সময়ের রেলগাড়ীতে কখন যে চেপে বসেছিলাম , জানিনা। টিকেট কেটেছিলাম গন্তব্যের শেষ স্টেশন পর্যন্ত। গাড়ী চলছে তো চলছে, গন্তব্যের কোনো ঠিকানা জানা নাই। মাঝে মাঝে থামছে কোনো কোনো চেনা বা অচেনা স্টেশনে । বিরামহীন এই চলা। কখন আর কোথায় থামবে রেলগাড়ীটা জানা নাই।
এই ভাবেই ছেড়ে এসেছে শৈশব , কৈশর আর যৌবন নামের অনেক স্টেশন। দেখেছি অনেক রঙের মানব- মানবী। কেউবা বাড়িয়ে দিয়েছে হাত , আবার কেউবা কারণ ছাড়াই ছেড়ে দিয়েছ বাড়িয়ে দেয়া সেই হাত। গাড়ী শুধু সামনেই চলে তাইতো ফিরে যাবার কোনো পথ নাই। দেখা হয়নি অনেক কিছু , বলা হয়নি অনেক কথা। অনেক কান্না লুকিয়ে কেঁদেছে মনের গভীরে, নিভৄত অন্ধকারে।
ফেলা আসা মুখগুলো কোথায় হারিয়ে গেছে , ধুলো জমে গেছে স্মৃতির পাতায়। ঝাপসা হয়ে গেছে অনেক গুলো পাতা , পড়তে চাইলেও আজ আর পড়া যায়না। ঝাপসা হয়ে যায় চোখের পাতাও , মেঘ নেমে আসে দু চোখ ভরে।
শৈশবের গুলি খেলা , কৈশরের লুকিয়ে দেখা , যৌবনের ঘ্রানকে পিছনে ফেলে ছুটে চলেছে রেলগাড়ী। মাঝে মাঝে বেজে ওঠে তার হুইসেল , সবুজ মাঠের বুক চিরে চলার সময় সেটাকে মনে হয় করুন আর্তনাদ। যা লুকিয়ে আছে মনের অনেক গভীরে , অনেক গুলো না বলা কথার মাঝে। কোথায় যেন আজ হারিয়ে গেছে সেই সব চেনা মুখগুলো।এক সময় তারাই ছিল অনেক কাছের মানুষ। হাত বাড়ালেও ছুতে পারিনা তাদের। হারিয়ে ফেলেছি ঠিকানার বইটা। অনেক খুজেছি কিন্তু পাইনি কোথাও। খুজতে খুজতে অনেক গুলো সময় কেটে গেছে , বুঝতেও পারিনি। হঠাৎ চেয়ে দেখি কখন যেন দুপুর গড়িয়ে বিকেলও পার হয়ে গেছে। দূরে গোধূলির হাতছানি। এখনই হয়তো সন্ধ্যা নামবে। পশ্চিমের আকাশটা লাল হয়ে আসছে , ঘরে ফিরছে রাখাল তার গরুর পাল নিয়ে। তাদের পায়ের ধুলো অশিনী সংকেত দিচ্ছে সন্ধ্যা নামার। চারিদিক বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠের বুক চিরে ছুটে চলছে রেলগাড়ী, এখন বারে বারে বেজে উঠছে তার হুইসেল । হয়তো ঠিকানার অনেক কাছে এসে গেছি….
ঘরে আর ফেরে হলোনা , রাধা। জানিনা আজো পথ চেয়ে বসে আছো কি না।