ছোট বেলায় খুব মজা করে বড় ভাইবোনদের কাছ থেকে শুনতাম “ ঠাকুর মার ঝুলি” অথবা “বাঙ্গালীর হাসির গল্প”। তারা ধৈর্য ধরে পড়ে শুনাতেন গল্পগুলো।ইদানিং যখনই আমি আমার সব্জি বাগানে যাই সেখানকারই একটা গল্পের কথা খুব মনে হয়। গল্পটা হচ্ছে এক দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত আর রাখাল বালককে নিয়ে। দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত প্রতিযোগিতা করেন অনেক পাণ্ডিত্যপূর্ণ বিষয় নিয়ে। যখনই অন্য প্রতিযোগীরা হেরে যায় দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত তাদের চুল কেটে নেন। তিনি সেই চুলকে ব্যবহার করেন তার বসার উঁচু স্থান হিসাবে। এমন অবস্থায় রাখাল বালক আসলো দিগ্বিজয়ী পণ্ডিতের সাথে প্রতিযোগিতা করতে। দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত রাখাল বালকের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন “ বল তো লাউয়া ফলং কি?” রাখাল বালক পণ্ডিতের বিশাল টিকিটি ধরে বলল “ আরে মূর্খ প্রথমেই কি লাউয়া ফলং? প্রথমে বীজ বপোনং, গাছ হোতানং, ফুল ধরিলং তারপর না লাউয়া ফলং।”
এই গল্পটা বললাম এইজন্য যে গত মাস দুয়েক ধরে আমার বাড়ীর আঙ্গিনায় আমি একটু বাগান করার চেষ্টা করছি । সেখানে মাটি কোপানো থেকে শুরু করে বাইরে থেকে মাটি কিনে এনে দেয়া । বিজ ছিটানো, কিছু কিছু গাছের চারা লাগানো, সার দেয়া সব কিছুই নিজের হাতে করছি। আলু, মরিচ, পেয়াজ, জুকিনি, বেগুন, লাউ, টমেটো, গাজর, ডাটা শাক, লাল শাক সবকিছুই আছে আমার বাগানে । গাছ গুলোকে আমার নিজের বাচ্চাদের মত মনে হয়। আমি সকালে বিকেলে গাছগুলোতে পানি দেই। যেদিন সময়ের অভাবে পানি না দিতে পারি আমার খুব খারাপ লাগে। মনে হয় গাছগুলোর খুব কষ্ট হচ্ছে। এত রোদে আমার গাছগুলো মরে যাবে। কোন এক অজ্ঞাত কারনে বাগানের water hose pipe এর সুইচটা খুঁজে পাইনি। আর নীচে ভাড়াটিয়া থাকায় সেখানকার পানির ট্যাপ ব্যবহার করি না। তাই দোতলা থেকে পানি নিয়ে গাছে ছিটাই। আমার এই কাজগুলোতে কোন ক্লান্তি লাগে না। আমার পতিদেব দেখে হাসেন। যেন আমি বৃথাই চেষ্টা করছি। তার হাসির ভাষাতেই বুঝিয়ে দেন কেন এত অর্থ, সময় আর পরিশ্রম করা। সব তো কিনতেই পাওয়া যায়।
আমিও জানি সব কিনতে পাওয়া যায় । কিন্তু আমি যখন আমার বাগানের কোন ফুল বা সবজি দেখি সেটা যেমনই হোক খুশিতে আনন্দে আমার মন ভরে উঠে। আমার গাছগুলোর সাথে আমি একা একা কথা বলি। আমার মন ভাল হওয়ার আনন্দে ওদের গান শোনাই। আমার মনে হয় গাছগুলো আমাকে বোঝে। তাই তো কোন সকালে দেখি পাতা ভেদ বেশ কিছু জুকিনি, বেগুন , লাউ বা টমেটো মাথা বের করে হাসছে ।আমি তাকিয়ে থাকি অদ্ভূত ভাল লাগা নিয়ে।
আমার গাছগুলো তেমন ভাল হয়নি আমার কৃষি বিজ্ঞানের জ্ঞান ভাল না থাকায় । যেমন গাছ লাগানোর পরেই গোবর সার দিয়ে দিয়েছিলাম। এতে গাছগুলো তাজা হওয়ার পরিবর্তে মরা মরা ভাব হয়ে গিয়েছিল ! এখন মনে হয় আমাদের কৃষিবিদ ওমর আলী দুলাভাইয়ের সাথে কেন যোগাযোগ করলাম না! তাহলে আমার গাছ গুলোর এমন অবস্থা হতো না। তারপর আগাছা তো আছেই। আগাছা বাড়ে গাছের চেয়েও অনেক বেশি গতিতে। তাই আগাছাগুলিকে উপড়ে ফেলতে হয় বেড়ে উঠার আগেই। আমি আমার বাগানের আগাছাগুলি যখন উপড়ে ফেলি তখন সব সময়ই মনে হয় আমাদের সমাজে মানুষ নামের কিছু অমানুষ আগাছা আছে তাদেরকে যদি এভাবেই উপড়ে ফেলা যেত তাহলে সমাজটা সামনে এগিয়ে যেত অনেক দূর।