আমাদের যাপিত জীবনে রেডিও নির্ভরতা ঘুচে গেছে সেই কবে; হারিয়ে গেছে বিজ্ঞাপন দাতা। ১৯৩৫ সালের অল-ইন্ডিয়া ওয়েব মিডিয়া তরংগে, দেবী দূর্গার মাহাত্ম্য বিষয়ক সংগীত আলেখ্য প্রচারের সূচনা ;যা অবিভক্ত বাংলায় ব্যাপক সাড়া ফেলে।
বাণী কুমারের রচনা, পংকজ মল্লিকের সুর আর বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের উচ্চারিত চন্ডী পাঠ, বৎসরের একটি নির্দিষ্ঠ দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে, এক সুরেলা ভোর নিয়ে ফিরে-ফিরে আসে আকাশবাণী; নাম হয় মহিষাসুরমর্দিনী। সেই যুগে রেকর্ডিং এর ব্যাবস্থা ছিলোনা। রাত তিনটায় স্টুডিওতে এসে উপস্তিত হতেন, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়,সুপ্রীতি ঘোষ,নির্মলা মিশ্র, মাধুরী চট্ট্রোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, শিপ্রা বসু ও মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় সংগীত জগৎ এর নক্ষত্র আর কলাকুশলীরা মহালয়া মধ্যদিয়ে ঘুম ভাঙাতেন বাংগালীর। আবহমান কাল থেকে আজকের দিন পর্যন্ত, প্রযুক্তি নির্ভর বর্তমান জীবনে, ঐ একটি ভোরে ধরণীর বহিরাকাশে মেঘমালার মত, কোথায় যেন অন্তর্হিত হয়, হেড ফোন, মুঠোফোন; আমরা মেতে উঠি বেতার বিলাসে। বিভোর হই দেবী দূর্গার মর্ত্যে অবতরণের কাহিনী শুনে। শারদ প্রভাতকে মোহময় করে তোলার জন্য, চির স্বরণীয় হয়ে থাকবেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র।
ভোরের আলোয় গংগার ঘাটে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তিল জল দান করে, তাদের স্মৃতিকে স্বিকৃতী দেওয়া হয় শাস্ত্রীয় কাজে আর হৃদয় তন্ত্রীতে বাজে “রূপং দেহি জয়ং দেহি য়শো দেহি দ্বিষো জহি”।।
ঢাকে পরলো কাঠি, সবুজ দূর্বার উপর শিউলির শিশির ভেজা শুভ্রতায় মহামায়ার আগমন বার্তা।যেন “তাঁর চরণ ধ্বনি বুকে বাজে চোখে দেখিনা” মাতৃপক্ষের শুরু, তিনি এলেন।
রমনীকূলে ব্যাস্ততা, সলতে পাকানো থেকে পূজার ভূজ,প্যান্ডালে প্যান্ডালে আলোকসজ্জায় চারিধার। মানবকূলের রুপলোক এবং রসলোকে নিয়ে আসে নব ভাব মাধুরীর সঞ্জীবন। এতো শাস্ত্রের কথা।
তবে যে দূর্গা পঞ্চমীর গভীর রাত অব্দি দর্জির দোকানে কাজকরে, ষষ্ঠীর সকালে খেটে মরে ধানের মাঠে,সপ্তমীর সন্ধ্যায় অফিস করে ঘরে ফিরে বাসে ট্রামে ঝুলন খেলে, দেখেও দেখেনা লোকে।
মহাশক্তির মহাপূজার সূচনা হয় বোধনের মধ্যদিয়ে তাই মহালয়ার ভোরে ইথার তরংগে ভেসে আসা সুরে বোধন হউক মাটির পৃথিবীর সকল বঞ্চিত-নিপিড়িত দূর্গাদের।
‘বিশ্বায়নে -পন্যায়নে,খন্ড-খন্ড মানচীত্রে,কন্যাব্রতে, পত্নিব্রতে, গৃহকর্মে, প্রযুক্তিতে, রান্নাঘরে, আঁতুড় ঘরে সাধারণী নমস্তুতে’।
মহালয়ার প্রাক প্রত্যুষে সকলকে, শারদীয় শুভেচ্ছা।
হিমাদ্রী রয় সঞ্জীব।
টরন্টো,কানাডা।
(ছবি:-সৌজন্যে You Tube)