক জীবনে উনি অসুখী। উনার মতোই আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে অসুখী। কেউ নিজের অবস্থান নিয়ে অসুখী, কেউ সংসার নিয়ে অসুখী, কেউবা শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা নিয়ে অসুখী। তাই দূর থেকে অন্য আরেক জনকে দেখে অন্য আরেকজনের মতো হতে যাবেন না। নিজের চাকরি, ব্যবসা কিংবা পড়ালেখা যা আছে তা নিয়ে নিজে সন্তুষ্ট থাকুন। কম খেয়ে, কম পরেও যদি মানুষিক শান্তি নিয়ে বাচতে পারেন সেটাই অনেক বড় পাওয়া ।
উচ্চ শিক্ষা, সুপরিচিতি, ব্যাংক ভর্তি অব্যাবহৃত টাকা সুখের মাপকাটি নয়। দিনশেষে যদি ভালো করে ঘুমাতে পারেন তবেই আপনি সুখী এবং সফল।